বেরসিকের বগালেক ভ্রমণ

মাতৃজননী যখন ‘Adventure 50L’ নামক ব্যাগখানা কিনে দিয়েছিলেন, তখনো বুঝিনি এভাবে আমাকে অ্যাডভেঞ্চার গুলে গুলে খাওয়ানো হবে। বগালেক ঘোরার উদ্দেশ্যে বের হয়েছিলাম। সহজ একটা জার্নিকে কঠিন এক অ্যাডভেঞ্চারে পরিণত করতে আমার ব্যাগখানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে।

অভিযানের শুরু সেপ্টেম্বরের এক উত্তপ্ত বিকেলে। বান্দরবানের উদ্দেশ্যে আমাদের ঢাকা থেকে রাত আটটার বাস ধরার কথা ছিল। রাস্তার অবস্থার কথা মাথায় রেখে আমরা দু ঘণ্টা হাতে নিয়ে রওনা দিলাম। রাস্তাও নিজের রেপুটেশনের কথা মাথায় রেখে আমাদেরকে কচ্ছপের গতিতে চলার মাহাত্ম্য শেখাতে লাগল। আটটা বাজতে যখন মিনিট দশেক বাকি, তখনো আমাদের রাস্তা ফুরাতে ঘণ্টাখানেক বাকি। আমি তখন বান্দরবানে যাওয়ার আশা বাদ দিয়ে পরের দিন চিড়িয়াখানায় গিয়ে বান্দরের সাথে ছবি তুলব, এমন চিন্তাভাবনা করা শুরু করে দিয়েছিলাম। কিন্তু আমাদের উদ্যমী সদস্যগণ হাল না ছেড়ে মাঝপথে নেমে পড়ল। নিকটস্থ একটা বাস কাউন্টার থেকে সোয়া দশটার টিকিট কাটা হল। বান্দরবান আমরা গিয়েই ছাড়ব। বগালেক দর্শন করেই ছাড়ব।

পরেরদিন তেরটি মিনিট দেরী করে আসার কারণে আমরা রুমা বাজারগামী সকাল সাড়ে আটটার বাস মিস করলাম। কিছুটা হতাশ হলেও একে অপরকে সান্ত্বনা দিয়ে আমরা সাড়ে নয়টার বাসের টিকিট কেটে ফেললাম। বারটা-সাড়ে বারটার ভেতরও যদি পৌছানো যায়, তখন রওনা দিয়ে বিকালের ভেতর বগালেক পৌছাবো এই ছিল আমাদের ইচ্ছা।

কিন্তু ইচ্ছামতনই যদি সব হত, তাহলে আমি এতদিনে দশ-বারটা নোবেল আর দশ-বিশ বিলিয়ন ডলারের মালিক হতাম। আমাদের সাড়ে নয়টার বাস হঠাৎ উপলব্ধি করল, সাড়ে নয়টার বাস পরিচয়টা তার সাথে মানানসই নয়। সে নতুন পরিচয়ে পরিচিত হবে। হুম, সে হবে এখন থেকে সাড়ে দশটার বাস। তার এহেন পরিচয় পরিবর্তন আমাদের মনঃপুত হল না। আমরা টিকিটদাতার সাথে কিঞ্চিত কলহ করলাম। তিনি আমাদের জানালেন অধিক যাত্রী না হওয়ায় বাসটি কিছুটা ডিপ্রেশনে ভুগছিল। তাই তার এরুপ সিদ্ধান্ত। এখন এই সাড়ে দশটার বাস পরিচয়ই তার অপরিবর্তনীয় পরিচয়। পৃথিবীর বুকে নতুন পরিচয়ে বাসটির পরিচিত হবার এরূপ দৃঢ়সংকল্প প্রশংসনীয় হলেও, আমাদের জন্য ব্যাপারটা প্রীতিকর ছিল না। আমরা কিছু টাকা দিয়ে কতিপয় সিট কিনে বাসটির যাওয়ার সময় এগিয়ে আনার প্রস্তাব দিলাম। টিকিটদাতা জানালেন এ ব্যাপারে একবার যে সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে তা আর বদলানো হবে না। আমরা জানালাম, এ ব্যাপারে একবার তো সাড়ে নয়টার সিদ্ধান্ত হয়েই গিয়েছিল, সেটা কেন বদলানো হল? টিকিটদাতার হঠাৎ জরুরী কাজের কথা মনে পড়ল। বাস সাড়ে দশটায় যাবেই যাবে, এরূপ আশ্বাস দিয়ে তিনি বিদায় নিলেন। আমরা রুমা যাওয়ার বিকল্প উপায়ের কথা ভেবে দেখলাম। কিন্তু দলের সদস্যসংখ্যা স্বল্প হওয়ায় বিকল্প কোন পন্থা আর্থিকভাবে অনুকূল বিবেচিত হল না।

