প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করতে ঘুরে আসুন ‘ঘুঘুডাঙা’

প্রকৃতি দেখার ক্ষুধা যাদের তীব্র, সজীব কোনো প্রকৃতির খবরে ননস্টপ তাদের মনে লালা ঝরতেই থাকে।

যখন খবর পেলাম ঘুঘুডাঙার এই তালগাছের অপরূপ দৃশ্যের, তখন থেকেই অস্থিরতায় ছিলাম।
কবে যাবো? কবে যাবো! কবে যাবো।

দুজন সিদ্ধান্ত নিয়েই নিলাম অবশেষে।
অনেকে অনেকভাবে যায়। আমরা কীভাবে গিয়েছি, সেটা বলছি।

ঢাকা থেকে লালমনি এক্সপ্রেসে উঠেছি। রাত ১০.৩৭ এর ট্রেন। ছাড়লো রাত ১১.৫৫ তে।
সকাল ৬ টায় নামলাম সান্তাহার স্টেশনে।
স্টেশনের পাশে পাবলিক টয়লেট আছে। সেখানে ফ্রেশ হয়ে স্টেশনের পাশ থেকে অটোতে গেলাম বালুডাঙা। ভাড়া একেকজনের ২০ টাকা। বেশি দূরে না।
এই বালুডাঙাই হলো নওগাঁ জিরো পয়েন্ট।

এখানে নাস্তা করে নিলাম।
এখান থেকে পেগাসাস নামে বাস যায় সোজা নিয়ামতপুর। ভাড়া জনপ্রতি ৭০ টাকা।
যারা ডাইরেক্ট বাস পাবে না, তারা রাজশাহীগামী বাসে করে মান্দা ফেরিঘাট স্ট্যান্ডে নামবেন। একই রুট।

আমরা পেগাসাসে উঠে কিছুদূর যেতেই গাড়ি নষ্ট। কপাল আর কাকে বলে! বাস থেকে নেমে গেলাম। ফাঁকা রাস্তা। এত যাত্রী। গাড়ি নাই।
একটা অটো পেলাম। অটোতে করে মান্দা ফেরিঘাট নামলাম।

সেখান থেকে মাহেন্দ্র বা সিএনজি করে (বাস অনেকক্ষণ পরপর) সোজা গেলাম নিয়ামতপুর।
কথা ছিলো নিয়ামতপুর নেমে একটা অটো, সিএনজি বা ভ্যানে করে যাবো ঘুঘুডাঙা। বেশি দূর না। ১২-১৫ কিলো হবে।

কিন্তু নিয়ামতপুর বাজারে এক ভাই আছেন। তাকে বললাম আমরা এসেছি। বলাটা সোনায় সোহাগা হলো।
তিনি তার শোরুমে নিয়ে গেলেন। চা খাওয়ালেন। বাতাসে শীতল হলাম। বাজার ও প্রশাসনিক এরিয়া ঘুরে দেখালেন।
তারপর তার বাইকে করে নিয়ে গেলেন আমাদের স্বর্গে।

এখান থেকে ২-৩ টা রাস্তায় যাওয়া যায়। তুলনামূলক ভালো রাস্তা দিয়ে উনি নিয়ে গেলেন।
তালগাছের সারির কাছে পৌঁছানোর আগেই আমার মন ভরে টইটম্বুর হয়ে গেলো।

দুপাশে বিস্তীর্ণ ধানক্ষেত। সবুজ, সবুজ আর সবুজ। মাঝখানে সুন্দর রাস্তা। মাঝে মাঝে মাটির ঘর। মাটির দোতলা ঘর। গ্রামের মানুষ। নীল আকাশ।
ছোটো ছোটো আমক্ষেত (বাগান না বলে ক্ষেত বলতেই মজা পাই)।
মন জুড়ানো।
যাওয়ার পথের যে দৃশ্য, সেই ছবিগুলো আরেকদিন দেখাবো।

ঘুঘুডাঙা গিয়ে দেখি আমরা ছাড়া কেউ নাই। কারণ আমরা শুক্র-শনি বাদ দিয়ে গিয়েছি।
ফুরফুরে বাতাসে নীরব এক স্বর্গে সময় কাটালাম। তারপর আশপাশের বাজার মন্দির, মসজিদ দেখে ফেরত এলাম।

অনেকের ধারণা বহুদূর। যাওয়া অনেক কষ্ট। মোটেও না।
আমরা একদিনেই এটা দেখে, কুসুম্বা মসজিদ দেখে ফেলেছি দুপুর একটার মধ্যে। এর মাঝে কত রেস্ট। সময়ক্ষেপণ।
খরচ একেকজনের একেক রকম হয়।
আমরা দুদিন ঘুরেছি। একেকজনের দেড় হাজার টাকার মতো লেগেছে।

ছবিগুলো দেখুন। মন জুড়ান। তৃষ্ণার্ত হলে অস্থির হোন। চলে যান ঘুঘুডাঙা।
জীবন একটাই। এক জীবনে এত এত অপূর্ণতা। তাই যতটা পারুন, মনকে প্রশান্তি দিন।

আপনার মাধ্যমে যেন পরিবেশ সামান্য নোংরা না হয়, খেয়াল রাখবেন অবশ্যই।

Source: Nasir Khan <Travelers of Bangladesh (ToB)

Share:

Leave a Comment