মনপুরাতে মন হারাতে মনপুরা ভ্রমণ
মনপুরা সিনেমা দেখার পর থেকেই মনপুরাতে যাওয়ার বেশ শখ । তাই ব্যাগ বস্তা গুছিয়ে হালকা শীতের সময় নেমে পড়লাম মনপুরা জার্নিতে ।
আকাশ এত নীল আর সাদা ছিল বলার মত না । এতো সুন্দর আকাশ হতে পারে ! আর প্রকৃতি,আবহাওয়া তো চমৎকার । খুব বেশি কিছু যে দেখার আছে তাও না । তবে যারা প্রকৃতি ভালোবাসেন একটু নিরিবিলীতে কয়েকটা দিন শহরের কোলাহল থেকে কাটাতে চান তাদের জন্য এই মনপুরা । জার্নিটাও বেশ মজার,আরামদায়ক । ঢাকার সদরঘাট থেকে লঞ্চে উঠবেন ।বিকাল ৫টা থেকে সাড়ে পাচটার মধ্যে সব লঞ্চ । এই রুটে দুইটি লঞ্চ চলে , তাসরিফ আর ফারহান । লঞ্চে লিখা দেখবেন হাতিয়া,মনপুরা ।
জার্নি শুরু হওয়ার পর মধ্য রাতে যখন লঞ্চ মেঘনা নদীতে এসে পড়বে । তখন দেখবেন আর কূল পাবেন না নদীর । চারপাশে ছোট ছোট নৌকার আলো আর দূরে বাজার,বাড়ি ঘরের কিছু আলো ঝলমল করবে মাঝেমাঝে । লঞ্চের একেবারে সামনে বা ছাদে থাকলে বেশি উপভোগ করবেন । আর যদি হয় জ্যোৎস্না রাত! আরকি কিছু বলার আছে বাকিটা বুঝে নেন । এভাবে সারারাত যখন কাটাবেন তখন মনপুরা সিনেমার “যাও পাখি বলো তারে” গানটা শুনতে ভুল করবেন না । সব খাবার লঞ্চেই পাবেন,তবে দাম খুব চড়া । কিন্তু লঞ্চের খাবার খুব টেস্টি ।বিশেষত মাছের যে আইটেমগুলো পাবেন । বাকিটা আপনার সিদ্ধান্ত । মনপুরা পৌছাবে লঞ্চ সকাল ছয়টা থেকে সাতটার মধ্যে । আগে বলে রাখবেন যে মনপুরা নামবেন । নাহলে হাতিয়া চলে যাবেন । সকালটা অবশ্যই উপভোগ করবেন । শহরের সূর্যোদয় আর মনপুরার সূর্যোদয়ের মধ্যে পার্থক্য পাবেন বেশ ।
তারপর ঘাটে নেমে দামাদামি করে বাইক নিয়ে চলে যাবেন হাজিরহাট । বা বাইকারকে বলবেন হোটেলে যাবো তারাই নিয়ে যাবে । যেতে যেতে মনপুরা অর্ধেক দেখা হয়ে যাবে । এখানে ৬০০\৮০০ টাকার মধ্যে মোটামুটি মানের হোটেল পাবেন । তারপর ফ্রেশ হয়ে আবার কোন বাইক একদিনের জন্য ঠিক করে ঘুড়তে বেড়িয়ে পড়ুন । সব জায়গা ঘুড়াতে ১০০০\১২০০ টাকা নিবে । দামাদামি করবেন । ওরা অনেক জায়গায় নিয়ে যেতে চাইবে আসলে এতো যাওয়ার কিছু নেই । ল্যান্ডিং পয়েন্ট আর আলম বাজার ঘোড়ার জায়গা । ল্যান্ডিং পয়েন্টে দেখতে পাবেন অপূর্ব সূর্যাস্ত । আর আলম বাজারে অদ্ভূত কিছু ঝোপঝাড়ের আড়ালে হরিণ দেখতে পাওয়া যায় । তবে সেটা কপালের ব্যাপার । হরিণ দেখতে হলে বহু কাঁদা পেরিয়ে,বুনো কাঁটার গাছের গুতা খেয়ে জঙ্গলের ভিতরে ঢুকতে হবে পা টিপেটিপে । আমরা প্রায় দুই ঘন্টা বনে বিচরণ করে এক দল হরিণের পশ্চাৎ দেশ দেখে ফিরে এসেছিলাম । মনপুরার খাবার হোটেলগুলোতে টাটকা মাছ পাবেন খেতে । মাছ প্রেমিদের জন্য উত্তম । ফেরার সময় দুপুর একটা থেকে তিনটার মধ্যে ঘাটে থাকবেন । লঞ্চে উঠে আবার মনপুরা দেখতে দেখতে আপনার জাদুর শহর ঢাকার চলে আসবেন ভোর পাঁচটা নাগাদ ।
খরচ: ( আমাদের টিম হিসেবে )
লঞ্চে কেবিন: সিঙ্গেল ৮০০,ডাবল ১৬০০, ডেক ৩০০
মনপুরা ঘাট থেকে হোটেল: প্রতি বাইক ১০০টাকা ( চালক সহ মোট তিনজন ওঠা যাবে )
হোটেল ভাড়া : ৬০০~৮০০
ঘুড়াঘুড়ির জন্য বাইক ভাড়া: ১০০০
খাবার: আপনার মন মত ( তবে খাবারের দাম তুলনামূলক কম । জন প্রতি ১৫০ টাকায় সেই মানের খাবার পাবেন । )
( ময়লা ফেলে মনপুরাকে ডাস্টবিন বানিয়ে আসবেন না । নদীতেও ময়লা ফেলবেন না । নির্ধারিত জায়গায় ফেলবেন ।)
Source: Tasnia Lasker <Travelers of Bangladesh (ToB)