দিল্লি, সিমলা, মানালি যাত্রা

অনেক দিন থেকেই আম্মুকে নিয়ে কোথাও যাবো চিন্তা করছিলাম। প্রায় ২ মাস চিন্তা ভাবনা করেছি, বিভিন্ন ব্লগ পরেছি, টিওবি তে সিমলা মানালি নিয়ে লিখা গুলো পরেছি। অনেক চিন্তা ভাবনার পর ঢাকা- দিল্লির প্লেন টিকেট করে ফেল্লাম। কোথাও যাওয়ার ১ মাস আগে টিকেট করে ফেললে দাম আসলেই অনেক কম পরে। যদিও ভিসা হবে নাকি এইটা নিয়ে ১ টা টেনশন থেকে যায়। যাই হোক, বেশি কথা না বারিয়ে আসল কথায় চলে আসি। যেহেতু ২১-২৩ তারিখ পর্যন্ত ইন্ডিয়া তে হলি উৎসব চলে, আমি সেই সময়টুকু এড়িয়ে যেতে চেয়েছিলাম, কারন ঐ সময় সব কিছু বন্ধ থাকে। কোনও যাত্রা শুরুর আগে আপনার কিছু জিনিষ দেশ থেকে শেষ করে যাওয়া উচিত।

১। প্লেন টিকেট, ভিসা।
২। যে হোটেল এ থাকবেন সেটা বুক করে নিবেন আগে থেকে, তাহলে ঝামেলা কম হবে। আমি যেহেতু আম্মু আর ভাই নিয়ে গিয়েছিলাম, এইসব আগে থেকেই করে নিয়েছি।
৩। এক প্রদেশ থেকে অন্য প্রদেশ এ গেলে বাস এর টিকেট পারলে বাংলাদেশ থেকে বুক করে যাবেন। (আমি ‘ঘুরে আসি” নামক ১ টি গ্রুপ থেকে টিকেট নেই)।
৪। ছোট ১ টা ব্যাগ রাখবেন ময়লা রাখার জন্য, আমি যেকোনো জায়গায় গেলেই সেটা কাছে রাখি। ব্যাগ এর ১ টা কর্নারে রেখে দিবেন। খুব কষ্টের কিছুনা। ময়লা গুলা সেখানে রেখে পরে কোন ডাস্টবিনে ফেলে দিবেন।

দিল্লি যাত্রা ঃ
দিল্লির উল্লেখযোগ্য জায়গা গুলো দেখার জন্য ২দিন হাতে রাখতে পারেন। আপনার ২দিন এইভাবে ভাগ করে নিতে পারেন, ১। পুরানো দিল্লি ২। নতুন দিল্লি।
আমি প্রথমদিন পুরানো দিল্লিতে ছিলাম। কোলকাতা থেকে ফ্লাইট এ দিল্লিতে পৌছাতে সময় লাগে ২ ঘণ্টা। দিল্লিতে পৌছাতে আমাদের রাত ১২ঃ৩০ বেজে যায়। আমরা হোটেল থেকে পিকআপ নিয়েছিলাম। কারন, এত রাত এ ঝামেলা করতে চাইনি। হোটেল এ পৌছাতে আমাদের ২ টার মত বেজে যায়। হোটেল এ পৌঁছে কিছু খেয়ে আমরা ঘুমিয়ে যাই। সকাল এ উঠে আমরা ৯টার মধ্যে বের হয়ে যাই। সকাল এ বের হয়ে থমকে যাই। মনে হল পুরান ঢাকা চলে আসছি। পাহারগঞ্জ এর রাস্তা গুলোতে অনেক কোলাহল। চিপা রাস্তা, দোকানপাট, রাস্তার দোকান, অটো, সব মিলিয়ে আজব অবস্থা। পুরান দিল্লিতেই আপনি অনেক বিদেশি দেখতে পারবেন। আমরা যেই দৃশ্য দেখে অভ্যস্ত, তারা সেটাই সময় নিয়ে দেখতে আসে পুরান দিল্লি তে। যাই হোক, আমার মা সকাল সকাল আঙ্গুর কিনে নেয় অনেক গুলা। সেই আঙ্গুর নিয়ে আমরা ১ টা অটো ভাড়া করলাম। ১ টা কথা বলে নেই, দিল্লি তে কখনই ১টা গাড়ি ভাড়া করে ঘুরবেন না, এইটা বোকামি। অনেক বেশি ভাড়া পরবে, আর অনেক কিছুই আপনি দেখতে পারবেন না। আর ফোন এ OLA, UBER অ্যাপ থাকলে ভাড়া টা চেক করে নিতে পারবেন।

যাই হোক, চলে গেলাম “ দিল্লি জামা মসজিদ “ এ। অসাধারণ ১টা জায়গা। যত সকাল এ যাবেন, মানুষ তত কম থাকবে। আমার আম্মু জামা মসজিদ এ নামাজ পরে নিল, কারন আম্মুর অনেক ইচ্ছা ছিল আগে থেকেই। জামে মসজিদ এ আপনি ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটাতে পারবেন, কারণ জায়গাটা এতই শান্তিপূর্ণ। ৫০ রুপী দিয়ে আপনি ছাদে উঠতে পারবেন, আর আরও ১০ রূপি দিয়ে মিনারএ। উঠতে কিছুটা সময় লাগে, কিন্তু মিনার এ উঠলে আপনি পুরো দিল্লির ১টা সুন্দর ভিউ পেয়ে যাবেন। আমাদের জামে মসজিদ এই অনেক সময় কেটে যায়, কারন আমরা তারাহুরা করতে চাইনি।মিনার থেকেই দেখলাম যে নিচে অনেক ভিড় হয়ে আছে, সুনলাম সেটাই “মিনা বাজার”। তাই বের হয়েই গেলাম বিখ্যাত “ মিনা বাজার/ চোর বাজার” দেখতে।এটাকে “Sunday market” বলে। রবিবার এ মিনা বাজার এ আলাদা রকম ভিড় দেখা যায়। যদিও আহামরি কিছুই নাই। সব ই সেকেন্ড হ্যান্ড জিনিষ। আমরা মিনা বাজার দেখে “লাল কিলা” দেখতে গেলাম। কিন্তু বাইরে লাইন দেখে বের হয়ে এলাম। এসব জায়গায় আসলে সকাল সকাল যেতে হয়। বের হয়ে এসে কিছুক্ষণ ঘুরলাম “চাঁদনি চক” এ।

