বৈচিত্রময় নেপাল ভ্রমন
নেপাল নিয়ে নতুন করে আর কি বলবো,গ্রুপে অনেক লেখা আছে নেপাল ভ্রমন নিয়ে। তারপরও প্রত্যেকটা ভ্রমনের মানুষ গুলি যেমন ভিন্ন হয়,গল্প গুলিও হয় নতুন। মানুষ ভেদে ভ্রমনের আনন্দ যেমন বৈচিত্রময় অভিজ্ঞতাতেও থাকে ভিন্নতা।
নেপালে নিয়ে আমার মনে যে ধারনা ছিলো তা গুগল ঘেটে অনেকটাই কেটে গিয়েছিল কিন্তু নিজের চোখে দেখা নেপাল ছিলো চিন্তার বা আশার চেয়ে অনেক বিচিত্রময়।
অনেক তো হোলো নেপালের গুনো গান, এইবার আসি বেড়ানো বিস্তারিততে,আমরা প্রায় বছর দেড়েক আগে নেপাল ভ্রমণ করেছিলাম।ইউ এস বাংলায় পার পারসন ১৬০০০ হাজার টাকায় টিকেট কেটে কোন এক দুপুরবেলা আমারা তিনজনের পরিবার উড়াল দিই নেপালের কাঠমন্ডুর উদ্দেশ্যে। ভিসা যেহেতু অন এরাইভাল তাই ভিসা ফর্ম পুরন করে ছবি আর পাসপোর্ট এর ফটোকপি নিয়ে,সার্ক দেশের লাইনে দাঁড়িয়ে কোন রকম প্রশ্ন ছাড়া খুব সহজেই ভিসা পাওয়া যায়।
আমাদের হোটেলে এয়ারপোর্টে ট্রান্সফার ফ্রি ছিলো তাই কোন রকম প্যারা না নিয়ে ড্রাইভার ছেলেটির সাথে গল্প করতে করতে থামেলে আমাদের হোটেলে চলে আসি বিকালের মধ্যে। রুমে ফ্রেস হয়ে আমরা আমাদের হোটেলটা ঘুরে দেখলাম আগে কারন হোটেলটা ছিলো নেপালের নাওয়ারী ডিজাইনের। পড়ে থামেলে ঘুরেফিরে, নেপালি থালি দিয়ে রাতের খাবার সেরে চলে আসি রুমে।
দ্বিতীয় দিন সকালে আমরা আমাদের হোটেলের গার্ডেনে নাস্তা সেরে বের হয়ে গেলাম নাগরকোটের উদ্দেশ্যে, ২০০০ রুপি দিয়ে গাড়ি ঠিক করে ঘন্টা দুয়েক পাহাড়ি রাস্তায় চলার পর পৌছে গেলাম নাগরকোটে আমাদের হোটেলে।এতো সুন্দর ভিউ,এমনি ছাদে বসে থাকতেই ভালো লাগে।দুপুরে হোটেলই লান্স সেরে,কোথাও ঘুরতে যায় নি,হোটেলের ছাদে বসে আমার মেয়ে ছবি একেছে আর আমরা জুড়িয়ে দিয়েছিলাম রাজ্যের সব গল্প।নেপালি মম আর নেপালি চা হোটেলে অর্ডার করে সেগুলি খাচ্ছি, আবার পুরনো কোন মজার স্মৃতি রোমন্থন করছি। ছুটিতে গেলে এইরকম একটি বিকেল যদি না পাওয়া যায় তবে বেড়ানো টাই ফিকে মনে হয়।
তৃতীয় দিনে সকাল সকাল উঠে সুর্যদয় দেখেছি,আসে পাশে হেটে ঘুরেফিরে বেড়িয়ে নাস্তা সেরে কাঠমন্ডুর দিকে ফেরার জন্য বেলা এগারোটা হোটেল থেকে ৩০০০ রুপি দিয়ে নেয়া গাড়িতে চেপে প্রথমে ভক্তপুরে থেমে,পুরনো শহরটাকে দেখে দুপুর তিনটা নাগাদ কাঠমন্ডুর আগের হোটেলেই চেকইন করলাম। বিকালে গেলাম দরবার স্কয়ারে আর ফেরার পথে পরের দিনের পোখরা যাওয়ার টিকেট পার পারসন ৭০০ রুপি দিয়ে কেটে রুমে ফিরে আসলাম।
চতুর্থ দিন সকাল সারে সাতটায় বাসে চেপে রওনা পোখরার উদ্দেশ্যে, রাস্তায় জ্যামের কারনে ১০ ঘন্টার মতো সময় লেগেছিলো। কিন্তু পোখরায় আমাদের হোটেলের রুম ভিউ দেখে জার্নির সব বিরক্তি যেনো নিমিষেই কেটে গেলো। ট্রায়াডে আমি ঘোষণা দিলাম খেতে কোথাও যেতে পারবো না কেউ কিছু এনে দিলে খাবো না হয় খাবো না। দেখি মিনিট পনেরো পর কন্যার বাবা মজার ফ্রায়েড রাইস আর মম নিয়ে হাজির কারন আমাদের হোটেলের পাশে ছোট্ট একটা খাবার হোটেল ছিলো যার খাবারের টেস্ট অসাধারণ। এর পর আমরা আরও কয়েকবার বেশ সস্তায় এখান থেকে খেয়েছি।
