ঢাকা টু সুনামগঞ্জ ভায়া নেত্রকোনা ভ্রমন

নতুন বছর শুরু হয়ে এক মাস শেষ হয়ে গেলেও কোন ট্যুরে যাওয়ার ব্যবস্থা না হওয়ায় কিছুটা খারাপ লাগছিলো। অবশেষে এর সাথে ওর সাথে প্ল্যান করে ট্যুর দিয়েই ফেললাম।

আজকে লিখবো কিভাবে সুনামগঞ্জ আর নেত্রকোনা দুই দিনে ঘুরে শেষ করবেন।
বর্তমানে নেত্রকোনার সুসং দুরগাপুর কিংবা সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওর আর শিমুল বাগান দুইটাই সমান জনপ্রিয়। তবে জেলা দুটি পাশাপাশি হওয়ার পর ও কাউকে দেখি না একসাথে দুই জেলার জনপ্রিয় স্থান ঘুরতে। তাই সিদ্ধান্ত ন্যেই ফেললাম। ট্যুর হবে ঢাকা টু সুনামগঞ্জ ভায়া নেত্রকোনা।
আমি খরচের হিসাব টা শেষে ডিটেইলস এড করে দিবো।

আমাদের প্রথম টার্গেট ছিলো বিরিশিরির চিনামাটির পাহাড় আর সোমেশ্বরি নদী সাথে আর কিছু জায়গা। তো ওভাবেই প্ল্যান টা করা। কিন্তু পরে ভেবে দেখলাম পাশের জেলা সুনামগঞ্জে চাইলে সহজেই যাওয়া যায় তাহলে কেন না? সেই উদ্দেশে গত বৃহস্পতি বার রাত ১২.৪০ এর বাসে চেপে বসি দুরগাপুরের উদ্দেশ্যে।
সোয়া পাঁচটায় বাস বিরিশিরি বাজারে নামিয়ে দেয়। তখন ও অন্ধকার তেমন কাটে নাই কিন্তু সোমেশ্বরির বালু নেয়ার জন্য ট্রাক আসা শুরু হয়ে গেসে। দুরগাপুর যে কয়দিন থাকবেন এটা খুব কমন একটা সিনারিয়ো। এতো সকালে তো আর কোন হোটেল বা গেস্ট হাউজ খোলা পাওয়া যাবে না, তাই বাজার টা একটু ঘুরে দেখতে লাগলাম। ছোটখাটো একটা খাবার হোটেল ও পেয়ে গেলাম। হাল্কা নাস্তা শেষ করে বাইরে আসতেই দেখলাম প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে পাচ্ছে দুরগাপুর।
আমাদের প্রথম কাজ হছে একটা গেস্ট হাউজে ঊঠা। দুরগাপুরে ভাল গেস্ট হাউজ বলতে YWCA গেস্ট হাউজ আর YMCA গেস্ট হাউজ এছারা ও আরো কিছু সাধারন মানের গেস্ট হাউজ আছে যেখানে খুব অল্প খরচেই আপনি থাকতে পারবেন। আমরা চার বন্ধু গিয়ে উঠি YMCA গেস্ট হাউজে। গেস্ট হাউজে যাওয়ার সময় ই পরিচয় হয় অটো চালক নরেনের সাথে। পরে ঘুরার জন্য উনাকেই ঠিক করি। কিছুখনের মধ্যে ফ্রেশ হয়ে বের হয়ে পড়ি দুরগাপুরের সৌন্দর্য দেখতে। দুরগাপুরে আসলে আপনি ভুল করে ভাবতে ও পারেন কোন বালুর রাজ্যে চলে আসলেন! অটো বা বাইক যাই ই ভাড়া করেন না কেন ড্রাইভার রা অনেক জায়গার কথা বলবে কিন্তু দুরগাপুরের আসল আকর্ষণ হচ্ছে সোমেশ্বরি নদী আর চিনামাটির পাহাড়। এছারা গারো পাহারে ও জেতে পারেন। এছারা রানিখং মিশন সোমেশ্বরি জিরো পয়েন্টের ওখানেই।

