ঢাকা-কুতুবদিয়া-কক্সবাজার-ঢাকা একটি বাজেট ট্যুরের গল্প

সেকশন বি আনসেন্সরড গ্রুপটা ট্যুরে যাইনা অনেক দিন। ভাবলাম, ভার্সিটি জীবন শেষ বলে কি আমরা আর ট্যুর দিবনা! একসাথে গান, আড্ডা, ঘুরাঘুরি, রাতযাপন হয়না অনেকদিন। তাই আমরা কয়েকটা পাগল মিলে ঠিক করলাম সব যে দিকে যায় যাক, ট্যুরে আমরা যাবই। খুঁজে পেতে আমরা সাতজন হলাম। প্ল্যানিং করতে করতে ঠিক করলাম কক্সবাজার যাব😁(একাধিকবার এখানে যাওয়া হয়েছে, তবুও)। গত ২০জুন দিবাগত রাত ১১টায় সায়দাবাদ থেকে বাসের টিকেট কেটে রওনা দিয়ে দিলাম কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে। কিন্তু আপনার টিম যখন একটু পাগলা কিছিমের হবে এবং ট্যুরের আগে ৭/৮টা জায়গার প্ল্যান করে করে আবার যাওয়া জায়গায়ই ট্যুর দেওয়ার চিন্তা করবে, তাদের দ্বারা যেকোন কিছুই হতে পারে😀।

আমরা যখন চকোরিয়ার কাছাকাছি, তখনই হুট করে ম্যানেজার বন্ধু সিদ্ধান্ত নিল যে চকোরিয়া নেমে যাবে। সেখান থেকে কুতুবদিয়া যাবে। যেই ভাবা সেই কাজ, গেলাম নেমে। চকোরিয়াতে দুইটা স্ট্যান্ড আছে যেখান থেকে সিএনজি আর লেগুনা যায় মগনামা ঘাটে৷ বলে রাখা ভাল, কুতুবদিয়া যেতে হলে প্রথমে চকোরিয়া নেমে মগনামা ঘাটে যেতে হবে। প্রথম স্ট্যান্ড থেকে লেগুনা যায় জনপ্রতি ৪০ টাকা করে। তবে আমরা চকোরিয়া বাস স্ট্যান্ড থেকে সিএনজি রিজার্ভ করে যাই, প্রতি সিএনজি ৩০০ টাকা করে দুইটা সিএনজি নিই। মগনামা ঘাটে পৌঁছে আপনাকে ঘাট ভাড়া দিতে হবে জনপ্রতি ৩ টাকা করে। তারপর কুতুবদিয়া যেতে হলে আপনাকে কুতুবদিয়া নদী পার হতে হবে। ট্রলারে গেলে ৪০মিনিটের মত লাগবে, যেখানে জনপ্রতি ভাড়া ২০ টাকা করে, আর যদি স্পিডবোটে যান তবে জনপ্রতি ভাড়া ৭০টাকা করে।

আপনি চাইলে স্পিডবোট রিজার্ভ করে নিতে পারবেন, সেক্ষেত্রে আপনাকে ৭০০ টাকা দিতে হবে, আর লোক উঠতে পারবেন সর্বোচ্চ ১০ জন। আরেকটা ব্যাপার হচ্ছে মগনামা ঘাট থেকে কুতুবদিয়ার বড়ঘোপঘাটে যাওয়ার জন্য শুধু একটা স্পিডবোটই আছে (কুতুবদিয়ার আরেকটা ঘাট আছে যেখানে লাইঠাউজ আছে একটা, সেই ঘাটের নাম জানা নেই, সেখানের জন্যও বোট আছে)। যাই হউক, বোটে করে রওনা হয়ে ১০/১২ মিনিটের মধ্যেই পৌঁছে গেলাম বড়ঘোপঘাট। ঐ ঘাটে পৌঁছে আবার জনপ্রতি ৩টাকা করে ঘাট ভাড়া দিতে হবে। সেখান থেকে থেকে ব্যাটারিচালিত অটো করে গেলাম বড়ঘোপঘাট বাজারে। সেখানে সমুদ্রবিলাশ নামে একটা বোর্ডিং আছে, যেটা মূলত প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

