টাংগুয়ার হাওড়,টেকেরঘাট,কোয়ারি লেক ভ্রমন
স্মৃতির শহর সিলেট। আমার কর্মজীবনের শুরু এই শহরে। উচ্ছ্বল তারুণ্যের দুটি বছর কাটিয়েছি এখানে। ছুটির দিনে টইটই করে ঘুরেছি চা বাগান, ঝরণা আর টিলায়। শহর ছেড়ে একটু দূরেই সুনামগঞ্জ। কিন্তু কেনো জানি সুনামগঞ্জ আমায় কাছে ডাকেনি! শহর সিলেট ছেড়ে আসার ৮ বছর পরে সুনামগঞ্জ যাওয়ার সুযোগ হলো। মূলত রাতারগুল, বিছনাকান্দি, লালাখাল, জাফলং ঘুরে টাংগুয়ার হাওড় হয়ে টেকেরঘাট পর্যন্ত ট্যুর প্ল্যান সাজানো হয়েছে। ১০ জনের দল। দলনেতা আমাদের মেন্টর আসাদ স্যার। সংগী সহপাঠী-বন্ধু আবেদিন, আমিন, শাফায়াত, জাকি র সহ নিয়মিত ভ্রমণসঙ্গীরা তো আছেই । সিলেট মেট্রোর জয়েন্ট সেশন জজ সুহৃদ সহকর্মী ইয়াসির আরাফাত লজেস্টিক সাপোর্ট দিচ্ছে। প্রথম দিনে জাফলং, লালখাল ঘুরে রাতে সুনামগঞ্জ পৌঁছে সার্কিট হাউজে উঠলাম।সুনামগঞ্জ সার্কিট হাউজ বেশ সুন্দর। রাতে সাদা ভাতের সাথে পাবদা মাছের ঝোল খেলাম কুটুমবাড়িতে। চা খেলাম খোলা চত্তরে দাঁড়িয়ে। কিছুটা পথ হেটে হাসন রাজার শহর দেখলাম। স্বভাবে বোহেমিয়ান এই সামন্ত রাজার বর্ণিল জীবন আর জোছনা বিলাসের গল্প শুনেছি। তাঁর প্রপৌত্র কবি মমিনুল মুউজদ্দিন সুনামগঞ্জ পৌর মেয়র ছিলেন। নন্দিত এই নেতা পূর্ণিমা রাতে শহরের স্ট্রিট লাইট নিভিয়ে দিতেন। পূর্ণিমাতে শহরের রাস্তাগুলো হয়তো রূপালী নদী হয়ে যেতো! বছরকয়েক আগে এক সড়ক দূর্ঘটনায় এই রোমান্টিক মানুষটি প্রাণ হারান। তিনি নেই, তাঁর সাজানো শহর রয়ে গেছে। জোছনাপিয়াসী মানুষ তাঁকে এখনো স্মরণ করেন। স্বাপ্নিক চলে গেলেও স্বপ্নেরা কখনো হারায় না! চন্দ্রভূক অমাবস্যার মাঝেও তাই কিছুক্ষণ চন্দ্রবন্দনা হলো। গল্পে-আড্ডায় ঘুম কি আসে!
