ঢাকা-কলকাতা-কালকা-শিমলা-মানালি-দিল্লী-কলকাতা-ঢাকা ভ্রমণ বিতান্ত

ঢাকার সাভার থেকে রাত ১১ টায় বাসে উঠলাম বেনাপোল যেতে যেতে ভোর ৫ টা। ইমিগ্রেশন এর কাজ শেষ করে নাস্তা করে বাসে উঠলাম দুপুর ১ টায় কলকাতা। এর পর গেলাম ফেয়ারলিতে।ট্রেনের টিকেট কাটলাম পরদিনের রাত ৮ টার কালকা যাওয়ার জন্য। এর পর হোটেল ঠিক করে পরের দিন কোলকাতা ছারার আগে, হাওড়া ব্রিজ-বেলুর মথ-দখিনেরশ্বর কালি মন্দির দেখে নিলাম।

কলকাতা থেকে সিমলা যাওয়া যায় অনেক ভাবে। কিন্তু ৩৩ ঘণ্টা ট্রেন জার্নি করে কালকা হয়ে যাওয়ার একমাত্র আকর্ষণ ছিল কালকা-সিমলা রুটের টয় ট্রেন। ভারতের অন্যান্য পাহাড়ি রেলওয়ের সঙ্গে ইউনেসকো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের তকমা পেয়েছে কালকা-সিমলা রেলপথও।
কালকা এসে নামলাম ভোর ৪.৩০ এ। চারদিকে
অন্ধকার আর ঠান্ডা লাগছে। অন্ধকার কমে যতেই সামনে ছোট বড়ো পাহার চোখে পড়লো। টয় ট্রেনর টিকিট না পেয়ে টিটি কে ঘুস দিয়ে উটলাম ট্রেনে।ট্রেন ছারল ৫.২০ এ।

টয় ট্রেন : ট্রেন বাইরের দৃশ্য দেখার জন্য বিশাল বিশাল কাচের জানালা।বাইরে তখনো অন্ধকার। কিচ্ছু দেখা যায় না ভালোমতো । অন্ধকারেই পাহাড়ের বাঁক ঘুরে ঘুরে সাপের মতো বেঁকে বেঁকে ওপরে উঠতে শুরু করল ট্রেন। আমাদের সিট ছিল ডান দিকে, জানালার ধারে। যখনই বাঁক ঘুরছিল, তখনই সামনের কামরা থেকে পিছনের কামরাগুলো স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল। অন্ধকারের মধ্যে আলো জ্বলা কামরাগুলিকে অদ্ভুত লাগছিল! একটা কথা, ডান দিকের সিটে বসার চেষ্টা করবেন। কারণ, পুরো যাত্রাপথে জানালার ডান দিকেই সরে সরে যাবে চোখ জুড়োন পাহাড়।কালকা ও সিমলার মাঝে ১৬টি স্টেশন মোট ৯৬ কিলোমিটার রাস্তা। ক্রমেই পাহাড়ে উঠবে ট্রেন। বোঝা যাচ্ছে, একটার পর একটা সুড়ঙ্গ পেরিয়ে চলেছে টয় ট্রেন।জানালা দিয়ে ভালই রোদ এসে পড়েছে কামরায়। প্রথম দিকে দু’ধারে কিছু ছোট ছোট পাহাড়ি বাড়ি ঘর চোখে পড়ছিল। কিন্তু কিছু দূর যাওয়ার পর সেগুলো উধাও হয়ে গেল। কখনও একপাশে উঁচু পাহাড় আর অন্যপাশে গভীর খাদ। আবার কখনও ছোট ছোট ঝরনা। হিমালয়ের প্যানোরামিক ভিউ। রেল পথটি আছে ১০৩ টি সুড়ঙ্গ ও ৮৬৪টি সেতু।বাইরে ঝলমলে রোদ। পরিস্কার আকাশ। জানালায় সরে সরে যাচ্ছে রোদে ভেজা পাহাড়, খাদ, জঙ্গল, ঝরনা, ঘরবাড়ি। একের পর এক স্টেশন পেরিয়ে যাচ্ছে ট্রেন।

সকাল ১১টায় ধীর হয়ে এল ট্রেনের গতি। বাইরে তাকিয়ে দেখি, ‘সিমলা’ লেখা একটা বোর্ড জানালার পাশ দিয়ে সরে সরে যাচ্ছে। আমাদের যাত্রা শেষ! অদ্ভূত এক অভিজ্ঞতার সাক্ষী হওয়ার আনন্দ পেলাম আমরা।

সিমলা ও মানালী : শিমলাতে দালাল থেকে সতর্ক থাকবেন।সিমলা নামার পরঘুড়ার জন্য প্যাকেজ নিলাম ৪ জন ১৯৫০০ রূপিতে (প্যাকেজটিতে ছিল সিমলা-কুল্লু-মানালী-মানিকারান-মান্ডি-গ্রিন ভেলি-কুফরি-সোলাং ভ্যালি +হোটেল ৪ দিনের জন্য)।

সোলাং ভ্যালি : paragliding করলাম ১০০০ রুপি short fling। high fling ২৫০০ রুপি। cable car ৬০০ রুপি।

কুল্লু : river rafting ৪ জন ৩২০০রুপি।
সিমলার মলরোড মানালীর মররোডের থেকে আনেক বেশি সুন্দর বিশেষ করে রাতের বেলা।

৪ দিন পর রওনা বিলাম দিল্লির জন্য। সকালে দিল্লি আসার পর সারাদিন ঘুরে রাতে রওনা দিলাম কলকাতার উউদ্দেশ্য। কলকাতা আসার পর নিউমার্কেট থেকে কানাকাটা কর পরদিন ঢাকার জন্য রওনা দিলাম

সিমলা মানালী কখন যাবেন –

মার্চ থেকে জুন -এই সময় আবহাওয়া সুন্দর থাকে। অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টসের জন্য আদর্শ। তবে বরফ পাবেন না।

জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর – বর্ষাকাল। সবুজ সিমলা উপভোগ করতে চাইলে আদর্শ সময়। কিন্তু ধসের ভয় থাকে।

অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি – বরফ পড়া দেখতে চাইলে উপযুক্ত সময়। কিন্তু হাড় কাঁপানো ঠান্ডা

বি:দ্র: ভ্রমণকালে আপনার দ্বারা পরিবেশের ক্ষতি হয় এমন কোন কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকুন। যত্রতত্র ময়লা আবর্জনা না ফেলে নির্দিষ্ট স্থানে ফেলুন। স্থানীয় অধিবাসীদ ও তাদের জীবনধারার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করুন।

Source: Tanvir Ahmed <Travelers of Bangladesh (ToB)

Share:

Leave a Comment