আপনি অটো রিকশা নিয়ে বেশ সময় নিয়ে ঘুরলে ও বিকালের মধ্যে সব গুলো স্পট দেখে শেষ করতে পারবেন। আমরা সকাল আট টাইয় যাত্রা শুরু করি বিকাল ৬ টায় শেষ হয়। কারন সব জায়গায় আমরা বেশ সময় নিয়েছিলাম। অনেক লোকাল হোটেল আছে খাওয়ার জন্য অল্প খরচে খেতে পারবেন। তাছারা খাবার ভাল ছিলো তোবে আমি বলবো দুরগাপুর গেলে অবশ্যি গারো পাহারে যাওয়ার সময় একটা মালাই চা আচে অইটা খাবেন। মালাই মামা বললেই অটো ড্রাইভার আপনাকে নিয়ে যাবে। আর অন্য কোন জায়গার চেয়ে সোমেশ্বরি তে একটু সময় দিবেন আপনার অর্থ ও সময় দুইটাই ই উসুল হয়ে যাবে। সোমেশ্বরির মত এমন স্বচ্ছ পানি আমি কোথাও দেখি নাই। এটা আমার কাছে সেরা ছিলো।

একদিন ই যথেষ্ট দুরগাপুর দেখার জন্য আপনি চাইলে থাকতে পারেন কিন্তু আমরা যেহেতু সুনামগঞ্জ জাওয়ার প্ল্যান করছি আমরা পরেরদিন ঠিক সাত টায় বের হয়ে পরি। ও আসল কথাটা তো বলাই হয় নাই। নেত্রকোনা কিন্তু আর একটা জিনিসের জন্য বিখ্যাত সেটা হচ্ছে ‘গয়নাথের বালিশ’ মিষ্টি। সো নেত্রকোনা এসে ঘুরে যাবো আর গয়নাথের বালিশের টেস্ট নিবো না সেটা কি হয়! আর সুনামগঞ্জ গেলে ও নেত্রোকোনা যাইতে হবে সো লেইট না করে বের হয়ে পরি। দুরগাপুর থেকে নেত্রকোনা যাওয়ার দুইটা রাস্তা আছে আমরা ঢেওটুকন হয়ে নেত্রকোনা সদরে গেসি। এখানে দুইবারে আপনার খরচ হবে ৯৫ টাকা। গয়ানাথের বালিশের টেস্ট নিয়ে সুনামগঞ্জের পথে যাত্রা করি। একদিনে সব কাভার করতে হবে আমরা সুনামগঞ্জ সদরে না গিয়ে ভিতরের অলি গলি দিয়ে যাওয়ার সিধান্ত নেই এতে করে সময় বাচবে। এটা কিন্তু বেশ ঝাক্কির পথ। অনেকবার পরিবহন পরিবর্তন করতে হবে। বেশির ভাগ সময় ই বাইকে থাকতে হবে। দুরগম গিরি কান্তার মরু পার হয়ে যখন আমরা তাহিরপুর পৌছাই তখন ঘড়ির কাটা আড়াই টা বাজে। শীতের দিন হওয়ায় বেশি সময় পাওয়া যাবে না। তাই আমরা কোথাও বেশি সময় থাকতে পারি নাই। কিন্তু টেকেরঘাট নিলারদি লেইক, বারিক্কার টিলা, জাদুকাটা নদী, লাউরের গড় আর শিমুল বাগান দেখার জন্য এনাফ সময়। জায়গা গুলো কাছাকাছি ই। কিন্তু আপনি যদি জাদুকাটা নদীতে জলকেলি করতে চান তাহলে আপনাকে অবশ্যি সময় নিয়ে যেতে হবে। জাদুকাটা নদী ও এক সময় বালুর জন্য বিখায়ত ছিল এখন সেটা সোমেশ্বরই নদী। এর পানি ও সচ্ছ নিল। এসবের সৌন্দর্য আসলে লিখে শেষ করা যাবে না।