টাংগুয়ার হাওড়:
২৯.১০.২০১৬ খ্রি. ভোরে রওয়ানা হলাম। গন্তব্য তাহিরপুর হয়ে টাংগুয়া- টেকেরঘাট- বারিক টিলা। যাত্রাপথেই সকালের নাস্তা করলাম কুটুমবাড়িতে। এই শহরে আমাদের কোন কুটুম ছিলো না ! হোটেলের নাম কুটুমবাড়ি। সেখান থেকেই তাহিরপুরের রাস্তা ধরলাম। বর্ষায় সাহেববাজার ঘাট থেকে ইঞ্জিনচালিত নৌকা ভাড়ায় পাওয়া যায়। ভাড়ায় চালিত মোটর সাইকেলেও যাদুকাটা নদীর পাড় ধরে টেকেরঘাট যাওয়া যায়। প্রায় দেড় ঘণ্টা মাইক্রোতে চড়ে তাহিরপুর থানায় পৌঁছলাম। আমরা সুনামগঞ্জ থেকে ৩০ কিমি. দূরে আছি। তাহিরপুর সুনামগঞ্জের উত্তরের থানা। তাহিরপুরের উত্তরে মেঘালয়ের খাসিয়া থানা। তাহিরপুরের ওসি সাহেবের সহায়তায় আগে থেকেই নৌকা রিজার্ভ ছিলো। সামিয়ানা টাংগানো রঙিন বজরা! হাওড়ে বরযাত্রার মতো ভাব। সামিয়ানার নিচে চেয়ার দেয়া হয়েছে। হাওড়ে ভ্রমণ শুরু হলো, ক্যামেরার ব্যস্ততাও বাড়লো। দেশের অনেক জেলার চেয়ে আয়তনে বড় সুনামগঞ্জ ও কিশোরগঞ্জের হাওড়। ঘাট থেকে নৌকা নিয়ে কিনশি ও বাউলাই নদী ধরে এগুচ্ছি। চারপাশে অপরূপ প্রকৃতি আর দু’পাড়ের গ্রামীণ সরল জীবন। স্বচ্ছ জল। কোথাও গভীর, কোথাও অগভীর। জলজ গুল্মগুলো ভাসছে জলে। জলের মাঝে হিজল, করচের সারি। মাথা উঁচু করে অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে। ছোট নৌকাগুলো চলছে। বর্ষায় হাওড়ের মানুষের একমাত্র বাহন। বাচ্চারা স্কুলে যাচ্ছে, ডিংগিতে চড়ে। বাবা এগিয়ে দিচ্ছে তাদের, স্কুলে। দেখতে পেলাম ছোট্ট এক কিশোর ডিঙা বাইছে, সহযাত্রী তার মা। বীরপুরুষের ভাবখানা যেনো, মাকে নিয়ে যাচ্ছি অনেক দূরে! হাওড়ের বুকে চুনাপাথর ও কয়লা নিয়ে বড় বড় বোট আসা যাওয়া করছে। শীতের শুরুতেই হাওড়ে পানি কমে যায়, সাবমারসিবল রাস্তা ভেসে উঠে। দুপাশে সোনালী ফসলের মাঠ, আর মাঝে ধূলোমাখা পথ মিশে যায় দিগন্তে! শীতের টাংগুয়া অতিথি পাখির কলকাকলিতে মুখর হয়ে ওঠে। দেশের দ্বিতীয় রামসার সাইট টাংগুয়ার হাওড়ে ঝাঁকে ঝাঁকে অতিথি পাখি উড়ে বেড়ায়। শীতের শুরুতে নেপাল, চীন, মঙ্গোলিয়া, সাইবেরিয়াসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে হাজার হাজার মাইল পথ অতিক্রম করে টাংগুয়ায় আসে লেনজা, মৌলভী, বালিহাঁস, সরালি, কালিম, মানিক-জোড় সহ শতাধিক প্রজাতির অতিথিরা। টাংগুয়ার রাজা কুড়া ঈগল বাসা বাঁধে উঁচু হিজল-তমাল কিংবা করচের ডালে। বর্ষায় টাংগুয়া যেনো এক মহাসমুদ্র! হাওড়ের বুকে ছোট ছোট গ্রাম গুলো দ্বীপের মতো ভেসে থাকে! বর্ষা মৌসুমে গোটা টাংগুয়ার পরিণত হয় ২০-২৫ ফুট জলের এক স্বচ্ছ অ্যাকুরিয়ামে। আকাশের নীল নেমে আসে হাওড়ে। অথৈ পানিতে ভাসে ছোট ছোট গ্রাম। বাউরি বাতাসে আফাল(ঢেউ) উঠে। আফালের তালে ভাসমান হিজল তমাল দোলে! বর্ষায় ভাটির বউয়েরা নাইওর যায় বাপের বাড়িতে। ভাটির পুরুষের কাজ থাকে না। সামর্থবানেরা তখন বজরা ভাসায়। পূর্ণিমা রাতে ঘেটু গান চলে। ভাটির পুরুষের আদিম বিনোদন! ভাটির পুরুষের কথা মনে হলেই ভেসে ওঠে বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিমের মুখ। তিনি জন্মেছিলেন ১৫ ফেব্রুয়ারি ১৯১৬ সালে, সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার উজানঢল গ্রামে। কালনী নদীর তীরে বাঁশি বাজিয়ে তাঁর বাউলিয়ানা শুরু। নিভৃতচারী এই বাউল সাধক আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন ২০০৯ সালের ১২ সেপ্টেম্বর। সেলফোনে তাঁর গান শুনলাম, ক্যানো পিরিতি বাড়াইলারে বন্ধু ছাইড়া যাইবা যদি! বুকের ভেতরটা ক্যামন যেনো করে তাঁর গান শুনলে! মাঝি ডাক দিলো, ঐ টাংগুয়া ওয়াচ টাওয়ার দেখা যাচ্ছে। ওয়াচ টাওয়ার ঘেষে বজরা থামলো। আমরা ওয়াচ টাওয়ারে উঠলাম। চারপাশের সৌন্দর্য বর্ণনা করা সম্ভব নয় ভাষা হারিয়ে মৌনতা আবেশ ছড়ায়! কিছুক্ষণ টাওয়ারে কাটালাম। তারপর বজরা ছাড়লো, গন্তব্য টেকেরঘাট।
টেকেরঘাট:
দুপুর ১২-৩০ টায় আমরা টেকেরঘাটে নামলাম। ঘাটে শ্রমিকরা কয়লার বস্তা বোটে তুলছে। প্রাকৃতিক কয়লা। চুনাপাথরও উঠছে কিছু বোটে। একসময় এ ঘাট চুনাপাথরের জন্য জমজমাট ছিলো। ফাঁড়ি ইন চার্জ এ এস আই তপন আমাদের অভ্যর্থনা জানালেন। আমাদের যাতায়াতের জন্য মোটর বাইক ঠিক করে তিনি দুপুরের খাবার আয়োজনে চলে গেলেন। স্থানীয় মাঝি জানালেন, টেকেরঘাট একসময় ব্যস্ত বাজার ছিলো। রেললাইন চালু ছিলো চুনাপাথর ও কয়লা আহরণের জন্য। আজ শুধু স্মৃতি! মানুষের কাজ নেই। ব্যস্ততা নেই। খদ্দের না থাকায় খাবারের ভালো কোন হোটেলও নেই। পাশে বড়ছড়া বাজার, ভারতের। সেখানে প্রবেশাধিকার নেই। বড়ছড়া চারাগাঁও কয়লা শুল্ক স্টেশন। এখান থেকে কয়লা ও চুনা পাথর আমদানী হয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে চলে যায়। তবে এখন অনেকটাই স্থবিরতা চলছে। গল্পে কথায় সময় চলে যায়, তাই ফটো সেশন শেষে ইঞ্জিন স্টার্ট দিতে হলো।
বারিকটিলা ও জাদুকাটা নদী:
পাঁচটি বাইকে রওয়ানা হলাম বারিকটিলার উদ্দেশ্যে। প্রতিটিতে দু’জন করে উঠলাম। রাইডারই আমাদের গাইড। ডানে টেকেরঘাট হাওড়, বামে মেঘালয়ের উঁচু পাহাড়। মাঝে সরু পিচঢালা পথ। আমাদের রাইডার সুমন এলাকার সুখদু:খের গল্প বলছে। জানালো, ‘ভারতের লোক এ গ্রামে আসে অনায়াসে। বিএসএফ কিছু বলে না। কিন্তু তারা যেতে পারে না ওপাড়ে। জিজ্ঞেস করলাম, একেবারেই কি যাও না? সুমন হেসে জবাব দিলো, বিনি পাসপোর্টে সীমানা পারের আগে ইন্ডিয়ান স্টাইলে চুল কেটে যায়! বি এস এফ তখন বুঝতে পারে না! বুঝতে পারলাম, দু দেশের চুলকাটায় পার্থক্য আছে। রাস্তার পাশেই বিস্তীর্ণ সোনারঙা ধানক্ষেত চোখে পড়লো, অদূরেই ইন্ডিয়ার পাহাড়। ঠিক যেনো মাঠের পরে দূরের দেশ! বাইক থামিয়ে ছবি তুললাম। পাহাড়গুলো কয়লা, বালি বা চুনাপাথরের। প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর। বর্ষার জলে কিছু কয়লা ও চুনাপাথর বড়ছড়া দিয়ে গড়িয়ে আসে। গরিবেরা কুড়িয়ে নেয়। আর কিছুই ফ্রি নেই, আমদানি করতে হয়। বাণিজ্যে বসত লক্ষ্মী হলেও স্থানীয় জনগণ লক্ষ্মীর সন্ধান পায়নি মনে হলো। পথে গীর্জা দেখলাম। পাহাড়ের উপর ভারতের পতাকা উড়ছে। বিএসএফ ক্যাম্প। ভিনদেশের সবুজ পাহাড়ের পাদদেশ দিয়ে কুড়ি মিনিট পার হলাম। দেখতে অনেকটা উইন্ডোজ ৯৮ এর নাপাভ্যালির ল্যান্ডস্কেপ। হঠাৎ রাস্তা চড়াই হয়ে গেলো। তিনজন নিয়ে বাইক আর চলছে না। রাইডার জানালো বারিক টিলায় এসে গেছি। খাড়া রাস্তা, হাইওয়ে টু হ্যাভেন! জংগলের ভেতর দিয়ে হাঁটা পথে এগিয়ে বাইক দাঁড়ালো উঁচু পাহাড়ের কিনারায়। বারিকটিলা। ভয়ংকর সুন্দর! টিলার পাশ খাড়া নেমে গেছে, প্রায় ৮০০ ফিট নিচে জাদুকাটা নদী। ভয় কাটিয়ে যা দেখলাম, অবিশ্বাস্য! সুবহানাল্লাহ!
