বিমান যাত্রায় যে কাজ গুলো কখনও করবেন না

ঘোরাঘুরি করতে কার না ভালো লাগে? আর যখন সেটি হয় বিমানে, তখন তো সবার মাঝেই খুব আনন্দ আর উত্তেজনা কাজ করে। কিন্তু সবার আগে নিজের শারীরিক অবস্থার দিকে নজর দেয়া উচিত। আমাদের খেয়াল রাখতে হবে, যেন ঘোরাঘুরির মাঝে অসুস্থ না হয়ে পড়ি। আকাশপথে যাত্রার সময় অনেকেই হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরকম অবস্থা এড়ানোর জন্য আমাদের নিম্নলিখিত ১৮ টি উপায় অবলম্বন করা উচিত।

১. বিমানে কখনোই খালি পায়ে হাঁটবেন না


বিমানে কখনোই খালি পায়ে হাঁটবেন নাআকাশপথে চলাচলের সময় দেখা যায় বিমানের কার্পেট বিভিন্ন ভাবে নোংরা হয়। বিমানবালাদের মতে, “আমরা দেখি কিভাবে এই কার্পেটে মানুষের বমি থেকে শুরু করে খাবার পড়ে কার্পেট নোংরা হয়। আবার অনেককেই দেখি বাথরুম ব্যবহার করতে যাওয়ার আগে খালি পায়ে যায়। এসব দেখে আমরা শিউরে উঠি, কেননা এই কার্পেটে রয়েছে অসংখ্য জীবাণু।”এই কথাগুলো বলছিলেন লিন্ডা ফারগুসন, যিনি গত ২৪ বছর ধরে বিমানবালা হিসেবে কর্মরত আছেন। তিনি আরো বলেন,”কখনও বাথরুম কিংবা গ্যালারি এরিয়াতে খালি পায়ে হাঁটা উচিৎ নয়, কেননা অনেক সময় সেখানে কাঁচের টুকরা কিংবা ধারালো কিছু থাকতে পারে যার মাধ্যমে আপনার পা কেটে যেতে পারে।”

২. বরফ খাওয়া এড়িয়ে চলুন


বরফ খাওয়া এড়িয়ে চলুন২০০৪ সালে ইপিএ এর এক জরিপে দেখা গিয়েছে, ৩২৭ টি বিমানের মাঝে কেবল মাত্র ১৫% বিমান বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করতো। ২০০৯ সালে ইপিএ বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের ধারা চালু করার পর এ অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়। বিমানপথে ট্যাপের পানি সরবরাহ করা হয় না কিন্তু তাদের সরবরাহকৃত বরফ তৈরি হয় সেই পানি থেকেই। ফার্গুসোন বলেন,”বিমানে যেসব পানির ট্যাংক আছে সেগুলো আমরা পরীক্ষা করেছি এবং সবগুলোতেই ব্যাক্টেরিয়ার উপস্থিতি পাওয়া গিয়েছে।” তিনি আরো বলেন,”আমি সবসময়ই ভ্রমণের সময় বোতলজাত পানি পান করি আর এজন্যই বিমানে এত বোতলজাত পানি রাখা হয়।”

৩.  ফ্লাইটের পুরোটা সময় চেয়ারে বসে কাটাবেন না


পুরোটা সময় সিটে বসে কাটাবেন নাআকাশপথে দীর্ঘ যাত্রার সময় ডিপ ভেইন থ্রম্বোসিস নামক রোগটি হওয়ার উচ্চ সম্ভাবনা থাকে। এই রোগে রক্ত জমাট বেঁধে যায় এবং সাধারণত এটি পায়ে হয়ে থাকে। এই রোগটিকে ‘ইকোনমি ক্লাস’ সিন্ড্রোম হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। খুব সহজেই এর থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। এর জন্য যাত্রা পথে পুরোটা সময় সিটে বসে না থেকে মাঝে মাঝে হাঁটতে হবে আর হ্যাঁ, অবশ্যই পায়ে জুতো পড়ে নিতে ভুলবেন না যেন!