কঠোর সময়ানুবর্তিতার সাথে সাড়ে নয়টার বাস সাড়ে দশটায় রওনা দিল। আঁকাবাঁকা পাহাড়ী পথ দিয়ে ছুটে চলা বাসের জানালা দিয়ে যে অপূর্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখা যাচ্ছিল, তা বর্ণনা করার সাধ্য আমার নেই। কারণ পুরোটা পথ আমি ঘুমিয়ে ছিলাম। কিছুই দেখি নাই।

রুমা বাজারে নামার পর খাওয়াদাওয়া সেরে গাইড ঠিক করে দুইটার দিকে রওনা দিলাম আমরা বগালেকের উদ্দেশ্যে। আগে থেকেই আমাদের বলে নেয়া হয়েছিল যে হেঁটে বেশ খানিকটা পথ যেতে হবে। বৃষ্টির কারণে পথের অনেকটা অংশ আর যানবাহন চলাচলের উপযোগী নেই। চাঁদের গাড়ি অনেক আগেই থেমে যাবে। আমি পাত্তা দিলাম না। রুংরাং জয় করে এসেছি। এখন এসব পাহাড়ী পথে হন্টন ডালভাত হওয়ার কথা।

চাঁদের গাড়ির পেছনে একটা সিটে লম্বা হয়ে শুয়ে পড়লাম। গাড়ি রওনা দিল। আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথ দিয়ে ছুটে চলা চাঁদের গাড়ির জানালা দিয়ে যে অপূর্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখা গেল, তা বর্ণনা করার সাধ্য আমার নেই। ঘুমানোর কারণে না, অত ভাল লিখতে পারব না তাই।

দূরের পাহাড় ছিল সুন্দর, চাঁদের গাড়ির পথ ছিল যন্ত্রণাদায়ক। একেকবার চাঁদের গাড়ি ধপ করে খানা-খন্দের ভেতর পড়ছিল, আর হাড়গুলো নিজেদের মধ্যে এবং গাড়ির দেয়ালের সাথে গুতোগুতি করছিল। আমি শুধু চিন্তা করছিলাম কখন এভাবে লাফালাফি বন্ধ হবে এবং আমরা দুপা মেলে হাঁটতে পারব।

ইচ্ছাটা শীঘ্রই পূর্ণ হল। এক বিস্তৃত কর্দমাক্ত পথের সামনে চাঁদের গাড়ি থামল। গাইড জানাল এখন থেকে হন্টনযাত্রা শুরু। আমি আমার ‘Adventure 50L’ কাঁধে চাপিয়ে সোৎসাহে নেমে পড়লাম। নেমে সামনের পথ দেখে ক্ষণিকের জন্য থমকে গেলাম। যতদূর চোখ যায় কাদা আর কাদা। পাহাড়ও সম্ভবত নিজের পরিচয় পরিবর্তন করে কর্দমস্তুপ হিসেবে পরিচিত হতে চাচ্ছে। ইচ্ছে হল আবার জিপে চড়ে বসি। ঘরের ছেলে ঘরে ফিরে যাই। লেক যখন দেখতেই হবে, বাড়ি ফিরে ধানমণ্ডি লেক দেখি। আমার সঙ্গীদের অভিব্যক্তিও খুব বেশি ইতিবাচক ছিল না। কিন্তু এত টাকা-পয়সা, উদ্যম ও সংকল্প খরচ করে এতদূর এসেছি, এখন সামান্য একটু কাদাটে পথ পাড়ি দেয়ার ভয়ে বগালেক দর্শন করব না? তাই কি হয়?

