ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের বাগানে

ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের বাগানে এই মূর্তিটি লর্ড উইলিয়াম হেনরি ক্যাভেন্ডিশ বেন্টিঙ্ক বা সংক্ষেপে লর্ড বেন্টিঙ্ক-এর। তিনি রাজা রামমোহন রায়ের সমসাময়িক ও বিশেষ বন্ধু ছিলেন। এদেশে প্রথম গভর্নর জেনারেল ছিলেন তিনিই (১৮২৮-৩৫)।
এই সাত বছরের কর্মকালে তিনি স্মরণীয় কয়েকটি কাজ করে যান। তার মধ্যে কোনটি সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ তা বলা শক্ত।
তখনও এদেশে মুঘল রীতি অনুসারে পার্শিয়ান ভাষায় লেখাপড়ার কাজ চলতো। তাতে যেমন আধুনিকতার অভাব ছিল, তেমনি তা ছিল কিছুটা অবৈজ্ঞানিক। শিক্ষা বিষয়টি তাই জনপ্রিয় হয়ে ওঠেনি।

থমাস ম্যাকলের পরামর্শ অনুসারে ১৮৩৫ সালে বেন্টিঙ্ক শিক্ষা ব্যবস্থার আমূল সংস্কার করেন। তার অন্তর্ভুক্ত ছিল English Education Act-এর প্রণয়ন ও প্রয়োগ। এর ফলে পাশ্চাত্য প্রথায় শিক্ষালাভের পথ সুগম হয়।

ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এদেশে প্রথম ডাক্তারী পড়ার কলেজ প্রতিষ্ঠা করে ১৮২২ সালে। তার নাম ছিল নেটিভ মেডিকেল ইনস্টিটিউশন (NMI). কিন্তু তা ছিল নেহাতই ডাক্তারীর প্রাথমিক শিক্ষা কেন্দ্র। ১৮৩৫ সালে বেন্টিঙ্ক ভারত এবং দক্ষিণ-এশিয়ার প্রথম মেডিকেল কলেজটি প্রতিষ্ঠা করেন কলকাতায়। অচিরেই কলকাতা মেডিকেল কলেজের সুনাম ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বজুড়ে।

শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে এদেশে লুন্ঠন ও হত্যা চালিয়ে এসেছিল ঠগীরা। গোটা দেশ জুড়ে তৈরি হয়েছিল এক আতঙ্কের পরিমণ্ডল। বেন্টিঙ্ক-এর সক্রিয় এবং কার্যকর পদক্ষেপে ঠগীরাজ দেশ থেকে নির্মূল হয়।

সতীদাহ, কন্যা শিশু হত্যা ইত্যাদি নিষ্ঠুর প্রথাগুলি সম্পূর্ণভাবে অবলুপ্ত হয় বেন্টিঙ্ক-এর কঠোর অনুশাসনে। কুপ্রথা ও কুসংস্কার বিষয়ে বেন্টিঙ্ককে অবহিত করতেন রাজা রামমোহন রায়। সমাজ সংস্কার বিষয়ে রাজা রামমোহনের যা যা বলতেন, বেন্টিঙ্ক বিনা বিতর্কে তা মেনে নিতেন। উভয়ের পারস্পরিক শ্রদ্ধা সম্পর্কের সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়েছিল সমাজের ওপর।নিঃসন্তান বেন্টিঙ্ক ১৮৩৯ সালে প্যারিসে মারা যান। লন্ডন শহরে তাঁকে সমাহিত করা হয়।

মূর্তির নীচে সতীদাহের নিষ্ঠুর একটি দৃশ্য চিত্রিত হয়েছে।
মজার কথা, মূর্তির বাঁহাতে ব্রোঞ্জ পোশাকের অন্তরালে এক শালিক দম্পতির বাস। বাসার বেরিয়ে আসা কাঠিকুঠি দেখে তা বোঝা যায়। পক্ষী দম্পতি মজুমদার দম্পতিকে চেনে। দু’চার টুকরো বিস্কুট ও দু’চারটি ডাল ভাজা নিয়ে ডাক দিলেই তারা বাসা ছেড়ে বেরিয়ে আসে ও প্রথমে একজন মূর্তির মাথায় ও আর একজন মূর্তির ডান হাতের তর্জনীতে বসে। ঘাড় ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখে সত্যি শিবপুরের সেই তারা কিনা। তারপর হুস করে নেমে আসে।

ওদের একটি বা দুটি ছানা হয়েছে। তারা বাসার দুয়ারে এসে মুখ বাড়ায়।
বেন্টিঙ্ক এসব দেখেন না, তাঁর দৃষ্টি পূর্ব দিগন্তে কলকাতা শহরের দিকে নিবদ্ধ। তিনি শহরের মেডিক্যাল কলেজগুলি দেখতে পান। হ্যাপি প্রিন্সের মতো তাঁর অশ্রু ঝরে পড়ে কিনা কি জানি!

Source:  Falguni Majumdarআমার বাংলা

Share:

Leave a Comment