শিমলা গেলে কুফরি যাওয়ার কথা ভুলবেননা
শিমলা প্রথম দিন আশেপাশে ঘুরে বেড়ানোর পর রাতেই আমরা প্ল্যান করি পরদিন কুফরি যাবো। যারা শিমলা যাওয়ার কথা ভাবছেন তাদের জন্য বলি, শিমলা গেলে কুফরি যাওয়া মাস্ট। আমাদের ট্রিপের বেষ্ট ২ টা মেমরি কুফরি থেকে পাওয়া। এক হচ্ছে প্রথম বরফ দেখা আরেক হচ্ছে আঁকাবাকা পথে ঘোড়ার পিঠে বসে পাহাড়ের উপর ওঠা । সকালে ঘুম থেকে উঠে গাড়ি রেডি পাই। কারন আমাদের হোটেল প্যাকেজে কুফরি যাওয়া আসা এডেড ছিল ।
সকাল ১০ টায় রওনা হয়ে আমরা ১২ টায় কুফরি পৌছাই। পথে ভালো একটা হোটেলে নাস্তা করি। কুফরি পৌঁছে যাওয়ার আগে ২/ ৩ টা লোক রাস্তার পাশে বসে থাকে , বুট এবং ফুল জ্যাকেট নিয়ে । সাথে ওখান থেকে চাইলে ঘোড়া আপ – ডাউন খরচ ও মিটিয়ে নেয়া যায়। আমরা স্কিং বাদে বাকি ৩ টা জিনিসই নেই পার হেড খরচ হয় ১১০০ রুপি। আমাদের সখ ছিল বরফে গরাগরি খাওয়ার , সে জন্যই জ্যাকেট নেয়া। আপনি গরাগরি খেতে না চাইলে খালি খালি টাকা নষ্ট করার প্রয়োজন নেই। উপরে গিয়ে আমরা অল্প কিছু মানুষকেই জ্যাকেটে পেয়েসিলাম ।
ঘোড়ার জন্য অনেকক্ষণ দাড়িয়ে থাকার পর আমাদের সিরিয়াল আসলো। ঘোড়ার পিঠে চড়ে বসলাম। ৩ জনের মধ্যে একজনের খুব ভয় হচ্ছিল। আমার মনে হচ্ছিল এ পথ যেন না শেষ হয়… কিন্তু ২৫ মিনিট এর মাঝে আমরা কুফরি পৌঁছে গেলাম। চারপাশ বরফে ঢাকা , হিমালয় আরও কাছে মনে হয় সেখানে । বরফ ছুড়াছুড়ি ও হিমালয় কাছ থেকে দেখে নিলাম। কুফরি থেকে একটু দুরেই বেশ কিছু Activity আছে। আমরা একটা Activity চয়েস করলাম । জিপ লাইন। জিপ লাইন করতে গিয়ে প্রথম আপেল বাগান দেখা হয়। যদিও আপেল ছিল না। Activity শেষে বরফে শুয়ে বসে ছবি তুলে অবশেষে ৩ ঘণ্টা কাটিয়ে আবার ঘোড়ায় উঠার সিরিয়াল দিলাম। এবারও আমি কনফিডেন্ট । ঘোড়ায় উঠলাম। এবার ঘোড়া নিচ দিকে নামছে পাহাড় বেয়ে। ২/১ বার পিচ্ছিল খাচ্ছিল। আমার ভয় লাগা স্টার্ট, আত্মায় পানি ছিল না নামার পথে। অবশেষে নেমে এসেছি এটাই অনেক। সন্ধায় জাখু টেম্পল যাওয়ার কথা থাকলেও আর যাওয়া হয়নি। দুপুরের খাওয়া তখনও বাকি। মল রোড বসে রাতের খাবার খেয়ে নিলাম।
পরের দিন সকালে ম্যাপ দেখে Indian advance institute – এর উদ্দেশে্ রউনা হই। প্রায় ২ ঘণ্টা হাটার পর আমরা সেখানে পৌছাই। ভায়েসরয় বিল্ডিং ও বলা হয় একে। আমার দেখা ইন্ডিয়ার ৩ টি ভায়েসরয় বিল্ডিং এর মধ্যে শিমলারটা বেষ্ট । ফরেনার দের জন্য ১০০ রুপি করে এবং ইন্ডিয়ানদের জন্য ৫০ রুপি। ভায়েসরয় বিল্ডিংএর ভেতরে ঢুকতে দিলেও সব জায়গা সবার জন্য ওপেন নয়। নিচ তলা দেখিয়ে বিদায় দিয়ে দিল আমাদের।
