তাজের প্রেমে

তাজমহল। একটি প্রেমের নাম। একটি প্রেমের গল্পের নাম। প্রেম আর ভালোবাসায় ভোর করেই তাজমহলের গড়ে ওঠা। পুরনো ইতিহাস বাদ দেই, সেটা সবই কম বেশী জানে। এই গল্পের শুধু অনন্য স্থাপনা তাজমহলের আকর্ষণের গল্প থাকুক।

তাজমহল এমনই একটি স্থাপনা যে এটি যারা দেখেননি তারাও এটাকে ভালোবাসেন বা প্রেমে পরেন আর যারা ওকে দেখেছে তারা আরও বেশী করে ভালোবেসে ফেলে বা আরও গভীরভাবে তাজমহলের প্রেমে পরে যায়। বাধ্যই হয় বলা যায়। তাজমহল, তার অবস্থান, ইতিহাস, ঐতিহ্য, আভিজাত্য, কারুকাজ, সম্মোহনী ক্ষমতা সবকিছু নিয়েই সবাইকে আকুল আবেগ আর অন্যরকম একটা বন্ধনে বেঁধে ফেলে।

একটু খেয়াল করলেই দেখবেন, ছোট-বড়-মধ্য বয়সী বা বৃদ্ধ প্রত্যেকটা সাধারণ মানুষ যারা একটু আধটু বেড়াতে ভা ভ্রমণ করতে ভালোবাসে। তাদের সব সময়ের একটা অন্যতম ভ্রমণ আকর্ষণ হল তাজমহল। এখনো বাড়ির বড়দের বা বৃদ্ধদের দেশের বাইরে কোথায় যেতে চান জানতে চাইলে এক কথায় মনের একটা অপূর্ণ বাসনা ব্যাক্ত করে, একবার তাজমহল দেখতে চাই! আহ কি ভীষণ আকুলতা একবার তাজমহল দেখতে চাওয়া।

আপনি যদি শুধু তাজমহলের নাম শুনে আর ছবি দেখেই ওর প্রেমে পরে গিয়ে থাকেন আর ওকে নিবিড়ভাবে ভালোবেসে থাকেন তবে জীবনে একবার অন্তত আপনার তাজমহল ঘুরে আসা উচিৎ, কষ্ট করে হলেও। দেখবেন তাজকে কাছ থেকে দেখার, ছোঁয়ার, নিজের মত করে আলতো স্পর্শ করার অনুভূতি সারাজীবনের একটা অনন্য অর্জন হয়ে থাকবে আপনার সবটুকু জুড়ে।

আপনি যখন কলকাতা থেকে ট্রেনে বা প্লেনে করে আগ্রায় নামবেন, তখন থেকেই তাজমহলের একটা অন্য রকম অনুভূতি আপনাকে নাড়া দেবে। এরপর হোটেলে একটু বিশ্রাম নিয়ে আপনি যখন তাজ দেখতে বের হবেন নানা রকম রোমাঞ্চকর অনুভূতি খেলা করবে আপনার ভিতরে। অনেক দিনের স্বপ্ন দেখা, না দেখে ভালোবেসে ফেলা কারো সাথে অনেক অপেক্ষার পরে, অনেক ত্যাগের বিনিময়ে প্রথম দেখা হবার অনুভুতির মত।

টিকেট কেটে লাইনে দাঁড়ানোর পরে, হালকা তল্লাশির পরে যখন তাজমহলের ফটকে ধুকবেন, হয়তো ঢুঁকেই হতাশ হয়ে পরবেন তাজমহল দেখতে না পেয়ে। কারন সামনে পরবে বিশাল সবুজ ঘাসের লন আর লাল পুরনো আমলের স্থাপনা। ভাববেন ভুল যায়গায় এসে পরেছেন বোধয়। কিন্তু না, একটু সামনে এগিয়ে দুই পাশের সবুজ লনের মাঝখানে দাড়াতেই দেখতে পাবেন বিশাল লোহার গেট। সেই মুঘল আমলের। যে গেটেই ভিতর দিয়েই আপনি প্রথম দর্শন পাবেন প্রিয় তাজের। দূরে, ধবধবে সাদা, শ্বেত পাথরে সেজে দাড়িয়ে আছে যমুনার পারে।

