বরিশাল ভ্রমনে যেভাবে যাবেন ও খরচাবলি
ঘুরে আসলাম বাংলার ভেনিস বরিশাল থেকে। যারা ১ দিনের সাপ্তাহিক ছুটি কাজে লাগাতে চান তারা অবশ্যই ঘুরে আসতে পারেন। এই এক ট্যুরে আপনি বরিশাল, ঝালকাঠি এবং পটুয়াখালী এই তিনটি জেলা ঘুরে আসতে পারবেন।
রুটঃ
সদরঘাট > বরিশাল > বানড়িপাড়া > আটঘর > কুরিয়ানা > ভীমরুলী বাজার > গুটিয়া মসজিদ > দুর্গা সাগর > বিবির পুকুর > বরিশাল লঞ্চঘাট > সদরঘাট
৩০ এপ্রিল রাতের লঞ্চে আমরা ৪ জন বরিশালের উদ্দেশ্যে রওনা করি। বড় ছুটি থাকায় সুরভী – ৯ এর টিকিট ২ দিন আগেই কেটে রেখেছিলাম। ৪ জনের জন্য আমরা একটি এসি ডাবল কেবিন নিয়েছিলাম ২০০০ টাকায়। লঞ্চ ছাড়ার কথা ৮.৩০ এ হলেও লঞ্চ ছাড়ে ৯.৪৫ মিনিটে। বুড়িগঙ্গা পার হওয়ার পর লঞ্চ যখন সামনে যাচ্ছিল মনে হচ্ছিল বাতাসে সবকিছু তছনছ করে দিবে। হালকা ঢেউ ছিল আর একটু পরপর ঢেউয়ের উপর আছড়ে পরছিল লঞ্চটি। অনেকখন নদীর সৌন্দর্য উপভোগ করে ঘুমাতে গেলাম কারন পরেরদিন সারা দিনের একটা সফর আছে।
লঞ্চ ৪.৩০ মিনিটে পৌঁছে বরিশালে। কিন্তু আমরা লঞ্চ থেকে নামি ৬ টার দিকে। তারপর যথারিতি নাস্তা করার জন্য রেস্টুরেন্ট খুজতে থাকি কিন্তু মে দিবস থাকায় সব দোকানপাট বন্ধ ছিল। তারপর সি এন জি/মাহেন্দ্র খুঁজা শুরু করলাম বানড়িপাড়া যাওয়ার জন্য তাও পাচ্ছিলাম না। সব ধরনের যানবাহন চলাচল নাকি বেলা ২ টা পর্যন্ত বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। একটা সি এন জি পাইলাম সে যেতে রাজি হইল। বরিশাল বাসস্ট্যান্ডে যাওয়ার পর পরিবহন শ্রমিকেরা আমাদের নামিয়ে দেয় কারন তারা কোন যানবাহন চলতে দিবে না।
বাসস্ট্যান্ড থেকে একটা বাস গরীয়ার পাড় যাচ্ছিল। ঐ বাসে উঠে গরীয়ার পাড় চলে গেলাম তারপর ঐখানে গিয়ে আগে সকালের নাস্তা করলাম। তারপর একটা অটো ঠিক করলাম যা আমাদের গুঠিয়া ব্রিজে নামিয়ে দিল। ঐখান থেকে একটা ভ্যান নিলাম বানড়িপাড়া ট্রলারঘাট পর্যন্ত। রাস্তা ফাকা থাকায় রাস্তার দুই পাশের সম্পুর্ন সৌন্দর্য উপভোগ করতে পেরেছিলাম।
৯.৩০ মিনিটে আমরা পৌঁছে যাই বানড়িপাড়া। ঐখানে গিয়ে মোটামুটি বড় সাইজের একটা ট্রলার ভাড়া করি ১২০০ টাকায়। আটঘর, কুরিয়ানা, সরুপকাঠি, ভীমরুলী বাজার হয়ে আবার আমাদের বানড়িপাড়া নিয়ে আসবে এই চুক্তি হল মাঝির সাথে।
কিছু শুকনা খাবার আর পানি নিয়ে আমরা যাত্রা শুরু করলাম ৯.৪৫ মিনিটে। নদী, পুকুর আর খালের সমারোহ দেখতে পারবেন এই ট্রলার ভ্রমনে। নদী পার হয়ে ট্রলার ঢুকবে খালে তারপর যাবে আর সরু খালে। খালের দুই পাশের সৌন্দর্য আপনাকে মুগ্ধ করবে। যত দূর চোখ যায় খালি পেয়ারা বাগান, আমড়া বাগান এবং পানের বাগান। ট্রলার খুব আস্তে চলায় মনে হবে আপনি কোন গহিন অরন্যের ভিতর সবুজের মধ্যে হারিয়ে যাচ্ছেন। যতই ছবি তুলছিলাম এই প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ছবিতে মলিন হয়ে যাচ্ছিল। তাই দুই চোখে মুগ্ধ হয়ে সৌন্দর্য উপভোগ করছিলাম।