আমরা ট্রেক করতে গিয়ে অনেকবার চমৎকৃত হয়েছি সাংগুতে, বড়পাথরের বিশালতায়, নাফাখুমের ফেনিল গর্জনে,বগালেকের নীল পদ্মে, কেওক্রাডাং চূড়ায় হঠাৎ-বৃষ্টির রাতে কানফাটানো বজ্রঝড়ে, তাজিংডং এর চূড়ায় আকাশ ছুঁয়ে, পাসিং পাড়ায় ভোরে মেঘের ভেলায় হারিয়ে গিয়ে, তৈদু-সিজুক কিংবা খৈয়াছড়ার জলস্রোতে , পাবলাখালির গা ছমছমে নিস্তব্ধ অরণ্য অথবা কটকার ঘাসবনে, নিঝুম দ্বীপে বনকুকুরের পাশ কাটিয়ে হরিণের পিছু ছুটে। সবই আকাঙ্ক্ষিত ছিলো। কিন্তু বারিকটিলা থেকে জাদুকাটা নদী, হঠাৎ! ক্ষুদ্র জীবনে নিজ চোখে দেখা অন্যতম সুন্দরের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছি। সুনীলের পাহাড় চূড়ার কথা মনে পড়লো। যখন স্রষ্টার সামনে নিজেকে অতি তুচ্ছ মনে হয়! খাড়া পাহাড়ের নিচে জাদুকাটা বয়ে যাচ্ছে। মেঘালয়ের কোন ঝর্ণার বুকে জন্মানো জাদুকাটা বাংলাদেশে প্রায় ২৩ কিমি পাড়ি দিয়ে সুরমায় মিশেছে। বাংলাদেশের সুন্দরতম নদীগুলোর মাঝে একটি জাদুকাটা! বর্ষাকালে এটি অনেক প্রশস্ত হয়ে যায়। মাইল জুড়ে বিস্তৃত বেলাভূমি দেখে বর্ষাকালে পাহাড়ি নদীর উন্মত্ততা আঁচ করা যায়। এমনই দেখেছিলাম সুসং দুর্গাপুরের সোমেশ্বরী নদীতে। জাদুকাটার স্বচ্ছ নীলচে সবুজ জল এতটাই স্বচ্ছ যে নদী তীর থেকে তলদেশ দেখা যায়। এ নদী থেকে প্রায় প্রতিদিন ২০ হাজার শ্রমিক নুড়ি পাথর, বোল্ডার পাথর ও বালি তুলে জীবন চালায়। বারিকটিলার জিরো পয়েন্ট। সীমানা পিলার নম্বর ২০৩। এরপরে নো ম্যানস ল্যান্ড। বেশিক্ষণ দাঁড়াতে মানা। অদুরেই বি এস এফ’র এসল্ট রাইফেল প্রখর রোদে ঝলকায়! সময় দুপুর ১-১৫ টা। যখন পিলারে সবাই ছবি তুলছি বন্ধু আবেদীনকে খুঁজে পেলাম না। বারিকটিলা থেকে জাদুকাটায় পড়ে গেলে রক্ষা নাই! পরে তাকে খুঁজে পেলাম। পাহাড়ের ভিন্ন পাশে নৌকার ছবি তুলতে গিয়েছে। সেদিকে তাকিয়ে হতবাক হয়ে গেলাম! মনে হলো হলিউড মুভি ট্রয়ের কোন দৃশ্য। গ্রিসের রাজা আগামেনন যখন হাজার জাহাজ নিয়ে ইজিয়ান সাগর পাড়ি দিয়ে ট্রয় নগরীর সীমানায় এসেছিলেন, ট্রয়রাজ প্রায়াম হয়তো এমনি অবাক বিষ্ময়ে তাকিয়ে ছিলেন! জাদুকাটার প্রশস্ত বাঁকের ওপারে বিশাল বালুচরে হাজার হাজার পিঁপড়া যেন