পামারস্টোন: পৃথিবীর সর্বশেষ দ্বীপ
পুরো দুনিয়া জুড়ে হাজারও ভ্রমণ পিপাসীর কাছে সবচেয়ে আকর্ষণীয় ভ্রমণ জায়গাগুলোর মধ্যে সমুদ্র আর দ্বীপ প্রথম সারিতে পরবে। তাদের এই ভ্রমণ চাহিদাকে মাথায় রেখে বিশ্বের বহু দেশ তাদের সমুদ্র এবং এর কাছের দ্বীপ গুলোকে উন্নত থেকে উন্নত করে মুনাফা আয় করে নিচ্ছে প্রতিনিয়ত। অসাধারণ সৌন্দর্য ভরা এই জায়গা গুলো সবার মন জয় করে নিতে পারে। পামারস্টোন তেমনি এক অসাধারণ দ্বীপ। যদিও আর দশটি দ্বীপ থেকে পামারস্টোনকে আলাদা করেই ভাবা হয় কেননা একে পৃথিবীর সর্বশেষ দ্বীপ বলা হয়।
প্রায় দেড়শ বছর আগে ১৮৬৩ সালে উইলিয়াম মাস্টার্স নামের এক ইংলিশ ভদ্রলোক অনেক প্রতিকূলতা কাটিয়ে এই দ্বীপটি আবিষ্কার করেন। কুক দ্বীপের প্রধানের মেয়ে আকাকাইঙ্গোরোকে বিয়ে করে তিনি এই দ্বীপে চলে আসেন। উইলিয়াম আজ থেকে বহু বছর আগে বসতি শুরু করলেও আজও পামারস্টোন সভ্য জগত থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন। পুরো দ্বীপটিতে মাত্র ৬২ জন মানুষ বাস করেন।
পুরো দুনিয়ায় যেখানে জনসংখ্যা বেড়েই যাচ্ছে সময়ের তালে সেখানে এই জায়গায় সামান্য কিছু মানুষের বাস এবং এরা সকলেই উইলিয়ামের বংশধর। দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে বছরে মাত্র দুইবার একটি জাহাজ প্রয়োজনীয় সামগ্রী নিয়ে এই দ্বীপটিতে নোঙর করে। এসময় ইচ্ছে করলে কোনো পর্যটকও আসতে পারে। তবে পর্যটক যদি কোনো মতে ফেরার সময় জাহাজ ধরতে না পারে তাহলে তাকে বছরের বাকি দিনগুলো এই দ্বীপেই কাটাতে হবে। কারণ এখানে না আছে কোনো মোবাইল নেটওয়ার্ক বা ইন্টারনেট সুবিধা।
অনেকেই মনে করেন যে পামারস্টোন দ্বীপটির মালিক মূলত উইলিয়াম মাস্টার্স। তবে আসলে কিন্তু তা নয়। এই দ্বীপের প্রথম মালিক ছিলেন একজন ব্রিটিশ ব্যবসায়ী যার নাম জন ব্রান্ডার। এই ব্যবসায়ীর হয়ে দ্বীপটি দেখাশোনা করতেন উইলিয়াম। তিনি দ্বীপে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করতেই দ্বীপের চারপাশে অসংখ্য পাম গাছ লাগাতে শুরু করেন। প্রথমে প্রতি ছয় মাস অন্তর অন্তর ওই ব্রিটিশ ব্যবসায়ী নারিকেলের তেল সংগ্রহ করার জন্য পামারস্টোনে আসতেন। কিন্তু ধীরে ধীরে তার দ্বীপে আসার হার কমতে শুরু করে।দ্বীপের অধিকাংশ জনগণেরই পেশাই হল মাছ ধরা। তাদের নিজস্ব একটি ছোট অফিসও আছে। এই দ্বীপের বাচ্চাদের শিক্ষার জন্য রয়েছে স্কুলেরও ব্যবস্থা। দ্বীপের মানুষ বছরে একবার করে ঘুরতে যায়। তবে এই ঘুরতে যাওয়া অবশ্য পার্শ্ববর্তী কোনো দ্বীপের মধ্যেই সীমাবদ্ধ।
প্রশান্ত মহাসাগরের বুকে টানা নয়দিন জাহাজ চালিয়ে বিক্ষুব্ধ ঝড় পাড়ি দিয়ে তবেই এই দ্বীপে পৌঁছান সম্ভব হয়। দ্বীপে আসার পথে হাজারো বাধা থাকায় সচরাচর কেউ এই দ্বীপে আসতে চায় না। অসাধারণ এই সৌন্দর্য এর দ্বীপটি এখনও অনেকের কাছেই এই আধুনিক যুগে এসেও বিশাল এক বিস্ময়। তবে কারও যদি অত্যধিক প্রয়োজন হয় অথবা আনন্দ নেয়ার ইচ্ছা থাকে। তাহলে লন্ডন থেকে বিমানযোগে লস অ্যাঞ্জেলস হয়ে তাহতি পৌঁছুতে হয়। এরপর তাহতি থেকে নৌকায় করে দ্বীপে যেতে হয়। সেই নৌকাতেও আবার এখানে পৌছাতে টানা পাঁচদিন সময় লাগে। তবে একবার যদি আপনি শত বাধা পেরিয়ে দ্বীপের কাছাকাছি পৌঁছুতে পারেন তাহলে দেখতে পাবেন নৌকা নিয়ে একদল মানুষ আপনাকে অভ্যর্থনা জানানোর জন্য তৈরি হয়ে আছে।