রুট এবং খরচ। (YMCA গেস্ট হাউজে থাকার রুম গুলো দুইজনের উপযোগী আবার বাইক কিংবা অটো যাই ই ভাড়া করেন না কেন দুইজন করে বস্তে পারবেন তাই আমি দুইজনের খরচ মেনশন করছি)
ঢাকা থেকে দুরগাপুর যাওয়ার বেশ কয়েকটা মাধ্যম আছে, আমি যেটা ফলো করছি সেটাই বলছি।
মহাখালি থেকে দুরগাপুরের সরাসরি বাস সারভিস চালু আছে। এই রুটে মামনি পরিবহণ বেশ জনপ্রিয় ই বলতে হবে। মহাখালি থেকে দুরগাপুর ৩৫০ টাকা ভাড়া।
YMCA গেস্ট হাউজে দুই জনের রুম ৬০০ টাকা ভাড়া। এদের পরিবেশ এক কথায় দারুন।
সারাদিন অটো ভাড়া ৬০০-৯০০ এর মধ্যে। তবে মাঝে ১০০ টাকা টোল দিতে হয় সেটা কে দিবে বলে নিবেন। আমাদের ড্রাইভার নরেন আর আঞ্জুল মিয়া এক কথায় ছিলো অসাধারণ। এদের কথা আমাদের অনেক দিন মনে থাকবে। আমরা পার রিকশা ৭০০ করে ভাড়া করছিলাম আর টোল ওরাই দিবে কিন্তু পরে আমরা ৮০০ করে দেই।

