বঙ্গোপসাগরের বুকে ফুটে উঠা এক দ্বীপ

চারিদিকে বঙ্গোপসাগরের অথই পানি। দুরে একের পর এক দ্বীপ ও ম্যানগ্রোভ বন দেখা যাচ্ছে। পানির সাথে এ যেন সবুজের মিতালী। দেশীয় পাখির পাশাপাশি অসংখ্য অতিথি পাখি ও হাসগুলো একটু পরপর উড়ছে আবার পানিতে পড়ে জলকেলি করছে। তাই দেখে সাদা বকের দল কি অার পিছিয়ে থাকতে পারে! তারাও উড়ছে আর মাছ ধরছে। শীতের এ সময়টাতে এখানে কত রকমের অতিথি পাখি, হাস ও বক রয়েছে তার যেন কোন হিসেব নেই। স্থানটির নাম সোনারচর। পটুয়াখালী জেলার রাঙ্গাবালী উপজেলায় বঙ্গোপসাগরের মাঝে এর অবস্থান।
চরকুকরী হতে সকালে ছোট বোটে রওনা করে অতিথি পাখি, বিভিন্ন দ্বীপের ম্যানগ্রোভ বন, মেঘনা নদীর মোহনা, জেলেদের মাছ ধরা ও বঙ্গোপসাগরের উথাল পাথাল ঢেউ এর খেলা দেখতে দেখতে কখন যে আমরা পৌছে গেলাম সোনারচরে তা টেরই পেলাম না। একসঙ্গে এতো কিছু দেখে মনটা আনন্দে ভরে গেল। সোনারচরে সুন্দর একটি সি বিচ অাছে যার অনেকটাই সবুজ শ্যাওলার গালিচা দিয়ে মোড়া। অপূর্ব ঝাউবনের পাশাপাশি বিভিন্ন গাছপালা সমৃদ্ধ সি বিচটি মন কেড়ে নেবে নি:সন্দেহে। পাশাপাশি এখান হতে সূর্যাস্তের অপূর্ব দৃশ্য দেখা যায়। জন কোলাহল মুক্ত এ দ্বীপটিতে পর্যটক খুব কম বিধায় এবং কাছাকাছি কোন লোকালয় নেই বলে যারা নির্জনতা পছন্দ করেন তাদের ভালো লাগবে তা বলাই যায়। তাই ইচ্ছে করলে ঘুরে অাসতে পারেন সোনারচর হতে।
কিভাবে যাবেনঃ সোনারচর যাওয়ার জন্য ভোলার চরফ্যাশনের চরকুকরী হয়ে যাওয়া ভালো। ঢাকা হতে সন্ধ্যায় লঞ্চে ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার বেতুয়া ঘাট।তাসরীফ,ফারহান ও কর্নফুলী সিরিজের বিভিন্ন লঞ্চ এ রুটে প্রতিদিন চলাচল করে। ভাড়া সিঙ্গেল কেবিন ১০০০ টাকা, ডাবল কেবিন ১৮০০/২০০০ টাকা, ডেকে ২৫০ টাকা। ভোরে বেতুয়া ঘাট হতে মোটর সাইকেল/ইজিবাইকে চরফ্যাশন। ভাড়া মোটর সাইকেলে ২জন ১০০ টাকা। সময় লাগে ২৫/৩০ মিনিট। চরফ্যাশন হতে বাসে দক্ষিণ আইচা। সেখান থেকে ইজিবাইকে কচ্ছপিয়া ঘাট। অথবা চরফ্যাশন হতে মোটর সাইকেলে কচ্ছপিয়া ঘাট। ভাড়া ২ জন ২০০/২৫০ টাকা।সময় লাগে ৪৫ মিনিট। ইচ্ছে করলে বেতুয়া ঘাট হতে মোটর সাইকেলে সরাসরি কচ্ছপিয়া ঘাট যেতে পারেন। ভাড়া ৩০০/৩৫০ টাকা। সময় লাগে ১ ঘন্টার মতো। কচ্ছপিয়া ঘাট হতে ট্রলার / স্পীড বোটে চরকুকরী। সময় লাগে ট্রলারে ১/১.৩০ ঘন্টা। স্পীড বোটে ২০ মিনিট। ট্রলার ভাড়া ৪০ টাকা। স্পীড বোট ১৫০ টাকা জন প্রতি। রিজার্ভ স্পীড বোট ১২০০ টাকা। কচ্ছপিয়া ঘাট হতে চরকুকরীর ট্রলারের সময় দুপুর ১২ টা ও ৪ টা এবং চরকুকরী হতে কচ্ছপিয়ার ট্রলারের সময় সকাল ৯টা ও দুপুর ২ টা।স্পীডবোট সারাদিন পাওয়া যায়। চরকুকরী হতে ট্রলার /স্পীড বোটে সোনারচর। ট্রলারে সময় লাগে ২/২.৩০ ঘন্টা। স্পীড বোটে সময় অনেক কম লাগে। ছোট ট্রলার ভাড়া ২৫০০/৩০০০টাকা। ইচ্ছে করলে কচ্ছপিয়া ঘাট হতেও ট্রলার / স্পীড বোটে সরাসরি সোনারচর যাওয়া যায়।
