নেপাল ট্যুরের এডভেঞ্চার এক্টিভিটি
নেপালে ঘুরতে যাওয়ার অসংখ্য কারণের মধ্যে একটি ছিল রক্তে এড্রেনালিনের সর্বোচ্চ মাত্রা অনুভব করা। তাই ৫ রাত ৬ দিনের সফরের পুরোটাতেই ছিল এডভেঞ্চার এক্টিভিটির প্রাধান্য। নিজের মনমত ট্যুর প্লানকে বাস্তবে রূপ দেয়ার পুরো ক্রেডিট নেপালি বন্ধু Raziv এর বন্ধু Mahesh ও Sharad এর Sun N Fun Holidays টিমের। সেই সাথে প্রতিটি ইভেন্টেই ছিল তাদের দেয়া স্পেশাল ডিসকাউন্ট। এই ট্যুরের মূল ৪ টি আকর্ষণ তথা এডভেঞ্চার এক্টিভিটি নিয়েই কথা বলব এবার।
বাঞ্জির ক্ষেত্রে দ্য লাস্ট রিসোর্ট মাথায় রেখেই ট্যুর সাজিয়েছিলাম। পরবর্তীতে জিপফ্লায়িংয়ের খোঁজখবর নিতে গিয়ে পোখারায় হাইগ্রাউন্ড নেপালের বাঞ্জির ব্যাপারে জানতে পারি। যদিও টাওয়ার বাঞ্জি ও ৭০ মিটার উঁচু থেকে জাম্প তবুও সময় ও খরচ বাঁচাতে প্লান চেঞ্জ করে ফেলি। হাইগ্রাউন্ড নেপালে বাঞ্জি ও জিপফ্লায়িং কম্বো অফারে খরচ পড়েছে ১০৯ ইউএস ডলার। সেইসাথে ছবি ও ভিডিওতে খরচ পড়েছে ২৫ ইউএস ডলার। একটা সার্টিফিকেট ও টিশার্টও উপহার পেয়েছি। আর এগুলোর সাথে হোটেল এসকর্টতো অবশ্যই আছে। এখানে উল্লেখ্য এটি বিশ্বের উচ্চতম ও দীর্ঘতম জিপলাইন।
প্যারাগ্লাইডিং করেছি আমাদের হোটেলের পাশেই গোল্ডেন হেভেনের সাথে। ছবি ও ভিডিওসহ মোট খরচ পড়েছে ৭৫ ইউএস ডলার জনপ্রতি।
রাফটিং করেছি পোখারা থেকে কাঠমান্ডু ফেরার পথে ত্রিশূলী নদীতে ২ ঘন্টারও বেশি সময়। জনপ্রতি খরচ পড়েছে ৩৫ ইউএস ডলার। অপ্রতিরোধ্য আনন্দের সাথে মজাদার লাঞ্চও ফ্রী ছিল।
দেশে থাকতে Mahesh এর সাথে শেয়ার করেছি আমার প্লান। সে ঠিক আমার মনের মত করেই সব ব্যবস্থা করে রেখেছে। ঐখানে Sharad প্রতিদিন আমাদের ডেওয়াইজ প্লান রিভিউ করেছে। যে কারণে এত বাঁধা সময়ের মধ্যেও মন ভরে দেখে এসেছি ও করে এসেছি যা চেয়েছিলাম। এই দুটো মানুষ মূহুর্তের জন্যেও বিরক্ত হয়নি আমাদের সীমাহীন চাহিদা পূরণে। এছাড়াও Bikashএর মত সহযোগিতা মনোভাবাপন্ন ড্রাইভার ছিল বলে আমাদের কোথাও হুটহাট মুভ করতেও সমস্যা হয়নি।
আর অভিজ্ঞতার কথা বলতে গেলে বাঞ্জিতে ঝাঁপ দেয়ার ঠিক আগ মূহুর্তেও ভয় টের পাইনি। ঝাঁপ দেয়ার মূহুর্তটা আসলেই ভয়ংকর। আগে থেকে ভেবে রাখা মাথার মধ্যে পড়ন্ত বস্তুর সূত্র, নিউটনের মহাকর্ষ সূত্র সব উধাও হয়ে মাথা পুরোটাই ফাঁকা হয়ে যায়। কিন্তু তার পরের অনভূতিটাই অসাধারণ। জীবনের প্রতি এক অপ্রতিরোধ্য ভালবাসা জন্মে যায়। তাই আমি মনে করি জীবনে একবার হলেও বাঞ্জি করা উচিত!
জিপফ্লায়িং অত্যন্ত মজার একটা ইভেন্ট। শুরুতে প্রচন্ড নিম্নমুখী গতি থাকলেও মাঝখানে যাবার পর মনে হয় খুব ধীরে ও স্মুথলি যাচ্ছে। আর দুই পাহাড়ের ঠিক মাঝখানে নিজেকে আবিষ্কার করার অনুভূতি আসলেই অন্যরকম!
প্যারাগ্লাইডিং আপাত দৃষ্টিতে অত্যন্ত নিরীহ একটা রাইড মনে হলেও আমার ফার্স্ট টেক অফেই এক্সিডেন্ট হয়। নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বেই পা উঠে যাওয়াতে পাহাড়ের কিনার থেকে ঢালে পড়ে যাই। সবাই ভেবেছিল আমি হয়তো আর করবনা। কিন্তু প্রচন্ড ইচ্ছেশক্তি থেকে ১৫ মিনিট পর আবার সফলভাবে করতে পারি। আপনি যদি পাখির মত ভেসে পাখির চোখে পোখারা দেখতে চান তাহলে প্যারাগ্লাইডিং ইজ এ মাস্ট!
প্রচন্ড লো ব্যাক পেইন নিয়েও পরদিন রাফটিং করেছি যা আমার জীবনের সবচে আনন্দদায়ক অভিজ্ঞতা। সাঁতার না জানাতে শুরুতে একটু ভয় কাজ করলেও পরে মনে হয়েছে সারাদিন করতে পারলে আরো ভাল লাগত! খরস্রোতা নদীতে পানির তোড়ে ভিজে যাওয়ার আনন্দের সাথে কোনকিছুর তুলনা হয়না। আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে “চাপ্পু মার…হেইয়ো…” চিৎকারে সবার বোট চালানোর এ স্মৃতি বেঁচে থাকবে আজীবন। ততদিন হয়তো পাহাড়ের গায়ে আর প্রতিধ্বনিত হবেনা আমাদের ফেলে আসা উল্লাস, সমবেত গান!
এসব এডভেঞ্চার এক্টিভিটিতে কমবেশি ঝুঁকি থেকেই যায়। তাই দুটো কথা বলব। আপনার যদি প্রচন্ড উচ্চতাভীতি থাকে তাহলে আপনার জন্যে না করাটাই উত্তম। শুধুমাত্র ভয় অনেক দুর্ঘটনার জন্ম দেয়। আর কোন রাইড করার আগে অবশ্যই মনোযোগ সহকারে প্রতিটি নির্দেশনা শুনে নেবেন। প্রয়োজনে প্রশ্ন করে জেনে নেবেন কিছু জানার থাকলে।
হ্যাপি ট্রাভেলিং 🙂
Post Copied From:Syeda Rumi>Travelers of Bangladesh (ToB)