রহস্যময় আলীর সুড়ঙ্গ

আলীর সুড়ংগ নিয়ে অনেক মিথ কল্পকথা শুনে এখানে যাবার জন্য একটা ফ্যাসিনেসন তৈরি হয় আমাদের মধ্যে। তবে কেমন যাত্রাপথ হতে পারে সেইটা নিয়ে ছিল অপর্যাপ্ত ধারনা। তুক অ ঝর্নায় যাবার ফলে আগের দিন বেশ ধকল গিয়েছিল দেহে তবে এখানেও যে এতটা ভয় জাগানো ট্রেকিং করতে হবে তা ছিল ধারনার বাহিরে। গিরিখাদ পেড়িয়ে যখন এক চিলতে সরু পথ দেখতে পেলাম তখনই মনটা বেশ বিচলিত হয়ে উঠলো। সে পথ দিয়ে একটু এগুতেই বায়ে দেখতে পেলাম ঝিরির মুখ। চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে নানা আকৃতির পাথর আর পচা গাছের গুড়ি। এই রহস্যময় পথ ধরে আমাদের পথ চলা। অবাক ব্যাপার বাহিরে দড়দড়িয়ে ঘামালেও সুড়ঙ্গে যাবার পথটা ছিল বেশ ঠান্ডা। ঝিরির সামনের দিকের পথ বেশ চওড়া হলে আস্তে আস্তে কমতে থাকে এর প্রশস্ততা। ঝিরির পানি মাড়িয়ে যেতে বেশ ভাল লাগছিল। এক সময় পথটি দু’ভাগে ভাগ হয়ে গেল। বামের পথে গেলে পাওয়া যাবে একটা সরু খাদ তাহা পাশ কাটিয়ে পাথরের চাংগর আর গাছের গুড়ির উপর ভর দিয়ে উপরে উঠলেই দেখা যাবে একটা লোহাড় সিড়ি। এই সিড়ি বেয়ে উপরে উঠাটা বেশ বিপদজনক। কারন এর বাম পাশে কিছুটা ভাংগা। কে বা কারা এই সিড়িটা বানিয়ে রেখেছে তা জানি না। তবে চিন্তায় পড়ে গেলাম এই সিড়ি না হবার আগে মানুষজন কি ভাবে উপরে উঠাতো। সিড়ির মাথায় উঠার পর কয়েক ফুট উচু এক পিছুল চড়াই। কোন মতে এই পিছুল পথ পেড়িয়ে সামনে যাওয়া মাত্রই গ্রাস করলো নিকষ কালো অন্ধকার। টর্চ লাইটের আলো ফেলা মাত্রই বাদুড়ের ঝাপটাঝাপটির শব্দ শুনলাম। আলোর প্রতিফলনে সুড়ঙ্গের দেয়ালে এক অদ্ভূত সোনালী রূপ দেখতে পেলাম। সুড়ঙ্গের রাস্তা মসৃন নয়, কিছুটা এবড়ো খেবড়ো। তাই আলো ফেলে চলতেও বেশ সমস্যা হচ্ছিল। এক সময় এই পথের শেষ হয়, সুড়ংগের ছাদটা যেন নেমে এল আরও নিচের দিকে। হামাগুড়ি দিয়ে হয়তো আর একটু এগানো যেত কিন্তু সুড়ংগের পথটি দুভাগ হয়ে গেছে। কোনটা দিয়ে মানুষ ঢোকার পথ নেই। তো এখানে বসেই কিছু ছবি তুলে নিলাম। এরপর যে পথে এসেছি সে পথে ফিরে গেলাম। যাত্রা এবার শুরু হল দ্বিতীয় সুড়ঙ্গের উদ্দ্যেশে। দ্বিতীয় সুড়ংগ থেকে তৃতীয় সুড়ংগ বেড়ানোর পথ আছে আমাদের পিচ্চি গাইড বললো। সুড়ঙ্গে উঠার মুখেই দেখতে পেলাম একটা মাদার ট্রি এর পাশ দিয়ে যাবার সরু রাস্তা। সেখানে সুন্দর করে গাছের গুড়ি আর দড়ি দেওয়া আছে উপরে উঠার জন্য। গাছের গুড়ির উপর ভর দিয়ে পাথরের খাজে পা রেখে দড়ি ধরে পরের পাথরের খাজে পা রাখতে বেশ বেগ পেতে হল। আমাদের টীম মেম্বারদের অনেকের কালা ঘাম ছুটে গেলে এই ধাপটি পাড় করতে। উপরে উঠার পর আবার সরু রাস্তা। খানিকটা দূর এগানোর পর দেখতে পেলাম সুড়ঙ্গে ঢোকার রাস্তা যেইটা দিয়ে কোন রকম একটা মানুষের ঢোকা সম্ভব। কোন রকম উপরে উঠার পর টর্চ মেরে দেখলাম সামনে যাবার জন্য হামাগুড়ি দিয়ে যেতে হবে। মুখটা এত নিচু দাঁড়িয়ে চলা সম্ভব না। কিছুটা পথ হামাগুড়ি দিয়ে পাড় হবার পর সুড়ংগের মুখটা বড় হল। উঠে পড়লাম। আবার সেই এবড়ো খেবড়ো পথ পাড়ি দিয়ে এসে পড়লাম সুড়ংগের মাথায়। এখানে এসে থেমে গেল আমাদের যাত্রাপথ। কারন এর পরের স্টেপ পাড় করতে এক্সটীর্ম লেভেলের তেল খরচ করতে হবে। এই সুড়ংগের মাথা থেকে দেখা যাচ্ছে তৃতীয় সুড়ংগের মুখ। কিন্তু আমাদের পিছুল গিরিখাদ পাড়ি দিয়ে যেতে হবে ওপার। আমাদের কাছে দড়ি থাকলে হয়তো পার হবার চেস্টা করতাম। পথ পারি দিতে হলে জানের উপর দিয়ে যাবে। এর মধ্যে একটা পাথরের উপর দেখতে পেলাম ময়লা কুরআন শরীফ, মোমবাতি। কিছুটা অবাক কারন কুরআন শরীফের এই রকম অবমাননা কোন মুসলিমের পক্ষে করা সম্ভব না। বাপ দাদাদের মুখে শুনতাম পাহাড়ের গভীরে নাকি জাদু টোনা কুফরী কালাম করা হয়। কতটুকু সত্য মিথ্যা তা জানি না। তবে মাথায় এক রহস্যের ঘোর নিয়ে বের হলাম আলীর সুড়ংগ থেকে।

কিভাবে যাবেনঃ
ঢাকা-চকরিয়া (৭৫০ টাকা বাসভাড়া)
চকরিয়া-আলিকদম(বান্দরবান) (লোকাল বাস বা লোকাল চাঁদের গাড়ি ৬০টাকা করে একজন)
আলিকদম নেমে গুহার কথা বললে যেকোনো অটোওয়ালা এক এক জন ১৫-২০টাকা রেটে খালের এপারে নামিয়ে দিবে। নৌকা দিয়ে খালপাড় হলেই ট্রেইল শুরু।

Post Copied From:Ashik Sarwa>rTravelers of Bangladesh (ToB)

Share:

Leave a Comment