মনটাকে ফ্রেশ করতে ঘুরে আসুন সিলেট

দুই-তিন বছর আগের কথা বলছি। যখন আমার বন্ধুরা দূরে কোথাও ঘুরতে যেতো, আমাকে বল্লেও আমি যেতাম নাহ। কারণ তখন আমি মনে করতাম ট্যুরে গিয়ে খামোকা নিজের জমানো টাকা গুলো নষ্ট করা ছাড়া আর কিছু নাহ, তার থেকে ভালো বাসায় বসে টিভি দেখে আর মোবাইলে সময় কাটানো ভালো। আমি আসলে সম্পূর্ণ ভুল ধারণা নিয়ে বাস করছিলাম।
জীবনের প্রথম নিজের ভুল ধারণা থেকে বের হয়ে ২০১৮ সালের প্রথম দিকে আমি সহ মোট ৬ জন বন্ধু মিলে সিলেট ট্যুরে যায়। সে যাত্রায় ওতোটা খোঁজ খবর নিয়ে যায় নি, যার কারণে অনেকগুলো স্পটই মিস করছি। আর সিলেটের স্পটগুলোতে মূল সৌন্দর্যতা ফিরে আসে বর্ষাকালে। আরেকটা কথা, সিলেটে যাওয়ার আগে খুব ভালভাবে প্ল্যান করে নিবেন কোথায় কোথায় যাবেন।

#প্রথম_দিনঃ
প্রথম দিন আমরা ট্রেন থেকে নেমে সিএনজি যোগে আম্বরখানা আসি। সেখানে মাজার রোড়ে একটা হোটেলে রুম ভাড়া নেয়। ফ্রেশ হয়ে বের হই ঘুরতে। সিএনজি ঠিক করলাম রাতারগুল আর বিছানাকান্দি যাওয়ার জন্য। অসাধারণ ছিলো এই স্পটগুলো। রাতারগুল জলাবনের ভিতরে শুষ্ক মৌসুমে পায়ে হেঁটে ঘুরতে পারবেন। তবে নৌকা করেই বনের ভিতরে ডুকতে হবে। বনের ভিতরের সরু রাস্তা ধরে এগোলে গুয়াইন নদীর জলধারার দেখা পাবেন। অসম্ভব সুন্দর ভিউ পাবেন।
আপনি চাইলে বর্ডার ক্রস করে বর্ডার বাজারে গিয়ে ঘুরে আসতে পারবেন। বিছানাকান্দি বর্ডারে প্রতি মঙ্গলবার এই বাজার বসে। কোন টিকেট লাগে না। সন্ধ্যায় হোটেলে ফিরে ফ্রেশ হয়ে খাওয়া ধাওয়া শেষে বের হলাম শাহজালাল মাজার ঘুরে দেখতে।
***সাধারণত সকল ভ্রমণকারী এই রুটে ভ্রমণের ক্ষেত্রে বিছনাকান্দি, পান্থুমাই ঝর্ণা এবং লক্ষণছড়া একসাথে ঘুরতে আসে। আমাদের অভিজ্ঞতা নাহ থাকায় পান্থুমাই ঝর্ণা আর লক্ষণছড়া মিস করি। শুধুমাত্র বিছানাকান্দি দেখতে চাইলে যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় হবে সেই একই পরিমাণ অর্থ দিয়ে তিনটি জায়গা একত্রে ঘুরে দেখতে পারবেন। তাই একসাথে এই তিনটি জায়গা দেখার পরিকল্পনা করলেই সবচেয়ে ভাল হবে।

#দ্বিতীয়_দিনঃ
২য় দিন আমরা সিএনজি ঠিক করি শাহপরান মাজার, লালাখাল, তামাবিল বর্ডার, আর জাফলং গুরার উদ্দেশ্যে। হতাশ করে নি প্লেসগুলো। অসম্ভব সুন্দর ছিলো। আর যাওয়ার সময় ছোট ছোট চা-বাগানে দাড়িয়ে ছবি তুলা সহ ভালোভাবে উপভোগ করা যায়। জাফলং এ গিয়ে পাহাড়ের টিলা থেকে মেঘালয় রাজ্যের ডাউকি শহর দেখা যায়।
***জাফলং যাবেন আর ঝর্ণায় যাবেন নাহ, তাহ কি করে হয়। জাফলং এ রয়েছে সংগ্রামপুঞ্জি ঝর্ণা। এই ঝর্ণাটিও অভিজ্ঞতার অভাবে মিস করি। জাফলং জিরো পয়েন্ট থেকে ঝর্নায় যেতে মাত্র ১৫ থেকে ২০ মিনিট সময় লাগে। এই ঝর্ণার রয়েছে মোট তিনটি ধাপ। সাধারণত উপরের ধাপে গিয়ে বিএসএফের চোখে পড়লে ধাওয়া দেয় ওরা।