নড়ছে। আশ্চর্য! মানুষ! সব মানুষ! কাজ করছে। বালি খুঁড়ে পাথর তুলছে। চুনাপাথর, বড় পাথর। ডানে তাকালাম। মেশিনের শব্দ ভেসে আসে। হাজারো বোট নোঙর করা। পানির নিচে পাথর কাটছে। এত মানুষ কাজ করছে, এত বোট, ব্যস্ত সবাই! কল্পনা বিলাসী মন ভেবেছে একিলিস-হেক্টর যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে! দলনেতা আসাদ স্যারের তাড়ায় আর ছবি তোলা হলো না।
কোয়ারি লেক (নীলাদ্রি):
বাইকে ফিরছি টেকেরঘাটে। পথেই পরিত্যাক্ত লাইমস্টোনের খনি। চুনাপাথর তোলায় ১০০/১৫০ ফিট গভীর হয়ে লেকে রূপ নিয়েছে। এটাই কোয়ারি লেক। ডিজিটাল নাম নীলাদ্রি! নীল-অবনীল। চোখে না দেখলে বিশ্বাস হতো না হয়তো, পানির রঙ এতটা নীল হয়। প্রকৃতির মায়াবী রূপ! লেকের ওপাড়ের পাহাড়ের নিচের অংশটুকু বাংলাদেশ এর শেষ সীমানা। বড় উঁচু পাহাড়টিতে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া আছে। শুনেছি ২৫০ ফুট গভীর ছিলো লেকটি। বালি ও পাথর পড়ে গভীরতা হারিয়েছে। এখনও প্রায় ১৫০ ফুট গভীর। ১০ মিনিট সময় পেলাম গোসলের জন্য। নেমে পড়লাম শান্ত সলীলা হ্রদে। পাশে পড়ে আছে রেল লাইন। শ্রমিকদের ঘর। একদা ব্যস্ত অফিস এখন পরিত্যক্ত প্রায়। কোয়ারি নামের মাঝে শ্রমিকদের সুখদু:খ গাঁথা আছে। মিশরের পিরামিড তৈরি হয়েছিলো চুনাপাথর দিয়ে। সেখানেও আছে পাথর কোয়ারি। হাজারো শ্রমিকের রক্ত-ঘাম ঝরেছে ওখানে-এখানে। হালের নাম নীলাদ্রি হলেও স্থানীয়রা কোয়ারি নামেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। লেকে
গোসল সেরে মাদার কেয়ার কিন্ডার গার্টেনে গেলাম। দুপুরের খাবারের আয়োজন সেখানে। সময় দুপুর ২-১৫ টা। শীতল জলে অবগাহন পেটে আগুন জ্বালিয়েছে! ডাল, আলুভর্তা, ছোট চিংড়ির ভুনা, বোয়াল! চমৎকার রান্না। স্বাদ যেন লেগে আছে জিহ্বায়! বিকেলে হাওড়ের একই পথে ফিরলাম তাহিরপুর। অবশ্য বারিকটিলা থেকে নেমে খেয়ানৌকায় নদী পার হয়ে মোটর বাইকে সরাসরি সুনামগঞ্জ / তাহিরপুর যাওয়া যায় বলে বাইক রাইডার জানিয়েছে। তাহিরপুর থানায় যখন পৌঁছি তখন সূর্য অস্তাচলে। দিগন্তজোড়া খোলা হাওড়ে সূর্যাস্ত অপরূপ! অনেকক্ষণ উপভোগ করলাম। রাত্রি নেমে এলো। পরবর্তী গন্তব্য সোয়াম্প ফরেস্ট-রাতারগুল।