আর অপেক্ষা করা আপনার পক্ষে সম্ভব হবেনা, তাই ঢুকে পড়ুন ঝটপট। বিশাল গেটের ভিতর দিয়ে ওপাশে গিয়েই আপনি দেখা পাবেন এতো দিনের অপেক্ষার, আপনার সামনে শ্বেত পাথরে সেজে, হেসে দাড়িয়ে আছে প্রিয় তাজমহল। সামনে বিশাল বিশাল ফুলের বাগান, সবুজের মখমলের মত মিহি ঘাসের গালিচা, নানা রকম ছোট-বড়-মাঝারি পাতা বাহারের সাঁজে সেজে আছে পুরো তাজমহল খোলা আঙিনা। যত ধীরে পারুন হাঁটুন। ধীরে ধীরে চারপাশের ফুল বাগান, ফোয়ারা, বসার বেদী, ছবি তোলার বেঞ্চি, পাথরের শান বাঁধানো সিঁড়ি, বর্ণীল সবকিছুর খুব ধীরে ধীরে উপভোগ করতে করতে এগোতে থাকুন তাজমহলের মূল আঙিনায়। আপানর একদম সামনেই দাড়িয়ে আছে আপানর অনেক দিনের স্বপ্ন দেখা তাজমহল!

উঠে পড়ুন তাজমহলের বেদীতে। আগে চারপাশটা ঘুরে ঘুরে দেখুন সময় নিয়ে। চলে যান তাজমহলের পিছনে যমুনার পাড়ে দাঁড়ানো তাজমহলের দেয়ালের কাছে। যেখানে ধীর লয়ে বয়ে চলেছে শুষ্ক যৌবনা যমুনা। যমুনার ওপারে ভঙ্গুর কালো তাজমহলের অসম্পূর্ণ দেয়ালের ধ্বংসাবশেষ আপনাকে বুঝিয়ে দেবে শাহজাহানের শেষ জীবনের দিনের কথা! কেমন কেটেছিল তার দূরের আগ্রা ফোরটে বন্দী দশায়।

তাজমহলের দুইপাশে রয়েছে আরও দুটি অনন্য স্থাপনা, একটা অতিথিশালা আর একটা মসজিদ। সময় থাকলে ঘুরে দেখতে পারেন ওগুলোও। এরপর পুরো তাজমহলের বাইরের অংশ ভালো করে দেখা হলে যেতে পারেন তাজমহলের ভিতরে আছে মমতাজের সমাধি আর শাহজাহানের আবেগের, ভালোবাসার আর অমর প্রেমের ছড়াছড়ি। প্রতিটি পাথরে, পাথরের খাঁজে, ভাঁজে, নানা আসবাব আর ঐতিহ্যের সকল কিছুতে। মমতাজের প্রতি শাহজাহানের অনিঃশেষিত ভালোবাসার পরশ।

এরপর, তাজমহল ঘুরে দেখা শেষ হলে, যখন ফেরার পথ ধরবেন দেখবেন কেমন একটা আকর্ষণের আপনি ঠিক হেটে যেতে পারছেননা বা আপনার মন ফিরে যেতে চাইছেনা। একটা অদ্ভুত বাঁধনে, মায়ায়, টানে আর আবেগে বাঁধা পরছেনে যেন। ফিরে যেতে যেতেই মন খারাপ হয়ে যাবে। এমন ভালোলাগার আর ভালোবাসার যায়গা ছেঁড়ে চলে যাবার ব্যাথায়। তবুও যান, একবার ঘুরে আসুন, স্পর্শ করে দেখুন প্রিয় তাজমহলকে তার বিশালতা, ভালোবাসা আর অসীম আবেগকে।

ফিরে এসে যখন সৃতি চারনা করবেন বা নিজেদের ছবি দেখেবন, দেখবেন আবারো প্রেমে পরেছেন!

তাজের প্রেমে!

কিভাবে যাবেনঃ ঢাকা থেকে আগ্রার তাজমহল যাওয়া আজকাল আর তেমন কোন কঠিন কাজ নয়। বেশ কয়েকভাবেই যাওয়া যায় আগ্রাতে। ঢাকা থেকে কলকাতা হয়ে প্লেনে আগ্রা বা ঢাকা থেকে দিল্লী প্লেনে, দিল্লী থেকে ট্রেন, বাস বা ট্যাক্সিতে আগ্রা।

অথবা ঢাকা থেকে কলকাতা বাস বা ট্রেনে গিয়ে কলকাতা থেকে আগ্রা প্লেনে। সবচেয়ে কম খরচে যাবার উপায় হচ্ছে ঢাকা থেকে বাস বা ট্রেনে কলকাতা, কলকাতা থেকে ট্রেনে আগ্রা। থাকার হোটেল পাবেন ১০০০ টাকা থেকে যত দামী চান। আর খাবার খরচ ভারতের অন্যান্য শহরের মতই স্বাভাবিক ও সাধ্যের মধ্যে।

Post Copied From:Sajol Zahid‎>Travelers of Bangladesh (ToB)

Share:

Leave a Comment