#তৃতীয়_দিনঃ
৩য় দিনের প্ল্যান ছিলো শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ঘুরে দেখা। আমার কিছু ফ্রেন্ড সাস্টে অধ্যায়নরত আছে। ওরাই আমাদেরকে পুরো ক্যাম্পাসটা ঘুরিয়ে দেখিয়েছিলো। মূল গেইট দিয়ে যখন ঢুকবেন, মনে হবে যেন দুই পাশের সারিবদ্ধ গাছ আপনাকে স্বাগতম জানাচ্ছে। এরপর হাঁটতে হাঁটতে বন্ধু আমাদেরকে ভার্সিটির শহীদ মিনারে নিয়ে যায়। চাইলে শহীদ মিনারে বসে আপনি একান্ত কিছু সময় কাটাতে পারেন। আশেপাশের ভিউ ছিলো অস্থির। এরপর সেখান থেকে গেলাম অস্ট্রেলিয়া আর নিউজিল্যান্ড। আসলে আপনি ভুল শুনেন নি, ভার্সিটির দুটি বড় পাহাড় রয়েছে; অস্ট্রেলিয়া পাহাড় আর নিউজিল্যান্ড পাহাড়। অস্ট্রেলিয়া পাহাড়ের উপরের থেকে আশেপাশের অসাধারণ ভিউ ছিলো। অস্ট্রেলিয়া পাহাড়ের উপরে রয়েছে ছোট একটা মন্দির। চাইলে আপনি পাহাড়ের উপরে বসে কিছুক্ষণ সময় কাটাতে পারবেন। পুরো ভার্সিটিটা ভালোভাবে উপভোগ করতে সব মিলিয়ে দেড় থেকে দু’ঘন্টায় যথেষ্ট। ওইদিন ভালোই উপভোগ করেছিলাম। আমরা ওইদিন আর কোনো প্লেসে যায় নি। আপনারা চাইলে কিছু প্লেস এড করে নিতে পারেন।

#যেভাবে_যাবেন_এবং_কোথায়_থাকবেনঃ
থাকার জন্য ভালো মানের হোটেল পাবেন মাজার রোড়ে।
ঢাকা/চট্রগ্রাম থেকে যারা আসবেন, তারা বাস/ট্রেন যোগেও আসতে পারেন। তবে আমার মতে ট্রেনে আসায় বেস্ট হবে। ভালোভাবে উপভোগ করতে পারবেন জার্নিটা। আমরা গিয়েছিলাম ফেনী থেকে ট্রেনে করে। ট্রেনের টিকেট কমপক্ষে ১-২ দিন আগে অগ্রিম কাটতে হয়। ভালো টিকেট পেতে হলে ২-৩ দিন আগে টিকেট কাটা উচিত। ফেনী থেকে সিলেট শোভন শেয়ারের ভাড়া জনপ্রতি ২৬৫ টাকা।
১ম দিনের(রাতারগুল আর বিছানাকান্দি) সিএনজি ভাড়া ১৬০০ টাকা।
*রাতারগুল জলাবন ঘুরার জন্য নৌকার ভাড়া পড়বে ৯০০ টাকা।
*আপনি চাইলে সিএনজি নিয়ে সরাসরি বিছানাকান্দি যেতে পারবেন। তবে ইঞ্জিনচালিত বোটে করেও যেতে পারবেন। হাদারপার বাজারে নেমে একটু হাঁটলেই ঘাটে বোট পেয়ে যাবেন। যাওয়া থেকে আসা সব মিলিয়ে বোট ভাড়া পড়বে ১০০০ থেকে ১২০০ টাকা।
২য় দিনের(শাহপরান মাজার, লালাখল, ছোট ছোট চা বাগান, তামাবিল বর্ডার গেইট, জাফলং) সিএনজি ভাড়া ১৫০০ টাকা।
৩য় দিন আম্বরখানা মোড় থেকে লোকাল সিএনজিতে জনপ্রতি টাকা ১৫ টাকা ভাড়া দিয়ে চলে যায় শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের গেইটে। আসার সময় বন্ধুর ভার্সিটির বাসে করে চলে আসি আম্বরখানা।
সেখান থেকে সন্ধ্যার পরে সিএনজি করে রেলস্টেশন আসি এবং রাতের ট্রেনে ফেনী চলে আসি (তবে এই যাত্রায় টিকেট পায়নি, অনেক কষ্ট করে আসতে হয়েছে টিকেট ছাড়া) তাই বলছি যথাযত রুট প্ল্যান করে যাবেন আর অগ্রিম আসা-যাওয়া টিকেট কেটে নিবেন।

#যেসব_জায়গায়_যাওয়া_হয়নিঃ
খাসিয়াপল্লী, হাকালুকি হাওর, ভোলাগঞ্জ সাদাপাথর, আগুন পাহাড়, লোভাছড়া। হাকালুকি হাওর শীতকালে বেশি উপভোগ করতে পারবেন। কারণ তখন বিভিন্ন প্রজাতির পাখির আগমন ঘটে এই হাওরে। আবার বর্ষাকালেও উপভোগ করতে পারবেন। আর আগুন পাহাড়ে বিকালের দিকে বেশী উপভোগ করতে পারবেন। ভোলাগঞ্জ সাদাপাথর আর লোভাছড়া বর্ষাকালে উপভোগ করা যায় বেশী।

#বিশেষ_সতর্কতাঃ
যেখানে সেখানে ময়লা না পেলে নির্দিষ্ট জায়গায় ময়লা ফেলুন। এতে পরিবেশের সৌন্দর্যতা নষ্ট হবে নাহ (অনেক জায়গায় দেখলাম ডাস্টবিন থাকা সত্ত্বেও মানুষ যত্রতত্র ময়লা ফেলছে)

Source: Kamrul Islam Rony‎<Travelers of Bangladesh (ToB)

Share:

Leave a Comment