হয় না। পৃথিবী যদি পুষ্পশয্যা হত, তাহলে হয়ত হত। কিন্তু মনিষীরা যতই কণ্টকশয্যা বলে বলে চেচান না কেন, তখন আমার কাছে পৃথিবী এক কর্দমশয্যা। ঢাকায় থাকলে এখন চিড়িয়াখানায় কোন এক বানরের সামনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বাদাম খাওয়া যেত, এরূপ সুখচিন্তা করতে করতে প্যাচপ্যাচে কাদায় পা রাখলাম। ক্ষুদ্র পরিমাণ দূরদর্শিতা থাকায় বার্মিজ স্যান্ডেল পরে নিয়েছিলাম। বৃষ্টিতে ভিজে ছিড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই। সেই অল্প একটু সান্ত্বনা বুকে নিয়ে বগালেকের উদ্দেশ্যে হাঁটা শুরু করলাম।

ছোটবেলায় কাদামাটিতে অনেক খেলেছি। বর্ষাকালে তো দিনশেষে কাদা মেখে ভূত হয়ে বাড়ি ফিরতাম। পরবর্তীতে হারিয়ে যাওয়া সোনালী শৈশবের কথা চিন্তা করে দীর্ঘশ্বাস বেরুত। খুব মন চাইত ফিরে যাই সেই চিন্তাহীন কাদামাখা ছেলেবেলায়। প্রকৃতি নিষ্ঠুর নয়। আমার অনেক দিনের লালিত স্বপ্ন সে আজ পূরণ করেছে। খুব সাবধানে একেক কদম ফেলে এগিয়ে যাচ্ছিলাম। কিছুদূর যাওয়ার পরেই কাদায় মাটির তুলনায় জলের পরিমাণ বৃদ্ধি পেল। হঠাৎ এক পা ফেলতেই সেটা হাঁটু পর্যন্ত অদৃশ্য হয়ে গেল। যথেষ্ট ম্যাচিওর হওয়ায় ‘চোরাবালি, চোরাবালি’ বলে চেচিয়ে উঠলাম না। যদিও মনে মনে তারস্বরে আল্লাহকে ডাকছিলাম। কাদামাখা শৈশবে ফেরার আশা করা নিজের ভাবালু সত্ত্বাকে তুমুল গালিগালাজ করছিলাম। ওই এক পা যে কোন দুর্ঘটনা ছিল না, তা পরের পা ফেলতেই টের পেলাম। সামনের বেশ কিছু পথ আমাদের জন্য যে কি ভীষণ পরীক্ষা হয়ে দেখা দেবে, তা বুঝতে পেরে হাপুস নয়নে কাঁদতে ইচ্ছে হল। বড় হয়ে গেছি বিধায় তাও করতে পারলাম না। কাঁদার চিন্তা বাদ দিয়ে কাদার ভেতর দিয়ে লেফট… … … রাইট করতে করতে এগুতে লাগলাম।

দাঁতে দাঁতে চেপে আমরা চার অভিযাত্রী গাইডের পিছন পিছন হাঁটছি। নিজেদের এই দৃপ্ত সংকল্প, যা আমাদেরকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে এক দূর্গম গিরির উপর দিয়ে, তা দেখে নিজেকে মনে হচ্ছে কোন পৌরাণিক গল্পের নায়ক। ডানে বামে তাকিয়ে নিজের বাকি তিন সঙ্গীকে দেখে বিপুল অনুপ্রেরণা পাচ্ছি। তাদের মুখ-চোখেও ‘ছেড়ে দে মা, কেঁদে বাঁচি’ অভিব্যক্তি। আমি একা না, তারাও নিদারুণ দুর্ভোগের ভিতর দিয়ে যাচ্ছে।

এতটা দুর্ভোগ আমাকে ভোগ করতে হত না, যদি না ব্যাগ গোছানোর ব্যাপারে আমি আরেকটু কৌশলী হতাম। কিন্তু যাত্রার পূর্বে আমার ধারণা ছিল জিপে করেই বগালেক পর্যন্ত যাব, হাঁটাহাঁটির ঝামেলা পোহানো লাগবে না, কাজেই ব্যাগ যত ভারী হোক, সমস্যা নেই। তাই মন ভরে নানান ধরণের জামা-কাপড়ে পরিপূর্ণ করেছি আমার ব্যাগখানা। এখন একেকটা শার্ট একেক কেজি ভার হিসেবে চেপে আছে আমার কাঁধের উপর।