আপ্নারা চাইলে অটো ভাড়া করার জন্য,
নরেন ০১৯৪৭৩৪১৩৫৯
আঞ্জুল ০১৯৯২৪১৫৩৭৫
যোগাযোগ করতে পারেন।
দুরগাপুর বাজারে নিরালা হোটেলে ভাল খাবার পাওয়া যায়। পার পারসন ১৫০ করে ভালো ফিস্ট দিতে পারবেন। স্বর্ণা গেস্ট হাউজের হোটেল টা ও ভালো।
পরেরদিন নেত্রকোনা সদরে যাওয়ার জন্য,
ব্রিজঘাট থেকে ঢেওটুকোন অটো ভাড়া জনপ্রতি ৪০ টাকা এরপর আপনাকে কংস নদী পার হতে হবে নৌকা ভাড়া দিতে হবে জনপ্রতি ৫ টাকা, আবার অটোতে নেত্রকোনা সদর ভাড়া ৫০ টাকা। অটোর এই জার্নি টা শিউরলি আপনার ভাল্লাগে। দুই পাশেই বিস্তৃত ফসলের মাঠ।
এতদুর এসে গয়ানাথের বালিশ টেস্ট না করে কি যাবেন। নেত্রকোনা থেকে আমাদের পরের গন্তব্য ধরমপাশা। চাইলে আপনি বাসে করে নেত্রকোনা থেকে মোহনগঞ্জ হয়ে ও যেতে পারেন। যদি সময় কম থাকে সেক্ষেত্রে বাইক ই আপনার জন্য শ্রেয়। নেত্রকোনা থেকে ধরমপাশা বাইক ভাড়া ২৫০ টাকা। ধরমপাশা থেকে যেতে হবে মধ্যনগর বাজার। চাইলে আপনি বাইকে ও যেতে পারেন কিন্তু এক্ষেত্রে অটো নিলে আপনার কিছু টাকা সেইভ হবে। অটোতে ৫০ টাকা করে ভাড়া নিবে। মধ্যনগর নদীর ঘাটে নেমে আপনার নদী পার হতে লাগবে ৫ টাকা করে। এরপর আর কোন অটো বা বাস কিচ্ছু নাই এখানে শূধু বাইকের খেলা। বলতে পারেন আপনি টাঙ্গুয়ার হাওরের এরিয়া তে চলে এসেছেন। মধ্যনগর বাজার থেকে আপনাকে যেতে হবে তাহিরপুর। আপনি চাইলে এখান থেকেই বাইক একেবারে ভাড়া করতে পারেন যারা আপনাকে টেকেরঘাট, টাঙ্গুয়ার হাওর, শিমুল বাগান সব দেখাবে, সেক্ষেত্রে ভাড়া কিছুটা বেশি ই পরবে কিন্তু সময় বাঁচবে। আমরা ভেঙ্গে ভেঙ্গে যাওয়াই পছন্দ করছি কারন টাকা ও সেইভ করা দরকার। মধ্যনগর বাজার থেকে তাহিরপুর বাইক ভাড়া ৩০০ করে কিন্তু বাইক অয়ালারা অনেক বেশি চাইবে সো একটু দামদামি করবেন। আর এর মধ্যে আপনাকে বেশ কয়েকবার টল দিতে হবে বাইক প্রতি ৬০ করে সেটা ও আপনাকে দিতে হবে। মধনগর বাজার থেকে তাহিরপুরের রাস্তা পুরটাই টাঙ্গুয়ার হাওয়ারের মধ্য দিয়ে। আপনি যখন হাওরের মাঝখান দিয়ে যাবেন সেটা এক কথায় অসাধারণ। অবশ্য বর্ষা কালের সিনারিয়ো ভিন্ন। আর রাস্তা ও অনেক। তাহিরপুর নেমে আবার আপনাকে বাইক ভাড়া করতে হবে। আপনি কিভাবে ঘুরতে চান সেটা আগেই বাইকয়ালার সাথে ফিক্সড করে নিবেন নইলে আপান্র পকেট থেকে অতিরিক্ত কিছু টাকা যাবে। আমারা যখন তাহিরপুর পৌছাই তখন দুপুর আড়াইটা হাতে বেশি সময় ও নাই। আমরা বাইক ঠিক করি আমাদের কে টেকেরঘাট, বারিক্কা টিলা ঘুরিয়ে শিমুল বাগানে নামিয়ে দিবে। ভাড়া ৩০০ করে।
একদিনে ঘুরলে আপনি বেশি সময় কোথাও দিতে পারবেন না। তবে হাওরের মধ্যে বাইক রাইড ট্যুরের বাড়তি পাওনা। শিমুল বাগান থেকে আপনি সুনামগঞ্জ ব্যাক করতে চাইলে বেশ কয়েকটা উপায় আছে। শিমুল বাগান থেকে বাইক রিসারভ করে আস্তে পারেন কিংবা। যাদুকাটা নদী পার হয়ে বাইন্নাকুলা বাজারে এসে বাইক কিংবা অটো তে করে সুনামগঞ্জ আস্তে পারেন। অটো তে লোকাল ভাড়া ১০০ করে।

অতি সম্প্রতি সুনামগঞ্জ বাস স্ট্যান্ডে সিলেটের বিখ্যাত পানসি হোটেলের শাখা ওপেন হইছে সো সারাদিন এমন লম্বা জার্নির পর চাইলেই আপনি কঠিন এক ফিস্ট দিতে পারেন। আর পানসি কিংবা পাঁচ ভাইয়ের খাবার নিয়ে তো নতুন করে বলার কিছু নাই 
আর সুনামগঞ্জ থেকে হানিফ কিংবা শ্যামলী তে ঢাকা৫৫০ টাকা ভাড়া।
আর খরচ এদিক সেদিক হতে পারে।

source: Omar Faruk‎ <Travelers of Bangladesh (ToB)

Share:

Leave a Comment