মহেশখালী হয়ে সোনাদিয়া দ্বীপে
সীমান্ত যেখানে শেষ, গন্তব্য এবার সেখানেই। উদ্দেশ্য ছিল বঙ্গোপসাগর ঘেসে থাকা কক্সবাজার জেলার টেকনাফ হয়ে শাহপরীর দ্বীপ এবং পর্যায়ক্রমে মহেশখালী হয়ে সোনাদিয়া দ্বীপে। পূর্বে মায়ানমারের মংডু পশ্চিমে বঙ্গোপসাগর নিয়ে নাফ নদীর মোহনায় ১৫ বর্গকিলোমিটার আয়তন নিয়ে গঠিত সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীর দ্বীপ। যতটুকু চোখ যায় নীলাভ সাগর আর অথই পানি। হালকা ঝাপসা হলেও কুয়াশা থাকেনি তাই দেখা মিলে প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিনও।
গভীর সাগরে মাছ ধরা, লবন চাষসহ, কৃষিকাজই এই দ্বীপের মানুষের প্রধান পেশা। লোনা পনির দ্বীপ হলেও ডাবের পানি আর টিউবওয়েলের পানি দুটির স্বাধই সুপেয়। যারা যান ডাব না খেয়ে আসবেন না। আমরাও মিস করিনি। রোহিঙ্গা সম্প্রদায়কে সবাই দিয়ে আসলেও আমরা খেয়ে আসলাম ডাব। যদিওবা তারা অনেক প্রবীণ রোহিঙ্গা আর ডাবের দরটা ছিল নিতান্তই অনেক কম। দ্বীপের পশ্চিম পাশ ধরে হাটলে দেখা মিলবে স্থানীয়দের শুটকি তৈরির প্রক্রিয়া।
খালের পানি দিয়ে জমিতে প্রবেশ করিয়ে চাষ হয় লবনের। চোখ যতটুকু যায় চোখে পরে লবনের চাষ আর লবনস্তুপ। গাংচিল ছিল প্রতিটা পথের নৃত্যরত সাথী। সন্ধ্যা গড়িয়ে সূর্যাস্ত হল অতঃপর প্রস্তুত পূর্ণিমা উপভোগের। টেকনাফের বিচ পয়েন্টে তাবু টাঙিয়ে পুর্নিমা উদযাপন যেন এক ঢিলে বহু পাখির মত। নিঃসন্দেহে ধন্যবাদ পাওয়া দাবিদার ক্ষনিকের সাক্ষাতে আপন করে নেওয়া জুয়েল ভাইয়ের। এই যাত্রায় উনার সহযোগীতা সফল হলই পুরো ট্যুরটাই। রাত শেষ হয় নিশিতে সূর্য উপভোগ করে। ভোরের আলো তাবু ছেদ করে প্রবেশের মাধ্যমে ঘুম ভাঙে। যাত্রা শুরু হয় নতুন এক দিনের। মেরিন ড্রাইভ ধরে যখন এগিয়ে যাচ্ছি অবাক হচ্ছি টেকনাফের পাহাড়শ্রেণী দেখে।
তিন পার্বত্য অঞ্চলের পাহাড় আর টেকনাফের পাহাড় অনকটা ভিন্ন। পরেরবার এই পাহাড় ছড়া মিস করবো না ইনশাআল্লাহ। উদ্দেশ্য এখন জাহাজপুরের মাদার ট্রি খ্যাত শতবর্ষি গর্জন বাগান। চোখ ধাঁধানো এই গাছগুলো দেখলে মনে হবে প্রকৃতি যেন নিজ হাতে সারি সারি ভাবে রোপন করেছে। লম্বা সোজা সাদা আকৃতির এই গর্জন বাগানের গাছ গুলো যেন নীল আকাশকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে। যাত্রা এখন বাংলাদেশের একমাত্র পাহাড়ী দ্বীপ মহেশখালি। যদিওবা সড়কপথে চকরিয়া বদরখালি হয়ে মহেশখালি যাওয়া যায়। আমরা কক্সবাজার ৬নং ঘাট থেকে স্পীড বোটে ১৫মিনিটেই মহেশখালি পৌছাই।
দুপুরের খাবার খাওয়া হয় মহেশখালীর বিখ্যাত “মিষ্টিমুখ” নামে এক হোটেলে। অবশ্যই স্থানীয় মিষ্টি “কালো জাম” মিস করবেন না এই হোটেলে। খাবার শেষে লাল কাকড়ার দ্বীপ সোনাদিয়ার উদ্দেশ্যে। সিএনজি নিয়ে চলে গেলাম ঘটিভাঙ্গা নামক একটি জায়গায়। সোনাদিয়াতে যেতে হয় দুভাবে। জোয়ার থাকলে নৌকা/বোট অথবা জোয়ার না থাকলে পায়ে হেটে। জোয়ার না থাকায় আমাদের যেতে হল ৬কিলোমিটার পথ পায়ে হেটে। তখনি সন্ধ্যা গড়িয়ে এলো। নিস্তেব, নিরিবিলি সোনাদিয়া যেন অন্য এক জগত। একপাশে সাগরের গর্জন অন্যদিকে অন্ধকারের নিস্তেজ শব্দ যেন এক ভূতুরে পরিবেশ। রাত শেষ হয়ে ভোরের জগতটার রাজত্ব লাল কাকড়াদের। যেন বাজার বসেছে কাকড়াদের। যতটুকু চোখ যায় লাল আর লাল। কাছে যেতেই গায়েব যেন লুকোচুরি খেলছে। নীলাভ সমুদ্র, সৈকতে ভেসে আসা শামুক ঝিনুক, আর লাল কাকড়ার ছোঁয়াই পুরো সোনাদিয়া সৈকত। লাল নীল সবুজের সমারোহ এই দ্বীপ ছেড়ে বোটেই রওনা মহেশখালির উদ্দেশ্যে। মহেশখালি হয়ে বাশখালি অতঃপর প্রিয় চট্টগ্রাম।
(যেখানে যান না কেন পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখা আপনার নৈতিক দায়িত্ব। তাই অপচনশীল জিনিস যেখানে সেখানে না ফেলে নিদ্দিষ্ট স্থানে কিংবা ব্যাগে করে ফেরত নিয়ে আসবেন।)