বরিশাল ভ্রমণ কথন

খুব বেশি জায়গা ঘুরতে পারি নি সময় কম থাকায় কিন্তু জেলা হিসেবে ঘুরেছি, চেস্টা করেছি ৫ টা জেলা কাভার করার। শুরু হয় ঢাকা থেকে লঞ্চে বরিশালে। অনেক লঞ্চ আছে বরিশালের, মানামীতে যাওয়ার ইচ্ছা ছিল কিন্তু সার্ভিস বন্ধ থাকায় কুয়াকাটা ২ এ যাই, ভাল লাগায় এটাতেই ব্যাক করি আবার। চাইলে ঐতিহ্যবাহী প্যাডেল স্টিমারেও যেতে পারেন।সকালে বরিশাল লঞ্চঘাট থেকে নেমে চট্টগ্রাম মুসলিম হোটেলে নাস্তা করে অটোতে করে রুপাতলি বাস স্ট্যান্ড। সেখান থেকে বাসে ঝালকাঠি, তারপর অটো রিজার্ভ করে ঝালকাঠির কীর্তিপাশা জমিদার বাড়ি, বর্তমানে এটায় মেয়েদের স্কুল ভিতরের অংশে এবং ডানপাশে, বামপাশ এবং সামনে পরিত্যক্ত কিন্তু ছমছমে পরিবেশে ঘুরতে ভালই লাগবে কিন্তু সাবধানে, সেখানে থাকতেই একটি গ্রুপ এসে দেয়ালে গাছের শিকর বেয়ে উপরে উঠে যায়, ভংগুর একটা জায়গা এভাবে না উঠাই ভাল।

জমিদার বাড়ি ঘুরা শেষে অটো ভিমরুলি ভাসমান বাজার, জেনে রাখা ভাল যে বরিশালের ভাসমান বাজার বরিশাল, ঝালকাঠি এবং পিরোজপুর ৩ জেলার বিস্তৃত, ভিমরুলি বাজার থেকে নৌকা ঘন্টাচুক্তিতে ভাড়া করে সরূপকাঠি, আটঘর কুরিয়ানা ঘুরে আবার ভিমরুলি আসতে পারবেন, ট্রলার নেওয়ার চেয়ে ডিংগি নৌকা নেওয়া ভাল কারণ এটায় পুরো প্রাকৃতিক পরিবেশটা উপভোগ করা যায় আর ছোট খালে ঢুকা যায় যেটা ট্রলারে যাওয়া যায় না। এখন আগস্ট মাস শেষ, পেয়ারা বাজারও শেষ প্রায়, আমড়াসহ অন্যান্য ফল ও সবজি বিকিকিনি দেখতে পারবেন। ঘুরা শেষে দুপুরে খেয়ে নিতে পারেন বৌদির ভাসমান হোটেলে।

ভিমরুলি থেকে অটোতে যেতে পারবেন করাপুর মসজিদ যেটা মূলত ১৮০০ দশকের দিকে নির্মিত এবং বর্তমানে মিয়াবাড়ি মসজিদ নামে পরিচিত। মসজিদ দেখা শেষে নবগ্রাম রোড হয়ে চলে আসুন নথুল্লাবাদ বাস স্ট্যান্ড। এখান থেকে অটোতে যেতে পারবেন গুঠিয়া মসজিদ এবং যাওয়ার পথে পরবে দূর্গাসাগর দীঘি, এ দুটো যায়গা ঘুরে আবার চলে আসুন নথুল্লাবাদ বাস স্ট্যান্ড যেখান থেকে কুয়াকাটা যাওয়ার বাস পাবেন। কুয়াকাটা যাওয়ার বাস রুপাতলি বাস স্ট্যান্ড থেকেও আধা ঘন্টা পর পর পাওয়া যায় কিন্তু সেগুলো লোকাল, ভাড়া ২৪০ জনপ্রতি, থামিয়ে থামিয়ে যাত্রী নিয়ে যেতে প্রায় সাড়ে চার ঘন্টা সময় নিবে কিন্তু নথুল্লাবাদ থেকে লং রুটের বাসে ৫০/৬০ টাকা বেশি দিয়ে মাত্র ৩ ঘন্টায় চলে যেতে পারবেন কুয়াকাটা।

