টুরিজমদের জন্য রাঙামাটি একটি আদর্শ ভ্রমন ট্রিপ
পর্যটন বা টুরিজমের জন্য প্রয়োজনীয় মূল বিষয়টা হল এমন একটা স্হান যেখানে মানুষ নির্ঝঞ্ঝাট – নিরাপদ ভাবে ঘুরে ফিরে সময় কাটাতে পারবে । এর পাশা পাশি মানুষ থাকা খাওয়ার মান সম্মত একটা ব্যবস্হা পাবে । সাথে সাথে প্রাকৃতিক পরিবেশ বা ইতিহাস ঐতিহ্য কিংবা সামাজিক সাংস্কৃতিক কিছু অভিজ্ঞতা , আনন্দ উপোভোগ এর আয়োজন থাকবে , প্রাকৃতিক বা মানব সৃষ্ট বিনোদনের ব্যবস্হা থাকবে । তবে নিরাপত্তা এবং প্যারা মুক্ত হওয়াটা প্রথম শর্ত । অভিযাত্রী বা এডভেঞ্চার প্রিয়রা বিপদ শংকা সামনে রেখে-ই এগিয়ে যায় , টুরিষ্টদের কাজ সেটি নয় । এসবের বিচারে রাঙামাটি শহর আর এর পাশে মানব সৃষ্ট লেক যা কাপ্তাই লেক নামে পরিচিত , সেটা পর্যটনের খুবই উৎকৃষ্ট একটা গন্তব্য ।
পার্বত্য জেলার প্রধান শহর হলেও এই শহরের প্রধান আকর্ষণ লেক বা জলপথ । জলপথে আনন্দ ভ্রমণ বা রিলাক্স ট্রীপের জন্য রাঙামাটি আদর্শ । লেকের কোনায় কোনায় ছড়িয়ে আছে অপার প্রকৃতিক সৌন্দর্য । লেকে ঘুরে বেড়ানোর জন্য শত শত ছোট মাঝারি আর বড় আকারের ইঞ্জিন চালিত নৌকা বা লঞ্চ । ছুটির দইনে শত শত নৌকায় করে এক একটি দল ঘুরে বেড়ায় লেকের বিভিন্ন দিকে । ছুটি ছাড়াও প্রতিদিন ৪০-৫০ টা নৌকা ভাড়া হয় জানালেন একজন নৌকা মালিক । মোট কথা লেকের পানিতে টুরিষ্টদের নৌকা মিছিল দেখে ভালই আনন্দ অনুভব হচ্ছিল – একেবারে উৎসব মুখর হয়ে উঠে লেক ছুটির দিন গুলোতে ।
লেকে ঘন্টা হিসেবে , কোন নির্দিষ্ট একটি দুইটি গন্তব্য অথবা সারাদিনের জন্য নৌকা লঞ্চ ভাড়া করতে পারবেন । বড় নৌকা ৩০-৪০ জনের ভাড়া সারা দিনের জন্য ৩-৪ হাজার টাকা । ঘন্টা হিসেবে ভাড়া পাওয়া যায় ঝুলন্ত ব্রীজ এলাকা থেকে , জাহাজের লাইফ বোট গুলো । ঘন্টায় ৪০০ টাকার মত ভাড়া । স্পীড বোটেও বেড়াতে পারবেন । আমরা সাত জন সারা দিনের জন্য ২৫০০ টাকায় ভাড়া করেছিলাম সুফলং – মেজাং – পেদাটিংটিং – বরকল থানা – জুম ঘর – পাহাড়ী গ্রাম সব মিলিয়ে । ২০১৬ সালের একটি নিউজ লিংকে দেখা যায় নৌকা ভাড়ার নির্ধারিত রেট ৬ টি স্পটের জন্য নিম্নরূপ । যদিও এগুলো পুরোপূরি অনুসরণ করা হয় না , তবুও এর কাছাকাছি রেটে নৌকা – লঞ্চ ভাড়া পাবেন । ছয়টি প্যাকেজের কথা।
প্যাকেজ-১: সাত পয়েন্ট: সুভলং ঝরনা, আদিবাসী গ্রাম,শুভলং আর্মি ক্যাম্প, পেদা টিং টিং, চাংপাং, গরবা ও মেজাং রেস্টুরেন্ট। কাঠবডি ৬ আসনের নৌকায় ৬ ঘণ্টার ভাড়া ১৯৫০ টাকা
প্যাকেজ-২: ১০ পয়েন্ট: সুভলং ঝরনা, আদিবাসী গ্রাম,শুভলং আর্মি ক্যাম্প, পেদা টিং টিং, চাংপাং, গরবা, টুকটুক ইকো ভিলেজ, স্বর্গছড়া ও মেজাং রেস্টুরেন্ট। ভাড়া আড়াই হাজার টাকা। সময় ৬-৭ ঘণ্টা।
প্যাকেজ-৩: তিন পয়েন্ট: সুভলং ঝরনা,চাংপাং ও গরবা। ৪ ঘণ্টায় ভাড়া ১৪শ টাকা।