কয় ঘণ্টা বা দিন ধরে হাঁটছিলাম, আমার খেয়াল নেই। তবে একসময় পৌঁছে গেলাম এক পাড়ায়। কাদা মাখামাখি করে ততক্ষণে আমরা শৈশবের আদর্শ ভূতাবস্থা লাভ করেছি। গাইড হাসিমুখে জানাল আমরা প্রায় পৌছে গেছি। সামনে একটুখানি পাহাড়। তা উৎরালেই বগালেক। আমরা চার অপক্ব মেষশাবক কথাটা নির্দ্বিধায় বিশ্বাস করে নিলাম। খুবই খুশি হলাম। দিনেরও খুব বেশি বাকি নেই। রাত হওয়ার আগে লেকের ধারে পৌছুতে পারলে ভালই হবে। পাড়ায় হালকা-পাতলা নাশতা ও ফটোশ্যুট করে আমরা শুরু করলাম পাহাড় বাওয়া।

এখানে যে আমাদের যাত্রাপথের সবচেয়ে বেদনাবিধুর সময়টা পার করতে হবে তা ভাবি নি। কিছুদূর উঠেই জিভ বের করে হাপানো শুরু করলাম। নিজেকে আমি কখনোই ফার্মের মুরগি দাবি করব না। কিন্তু ওই নাম না জানা পাহাড় আমাকে যে অবস্থায় দেখেছে, তাতে সে অবশ্যই দাবি করবে। বৃষ্টি পড়ে পথও হয়ে আছে পিচ্ছিল। ঠিকঠাকভাবে এগিয়ে যেতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে। পথিমধ্যে একজন সঙ্গী বর্ষাসিক্ত পাহাড়ি ভূমির গুণাগুণ খুব কাছ থেকে নিরীক্ষণ করতে সক্ষম হল। আমরা সতর্কতার মাত্রা আরো বাড়িয়ে দিলাম। হাঁটার গতি আরো কমিয়ে দিলাম। সূর্য চোখ টিপ দিয়ে বিদায় নিল। পাহাড়ের তখনো আরো অর্ধেকটা বাকি।

পড়ন্ত সন্ধ্যার আঁধারে ফোনের টর্চ জ্বেলে পিচ্ছিল পথ বেয়ে উঠতে উঠতে নিজেকে আর পৌরাণিক গল্পের নায়ক বলে মনে হচ্ছিল না। পৌরাণিক গল্পের ভিলেন মনে হচ্ছিল। যাকে তার অসীম পাপের জন্য এই অন্ধকারে কর্দমাক্ত পাহাড় আরোহণের শাস্তি দেয়া হয়েছে। ততক্ষণে অধিক শোকে আমরা সবাই পাথর হয়ে গেছি। পথের দুর্ভোগ নিয়ে অভিযোগ করা বন্ধ করে রোবটের মত পায়ের পর পা ফেলে এগিয়ে যাচ্ছি। মাথায় একটাই চিন্তা, উপরে পৌছাতে হবে। উপরে পাহাড় নেই। উপরে সমতল। উপরে ঘর আছে। উপরে বিছানা আছে। উপরে যে বগালেকও আছে, তা তখন আর মাথায় নেই।

ঘণ্টাখানেক অন্ধকারে পাহাড় বেয়ে যতক্ষণে উপরে পৌছালাম ততক্ষণে রাত জাকিয়ে বসেছে। অনেক চেষ্টা করেও বগালেকের সৌন্দর্য দর্শন করতে পারলাম না। সঙ্গী প্রত্যয় পানিতে টর্চ মেরে লেকের সৌন্দর্য অবলোকনের একটা চেষ্টা চালিয়েছিল। তার ফলাফল কি তা বলাই বাহুল্য।

আমি আর লেকটেক নিয়ে মাথা ঘামালাম না। একটা কটেজ ঠিক করার পরে খাওয়াদাওয়া করে সটান শুয়ে পড়লাম। আমাদের শিডিউল ছিল খুবই টাইট। কালকেই আবার ফিরতে হবে। জিপে করে আসতে পারলে হয়ত বিকালটা লেক ঘুরতে পারতাম। রাতে আসায় তা আর হল না। তা নিয়ে যতটা না দুঃখ হচ্ছিল, তার চেয়ে বেশি দুঃখ হচ্ছিল কালকে সকাল হলে আবার একই পথে ফিরতে হবে, এই ভেবে। যে চূড়ান্ত ভোগান্তি আজ পোহানো লেগেছে, কাল আবার তার মধ্য দিয়ে যেতে হবে ভাবলেই শরীরের প্রতিটা কোষে কোষে ওঠে আর্তনাদ।