পঞ্চম দিন আমরা লেকের বাতাস খেতে খেতে সাথে নাস্তাটা সেরে ২৫০০ রুপিতে একটা গাড়ি নিয়ে হাফ ডে টুরে পিচ পাগোডা মিউজিয়াম, ডেভিস ফল দেখে পোখরা সিটি সেন্টারে বিকাল তিনটা নাগাদ এসে নামলাম।সিটি সেন্টারটা এতোটাই আধুনিক আর জমজমাট যা আমাকে অবাক করেছে,আমার কাছে আমার দেখা ফুকেটের সিটি সেন্টারের মতো লেগেছে অনেকটা। সিটি সেন্টারে একটু হেটে একটা খুব সুন্দর লেক ভিউ রেস্টুরেন্টে বসে লেট লাঞ্চ সেরে নিয়ে হোটেলে চলে আসার সাথে সাথে শুরু হলো সেই বৃষ্টি। আমরা ফ্রেশ হয়ে নিচে হোটেলের রেস্টুরেন্টে বসে বৃষ্টি দেখতে দেখতে নেপালি চা হাতে নিয়ে আবার ও শুরু করে দিলাম ভুত ভবিষ্যতের নানা আলোচনা। এর মধ্যে কন্যা আবদার করলো বৃষ্টিতে ভিজবে,মানা করলাম না,এই ছোট ছোট আনন্দ যদি না থাকে,ঘুরাটা স্মৃতিময় হবে কেমন করে।
ষষ্ঠ দিন সকাল পাচটায় দিন শুরু কারন আজকে আমরা সারংকোটে গেলাম সুর্যদয় দেখতে,২০০০ রুপি দিয়ে গাড়ি আগের দিন বলে রেখেছিলাম।হিমালয় আর সুর্যদয়,এতো সুন্দর দৃশ্য চোখে না দেখলে বলে বোঝানো যাবে না। ওখান থেকে ফিরে নাস্তা সেরে কন্যার বাবা চলে গেলো প্যারাগ্লাইডিং য়ে,৬০০০ হাজার রুপি পড়েছিলো এর জন্য।বিকালবেলা টা কেটে গেলো ফেওয়া লেকে বোটিং করে আর রাতে মুভি দেখেছিলাম আর ডিনার কে এফ সি থেকে সেরে রুমে প্রত্যাবর্তন।
সপ্তম দিন সকাল আটটায় বাসে করে কাঠমন্ডুর পথে রওনা দিয়ে ছয় ঘন্টায় দুপুরের মধ্যে কাঠমন্ডুতে।বিকালে থামেল থেকে দেশের সবার জন্য গিফটের শপিং সেরে নিলাম আর নিজের জন্যও নিলাম অনেক গুলি মালা,আন্টি।
অষ্টম দিন আমাদের কাঠমন্ডু ঘুরার দিন,মেয়ের আবদারে প্রথমেই চিড়িয়াখানা,তারপর সম্ভুনাথ মন্দির,গার্ডেন অফ ড্রিমস,একটা শপিং মল ঘুরে নেপালে আমাদের শেষ দিনটা কেটে গেলো।
নবম দিন নাস্তা সেরে গাট্টি বোচকা নিয়ে একটা স্মৃতিময় ঘুরার ইতি টেনে আমরা ব্যাক টু দা পেভিলিয়ান।ফেরার পথে ইমিগ্রেশন অফিসার যখন জিজ্ঞাসা করলো কেমন লাগলো নেপাল?আমার ছয় বছরের কন্যা হেসে বলে উঠেছে বাই ফার আওয়ার বেস্ট টুর।
কাঠমন্ডুতে আমাদের হোটেলের ভাড়া ছিল ৩০ ডলার,নাগরকোটের হোটেলের ৪০ ডলার আর পোখরার হোটেল পার নাইট ৪০ ডলার। আমি বুকিং ডট কম থেকে হোটেল চয়েজ করে,হোটেলের সাথে সরাসরি মেল করে রুম রেট ঠিক করেছি এতে আমি বুকিং ডট কম থেকে বেশ কম রেটে রুম পেয়েছি।
শেষে এটাই বলবো, নেপাল সম্পর্কে আমাদের মনে ধারনা, কি আর হিমালয় ছাড়া কিন্তু আমি বলবো পুরো নেপাল টাই একটা চমক এতো সুন্দর,পোখরা থেকে তিন, পাচ,সাত দিনের প্যাকেজে দলে দলে বেস সস্তায় অনেকে হিমালয় টেকিংয়ে যাচ্ছে।সাথে বাচ্চা না থাকলে আমরাও রওনা দিতাম ট্রেকিংয়ে।
বিদেশ ট্যুরের আসল প্যারা প্লেন ফেয়ার কিন্তু নেপালের প্লেন ফেয়ার যেহেতু বেশ কম তাই সবাই যার যার মতো বাজেটে একটু কমের মধ্যে বিদেশে ঘুরে আসার মজাটা নিতে পারেন নেপালে যেয়ে।
ময়লা আবর্জনা কিন্তু যেখানে সেখানে ফেলার জিনিস নয়,যদি আপনার আশেপাশে ট্রাসক্যান নাও থাকে আপনার ব্যাবহৃত উদ্ধৃত নিজের ব্যাগে রাখুন,পরে ময়লা ফেলার নির্দিষ্ট জায়গায় ফেলে দিন।
ছবিগুলি আমাদের নেপাল ভ্রমনের, যা দেখলে এখনো মুখ হাসি হাসি হয়ে যায়।
Source: Nitu Zaman <Travelers of Bangladesh (ToB)