বাগেরহাট ভ্রমণ সম্পর্কে তথ্যসমূহ
সম্পূর্ণ পড়তে কষ্ট হলে, শুধু “বাগেরহাট থেকে খান জাহান আলি মাজার” এই অংশটুকু পড়বেন, আশা করি সতর্ক হতে পারবেন। একা ঘুরতে যাওয়ার অভিজ্ঞতা যেমন ছিল তিক্ত আবার ছিল অনেক কিছু শিখার। বন্ধুদের সঙ্গ বা পেয়ে চলে গেলাম একাই ঘুরতে। উদ্দেশ্য ছিল, বাগেরহাট আবার প্যাডেল স্টিমার ভ্রমণ। বিস্তারিত এখানেই সব বলছিঃঢাকা থেকে হুলারহাট (পিরোজপুর) – প্যাডেল স্টিমার বা রকেট, ঢাকা ছাড়ে সন্ধ্যা ৬ঃ৩০ টায়, শেষ গন্তব্য মোড়লগঞ্জ। সদরঘাট গিয়ে স্টিমার ঘাঁটে গিয়েই স্টিমারের দেখা পাবেন। আমি যাবো হুলারহাট। পি-এস-লেপচা, আবার ওখানে এম-ভি-বেঙ্গলি, আমি উঠেছিলাম, পি-এস-লেপচা তে, ডেকের ভাড়া ২৩০ টাকা। আর কোন কেবিন/ ১ম শ্রেণি/ ২য় শ্রেণি টিকিট পাই নি। আগে থেকেই টিকিট কেটে রাখা ভালো, তাই, ডেকের টিকিট কেটে উঠে গেলাম ছাদে, অখানেই বসেই রাত সাড়ে ৯ টা পর্যন্ত কাটালাম। নিচে খেতে নেমে, এক পিচ্ছি কে, ১০০ টাকা দিয়ে রাতে খাওয়ার টেবিলে ঘুমানোর ব্যবস্থা করলাম। রাত ১০ঃ৪৫ এ পৌছালো চাঁদপুর, অখান থেকে যাত্রী নেমে উঠিয়ে বরিশাল পৌছালো ৪ঃ৩০ টায়। এবার একে একে ঝালকাঠি, কাউখালি ঘাঁটে নামিয়ে হুলারহাটে পৌঁছে দিবে সকাল ১০ঃ৩০ টা / ১১ টার মধ্যে। ঝালকাঠি আর কাউখালি ঘাঁটের মাঝে দেখতে পারবেন, গাবখান ব্রিজ, একটি মাজার শরীফ।
খরচঃ ডেক ভাড়া = ২৩০ টাকা ঘুমের ব্যবস্থা = ১০০ টাকা রাতের খাবার = ২০০ টাকা (এখানে দরদাম করলে কিছু কম নিবে, মেন্যু ছিল – ভাত, মুরগি, ভাজি, ডাল)হুলারহাট থেকে বাগেরহাট – ঘাট থেকে নেমে অটো করে নামবেন পিরোজপুর পুরান বাস স্ট্যান্ড বাস তাড়াতাড়ি ছাড়বে কিন্তু সিট পাবেন না, নতুন বাস স্ট্যান্ডে নামলে সিট পাবেন কিন্তু বাস ছাড়বে দেড়িতে। সেখান থেকে খুলনার আলাদা বাস ছাড়ে আবার বাগেরহাটের আলাদা বাস ছাড়ে অনেকটা তুরাগ স্টাইল যাত্রী নিবে আর যাবে একটানে। আমার ৪০ মিনিট লেগেছিল।
খরচঃ অটো = ২০ টাকা (নরমালি ১৫ টাকার মতো)বাস = ৫০ টাকা ( দাড়িয়ে গেলে ৪০ টাকা, আমি সিট পেয়ে গিয়েছিলাম তাই ৫০ টাকা পিরোজপুর থেকে বাগেরহাট)
সকালের নাস্তা = ৩৫ টাকা ( পরটা , ডাল -ভাজি)বাগেরহাট থেকে খান জাহান আলি মাজারঃ বাগেরহাট বাস স্ট্যান্ডে নামিয়ে দিলে, অখান থেকে প্রথমে খান জাহান আলি মাজার গেলে ভালো , মোটর রিক্সা, অটো যায়। যেহেতু একা গিয়েছি অটো যাচ্ছিলো না ওখানে, রিক্সা করে চলে যাই। এখানেই ঘটে আসল ঘটনা, রিক্সা থেকে নামার সাথে সাথে এক দোকানি সালাম দিয়ে মুসাফা করার জন্য হাত বাড়িয়ে দেয়, ভদ্রতার খাতিরে হাত বাড়িয়ে দিলে , আমার হাতে সুন্দর মতো কি এক দোয়া পড়ে, নাম জিজ্ঞাস করে হাতে “লাল ফিতা” বেধে দেয়, এবং এক প্যাকেটে আগরবাতি, মোমবাতি, আর তোবারক ভড়ে দেয়, বলে গয়ে হুজুরকে দিতে হুজুর আমার জন্য দুয়া করে দিবেন। তার ১০০ টাকা দাবি করে। যা বুঝার হয়ে গেল, আমি অলরেডি ট্র্যাপে পড়ে গেছি। যাইহোক আমি আগরবাতি, মোমবাতি নিয়ে ৫০ টাকা দিয়ে চলে গেলাম, মাজার ঘুরে দেখলাম, মসজিদে নামাজ পড়লাম, তারপর আগরবাতি, মোমবাতি দিতে আর মাজারের ভিতর ঘুরে দেখতে গেলেই আসল চুনা খাই। ঢুকতে গেলেই জিজ্ঞাস করে,মান্নত কি? খাসি নাকি গরু” আমি তো ওখানেই তব্ধা খেয়ে গেলাম। আমি বললাম,”কোনটাই নাহ, আমার তো মান্নত নেই,” আরেকজন আমাকে ভিতরে নিয়ে গেলেন, মাজারে গ্রিলে হাত রেখে উনার সাথে বলতে বললেন,” আমি মাজারের জন্য আজকে মিলাদে ১০০১ টাকা দান করলাম” আমি – ” আমার কাছে ১০০০ টাকা নাই” হুজুর – “আমি মাজারের জন্য আজকে মিলাদে ৫ কেজি মিষ্টি বাবদ ৫০১ টাঁকা দান করলাম” তারপর বলে ৫০১ টাঁকা বের করে দান বাক্সে দান করেন, এই উসিলায় আল্লাহ্ আপনাকে লাখ লাখ টাঁকা ইঙ্কাম করার তৌফিক দান করবে। আমি ৫০০ টাঁকা বের করলাম, উনি হাতে নিয়ে দান বাক্সে ঢুকায় দিলো, মোমবাতি, আগরবাতি প্যাকেট করেই ভিতরে ফেলে দিলো। এগুলাই আবার সেসব দোকানিদের দিয়েই বিক্রি করাবে। তারপর বললো, দুয়া পড়ে বের হয়ে যান। আমি টাঁকা চুনা খাওয়ার শোকে বের হয়ে কিছু ছবি তুলে চলে গেলাম।
খরচঃরিক্সাঃ ৫০ টাঁকা( স্ট্যান্ড থেকে মাজার)