১২ টার দিকে আমরা ভীমরুলী পেয়ারা বাজারে পৌছে যাই। ঐখানে ভাসমান বৌদির হোটেলে চা খেয়ে দুপুরের খাবারের অর্ডার করে চলে গেলাম নদীতে গোসল করতে। বাজারের দুই পাশ দিয়ে যখন আপনি ট্রলারে করে যাবেন মনে হবে আপনি ইটালির ভেনিসে আছেন। দুই পাশে আড়তদারদের বসার মাচাগুলা দেখলে অনেকটা এনসিয়েন্ট ফিলিং চলে আসে। আমরা নৌকা থামিয়ে বেশকিছুক্ষন আড্ডা দিলাম মাচায় বসে।
যেহেতু আমরা সিজনে যাইনি তাই বাজার একদম ফাঁকা ছিল। আর পেয়ারা বড় হতে এখনও দেড় মাস সময় লাগবে। পেয়ারা বাগান আর পেয়ারা বাজার ঘুরার জন্য সবচেয়ে ভাল সময় হচ্ছে জুন মাসের শেষ থেকে সেপ্টেম্বরের শুরু পর্যন্ত।
দুপুরে খাওয়ার জন্য জায়গাটা আমাদের খুব পছন্দ হয়েছিল। ঠিক নদীর উপর কাঠের মাচা করা আর আশেপাশে সবুজের সমারোহ। মাটির চুলায় রান্না করা হয়েছিল দুপুরের খাবার যার স্বাদ ছিল অমৃত। আমরা খেয়েছিলাম আলু আর চিংড়ি ভর্তা, ডিম, নদীর আইর মাছ, বেগুন ভাজা এবং ডাল। মাঝিসহ মোট ৮ জন খেয়েছিলাম বিল আসছিল ১২০০ টাকা। এখন বাজার না থাকায় উনারা রান্না করেন না আমরা অর্ডার করার পর শুধুমাত্র আমাদের জন্য রান্না করেছিল।
বিকেল ৫ টায় আমরা ফিরে আসি বানড়িপাড়াতে। যদিও আমাদের ২ টা পর্যন্ত ঘুরানোর কথা ছিল কাকা আমাদের ৫ টা পর্যন্ত ঘুরিয়েছে। কাকা অসম্ভব ভাল মানুষ যদিও একটু পরপর ক্ষেপে যায়। উনার নাম ফরাজী কাকা, ঐদিন সাথে ফোন না থাকায় আমাদের নাম্বার দিতে পারেনি।
বানড়িপাড়া থেকে আমরা চলে যাই গুঠিয়া মসজিদে ঐখানে গিয়ে আছরের নামায পড়ি। ইহা এশিয়ার অন্যতম বৃহত্তম জামে মসজিদ। বিশাল ১৪ একর জায়গার ভিতর আছে একটি মসজিদ, সুদৃশ্য মিনার, ২০০০০ লোকের ধারন ক্ষমতার ঈদগাহ, ডাকবাংলো, এতিমখানা, পুকুর আর ফুলের বাগান।
মসজিদ থেকে বের হয়ে চলে যাই দুর্গাসাগর দেখতে। ২০ টাকা দিয়ে টিকিট কেটে ভিতরে একটা চক্কর দিয়ে বের হয়ে মাগরিবের নামায পড়ে চলে যাই লঞ্চঘাট। তারপর রাতের লঞ্চে ঢাকা।
কিছু পরামর্শঃ
১. যারা ফ্যামিলি নিয়ে এই জায়গাগুলো ঘুরতে চান তারা ইচ্ছা করলে ফ্যামিলি নিয়ে যেতে পারেন।
২. ট্রলারের ভাড়া অবশ্যই দামাদামি করে নিবেন। প্রথমে ২০০০ টাকা চায়।
৩. ট্রলারে করে ঘুরার সময় অবশ্যই বেশি পানি সাথে রাখবেন। আর ট্রলার সিলেক্ট করার সময় উপরে কাপড়ের ছাউনি আছে এমন ট্রলার নিবেন কারন অনেকটা পথ রোদের তাপ খেতে হয়।
৪. লঞ্চে কেবিন আগে থেকে বুকিং দিয়ে রাখা ভাল।
খাবারঃ
আমরা যাওয়া এবং আসা দুইবারই লঞ্চে রাতের খাবার খেয়েছি।রুপচাঁদা, চিংড়ি ভর্তা, বেগুনভাজা, ডাল এবং ভাত ২৮০ টাকা করে নিয়েছিল।
বানড়িপাড়া বাজারে গরু দুধের চা এবং কাঁচা দুধের মিষ্টি পাওয়া যায় খেতে ভালই।
খরচঃ
ব্যক্তিগত খরচবাদে আমাদের জনপ্রতি খরচ হয়েছিল ২৬০০ টাকা।
বরাবরের মতই আমি দেখলাম আমরা সবাই নদীর সৌন্দর্য বজায় রাখার বেপারে একটু উদাসীন। আসুন আমরা সবাই নদীতে ময়লা আবর্জনা ফেলা থেকে বিরত থাকি এবং অন্যদের উৎসাহিত করি যেন কেউ ময়লা আবর্জনা না ফেলে।