মৌলভীবাজারের সকল দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে জেনে নিন
মৌলভীবাজার জেলা বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সিলেট বিভাগের অন্তর্গত ঐতিহ্য মন্ডিত জেলা। পর্যটন শিল্পের জন্যে গুরুত্বপূর্ন এই জেলা বাংলাদেশের সভ্যতা, ঐতিহ্য, কৃষ্টি ও সংস্কৃতিতে অবদান অনেক। বৈচিত্রময় চারপাশে, দৃষ্টি নন্দন চা বাগান, আদিবাসীদের সংস্কৃতি ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আপন মহিমায় এই জেলা অন্যে জায়গা থেকে ভিন্ন।
মৌলভীবাজার জেলায় রয়েছে অনেক পর্যটক আকর্ষণীয় ভ্রমণ স্থান ও ঐতিহাসিক গুরুত্ব সম্পন্ন জাগায়। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থান গুলোর মধ্যে রয়েছে, বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহী হামিদুর রহমানের স্মৃতিসৌধ, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, হযরত শাহ মোস্তফা (র:) এর মাজার শরীফ, ৯২ টি চা বাগান, চা গবেষণা ইনষ্টিটিউট, পৃথিমপাশা নবাববাড়ী, মনু ব্যারেজ, মাধবপুর চা-বাগান লেক, মনিপুরী পল্লী, কমলা/লেবু/আনারস বাগান, পাহাড়, টিলা, হাওড় ও বিলের সমাহার।
চা-বাগান:মৌলভীবাজার জেলার বিস্তৃত অঞ্চলে ছোট ছোট টিলা, পাহাড় ও সমতলে ৯২টি চা বাগান রয়েছে। প্রতিটি চা বাগানে রয়েছে সবুজের সমাহার, অপরূপ সৌন্দর্য, বিভিন্ন প্রজাতির পশুপাখি।তথ্যসূত্র : জেলা প্রশাসন, মৌলভীবাজার। মাধবকুন্ড:দেশের সর্ব বৃহৎজলপ্রপাত মাধবকৃন্ড। প্রায় ৮৩ মিটার উচু পাহাড়ের উপর থেকে জলরাশি অবিরাম ধারায় নিচে পড়ছে। বিরামহীন এই জলরাশি পতনের ফলে সৃষ্ট কুন্ডের প্রবাহ শান্ডির বারিধারার মতো।অবস্থান : বড়লেখা উপজেলা।দুরত্ব : মৌলভীবাজার জেলা সদর থেকে ৭০ কিলোমিটার এবং সিলেট থেকে ৭২ কিলোমিটার।রেষ্ট/গেষ্ট হাউস সুবিধা : জেলা পরিষদের বাংলো-০২টি, আবাসিক হোটেল-০২টি।তথ্যসূত্র : পর্যটন সেল, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, মৌলভীবাজার। মাধবকৃন্ড ইকোপার্ক:সিলেট বন বিভাগের আওতাধীন জুড়ী-২ রেঞ্জের বন বিটের মাধবকৃন্ড ইকোপার্ক স্থাপনের ফলে ইকো-ট্যুরিজমের নব দিগন্তের সূচনা হয়েছে। মাধকুন্ড জলপ্রপাত, বিশাল আকৃতির পাথর, বিরল প্রজাতির বৃক্ষরাজি, বাঘ, হরিণ, হাতি, হনুমান ইত্যাদি প্রাণীর পদচারণায় মুখরিত মাধবকুন্ড ইকোপার্ক দেশের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তর সিলেটের প্রথম ইকোপার্ক।অবস্থান : বড়লেখা উপজেলা।দুরত্ব : মৌলভীবাজার জেলা সদর থেকে ৭০ কিলোমিটার।রেষ্ট/গেষ্ট হাউস সুবিধা : জেলা পরিষদের বাংলো-০২টি, আবাসিক হোটেল-০২টি।তথ্যসূত্র : বিভাগীয় বন কর্মকর্তার কার্যালয়, সিলেট। বাইক্কাবিলমাছওপাখিরঅভয়াশ্রমএবাইক্কাবিল।ঢাকাথেকে২০০কিমি. উত্তর-পূর্বেমৌলভীবাজারজেলারঅন্তর্গতশহরশ্রীমঙ্গল।এশহরের৬০০বর্গকিলোমিটারএলাকাজুড়েহাইলহাওর।এরপূর্বদিকে১০০হেক্টরএলাকানিয়েপ্রতিষ্ঠিতহয়েছেএঅভয়াশ্রমটি।