৪. কন্টাক্ট লেন্স পরিধান হতে বিরত থাকুন


কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহার থেকে বিরত থাকুনযদি সম্ভব হয় তবে কন্টাক্ট লেন্স পরিধান থেকে বিরত থাকবেন। আকাশপথে যাত্রার সময় সেখানকার পরিবেশ অনেকটা শুষ্ক থাকে বলে আপনার চোখে জ্বালা হতে পারে। আর আপনার যদি যাত্রা পথে ঘুমানোর অভ্যাস থাকে তাহলে বলা বাহুল্য যে, কন্টাক্ট লেন্স পরে ঘুমিয়ে যাওয়া মোটেও আপনার চোখের জন্য ভালো নয়। চোখ খুবই সেনসিটিভ, তাই এর যত্নও আপনাকেই নিতে হবে।
৫. সিটের উপরের বাতাস চলাচলের ছিদ্রটি কখনই বন্ধ করবেন না


এটি কখনই বন্ধ করবেন নাবিমানে যদি আপনার ঠান্ডা লাগে সেক্ষেত্রে উপরের এডজাস্টেবল এসি বন্ধ না করে কোনো গরম পোষাক গায়ে দেয়ার জন্য ডাক্তাররা পরামর্শ দিয়ে থাকেন।তাদের মতে,এই এডজাস্টেবল এসির জন্য বিভিন্ন জীবাণু আপনার দেহে প্রবেশের আগেই ধ্বংস হয়ে যায়। তাই এটিকে একেবারে বন্ধ না করে মাঝামাঝি বা লো করে রাখার পরামর্শ দিয়ে থাকন ডাক্তাররা।

৬. কোনো খাবার ট্রেতে পড়লে সেটি আর খাবেন না


ট্রেতে পড়ে যাওয়া খাবার গ্রহণ করবেন নাফ্লাইটের মাঝের বিরতিতে খাবা পরিবেশনের ট্রেগুলোকে ধোয়া বা বিশুদ্ধকরণ করা হয় না। এগুলোতে থাকে জীবাণুদের আস্তানা। ফ্লাইট এটেন্ডেন্টদের একজন বলেন,”এসব ট্রে কখনোই পরিষ্কার করা হয় না, এগুলোতে থাকে নানা ধরনের জীবাণু। যাত্রীরা বিভিন্ন কাজে এই ট্রে ব্যবহার করেন,অনেক সময় এমনও হয় বাচ্চার ডায়াপার বদলানোর জন্যও এই ট্রে ব্যবহার করেন। আবার অনেককে দেখা যায় ট্রেতে পা উঠিয়ে বসে থাকতে। এ থেকেই বোঝা যাচ্ছে, ট্রেগুলো কি পরিমাণ নোংরা আর সেই ট্রেতে পড়ে যাওয়া খাবার খেলে আপনার কী হতে পারে তা একবার নিজেই ভেবে দেখুন।

৭. বিমানে দেয়া কম্বল ব্যবহার ব্যবহার করবেন না


সরবরাহকৃত কম্বল বালিশ ব্যবহার না করাই শ্রেয়আরেকটি জিনিস যা পরিবর্তন করা হয় না। তা হলো কম্বল এবং বালিশ। এক যাত্রার পরে আরেক যাত্রা শুরুর আগে এগুলো পরিবর্তন করা হয় না। ফ্লাইট এটেন্ডেন্টদের একজন বলেন,”আমরা অনেক সময় দেখি যাত্রীরা তাদের পা এই কম্বল দিয়ে মুড়িয়ে রাখেন, আবার অনেককে দেখা যায় এই কম্বলের মাঝেই হাঁচি দিতে।” তার কথায় স্পষ্ট প্রমাণিত হয় যে কি পরিমাণ জীবাণু ছড়িয়ে আছে এই কম্বল এবং বালিশগুলোতে!
৮. পানি পান করতে ভুলবেন না


পানি পান করতে ভুলবেন না যেনগলা খুশখুশ করছে? এজন্য বিমানের শুকনা খাবারকে দায়ী করলে চলবে না কিন্তু। এয়ারপ্লেন কেবিনগুলো এমন ভাবে তৈরী করা হয় যাতে সেখানে মানুষ সর্বোচ্চ উচ্চতায়ও শ্বাস প্রশ্বাস নিতে পারে। সেজন্য পরিবেশটা অনেক কম আর্দ্র থাকে। আর তাই আপনাকে সুস্থ থাকার জন্য অনেক পানি পান করতে হবে।
৯ . কফি এবং চা পান হতে বিরত থাকুন


চা কফি গ্রহণ না করাই ভালোপূর্বেই বলা হয়েছে, বিমানে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা হয় না আর আপনি অবশ্যই চাইবেন না অবিশুদ্ধ পানি দিয়ে তৈরী কোনো কিছু পান করতে। এই চা এবং কফি সেই একই পানি দিয়ে তৈরী করা হয়। তাই চা এবং কফি পান এড়িয়ে চলাই ভালো। আরেকটি কারণ হচ্ছে, চা এবং কফিতে থাকে প্রচুর পরিমাণে ক্যাফেইন থাকে আর আকাশপথে যাত্রার সময় ক্যাফেইন গ্রহণ মোটেও স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়।

