বৃষ্টিস্নাত ছুটির দিনে জমিদার বাড়ি দর্শন

সকাল থেকে গুড়িগুড়ি বৃষ্টি ফোটা পড়ে যাচ্ছে অনবরত,
মধ্যাহ্নের দিকে বৃষ্টি থামল কিন্তু অভিমানী আকাশের মন ভরেনি যখন তখন আবার কেঁদে ফেলতে পারে আকাশ খুন মেঘাচ্ছন্ন, বেলা ২ টা বাসায় মন বসছে না গেলাম রেস্টুরেন্টে কফি খেতে খেতে আড্ডা জমালাম দুই বন্ধু আধা ঘন্টা!
নাহ তাও ভালো লাগছে না কি করি, কি করি।

বন্ধু বললো চল নরসিংদী যাই!আকাশপানে তাকিয়ে দেখি বড্ড অভিমান করে আছে, কখন যে অশ্র ঝড়ে পরে তার কোন ঠিক নেই এর ভিতরে নরসিংদী যাওয়া ঠিক হবে?
দূর অতো কিছু ভেবে কি হবে উত্তর দিলাম চল যাই।
সময় নাই মোটামুটি ঘন্টা দুইয়ের পথ অতিক্রম করতে হবে সো সময় নষ্ট করা যাবে না।

ওহ আমাদের গন্তব্য নরসিংদী! কিন্তু নরসিংদী কোথায় যাবো?

কোন কিছু ভেবে না ভেবেই বললাম লক্ষন সাহার জমিদার বাড়ি!
বন্ধুও বলল চল তো গিয়ে এক জায়গায় গেলেই হবে আগে তো বাসে উঠি পরে বাসে বসে প্ল্যান করিস সময় নাই এখন।
পরে ফাইনাল হলো লক্ষন সাহার জমিদার বাড়ি যাচ্ছি। তাহলে কুড়িল বিশ্বরোড থেকে বিআরটিসি বাসের টিকিট কেটে নিলাম কাঞ্চন ব্রিজ টা পার হয়েই মায়া বাড়ি চলে গেলাম ২:৪০ নাগাদ।

সেখান থেকে লোকাল অটো/ সিএনজি রয়েছে নরসিংদীর পলাশ উপজেলার ঢাংগা ইউনিয়ন,মায়া বাড়ি থেকে অটোতে উঠে গেলাম ২/৩ মিনিটের ভিতরে অটো ভরে গেল,
ডাংগায় পৌছতে আমাদের সময় লেগেছিল ৩০/৩৫ মিনিট।
সেখানে নেমে একটা রিক্সা নিলাম উকিল বাড়ি।
এই উকিল বাড়িটিই হলো লক্ষন সাহা জমিদার বাড়ি যা স্থানীয়দের কাছে উকিল বাড়ি/রাজবাড়ি হিসেবে পরিচিত।

রিক্সা নামিয়ে দিয়ে বললো একটু সামনে হেটে যান পেয়ে যাবেন ২/১ মিনিট লাগবে।

আমরা এবার পাকা রাস্তা ছেড়ে বৃষ্টির দিনে হালকা কাদামাখা রাস্তা ধরে দুই মিনিটের মত হেটে লক্ষন সাহা জমিদার বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছি☺️
এবার তাহলে এক নজরে জেনে নেই জমিদার বাড়ির পূর্ব ইতিহাস?