কোথায় থাকবেনঃ সোনারচরে এখনও থাকার কোন জায়গা নেই। স্থানটি নির্জন বলে সকালে গিয়ে সন্ধার মধ্যেই সাধারণত সবাই ফিরে আসে। তবে বেশি লোকজন হলে বনবিভাগের অফিস হতে অনুমতি নিয়ে ক্যাম্পিং করে থাকা যায়। অবশ্য নিরাপত্তার জন্য এখানে রাতে না থাকাই ভালো। কাছাকাছি চরমোন্তাজে থাকা যায়। সবচেয়ে ভালো হয় চরকুকরীতে থাকলে। চরকুকরীতে নতুন একটি সরকারি রিসোর্ট হয়েছে। সকল সুযোগ সুবিধা সমৃদ্ধ অত্যাধুনিক এই রিসোর্টটিতে ডাবল রুম ভাড়া ২০০০ টাকা । এছাড়া চরকুকরী বাজারে টিনের কয়েকটি বোর্ডিং রয়েছে। ভাড়াও কম। বাজেট ট্রাভেলার হলে সেখানে থাকতে পারেন। কুকরী বাজারে অনেক খাবার হোটেল পাবেন এবং প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে পারবেন।
কি কি দেখবেনঃ প্রচুর দেশি পাখির পাশাপাশি অসংখ্য অতিথি পাখির মেলা।
# মেঘনা নদীর মোহনা।
# বঙ্গোপসাগরের বুক চিরে চলার অসাধারন অনুভূতি। # বিভিন্ন দ্বীপ ও ম্যানগ্রোভ বন।
# মাঝিদের মাছ ধরার দৃশ্য।
# সোনারচরের সবুজ সি বিচ, ঝাউবন ও অসংখ্য গাছপালা সমৃদ্ধ বন।
# অপূর্ব সূর্যাস্ত।
পরামর্শঃ সোনারচর এখনো অনেক নির্জন বলে বড় দল করে যাওয়া ভালো। এতে নিরাপত্তার পাশাপাশি খরচও সাশ্রয় হবে।
# অবশ্যই দুরবীন ও লাইফ জ্যাকেট সাথে নিবেন।
# ভোলার লঞ্চগুলো সাধারণত ঢাকা হতে বিকেল ৫.৩০/৬ টার মধ্যে ছেড়ে যায়। বেতুয়া ঘাট হতে বিকেল ৪.৩০/৫ টার মধ্যে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। তাই সময় হিসেব করে যাবেন।
# মোটর সাইকেলসহ সকল ক্ষেএে ভাড়ার ব্যাপারে অবশ্যই দরদাম করে নিবেন।
# চরকুকরীতে কোন বিদ্যুৎ নেই। রাতে সোলার এর মাধ্যমে বাতি জ্বলে। তাই সাথে পাওয়ার ব্যাংক রাখবেন এবং ক্যামেরার ব্যাটারি ফুল চার্জ দিয়ে নিয়ে যাবেন।
# সোনারচরে কোন দোকানপাট নেই। তাই সাথে পর্যাপ্ত খাবার ও পানি নিবেন। ইচ্ছে করলে গোসল করতে পারেন।। রোদ থেকে বাচার জন্য অবশ্যই ক্যাপ ও গামছা নিবেন।
# ইচ্ছে করলে সোনারচর ও চরকুকরীর পাশাপাশি চড়মোন্তাজ, শিপচর, তাড়ুয়াদ্বীপ সহ অন্যান্য চরগুলো ঘুরে আসতে পারেন। ভালো লাগবে।
সোনারচরে লোকজন নেই বলে অামরা কোন পলিথিন, চিপসের প্যাকেট বা খালি বোতল পাইনি। তাই এ স্থানটি এখনও অনেক পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রয়েছে। যারা এখানে যাবেন বা অন্য কোথাও ঘুরতে যাবেন দয়া করে কোথাও কোনো ময়লা অাবর্জনা ফেলে আসবেন না। বরং সাথে করে নিয়ে অাসবেন এবং নির্দিষ্ট স্থানে ফেলবেন বা পুড়িয়ে ফেলবেন। আমাদের দেশটা আমাদেরই। তাই সবার দায়িত্ব আমাদের সুন্দর এ দেশটাকে পরিচ্ছন্ন রাখা।
৫ টির বেশী ছবি দেয়ায় এডমিন ইচ্ছে করলে অতিরিক্ত ছবিগুলো মুছে দিতে পারেন। লেখাটি অনেক বড় হওয়ায় আন্তরিকভাবে দুঃখিত।

Share:

Leave a Comment