মার্কিনসাহায্যসংস্থাইউএসএইডেরসাহায্যএবংস্থানীয়প্রশাসনওজনগণেরসহযোগিতায়গড়েওঠাএঅভয়াশ্রমইঐতিহাসিকভাবেদেশীয়মাছেরবংশবিস্তারেপ্রথমএলাকা। হাকালুকিহাওরবাংলাদেশেরবৃহত্তমহাওরহাকালুকিমৌলভীবাজারজেলায়অবস্থিত।এহাওরেরআয়তনপ্রায়২০,৪০০হেক্টর।বর্ষাকালেবিস্তৃতজলরাশিএহাওরেররূপঠিকযেনভাসমানসাগর।আদিগন্তুবিস্তৃতজলরাশি।হাকালুকিহাওরমাছেরজন্যপ্রসিদ্ধ। হাকালুকিহাওরবাংলাদেশেরসংরক্ষিতজলাভূমি।
শীতমৌসুমেএশিয়ারউত্তরাংশেরসাইবেরিয়াথেকেপ্রায়২৫প্রজাতিরহাঁসএবংজলচরনানাপাখিপরিযায়ীহয়েআসে।এছাড়াস্থানীয়প্রায়১০০প্রজাতিরপাখিসারাবছরএখানেদেখামেলে।এইহাওরঅর্থনৈতিকদিকথেকেঅত্যধিকগুরুত্বপূর্ণ।মৎসসম্পদএবংজলজপ্রাণী-উদ্ভিদেরজীববৈচিত্র্যএককথায় আসাধারণ।হাকালুকিহাওরেঅনেকপ্রজাতিরমাছপাওয়াযায়।চিতল, আইড়, বাউশ, পাবদা, মাগুর, শিং, কৈপ্রভৃতিমাছএখানেরয়েছে।নভেম্বরথেকেফেব্র“য়ারিমাসেরমাঝামাঝিসময়হাওরভ্রমণেরজন্যসেরা।
এসময়এখানেপ্রচুরসংখ্যায়পরিযায়ীপাখিরকলকাকলিতেচারদিকমুখরথাকে। বর্ষিজোড়া ইকোপার্ক: অবস্থান :মৌলভীবাজার সদর উপজেলা।দুরত্ব : মৌলভীবাজার জেলা সদর থেকে ০২ কিলোমিটার।রেষ্ট/গেষ্ট হাউস সুবিধা : জেলা পরিষদের বাংলো-০১টি, আবাসিক হোটেল-১৫টি।তথ্যসূত্র : বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ, সিলেট। সদর দপ্তর, মৌলভীবাজার এর প্রচারপত্র। হযরত শাহ মোস্তফা (র:) এর মাজার শরীফ:হযরত শাহজালাল (র:) এর অন্যতম অনুসারী হযরত শাহ মোস্তফা (র:) ইসলামের চতুর্থ খলিফা হযরত আলী (র:) এর বংশধর ছিলেন। প্রায় সাতশত বছর আগে মৌলভীবাজার জেলার মোস্তফাপুর-এ বসতি স্থাপন করেন এবং এলাকায় ইসলাম ধর্ম প্রচার ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা পালন করেন। মৌলভীবাজার শহরের প্রতিষ্ঠাতা মৌলভী সৈয়দ কুদরত উল্লা হযরত শাহ মোস্তফা (র:) এর বংশধর ছিলেন।।তথ্যসূত্র : পর্যটন সেল, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, মৌলভীবাজার। বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী হামিদুর রহমান স্মৃতিসৌধ:বীরশ্রেষ্ঠ্ শহীদ সিপাহী হামিদুর রহমানকে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে সমাধিস্থ করা হয়েছিল। তার স্মৃতি রক্ষার উদ্দেশ্যে কমলগঞ্জ উপজেলার ধলই সীমান্তে স্মৃতিসৌধ নির্মিত হয়।