প্যাকেজ-৪: পাঁচ পয়েন্ট: সুভলং ঝরনা, পেদা টিং টিং, চাংপাং, গরবা ও রাজবাড়ি। ভাড়া ১৯৫০ টাকা। সময় ৫ ঘণ্টা।
প্যাকেজ-৫: পাঁচ পয়েন্ট: পেদা টিং টিং, চাংপাং, মেজাং, টুক টুক ইকো ভিলেজ ও রাজবাড়ি। ভাড়া ১৯৫০ টাকা। সময় ৫ ঘণ্টা।
প্যাকেজ-৬: পাঁচ পয়েন্ট: পেদা টিং টিং, চাংপাং ও টুক টুক ইকো ভিলেজ। ভাড়া ১০৫০ টাকা। সময় ৩ ঘণ্টা। এছাড়া ইঞ্জিনচালিত যেকোনো নৌকা ঘণ্টাপ্রতি ভাড়া সাড়ে ৩শ টাকা।
থাকার জন্য আছে নিম্ন মাঝারি অথবা উচ্চমানের হোটেল বা রিসোর্ট । আমি ২০০ টাকা দিয়ে সৈকত হোটেলে ছিলাম , এটাচড বাথ , বাথ রুমে টাইলস আছে । একটু নোংরা দেয়াল এরপরও চাদর কম্বল অপরিষ্কার নাহ ! ২০০ টাকায় আর কি ! পর্যটনে একটু খোজ নিসিলাম – নন এসি সবচেয়ে সস্তা ১৬০০ টাকার রুম ছিল । দুইটা হোটেল/ মোটেল আছে পর্যটনের । হানিমুন কটেজও আছে । দামী গুলার ভাড়া জিগেস করি নাই – ৪-৫ হাজার টাকাও হতে পারে ! তবে আমার মনে হয় এসি রুমও ৩ এর ভিতরেই পাবেন । লেকের পাড়ে রিসোর্ট গুলোতে থাকার জন্য লোভ জাগে । বউ বাচ্চা নিয়ে গেলে সে সব জায়গায় থাকার একটা ট্রাই দিমুনে !
আর মাঝারী দামে মাঝারী মানের খাবার পাবেন । শহরে মাঝারি দামের মাঝারি মানের অনেক হোটেল আছে । লেকের মাঝে কিছু রেসটুরেন্ট আছে । আমাদের নৌকা বরকল থানার ‘ জুম ঘরে ‘ থেকেছিল । খাবারের দাম বেশী হলেও পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন । খাবারের স্বাদও ভালই । রুই মাছের ভর্তা – কেককি ফ্রাই খেয়েছিলাম । পানিও কিনে খেতে হয় । সালাদের বিল ধরল ২০ টাকা । মোট ২০০ টাকা বিল হয়েছিল এক বেলায় । ব্যাম্বু চিকেন ছিল , আমি ট্রাই করিনি ।
শহরে যাওয়ার জায়গাই মুলত দুইটা : রিজার্ভ বাজার আর ‘পর্যটন ‘ । শহরের নামকরা (!) ঝুলন্ত ব্রীজ এই পর্যটন এলাকাতে -ই । বাস রিজার্ভ বাজার পর্যন্ত নিয়ে যাবে – সেখান থেকে সিএনজি করে পর্যটন পর্যন্ত যেতে মাথা পিছু ৩০ টাকা । সিএনজি রিজার্ভ করলে ১২০ টাকা ভাড়া । (১৫০ চাইতে পারে ) সকাল সকাল পর্যটন এলাকায় চলে গেলে সূর্যোদয়ের ভাল দৃশ্য উপোভোগ করতে পারবেন । ভোরে সূর্য উঠার আধা ঘন্টা আগে পুবাকাশ একদম লাল হয়ে যায় । এরপর বেশ ফর্শা হতে শুরু করে আকাশ ! আমি লাল এর সময় যেতে পারি নাই । সূর্যদয়ের সময় যেতে পেরেছি । সূর্যোদয়ের পরপর ও ভাল ছবি পাবেন । ইনফ্যাক্ট সবচেয়ে ভাল টাইম ঐটাই !
ঢাকা থেকে এক রাতে বা একদিনে যাওয়া আসার সুবিধা , আর চট্রগ্রাম থেকে দুই আড়াই ঘন্টার সড়ক পথের যাত্রা সব কিছুই রাঙামাটিকে আদর্শ পরযটন এলাকায় পরিনত করেছে । ঢাকা থেকে রাঙামাটি নন এসি গাড়ী ভাড়া ৬২০ টাকা । আর রাঙামাটি চট্টগ্রাম ১২০ টাকা ।
আর পরিবেশ সম্পর্কে অবশ্যই সচেতন থাকবেন ।