পরদিন সকালটা সুন্দর ছিল। ভোরের আলোয় লেকের পানি দেখাচ্ছিল অদ্ভূত সুন্দর নীল। চারপাশের সবুজ গাছপালার প্রতিবিম্ব লেকের পানিতে পড়ে যে অপূর্ব সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্যের সৃষ্টি করেছিল, তা যদি আমি চারু-কারুকলা পরীক্ষার সময় আকঁতাম, নিশ্চিত দশে দশ পেতাম। উঠে আমরা লেকের সামনে কিয়ৎক্ষণ আলোকচিত্রচর্চা করলাম।

হাতে সময় ছিল কম। তাই অল্প কিছুক্ষণ লেকে পা ডুবিয়েই রওনা দিলাম। ফেরার পথে আবার দূর্গম গিরি, কান্তার কর্দম ও দুস্তর সরুপথ পেরিয়ে আমরা অবশেষে ফিরলাম যেখানে চাঁদের গাড়ি ভেড়ানো ছিল সেখানে। কাদামটি পেরিয়ে পাকা রাস্তায় উঠে যখন চাঁদের গাড়িটাকে দেখতে পেলাম, সত্যি বলব, সে দৃশ্য আমার কাছে বগা লেকের চেয়ে হাজারগুণ সুন্দর মনে হয়েছিল।

অতঃপর আবার খানা-খন্দে ভরা রাস্তায় ঝাকি খেতে খেতে, ‘থাকব আমি বদ্ধ ঘরে, দেখব নাকো জগৎটাকে’- আবৃত্তি করতে করতে ফিরলাম। ফেরার পথে তুমুল বৃষ্টি পড়ছিল। ফেলে আসা কর্দমাক্ত পথে জলের পরিমাণ যে আরো বেড়েছে, তাতে সন্দেহ নেই। এই সময় যদি আমরা যেতাম, তাহলে ভোগান্তির পরিমাণ কি হত ভাবতেই গা শিউরে ওঠে। অল্প সময়ের কষ্টকর এক জার্নি ছিল, যাওয়া-আসায় ভালই ভুগতে হয়েছে, মন-মেজাজও খারাপ ছিল, কিন্তু সকল প্রকার নেতিবাচকতা এক নিমেষে দূর হয়ে গেল যখন আমরা চেকপোস্টে চেকআউট করতে নামলাম।

যখন চেকআউট করছি, তখন দেখলাম চারজনের একটা দল মাত্র এসেছে। বগালেক যাবে। আমরা তাদেরকে আমাদের অভিজ্ঞতার কথা জানালাম। আমাদের চেয়েও তাদের পথ আরো কঠিন হবে সেই সতর্কবার্তা দিলাম। তারা পাত্তা দিল না। আমাদের কাদামাটি মাখা মলিন মুখের দিকে করুণার দৃষ্টিতে তাকিয়ে ভদ্রতাসূচকভাবে হেসে সামনে দিয়ে হেঁটে হেঁটে তাদের চাঁদের গাড়িতে চড়ে বৃষ্টির মধ্যেই বগালেক পানে রওনা দিল।

আমরা চারজন একে অপরের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিলাম।

পরিশেষে বলতে চাই, এই কাহিনীর নীতিবাক্য হচ্ছে ভালমত খোঁজখবর না নিয়ে কোথাও গেলে মাঝে মাঝে অ্যাডভেঞ্চারের মাত্রা ৫০ লিটার ক্রস করে ফেলতে পারে। কড়া অ্যাডভেঞ্চারাররা অবশ্য এ ধরণের অভিজ্ঞতাকে স্বাগতম জানাবে। আরেকটা নীতিকথা হচ্ছে জায়গাগুলোতে মানুষজন যায় সাদাকালো এই জঞ্জালে ভরা মিথ্যে কথার শহর থেকে একটু মুক্তি পেতে। অমন প্রাকৃতিক পরিবেশের যেখানে সেখানে মনুষ্যকৃত জঞ্জাল নিতান্তই বেমানান। কাজেই যেখানেই যান, আবর্জনা ফেলার নির্দিষ্ট স্থান না থাকলে উপযুক্ত স্থান পাওয়ার আগ পর্যন্ত অপেক্ষা করুন।

Source:  Shahed Khan‎ <Travelers of Bangladesh (ToB)

Share:

Leave a Comment