কুয়াকাটায় পৌছে প্রথম কাজ হোটেল ঠিক করা, অনেক হোটেল আছে, আগে থেকে বুকিং না দিয়ে নিজে দেখে দরদাম করে রুম নেওয়া ভাল কারন এখানকার রেট অনেক উঠানামা করে আর প্রচুর দরদাম করতে হয়। হোটেল সী কুইন, তাজ, সানফ্লাওয়ার এগুলা বীচের কাছে, একটু হাটাপথ দূরে হোটেল স্যান্ডি, নীলাঞ্জনা, লাক্সারি চাইলে আছে হোটেল গ্রেভার ইন, কুয়াকাটা গ্রান্ড আর বীচের ডানপাশে অনেক রেস্ট হাউস আছে। দরদামের আগে অবশ্যই রুম দেখে নিবেন নাহলে পস্তাবেন। যদি বিকেলের মধ্যে এসে ফ্রেস হয়ে খাওয়াদাওয়া করে নিতে পারেন তাহলে সূর্যাস্ত দেখতে ঘুরতে চলে যান বাইক অথবা ভ্যানে করে। আমার মতে ভ্যানে যাওয়া ভাল কারণ আশপাশে দেখতে দেখতে যেতে পারবেন আর বাইকে গেলে এরা হুট করে যায় আর আসে এবং বাইকাররা খুব কমার্শিয়াল, এত্তোগুলা স্পটের কথা বলে ঘুরায় অল্পকিছুক্ষন, কারণ পুরো যায়গাটাই দেখার মত আলাদা স্পট বলে তেমন কিছু না। সময় থাকলে বীচের ২ পাশেই ঘুরতে পারেন আর না থাকলে বীচের ডানপাশে মানে লেবুর চর যেদিকে সেদিকে অবশ্যই যাবেন, সূর্যাস্ত দেখতে পারলে সেটা আজীবন মনে থাকবে। এইগুলো প্রথমদিনে সম্ভব না হলে পরের দিনে ঘুরবেন। বীচের বামে একটু আগালেই সী ট্যুরিজমের স্টল পাবেন, সেখান থেকে পরের দিন ১০ টার বোটট্রিপের টিকেট কেটে নিবেন জনপ্রতি ২৫০ করে। রাতে বারবিকিউ খেতে পারেন আর ভাত খেলে অবশ্যই প্যাকেজে খাবেন, এরপর ঘুম।

পরেরদিন সকালে ১০ টায় নৌকা ছাড়বে ফাতরার চরের উদ্দেশ্যে, এটি কুয়াকাটার পাশেই কিন্তু পরেছে বরগুনা জেলায়, সুন্দরবনের মত এটি বন্য প্রাণীর অভয়ারণ্য, যারা সুন্দরবন যাননি তারা কিছুটা বুঝবেন সুন্দরবন কেমন। যেতে যেতে অসাধারণ কিছু দৃশ্য পাবেন, মাছধরা ট্রলার যখন পাস করবে তখন নৌকা প্রচন্ড দোলা খাবে, নদী আর সাগরের মোহনার যখন পরবেন পানির কালার যে আলাদা তা স্পষ্ট দেখবেন। ফাতরার চর ঘুরা শেষে আবার নিয়ে আসবে কুয়াকাটা, চাইলে এদিন থাকতে পারেন কুয়াকাটা নাহলে ঢাকায় ব্যাক করার জন্য ডিরেক্ট বাস আছে, লঞ্চে ব্যাক করতে চাইলে বরিশাল/পটুয়াখালী হয়ে আসতে পারবেন। বরিশাল হয়ে আসলে লঞ্চে উঠার আগে চাইলে ৩০ গোডাউন বা বরিশাল ইউনিভার্সিটি ঘুরতে পারেন।২জনে জনপ্রতি ৩০০০-৪০০০ মত লাগবে আরাম আয়েশের উপর ভিত্তি করে যেমন লঞ্চে কেবিন নিলে বা হোটেলে এসি রুম চাইলে ৪০০০ এর মত পরবে আর এগুলা বাদ দিলে ৩০০০ বা কমেও ঘুরা সম্ভব সবগুলা জায়গা। মানুষ বেশি হলে খরচ আরো কমবে।

ঘুরতে গিয়ে কোথাও পরিবেশের ক্ষতি হয় এমন কিছু করবেন না। আপনার পরবর্তী প্রজন্ম যেনো একই সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারে সেজন্য সজাগ থাকবেন। স্থানীয়দের অবশ্যই ভালো ব্যবহার করুন। ওরাই আপনার গাইড।

Source: Rafiul Islam Adib<Travelers of Bangladesh (ToB)

Share:

Leave a Comment