তথ্যসূত্র : পর্যটন সেল, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, মৌলভীবাজার। লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান:কমলগঞ্জ উপজেলার লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে অনন্য। জীববৈচিত্র্যে ভরপুর জাতীয় উদ্যানে এখনও টিকে রয়েছে বেশ কিছু বিরল প্রজাতীর পশুপাখি, যাদের মধ্যে উল্লুক (গিবন) অন্যতম। এছাড়াও রয়েছে হনুমান (ক্যাপড লেংগুর) লজ্জাবতী বানর (স্নো লোরিন), কুল বানর (পিগ টেইলড ম্যাকাও), কাঠবিড়ালী, হরিণ ইত্যাদি।আয়তন : ১২৫০ হেক্টর,অবস্থান : কমলগঞ্জ উপজেলা।দুরত্ব : মৌলভীবাজার জেলা শহর হতে ৩০ কিলোমিটার।পর্যটন সুবিধা : বনবিভাগের একটি রেষ্ট হাউসসহ বিভিন্ন পাবলিক রেস্তোরা রয়েছে। এছাড়া রয়েছে পায়ে চলার ট্রেইল, ইকো-গাইড, তথ্য কেন্দ্র ইত্যাদি।তথ্যসূত্র : বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ, সিলেট। সদর দপ্তর,মৌলভীবাজার। মাধবপুর চা বাগান ও লেক:মাধবপুর চা বাগানের মধ্যে কৃত্রিমভাবে তৈরী মাধবপুর লেক।
এ লেকে রয়েছে প্রচুর শাপলা ো পদ্ম ফুল। শীত মৌসুমে এ লেকে বিভিন্ন প্রজাতির অতিথি পাখির সমাগম হয়।অবস্থান : কমলগঞ্জ উপজেলা।দুরত্ব : মৌলভীবাজার জেলা শহর হতে ৫০ কিলোমিটার।পর্যটন সুবিধা : চা বাগানের নৈসর্গিক পরিবেশে লেকের পানিতে দেশী নৌকায় নৌবিহার করা যায়। লেকের চারিদিকে উচু টিলার উপর চা বাগানটি খুবই আকর্ষণীয় পর্যটন স্পট। তথ্যসূত্র : পর্যটন সেল, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, মৌলভীবাজার। মনিপুরী পল্লী :মনিপুরীদের অন্যতম আবাসস্থল আদমপুর ও মাধবপুর। পাহাড়-পর্বত এবং অরণ্য ভূমি নয়নাভিরাম দৃশ্যাবলী মানুষের মনকে যতটা আকৃষ্ট করে তার চেয়েও বেশী আকৃষ্ট করে মনিপুরীদেরজীবন প্রণালী।মনিপুরীদের রয়েছে উন্নত সংস্কৃতি। প্রতি বছর নভেম্বর মাসে অগ্রহায়ণের শুরুতে মনিপুরী পল্লীতে বসে আকর্ষণীয় রাস মেলা। রাস মেলায় দেশ বিদেশ থেকে অসংখ্য দর্শণার্থী আসেন। দর্শণার্থীরা এ সময় ক্রয় করতে পারেন মনিপুরী শাল, চাদর, শাড়ী, সেলোয়ার-কামিজ, ব্যাগ, ফতুয়া, পঞ্জাবী ইত্যাদি। মাধবপুরে রয়েছে একটি মনিপুরী সাংস্কৃতিক একাডেমী। অবস্থান : কমলগঞ্জ উপজেলা।দুরত্ব : মৌলভীবাজার জেলা শহর হতে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার। হাকালুকি হাওড়:হাকালুকি হাওড় বাংলাদেশের একটি অন্যতম বৃহৎ মিঠা পানির জলাভূমি। হাকালুকি হাওড় সিলেট এবং মৌলভীবাজার জেলার ৫টি উপজেলা জুড়ে বিস্তৃত। এ হাওড়ে প্রচুর জলজ উদ্ভিদ এবং বিলুপ্ত প্রায় অনেজ মৎস্য প্রজাতির সন্ধান পাওয়া যায়। পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চল থেকে অতিথি পাখীরা হাকালুকি হাওড়ে আসে খাদ্য ও আবাস স্থলের সন্ধানে।তথ্যসূত্র : উপকূলীয় ও জলাভূমি জীববৈচিত্র্য ব্যবস্থাপনা প্রকল্প এর বুকলেট।
