বাহারি রঙের নদী প্রপাত কলোম্বিয়ার কানো ক্রিসটেলস

পৃথিবী জুড়ে আশ্চর্য সুন্দর সৃষ্টির যেন কোনো শেষ নেই, শেষ নেই এর রহস্যময়তার। পৃথিবীর নানান বিস্ময় শুধু ঘোর লাগায় মানবজাতিকে। প্রকৃতি তার আপন খেয়ালে এমন সব সৃষ্টির উন্মেষ করেছে যা দেখে শুধু বিমোহিত হতে হয়। পৃথিবীর বুকে এমন সব অপূর্ব সুন্দর স্থান আছে যা দেখে শুধু অবাকই হতে হয়। এসকল সৌন্দর্যের মধ্যে প্রকৃতির এক রঙিন সৃষ্টি হল কানো ক্রিসটেলস নদী। রংবেরঙের নদী শুনলে অবাক লাগলেও সত্য যে কলাম্বিয়ার কানো ক্রিসটেলস নদীর জলে দেখা যায় রঙের মেলা। অবাক করা এই নদীটি বিশ্বের সবচেয়ে রঙিন নদী। তাহলে আসুন জেনে নেয়া যাক এই রঙিন নদী সম্পর্কে কিছু তথ্য।

কলাম্বিয়ার একটি নদী হলো এই কানো ক্রিসটেলস। সাধারণ নদীর মত এই নদীর পানি নীল বা কালোটে বর্ণের নয়, এই নদীর পানিতে দেখা যায় বাহারি রঙের সমাহার। প্রায় পাঁচ-ছটি রঙের অপূর্ব সমাহারের এই নদীটি যেনো রঙের মেলা। আর এই জন্যই একে বলা হয়ে থাকে ‘স্বর্গ থেকে নেমে আসা নদী”। আবার কেউ কেউ বলেন, “তরল রংধনু নদী”। লাল, গোলাপি, নীল, সবুজ এবং হলুদ রঙের এর অপূর্ব সমন্বয়ের এই নদীটি দেখলে আপনার মনে হবে প্রকৃতি যেনো তার রঙের ভাণ্ডার আপন মনে ঢেলে দিয়েছে এই নদীতে। আর এই নৈসর্গিক সৌন্দর্য দেখে অবাক হয়ে আপনাকে ভাবতেই হবে প্রকৃতিই সবচেয়ে বড় শিল্পী। পৃথিবীতে এর চেয়ে রঙিন নদী আর দ্বিতীয়টি নেই।

সেরিনিয়া ডেলা মাকারিনা নামের এক পাহাড় থেকে এই নদীটি উৎপন্ন হয়ে ১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত বয়ে গেছে। এই পাহাড়টি বিভিন্ন প্রজাতির পাখি, উভয়চর প্রাণী, সরীসৃপ এবং অন্যান্য স্তন্যপায়ী প্রাণীদের আবাসস্থল। বছরের বেশিরভাগ সময় নদীটির রঙ অন্যান্য নদীগুলোর মতোই থাকে। শান্ত-স্বচ্ছ পানি আর ধূসর পাথরে পরিপূর্ণ তলদেশ। কিন্তু শুষ্ক মৌসুম আসলেই এই নদীটি এই বাহারি বর্ণের হয়ে উঠে। মূলত জুলাই এবং নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে দেখতে পাবেন নদীটির এই অপূর্ব বর্ণিল রূপ।
এই সময়টাতে নদীর তলদেশে লাল লতা-গুল্মের মতো তরল পদার্থের জন্ম হয় যা নদীর স্রোতের সঙ্গে দুলতে থাকে। নদীর যেখানে স্রোত বেশি সেখানে লাল রঙের এই গুল্ম জাতীয় পদার্থ পাথরের গায়ে সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। নদীর তলদেশে ও পাথরের গায়ে জন্মে সবুজ গুল্ম ও শ্যাওলা। যা কিছু পানির রঙ সবুজ করে তোলে। এখানকার পানি এতো বেশি স্বচ্ছ যে তার রং নীলচে মনে হয়। আর নদীর তলদেশের বালুগুলো হয় হলুদ রংয়ের।

এই নদীর ১২০০ মিলিয়ন বছরের পুরনো পাথরগুলো ধূসর রং ছেড়ে কালচে রং ধারণ করেছে। যা রোদের আলোয় স্বচ্ছ পানির নিচে ঝিলমিল করতে থাকে। আর এভাবেই এখানে একই নদীতে এতগুলো রঙের সৃষ্টি করে। যেনো পৃথিবীর বুকে নেমে আসা স্বর্গীয় স্রোতধারা।

প্রকৃতির অপার দানে সমৃদ্ধ এই নদীটি জীব-বৈচিত্র্যেও ভরপুর। এই নদীর পারিপার্শ্বিক সৌন্দর্য আপনাকে বিমোহিত করবে। এখানে রয়েছে ঝর্ণাধারা, সুইমিং পুলের মতো দেখতে বিরাট একটি জলাশয় ও নদীর তলদেশে গুহা। যা এই নদীটির সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে কয়েকগুণ। আরো অবাক করা বিষয় হল এই নদীতে নেই মাছ কিংবা জলজ কোন প্রাণী। তাই এখানে আপনি নিশ্চিন্ত মনে সাঁতার কাটতে ও গোসল করতে পারবেন।

নদীটি কলম্বিয়ার একটি দুর্গম স্থানে অবস্থিত হলেও যাতায়াতে কোনো সমস্যা নেই। রয়েছে টুরিস্ট গাইড। তারাই আপনাকে পথ দেখিয়ে নিয়ে যাবে অপূর্ব এই নদীর কাছে। তবে আপনাকে বিমান থেকে নেমে নদীর পার্শ্ববর্তী রাস্তা ধরে হেঁটে কিংবা ঘোড়ায় চড়ে পৌঁছাতে হবে এই নদীতে।

দর্শনার্থীদের জন্য এই নদীর পাশেই রয়েছে রাতে থাকার ব্যবস্থা। এছাড়াও আছে পরিবার- পরিজন নিয়ে বনের ভিতর রান্নাবান্না করে খাওয়ার সকল ব্যবস্থা। দারুণ এক অ্যাডভেঞ্চারের সব আয়োজনই রয়েছে কানো ক্রিসটেলসে।

Share:

Leave a Comment