“নরসিংদীর পলাশ উপজেলার ডাঙ্গা ইউনিয়নের জয়নগর এলাকায় অবস্থিত মোগল আমলে নির্মিত লক্ষণ সাহার জমিদারবাড়িটি আজও কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মোগল আমলে নিপুণ কারুকাজের এ বাড়িটি নির্মাণ করেন জমিদার লক্ষণ সাহা। পূর্ণাঙ্গ শৈল্পিক কর্মে নির্মিত ২৪ কক্ষবিশিষ্ট এ জমিদারবাড়ির পাশেই রয়েছে ছোট্ট আরেকটি কারুকার্যখচিত মন্দির, রয়েছে একটি অর্ধনির্মিত প্রাচীন বাড়ি। বাড়ির পেছনে রয়েছে গাছগাছালির বাগান। বাড়িসহ বাগানের চারদিক উঁচু প্রাচীরবেষ্টিত। রয়েছে সে সময় তৈরি করা জমিদারবাড়ির সুন্দর একটি পুকুর আর শানবাঁধানো ঘাট। পুকুরের পাশে পূজা করার জন্য রয়েছে একটি বড় আকারের বেদি। বিশাল এ জমিদারবাড়ির বর্তমান মালিকানা রয়েছে আহম্মদ আলী নামে এক উকিলের। ফলে বাড়িটি উকিলের বাড়ি হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠে। জানা যায়, স্বাধীনতার পর জমিদার লক্ষণ সাহার নাতি বৌদ্ধ নারায়ণ সাহা জমিদারের রেখে যাওয়া সব সম্পত্তি আহম্মদ আলীর কাছে বিক্রি করে নারায়ণগঞ্জ চলে যান। আহম্মদ আলী স্ত্রীর নাম অনুসারে বাড়িটির নামকরণ করেন জামিনা মহল। এখন মোহাম্মদ আলীও নারায়ণগঞ্জে বসবাস করেন। সিদ্দিকুর রহমান নামে স্থানীয় এক প্রবীণ জানান, জমিদার লক্ষণ সাহার নিকুঞ্জ সাহা, পেরিমোহন সাহা ও বঙ্কু সাহা নামে তিন ছেলে ছিল। জমিদার মারা যাওয়ার পর তারা এ সম্পত্তি দেখাশোনা করতেন। বঙ্কু সাহা ভারত ভাগের সময় ভারত চলে যান। পরে বাংলাদেশের অভ্যুদয় হওয়ার আগে নিকুঞ্জ সাহাও ভারত চলে যান। জমিদারের ছোট ছেলে পেরিমোহন সাহার বৌদ্ধ নারায়ণ সাহা নামে এক ছেলে ছিল। পেরিমোহন মারা যাওয়ার পর বৌদ্ধ নারায়ণ সম্পত্তিটি বিক্রি করেন। তবে বিক্রি করার পর এলাকার হিন্দু সম্প্রদায় ট্রাস্ট নামে একটি সংগঠন সম্পত্তিটি দেবোত্তর দাবি করে আদালতে মামলা করে। মামলাটি এখনও চলমান রয়েছে। ডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাবের উল হাই জানান, প্রাচীন এ জমিদারবাড়িটি এ ইউনিয়নের ঐতিহ্য। এটি সংরক্ষণ ও দর্শনীয় স্থান করার জন্য জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে→ (গুগুল থেকে নেওয়া)।

তার পাশেই রয়েছে সুদান সাহা জমিদার বাড়ি সেখানে মানুষের বসতি রয়েছে সো সুশৃঙ্খল পরিদর্শন করবেন। সেখানে কিছু সময় কাটিয়ে চলে গেলাম কুণ্ড সাহার জমিদার বাড়ি, যা এখন পরিত্যক্ত অবস্থায় পরে আছে।
বাড়িটির সামনে গেলে মনে হবে কোন ভূতের বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছেন।
ভিতরে জঙ্গল লতাপাতা আর স্যাঁতসেঁতে অবস্থা কিন্তু আয়তনে অন্য দু’টি বাড়ি থেকে এই বাড়িটি বড়।
ভিতরে প্রবেশ করলাম সত্যিই ভূতে বিশ্বাসী না হলেও এখানে দাঁড়িয়ে একটু সাউন্ড করে কথা বললে শব্দ প্রতিশব্দ হয়ে ভূতুরে হয়ে কানে ঢুকে।
কিছুক্ষন এসব নিয়ে দুষ্টামি এবং ঘুরে ঘুরে দেখলাম ছবি তুললাম।
এর মাঝেই সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে মেঘলা আকাশ বৃষ্টি নেমে গেলে সমস্যায় পরতে হবে।
এই ভেবে দ্রুত স্থান ত্যাগ করলাম ফিরতিও আগের মত সেইম, কুণ্ড সাহা জমিদার বাড়ি→ঢাংগা→মায়ার বাড়ি→কুড়িল বিশ্বরোড।
ঢাকায় ফিরতে ফিরতে আমাদের রাত ৮ টা অথবা ৮:৩০ এর মত লেগেছিল।
♦খরচাপাতিঃ
♦কুড়িল বিশ্বরোড টু মায়া বাড়ি ২৫/=
♦ মায়া বাড়ি টু ডাংগা ৪০/=
♦ ডাংগা টু উকিল বাড়ি ২০/=রিক্সা (২ জন)

♦রিটার্নসহ টোটাল খরচ ৯০+৯০=১৮০/= (জনপ্রতি)

বিঃদ্রঃ যেখানে সেখানে ঘুরতে গিয়ে ময়লা আবজর্না ফেলে পরিবেশ দূষন করবেন না।
এবং সদা ভালো ব্যবহার করুন,মনে রাখবেন ব্যবহারই বংশের পরিচয়।

Source:  Rkf Munna‎ <Travelers of Bangladesh (ToB)

 

Share:

Leave a Comment