শরীয়তপুরের রুদ্রকরের জমিদার বাড়ি ভ্রমণ
শরীয়তপুর জেলা শহর থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দক্ষিন-পূর্বে ঢাকা ডামুড্যা মহাসড়কে পাশে রুদ্রকর ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় । এরই পশ্চিম পাশ দিয়ে একটি আকাঁবাকাঁ মেঠোপথ চলে গেছে । মহাসড়ক থেকে উওর দিকে । এ পথে পা বাড়ালেই জমিদার বাড়ি তথা বাবু বাড়ি সংলঘ্ন বাবু বাড়ির মঠের অবস্থান চোখে পড়বে ।মঠের কাছে এলেই বিশাল পুকুর লাগোয়া সু-উচ্চ এই মঠটি দেখে সবাই মুগ্ধ হয়ে যাবে।
জমিদার বাড়িতে মূলত কবে নাগাদ নির্মান করা হয়েছে তা জানা যায়নি । তবে জমিদার বাড়ির প্রবেশ পথে প্রথম ইমারতের মূল ফটকের উপরে লেখা রয়েছে শ্রী শ্রী লক্ষ্মীনারায়ন , নীলমনি চক্রবর্তী মহাশয় কৃত দালানের পুনঃসংস্কার ১২৯৮বঙ্গাব্দ। বর্তমানে জমিদার বাড়ির তিনটি ইমারত তাদের অস্তিত্ব বজায় রেখে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে অপূর্ব নির্মান শৈলী নিয়ে । তিনটি দালানের দু’টিতে এখনো এক সমায়কার তিন তলার নিদের্শন পাওয়া যায় । তবে অবশিষ্ট অপর দালানটির প্রতম তলার বেশি অবশিষ্ট কিছু নেই । স্থানীয় মতে জানা যায় ।
এখনো আট থেকে দশটি লাগোয়া ইমরাত ছিলো । যা বাবু বাড়ির মঠ পর্যন্ত বিস্তৃত ছিলো । এর মধ্যে তিনতলা বিশিষ্ট ইমারতগুলি ছিলো আবাসস্থল । বাকীগুলোয় ছিলো দরবার কক্ষ গুদাম ঘর রন্ধনশালা ওনৃত্যশালা ।এ ছাড়া মঠ সংলগ্ন দালান ছিলো উপাসনালয় য়ার কোন অবস্থান এখন নেই । এ ছাড়া ও জমিদার বাড়ি তথা বাবু বাড়িটিতে কয়েকটিতে গোপন কুঠরী ছিল মাটির নিচে । ভূ-গর্ভস্থ যা এখন মাটি ধ্বংস স্তুপের নিচে তলিয়ে গেছে । ধারনা করা হয় মাটি খুড়লে এখনো এগুলো অস্তিত্ব লাভ সম্ভব । ইদানীং জমিদার বাড়ির কিয়দংশ দখলদারদের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
জমিদার বাড়ির সবচেয়ে বড় এবং আর্কষনী স্থাপত্য হচ্ছে বাবুবাড়ি বা জমিদারবাড়ির শশ্মাণ মন্দিও । এ মঠটি ও এখন অযত্নে ,অবহেলায় ক্রমশধ্বংস প্রাপ্ত হয়ে যাচ্ছে । মঠ থেকে চুরি হয়ে যাচ্ছে মূল্যবান ধাতু ও পাথর । অপূর্ব মায়াবী নৈশর্গ ও গাছ পালা ঘেরা বিশাল স্বচ্ছ পানির শানবাধানো পুকুর সংলগ্ন মঠটি স্থানীয় ও বাইরের লোকদের কাছে একটি পিকনিক স্পষ্ট হিসেবে সুপরিচিত মঠটি ১৮৯৮ সালে পুনঃ নির্মান করা হয়েছে বলে মঠের দেয়ালের গাঁয়ে ফলকে লেখা রয়েছে । তবে মঠটি কবে নির্মান করা হয় তা উলে¬খ নেই ।
ধারনা করা হচ্ছে মঠটি হয়তো নবা আলিবর্দিখানে আমলের কোন সময়ে (১৭০৪-১৭৫৬) মা রাশমনি দেবীর সমাধিকে অমর করে রাখার জন্যে রুদ্রকরের তৎকালীণ জমিদার বাবু গুরুচরন চক্রবর্তী নির্মান করেন । মঠটির ভেতরে একাধিক কক্ষ রয়েছে এবং মঠটির দ্বিতীয় তলায় অর্থাৎ যেখান হতে মূল টাওয়ার শুরু সেখান হতে মূল টাওয়ার শুরু সেখানে চার কোনায চারটি ছোট আকারের (১০-১২ ফুট ) টাওয়ার করা হয়েছে । এছাড়া ও মঠের তৃতীয় তলায় মূল টাওয়ারের গায়ে চারপাশে চারটি দেবী মুর্তির অলংকরণ চোখে পড়ার মত ।
দুই দশক পূর্বেও মঠের প্রবেশ পথের দুটি বাঘমুর্তি দেখে অনেকেই ভ কে যেতো যা এখন ধ্বংসপ্রাপ্ত । মঠটি সংরক্ষনের ব্যবস্থা না থাকায় দিনের পর দিন এটি জরাজীর্ণ হয়ে পড়ছে । এটির নির্মান শৈলটি অনেকটা ইতালীর লিসা টাওয়ারের মত হওয়ায় কেউ কেউ এটিকে শরীয়পুরের লিসা টাওয়ারও বলে থাকেন । মঠের গায়ে ছোট ছোট গর্ত থাকায় এটি এখন কয়েক হাজার পাখির নিরাপদ আশ্রয়ে পরিনত হয়েছে । বিশেষ করে টিয়া পাখির কিচির মিচির শব্দে সর্বদাই এলাকা কোলাহল মুখর থাকে ।
রুদ্রকরের জমিদার বাবুরা এলাকায় বেশকিছু সংস্কার করেছিল এর মধ্যে রাস্তাঘাট নির্মান ছাড়াও রুদ্রকরের তৎকালীন জমিদারবাবু নীলমনি চক্রবর্তী মহাশয়১৯২৫ সালে নির্মান করেন রুন্দ্রকর নীলমনি উচ্চ বিদ্যালয় নামে একটি স্কুল । ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের পরপরই রুদ্রকরের শেষ জমিদার বাবু প্রথম লাল চক্রবর্তীর পরিবার পাড়ি জমান ভারতে । সেই থেকে জমিদার বাড়ি চলে যায় স্থানীয় দখলদারদের হাতে । বর্তমানে বেশকিছু দিন পুর্বে মঠটির সু-উচ্চ চূড়া থেকে দুর্বত্তরা মূল্যবান ধাতু ও লোহার পাত চুরি করে নিয়ে যায় । এলাকাবাসী পুরোনো ঐতিহ্যবাহী এ জমিদার বাড়ির স্থাপত্য রক্ষার জন্যে সরকারী উদ্যোগ কামনা করছেন ।