সেখান থেকে বের হতে হতে ৪ টা ট্যাক্সি ফেয়ার আবারও বাচানো বাকি। ২ ঘণ্টা ৩ জন আবারও হেটে মল রোড পোওছালাম । এবার ইন্ডিয়ান হাউসে খাওয়ার পালা। এখানে তেমন কোন আমাদের বয়স্ক লোক ছিল না। সবাই ৬০ এর উপর বয়স্ক। এবং মোটামুটি সবাই এখানে রেগুলার। এখানে ফুড অনেক টেস্টী এবং দামেও কম ।
খাওয়া শেষে হোটেল ব্যাক।
ফ্লাইট মিস করায় আমাদের যে ১ দিনের জন্য মানালি থাকার প্ল্যান ছিল ওটা অনেক আগেই শেষ। নেক্সট টাইম এর জন্য মানালি তুলে রেখে আরেকদিন শিমলাবাসিদের জীবন যাত্রা দেখলাম, দেখলাম তাদের বৈচিত্র্যময় কর্মকাণ্ড । আশে পাশে ঘুরে কাটালাম , লোকালিটি বুঝলাম।
পরের দিন রাতে শিমলা থেকে দিল্লীর বাস নিলাম। এবারও এসি বাস আমাদের কপালে ছিল না বুধবার ছিল দিনটি। আমরা শিমলা পুরান বাস স্ট্যান্ড থেকে নতুন বাস স্ট্যান্ড এ যাই বাস না পেয়ে। এবং আবার লোকালে উঠে ব্যাক করি দিল্লি।
শিমলা ছাড়ার সময় কেমন জানি একটা মায়া কাজ করছিল। আবারো চারপাশে সেই লাইট , প্রথম দিন কে মনে করাচ্ছিল।
পাহাড় থেকে নেমে আস্তে আস্তে লাইট গুলো ক্ষীণ হয়ে আসছিল। রাত ৮ টায় বাস ছাড়ে এবং আমরা ভোর ৫ টায় দিল্লি পৌছাই। দিল্লি তে অটো ফেয়ার কম। বাটপার বেশি।
অটোতে ট্র্যাভেল করলেও ভাড়া যাচাই করে নিতে ভুলবেন না। ভোরে আমরা হোটেলে উঠি। ওইদিন রাতেই আমাদের কলকাতা পৌছার ফ্লাইট।
এবার আর মিস করার সুযোগ নেই। মিস করলে হয়তো দিল্লি তেই থেকে যাওয়া লাগতো। দিনটা দিল্লি ঘুরে দেখার জন্য ছিল। আগেই বলে রাখি দিল্লিতে ঘুরার জায়গার অভাব নেই। হাতে পয়সা এবং ৩/৪ দিন দিল্লি ঘুরতে লেগে যায় ।
আমরা ইন্ডিয়া গেট আর রাষ্ট্রপতি ভবন দেখতে যাই। রাষ্ট্রপতি ভবন আমার দেখা সবচেয়ে বড় বিল্ডিং। ঘাড় ঘুরানো ছাড়া একবারে এটা দেখে ফেলা সম্ভব নয়।
রাষ্ট্রপতি ভবন ধরে অপোসিট এ ১০ মিনিট হাঁটলেই ইন্ডিয়া গেট। দেখা শেষে আমরা হোটেলএ ফেরত আসি। হোটেল রয়্যাল প্যালেস থেকে একটু এগুলেই একটা হোটেল পাই। প্রচুর খুদা নিয়ে ৩ জন ঢুকি এবং সেই একটা খাওয়া দিয়ে বের হই। খাওয়া শেষে শুনি বিল নাকি ১৩৫ রুপি। আকাশ থেকে পরি। খাওয়ায় ছিল, ৩ টা ভাত, ১ প্লেট রুটি, গরুর গোশত , বটি কাবাব, ডাল। যাই হোক উপরওয়ালার সুদৃষ্টি ছিল আমাদের উপর।
খাওয়া শেষে হোটেলে রেস্ট। এয়ারপোর্ট এ চেক ইন ২ ঘণ্টা আগে
রাত ৯ টায় ফ্লাইট। ০ মিনিট ডিলে । ঠিক রাত ১২ টায় কলকাতা। রাত টা এয়ার পোর্ট এর পাশেই কাটাই ।। রুম ভাড়া আমাদের বেশি পরেছিল ১২০০ রুপি। পরের দিন সকালে উঠে আমরা নিঊ মাকেট এরিয়ায় মুভ করি। কারন শনিবার মারকুইস ষ্ট্রীট থেকে আমাদের বাস।
এম্পায়ার প্যালেস নামক একটি হোটেল এ চেক ইন করি। ১৫০০ রুপি তে। রুম ছোট হলেও অনেক সাজানো গোছানো ছিল। এটা সাদ্দার ষ্ট্রীটে ঢুকতেই পড়ে।
চেক ইন করে ফ্রেস হয়ে আমরা বের হই ভিক্টোরিয়া মেমরিয়াল দেখতে। দেখা শেষে নিউ মার্কেট ব্যাক হালকা পাতলা শপিং। আবার হোটেলে ব্যাক ।