১০. অ্যালকোহল জাতীয় পানীয় বর্জন করুন


>মদ্যপান হতে বিরত থাকা ভালোবিমানে যাত্রার সময় আপনার শরীর যথেষ্ট শুষ্ক থাকে। আর অ্যালকোহল আপনার শরীরকে আরো শুষ্ক করে তোলে। আর বলাবাহুল্য, অতিরিক্ত  অ্যালকোহল শরীরের জন্য মোটেও ভালো নয়। তাই অ্যালকোহল জাতীয় সকল দ্রব্য আকাশপথে বর্জন করা উচিত।
১১. বাথরুমের ফ্ল্যাশ বাটন প্রেস করবেন না


জীবাণুর আস্তানাঅন্যান্য জায়গার মতো প্লেনের বাথরুমেও রয়েছে অসংখ্য জীবাণু। তাই বাথরুম ব্যবহার শেষে খুব ভালোভাবে হাত সাবান দিয়ে ধুতে হবে এবং সাথে ফ্ল্যাশ বাটনটি টিস্যু পেপার ব্যবহার করে প্রেস করুন।
১২. জানালার পাশে মাথা রেখে কখনোই ঘুমিয়ে পড়বেন না


জানালার পাশে মাথা না রেখে ঘুমানোই ভালোজানালার পাশে মাথা রেখে কখনোই ঘুমিয়ে পড়বেন না, কেননা এইখানে অনেক জীবাণু থাকে। অনেকেই সেখানে হাঁচি কাশি দিয়ে থাকেন এবং অবশ্যই আপনি সেসবের মাঝে মাথা রেখে ঘুমাবেন না।

১৩. শর্টস পরবেন না


শর্টস না পড়াই ভালোশরীর ঢেকে থাকে সেরকম পোষাক পরিধান করা উচিত কেননা প্লেনের সিটে অনেক ধরণের জীবাণু লুকিয়ে থাকে। আর নিজের ত্বককে রক্ষা করার জন্য আপনার উচিত পুরো শরীর ঢেকে থাকবে এরকম কাপড় পরা।
১৪.  শরীর খারাপ হলে সবার প্রথমেই ফ্লাইট এটেন্ডেন্টকে অবগত করুন


অসুস্থ বোধ করলে সবার আগে ফ্লাইট এটেন্ডেন্টদের অবগত করুনহঠাৎ শরীর খারাপ হতেই পারে,সেক্ষেত্রে লজ্জা না পেয়ে সবার আগে ফ্লাইট এটেন্ডেন্টদেরকে জানানো উচিত। তারা ইমারজেন্সি মেডিকেল হেল্প দেয়ার জন্য ট্রেনিং প্রাপ্ত। তাই এসব ক্ষেত্রে সবার আগে তাদেরকে অবগত করা উচিত।
১৫. নিজের সিট নিজেই বুকিং দিন


আগে থেকেই পছন্দের সিটটি বুক দিয়ে রাখুনকেই বা চাইবে অপরিচিত দুই জন যাত্রীর মাঝে বসতে? অনেক সময় দেখা যায়, মাঝের সিট বাদে আর কোনো সিট খালি থাকে না। তাই আগে থেকেই বিভিন্ন অনলাইন সাইট থেকে আপনার পছন্দমতো সিটটি বুকিং দিয়ে রাখুন।
১৬. ত্বকের যত্ন নিতে ভুলবেন না


ত্বকের যত্ন নিনআপনি অন বোর্ড আছেন, তার মানে এই নয় যে, আপনি আপনার ত্বকের যত্ন নিবেন না। অবশ্যই আপনি আপনার ত্বকের নিয়মিত যত্ন নিবেন। এক গবেষণায় পাওয়া গিয়েছে যে, একজন পাইলট এক ঘন্টায় যে পরিমাণ তেজস্ক্রিয়তা প্রাপ্ত হন তা টানা ২০ মিনিট রোদে দাঁড়িয়ে থাকার সমান। তাই নিজের ত্বকের খেয়াল রাখা অতীব জরুরী।
১৭. টেক-অফের আগেই ঘুমিয়ে যাবেন না

টেক অফের আগে ঘুমাবেন না

টেক অফের আগে ঘুমিয়ে পড়লে তা আপনার কানে বেশী প্রেশার তৈরী করবে,যার জন্য পুরোটা যাত্রা পথ আপনার মাথা ব্যাথা থাকতে পারে।
১৮. সোডা পান থেকে বিরত থাকুন


সোডা পান থেকে বিরত থাকুনউচ্চতা বেশী হওয়ার দরুণ গ্যাস্ট্রিক হবার সম্ভাবণা ৩০% পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে। তাই সোডা পান না করে সাধারণ বোতলজাত পানি পান করুন।

Share:

Leave a Comment