টাইগার হিল থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা
দার্জিলিং, রাত ৩ টা, হাড় কাঁপানো ঠাণ্ডা । হোটেলে দুইটা কম্বল গায়দিয়ে ঘুমিয়ে আছি। হঠাৎ Akibul ভাইয়ের ডাক, ভাই উঠেন গাড়ি চলে এসেছে টাইগার হিল যাব কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে। আমি বললাম ভাই এই শীতের মধ্যে কিভাবে যাব, কম্বলের নিচ থেকেতো বের হওয়াই কঠিন, আমি যাব না। আকিব ভাই রাগের সূরে বললেন আপনি দার্জিলিং এসে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে যাবেন না তাহলে আমাদের দার্জিলিং নিয়ে এসেছেন কেন। ঝাড়ি টা গায়ে না মেখে অলসতা ভেঙে গায়ের কম্বল ছুড়ে ফেলে দ্রুত রেডি হয়ে নিলাম।
রাত ৩.৩০। লেম্প পোষ্টের আলোয় কুয়াশা ভেজা দার্জিলিং শহর। শীতে কাঁপতে কাঁপতে গাড়িতে উঠে বসলাম। গাড়ি আগের দিন ঠিক করে রেখেছিলাম। গাড়ি ছুটে চলছে দার্জিলিং এর আঁকাবাঁকা রাস্তা ধরে কুয়াশা ও রাতের অন্ধকার ভেদ করে টাইগার হিলের দিকে। দার্জিলিং শহর থেকে টাইগার হিলের দূরত্ব প্রায় ১১ কিলোমিটার আর সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে উচ্চতা প্রায় ১০ হাজার ফুট।
টাইগার হিল, প্রচণ্ড বাতাস। সূর্যোদয়ের আরো কিছু সময় বাকি। সূর্যের উদীয়মান দৃশ্য ও ধীরে ধীরে দৃশ্যমান হওয়া কাঞ্চনজঙ্ঘা প্রাণভরে অবলোকন করতে এরিমধ্যে চলে এসেছে শতশত পর্যটক। টাইগার হিল থেকে বেশ কিছু নিচে নির্দিষ্ট পয়েন্টে আমাদের গাড়ি পার্ক করা হলো। গাড়ি থেকে নেমে পায়ে হেঁটে উঠে আসি টাইগার হিলের চূড়ায়। এখন শুধু অপেক্ষা সূর্যোদয় আর দৃশ্যমান কাঞ্চনজঙ্ঘার।
পূর্ব আকাশে আস্তে আস্তে লাল আভা নিয়ে সূর্য উদিত হচ্ছে আর পশ্চিম দিকে কাঞ্চনজঙ্ঘার দৃশ্যমান হচ্ছে। প্রচণ্ড ঠান্ডা ও শীতের মধ্যে এমন অপরূপ দৃশ্যের সাথে বাড়তে থাকে সবার আনন্দ উল্লাস আর ক্যামেরার শাটারের ক্লিক ক্লিক শব্দ। সবাই ব্যস্ত সূর্যোদয় ও কাঞ্চনজঙ্ঘাকে ফ্রেম বন্দি করতে। আমিও দিধার মধ্যে পরে গিয়ে ছিলাম কোনটা দেখবো সূর্যোদয় না কাঞ্চনজঙ্ঘা। দুই দিকে দুই ভয়াবহ সৌন্দর্য মাঝখানে পাহাড় চূড়ায় দাঁড়িয়ে আছি। পলক বন্ধ করলেই যেন মিছ হয়ে যাবে অনেক কিছু। গল্প উপন্যাসে কাঞ্চনজঙ্ঘার রুপের বর্নানা অনেক পড়েছি কিন্তু আজ বুঝতে পারলাম এর রুপের বর্নানার জন্য লেখকের কলমের কলি যথেষ্ট নয়। এখানে পর্যটকদের সূর্যোদয় ও কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখাটা নাকি ভাগ্যের ব্যাপার। কারণ এখানে প্রকৃতি বেশিরভাগ সময়ই থাকে মেঘ অথবা কুয়াশার দখলে। সেই হিসাবে আমরা সৌভাগ্যবান কারন প্রথম আগমনেই পেয়েছি কাঞ্চনজঙ্ঘা দর্শন।
পাহাড়ে অপচনশীল পলিথিন ফেলা ও পরিবেশের ক্ষতি হয় এমন কাজ থেকে বিরত থাকুন।