মার্কেটটি মূলত বিয়ের শপিং এর জন্য বেস্ট। অনেক কম দাম এ অনেক ভাল কিছু পারবেন। চাঁদনি চক দেখে আমাদের অনেক দেরি হয়ে গেল, লাল কিলা পাশে থাকায় আমরা লাল কিলা দেখতে গেলাম, কিন্তু বিশাল লাইন দেখে বের হয়ে আসলাম। লাল কিলা এবং মিনা বাজার এর আশে পাশে অনেক খাবার দোকান আছে, ছোট ছোট ভ্যান আছে যারা ফল (আনারস,পেপে, পেয়ারা) নিয়ে দাড়িয়ে থাকে। সেগুলো খেয়ে দেখতে পারেন। এরপর অটো ভাড়া করলাম কুতুব মিনার এর জন্য। কুতুব মিনার এ যেয়ে দেখি একই অবস্থা। বিশাল লাইন… তাই আর না দাড়িয়ে থেকে চলে গেলাম বিখ্যাত সারোজিনি মার্কেট এ । মার্কেট টা দেখার মত। মেয়েদের জন্য আমি বলবো বেস্ট। অনেক কম দাম এ অনেক কিছু কিনা যায় (জুতা, জিন্‌স, টপ, কানের দুল, গলার মালা, ব্যাগ আরও হাবিজাবি)। যাই হোক, রাত এ আমাদের সিমলার জন্য বাস থাকায় আমরা তাড়াতাড়ি হোটেল এ চলে যাই।

হোটেলে দুপুরে খেয়ে ব্যাগ হোটেল এর লবিতে রেখে আবার বের হলাম। হটাত মনে হল, এই অল্প সময়ে কোথায় কোথায় জাউয়া যায়। তারপর মাথায় আসলো “নিজামুদ্দিন দারগাহ”, অটো ভাড়া করে চলে গেলাম দরগাহর রাস্তার সামনে। রাস্তাটাতে অনেক বেশি ভিড়। রাস্তার আসে পাশে দোকানে ভরা, সবাই বার বার বলছে জুতা খুলে হেটে জেতে। সামনে নাকি আর জুতা রাখার জায়গা নেই। আর বলল ফুল অথবা চাদর (যেটা মাজার এর উপর দেয়) কিনে নিতে। যাই হোক, আমি বলে দিয়েছি কিছুই কিনব না।মানুষ গুলা খুবই বিরক্তিকর। আমরা জুতা রেখে হাটা শুরু করি (এইটা রাখাতে টাকা নেয় নি)। তারপর প্রায় আধা ঘণ্টা এই খালি পায়ে হাটতে হয়েছে, খুব বেশি বিরক্ত লাগছিল যখন দেখি মাজার এর একদম সামনে ই জুতা রাখার জায়গা আছে। যাই হোক, মাজারে ঢুকে আমার চোখের সামনে আমির খান এর মুভি “PK” র সিন গুলা ভেসে আসছিল। যেই ফুল আর চাদর গুলা মানুষ ওইখানে দিচ্ছে, সেগুলা নিয়ে আবার দোকানে বিক্রি করছে। মানুষ টাকার জন্য এইদিকে ওইদিকে চেয়ে বেড়াচ্ছে। যাই হোক, বেশি সময় ওইখানে থাকি নাই। বের হয়ে আবার অটো নিয়ে “ ইন্ডিয়া গেট” দেখতে গেলাম। ছুটির দিন হউয়াতে অনেক মানুষ ছিল। কিন্তু খারাপ লাগবে না। পাশে ১ টা মিউজিয়াম আছে, ওইটাও দেখতে পারেন। তারপর আবার হোটেলে চলে আসলাম। সন্ধ্যায় পাহারগঞ্জ এর রাস্তায় ১ টা কাবাব খাই। এখন ও আমার মুখে স্বাদ লেগে আছে (নাম ভুলে গিয়েছি)। তারপর অপেক্ষার পালা বাস এর জন্য… রাত ১০ টায় মঞ্জু কি টিলা থেকে আমাদের বাস ছাড়ে…
*** মানালি থেকে ফিরে ও আমরা দিল্লি তে ২দিন থাকি, সেটার বর্ণনা একদম শেষে আবার দিব।।।।
প্লেন ফেয়ারঃ ঢাকা-কলকাতা- দিল্লি ( ১৬০০০ টাকা- রিটার্ন টিকেট)
দিল্লি এয়ারপোর্ট – পাহারগঞ্জঃ ৬০০ রূপী।
হোটেলঃ ১ রাত ১৫০০ রুপী।
বাস (দিল্লি-সিমলা)ঃ ৩৭৫০ টাকা (৩জন)

Source: Al Fariha Arpa <Travelers of Bangladesh (ToB)

Share:

Leave a Comment