বগালেক ও কেওক্রাডং, বান্দরবান
১৬ তারিখ রাতে ঢাকা থেকে বান্দরবানের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করি। সকালে বান্দরবান পৌঁছে প্রথমে নাস্তা সেরে রুমা বাজার বাসস্ট্যান্ড এ যায়। ৯টার বাসে চড়ি। এরপর শুরু হয় পাহাড়ের গা ঘেঁষে যাত্রা, উচু নিচু পাহাড়ি রাস্তা, একদিকে ভয়ংকর খাদ। কিন্তু পাহাড়ের যা রুপ দেখবেন তাতে সব ভয় ভুলে যাবেন। Yজাংশন পৌঁছানোর পর ১০-১৫ মিনিটের ব্রেক। এরপর রুমা আর্মি চেকপোস্টে নাম এন্ট্রি করতে হবে। খাবার ও পানি এখান থেকে নিতে পারেন কমে পাবেন। তিন ঘণ্টা পর রুমা বাজারে পৌছালাম। এখানে গিয়ে গাইড নিতে হবে। টিওবিতে অনেক গাইড এর নাম্বার আছে আগে থেকে যোগাযোগ করে যেতে পারেন। গাইডকে নিয়ে রুমা বাজার আর্মি ক্যাম্পে গেলাম।
ওখানে বললো আজকে গিয়ে আজকেই ফেরত আসতে হবে কাল ১২টার পর থেকে আর বাস চলবে না কারণ পরশু উপজেলা নির্বাচন। আমাদের মাথার উপর আকাশ ভেঙে পড়ল। এখানে একটা রাত না থেকে কিভাবে যাব। অনেক বার অনুরোধ করলাম কিন্তু কাজ হলো না। প্রায় একঘন্টা বসে চিন্তা করলাম কি করব। তারপর সিদ্ধান্ত নিলাম যাব। আমরা ২জন ছিলাম দুপুর ১টার সময় মোটরবাইকে বগালেকের দিকে রওনা দিলাম। ১ঘন্টা পর বগালেকে পৌছাই।চিন্তা করলাম আজকেই কেওক্রাডং এ উঠে যাব। গিয়েই আর্মি ক্যাম্পে যাই বলি কেওক্রাডং এ যাব। তারাও একই কথা বলল। আমরা বললাম আজকে কেওক্রাডং গিয়ে রাতটা থেকে কালকে ১২টার মধ্যে চলে আসব।
অনেক অনুরোধ করলাম। তারা বলল বগালেকে থাকতে কারণ ৬টার পর কেওক্রাডং এ এন্ট্রি হয় না। তখন ২:৩০ বাজে। আমরা বললাম সমস্যা নাই ৬টার আগেই পৌছাব। তারপর হয়ত আমাদের দেখে আর্মির মায়া হলো, বলল তাড়াতাড়ি রওনা দিতে। আমরা আসলে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না অনুমতি পেয়েছি। ডিম ও কলা খেয়ে ৩:০০ রওনা দিলাম। ভারী খাবার খেলাম না তাহলে উঠতে সময় লাগত বেশি। পথ চলছি আর চিন্তা করছি পারবো তো?তারপর আবার কড়া রোদ। এদিকে সময় আছে ৩ঘন্টা।যত তাড়াতাড়ি পারি চললাম। মাঝে মাঝে রেস্ট নিলাম। প্রথম ১ঘন্টা বেশি উচুনিচু, কষ্টও হয় বেশি। এরপর ১/২ ঘন্টা পর দার্জিলিং পাড়ার বাড়ি দেখতে পেলাম। এখানে রেস্ট নিলাম ২০ মিনিট এবং তেতুলের জ্যুসটা অবশ্যই খাবেন পুরাই অমৃত। এরপর আবার যাত্রা শুরু।