আমরা সেটাতেই উঠলাম। একটু বলে কয়ে ৭জন একটা রুমেই উঠলাম। এক দিনের ভাড়া ১৫০০। দুপুরে খাবার সমুদ্রবিলাস হোটেলেই সারলাম। হোটেল থেকে ভিউ এক কথায় মাইন্ড ব্লোয়িং এবং ওদের খাবারের মানও যথেষ্ট ভাল। গরুর মাংসটা সবচে ভাল ছিল। খাওয়াদাওয়া শেষ করে দ্বীপ ঘুরতে বের হলাম। হোটেল থেকে দক্ষিণ দিকে হাঁটা ধরলাম। হাঁটতে হাঁটতে কতক্ষণ যে হাঁটলাম ঠিক খেয়াল নেই। তা প্রায় ২ঘন্টার কাছাকাছি হবে। হাঁটতে হাঁটতে পেয়ে গেলাম বায়ু বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র। তবে এই দ্বীপের বিদ্যুতের প্রধান উৎস হচ্ছে সৌরবিদ্যুৎ। নির্দিষ্ট সময় সময় কারেন্ট অফ-অন থাকে। সন্ধ্যায় রুমে ফিরলাম লেগুনা নিয়ে। এই দ্বীপটা মনুষ্যবসতির দ্বীপ, এখানের মানুষের জীবিকার প্রধান উৎস হচ্ছে মাছ ধরা।

স্কুল, কলেজ, থানা সবকিছুই আছে। রয়েছে কুতুবপীরের মাজার, যার নামে নামকরণ হয়েছে এই দ্বীপের। দ্বীপটা পর্যটন এলাকা হয়ে উঠেনি এখনও, যারা একটু অপ্রচলিত ট্যুর দিতে চান তাদের জন্য এটা সেরার মধ্যে একটা অপশন। সমস্যা হচ্ছে স্থানীয়রা সৈকত নোংরা করে রাখে সবধরনের ময়লা ফেলে। আর আপনি সৈকতের আশে পাশে যেখানে সেখানে মনুষ্য বর্জ্য দেখতে পাবেন। এগুলো থেকে সাবধান। মূলত এটা তাদের বসতি এলাকা বলেই এমনটা হয়ে থাকে, পরিষ্কার রাখার বালাই নেই তেমন। তবে এই দ্বীপের যা প্রাকৃতিক দৃশ্য পাবেন আপনি, মনে হবে স্বর্গ। স্থানীয়রা প্রতি শুক্রবার সৈকতের পাশে পশুর হাট বসায়। দ্বীপের আয়তন ২২৫ বর্গকিলোমিটার যেটা সেন্টমার্টিনের তুলনায় প্রায় ২৮গুন বড়।

যাই হউক, পরের দিন রওনা দেয়ার পালা। চকোরিয়া থেকে যেভাবে গিয়েছি, ঠিক সেভাবেই আবার চকোরিয়া পর্যন্ত ব্যাক করলাম। তবে আমাদের এক বন্ধুর অফিস থাকার কারণে সে সেখান থেকে ঢাকায় ব্যাক করে, আর আমরা চলে যাই কক্সবাজার। চকোরিয়া থেকে কক্সবাজারের ভাড়া ৫০টাকা করে। আপনাকে চলতি কোন গাড়িতে উঠে যেতে হবে। কক্সবাজার গিয়ে আমরা ৬ জনে একটা রুম নেই ৮০০ টাকা দিয়ে, দুই দিনের জন্য। তারপর সেখানে ঘুরাঘুরি করে ২৩ তারিখ দিবাগত রাতে ঢাকার বাসে উঠে যাই(কক্সবাজার খুব পরিচিত জায়গা সবার, তাই এখানের ঘুরাঘুরির বর্ণনা আর দিলামনা)। প্রতিটা ট্যুর থেকে ফেরার সময়ই নস্টালজিক হয়ে যাই। ট্যুর শেষ করতে মন চায়না, তবুও করতে হয়। যাই হউক, সবমিলিয়ে আমাদের জনপ্রতি খরচ হয়েছে সাড়ে তিন হাজার টাকা ( ঢাকা থেকে যাওয়া আসার ভাড়া+তিন রাতের হোটেল খরচ+ঘুরাঘুরি+খাওয়া)।

বিঃদ্রঃ কুতুবদিয়া হতে পারে আমাদের পর্যটন শিল্প ও অর্থনীতির বিশাল আধার। আর আমরা যেখানেই যাইনা কেন, ভ্রমণের জায়গা পরিষ্কার রাখব, যেখানে সেখানে ময়লা ফেলবনা। দেশটা আমাদের, পরিষ্কার রাখার দায়িত্বও আমাদের। হ্যাপি ট্রাভেলিং।

Source: Mohammad Jahangir Alam‎ <Travelers of Bangladesh (ToB)

Share:

Leave a Comment