বিল ও হাওড়:মৌলভীবাজার জেলার প্রখ্যাত চা সমৃদ্ধ শহর শ্রীমঙ্গলের হাইল হাওড়ের পূর্ব দিকের প্রায় ১০০ হেক্টর আয়তনের একটি জলাভূমির নাম বাইক্কা বিল। ১ জুলাই ২০০৩ তারিখে ভূমি মন্ত্রণালয় এ বিলটিকে মৎস্য সম্পদের একটি স্থায়ী অভয়াশ্রম হিসেবে সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ বিল মাছের জন্যেই শুধু নয়, উপরন্তু পাখি ও অন্যান্য অনেক প্রাণীর জন্যও একটি চমৎকার নিরাপদ আবাসস্থল। নয়নাভিরাম এ জলাভূমিতে হাজারো শাপলা আর পদ্ম ফুল ফোটে। বিলের বুনো বাসিন্দা আর শীতের অতিথিদের ভালোভাবে দেখার জন্য এখানে একটি পর্যবেক্ষণ টাওয়ার রয়েছে। অবস্থান : শ্রীমঙ্গল উপজেলা।দুরত্ব : মৌলভীবাজার জেলা শহর হতে প্রায় ২০ কিলোমিটার। তথ্যসূত্র : MACH প্রকল্পের বুকলেট। মনু ব্যারেজ:১৭৬ কিলোমিটার দীর্ঘ মনু নদী ৯৩ কিলোমিটার ভাতীয় এলাকা অতিক্রম করে এ জেলার গোবিন্দপুর দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। বন্যার প্রকোপ থেকে কুলাউড়া, কমলগঞ্জ, রাজনগর ও মৌলভীবাজার উপজেলার ৫৪০ বর্গকিলোমিটার এলাকা রক্ষায় মনু ব্যারেজ তৈরী করা হয়। এ ব্যারেজে একটি খননকৃত লেক আছে যেখানে প্যাডেল বোটে পরিভ্রমণের ব্যবস্থা রয়েছে। অবস্থান : মৌলভীবাজার জেলার মৌলভীবাজার সদর এবং রাজনগরউপজেলা।দুরত্ব : মৌলভীবাজার জেলা শহর হতে প্রায় ৩ কিলোমিটার। তথ্যসূত্র : পানি উন্নয়ন বোর্ড, মৌলভীবাজার।
বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনষ্টিটিউট:১৯৫৭ সালে পাকিস্তান চা গবেষণা প্রতিষ্ঠান (পিটিআরআই) স্থাপন করা হয়। বাংলাদেশ স্বাধীনতা পরবর্তী ১৯৭৩ সালে এ গবেষণা প্রতিষ্ঠানটিকে একটি পূর্নঙ্গ গবেষণা ইনষ্টিটিউট এ রূপান্তর করে এর নামকরণ করা হয় বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনষ্টিটিউট (বিটিআরআই)। এ ইনষ্টিটিউটটি চায়ের রাজধানী শ্রীমঙ্গলের গর্ব। শ্রীমঙ্গলের ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানটি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে চায়ের গবেষণার মাধ্যমেতার অবস্থান সুসংহত করে আসছে। অবস্থান : শ্রীমঙ্গল উপজেলা।দুরত্ব : মৌলভীবাজার জেলা শহর হতে প্রায় ২৫ কিলোমিটার। তথ্যসূত্র : বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনষ্টিটিউট, শ্রীমঙ্গল, মৌলভীবাজার। অন্যান্য নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠী:মনিপুরী ছাড়াও এ জেলায় রয়েছে অন্যান্য নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠী। তন্মধ্যে খাসিয়া, সাঁওতাল, টিপরা উল্লেখযোগ্য। এ সকল নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যসহ রয়েছে নিজস্ব ঐতিহ্য। তথ্যসূত্র : পর্যটন সেল, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, মৌলভীবাজার।