সূর্য যখন দিগন্তে তখন কেওক্রাডং এর চূড়া দেখতে পেলাম। সব ক্লান্তি, কষ্ট দূর হয়ে গেল। আমরা যখন এন্ট্রি করতে যাই ঘড়িতে ৫:৩০ বাজে। আলহামদুলিল্লাহ আড়াই ঘন্টার মধ্যেই আমরা চূড়াই উঠতে পেরেছি। উঠেই আগে এক বালতি পানি কিনে গোসল করি ও সূর্যাস্ত দেখি। প্রচুর খুদা লাগছিল কিন্তু ৯টার আগে খাবার হবে না পর্যটক অনেক। কি আর করা চূড়াই উঠে চাদঁ খাইতে থাকলাম। দূরে দেখতে পাবেন সংসং পাড়ার আলো। পরদিন খুব সকালে আবার বগালেকের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করলাম। পথে চিংড়ি ঝর্ণায় একটু সময় কাটালাম। বগালেকে গোসল করে দুপুরের খাবার খেয়ে রুমা চলে আসি। এইখান থেকে বান্দরবান। তারপর বিকালে ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করি।
খরচপাতি(একজন)–
*ঢাকা >বান্দরবান – ১২৪০/=(যাওয়া ও আসা)
*বান্দরবান >রুমা বাসস্ট্যান্ড – ১৫*২=৩০/=(অটো)
*রুমা বাস ভাড়া – ১১০*২=২২০/=
*রুমা>বগালেক – ২০০*২=৪০০/=
*দুপুরে হালকা খাবার – ৬০/=
*কেওক্রাডং রুম-২০০/=
*রাতের খাবার – ২০০/=
*সকালের খাবার – ৪০/=
*দুপুরের খাবার – ১৫০/=
গাইডের_খরচ-
*প্রতিদিন – ৬০০/=
*থাকা,খাওয়া ও যাতায়াত খরচ আপনাকে বহন করতে হবে।
*এজন্য বেশি মানুষ হলে ভাল তবে ১জন গাইড ১৫জন ট্যুরিস্ট এর জন্যে।
কিছু_প্রয়োজনীয়_তথ্য-
১.বান্দরবান থেকে রুমার উদ্দেশ্যে সর্বশেষ বাস বিকাল ৪টা ও রুমা থেকে বান্দরবানের দিক সর্বশেষ বাস বিকাল ৩:৩০।
২. রুমা আর্মি চেকপোস্টে বিকাল ৪টা সর্বশেষ এন্ট্রি।
৩. জাতীয় পরিচয়পত্র এর ফটোকপি অবশ্যই নিয়ে যাবেন।
৪. বগালেকে সাঁতার কাটবেন না। গোসল করা যদিও নিষেধ তবে পাড়ে করলে কিছু বলে না।
৫. পর্যাপ্ত খাবার পানি ও স্যালাইন রাখুন পাহাড়ে উঠার সময়।
৬. বর্ষাকালে অবশ্যই ভালো গ্রীপের স্যান্ডেল নিয়ে যাবেন।
৭. পাহাড়িদের সাথে খারাপ ব্যবহার করবেন না। অনুমতি ছাড়া ছবি তুলবেন না।
৮. কেওক্রাডং এ সর্বশেষ এন্ট্রি বিকাল ৬টা তবে ঋতুভেদে পরিবর্তন হতে পারে।
৯. কেওক্রাডং এ ভালো ভিউ এ থাকতে প্রতিরাত ৩০০/=
১০. বগালেকে থাকা ২০০/=
১১. বাঙালি গাইড না নেওয়ার চেষ্টা করবেন।
১২.শীতকালে অথবা বর্ষাকালে যাবেন। গ্রীষ্মকালে প্রকৃতি রুক্ষ পাবেন।
১৩. কেওক্রাডং এ থাকার জন্য যোগাযোগ করুন-০১৮৬০৪৩৬৯৭৩(লালা বম)
১৪. কেওক্রাডং পর্যন্ত জীপে যাওয়া যাবে।
Source: Zahid Jony <Travelers of Bangladesh (ToB)