শিমলা থেকে মানালির একটি ভ্রমন পরিকল্পনা
শিমলা থেকে মানালি ২৫৫ কি.মি.।আপনি চাইলে বাসেও যেতে পারেন।কিন্তু বাসে গেলে কিছু সমস্যা আছে।মানালি যাওয়ার সময় পথে কুল্লু,মান্ডি,সামস্ লেক,রাফটিং পয়েন্ট,পান্ডোহ্ ড্যাম,সুন্দরনগর,হনুমান টেম্পল,3 idiots টানেল জায়গুলোতে বাস থামবে না।সেক্ষেত্রে বাসে যেতে চাইলে আপনাকে কুল্লু ১ রাত থাকতে হবে।কিন্তু শিমলা থেকে গাড়ী নিয়ে গেলে মানালি যাওয়ার সময়ই কুল্লুর সব জায়গাগুলো দেখা সম্ভব।তাহলে আপনাকে বাড়তি একরাত কুল্লু থাকতে হবে না।আপনি শিমলা থেকে একটা ৭ সিটের Xylo গাড়ী ভাড়া করতে পারেন।৫,০০০/- টাকার মধ্যেই হয়ে যাবে।শিমলা থেকে খুব ভোরে বের হতে হবে।সব জায়গাগুলো দেখে কুল্লু থেকে শাল কিনে রাত ১০-১১ টার মধ্যেই মানালি পৌঁছে যেতে পারবেন।
আর যদি শিমলা না গিয়ে সরাসরি মানালি যেতে চান তাহলে কলকাতা থেকে রাজধানী এক্সপ্রেস ট্রেনে প্রথমে দিল্লী যেতে হবে।রাজধানী এক্সপ্রেস এর এসি-থ্রি টায়ার এর ভাড়া জনপ্রতি ৩০০০ রুপি।তারপর দিল্লি থেকে বাই রোডে মানালি যেতে পারেন।বাস ভাড়া এসি ভলভো ১৬০০ রুপী আর নন-এসি ভলভো ১০০০ রুপী। আপনি চাইলে ট্যাক্সি অথবা প্রাইভেট গাড়ি ভাড়া করেও দিল্লি থেকে মানালি যেতে পারেন।
মানালির ইতিহাস:-
প্রাচীনকালে এই উপত্যকায় বিক্ষিপ্ত ভাবে ‘রাক্ষস’ নামে এক যাযাবর শিকারী সম্প্রদায়ের লোকের বাস ছিল। পরবর্তী কালে আগমন ঘটে কাংরা উপত্যকা থেকে আসা মেষপালকদের, এরা মানালিতে কৃষি কাজের জন্য বসতি স্থাপন করে।এ অঞ্চলের প্রাচীনতম বসবাসকারীদের অন্যতম ছিল ‘নৌর’ অথবা ‘নর’, কুলু উপত্যকায় এরা এক বিচিত্র প্রজাতি।এখনো অল্প কয়েক ঘর ‘নর’ পরিবার এখানে বর্তমান।মানালির পশ্চিম তীরে হরিপুরের কাছে সোয়াল গ্রামে এক ‘নৌর’ পরিবার ছিল।বস্তির জমির অধিকার বলে রাক্ষসদের শ্রমজীবী হিসেবে ব্যবহার করে বিখ্যাত হয়েছিল এই পরিবার।
ইংরেজরা আপেল আর ট্রাউট মাছের চাষ শুরু করে, মানালির উদ্ভিদ আর প্রাণীকুলের ইতিহাসে এদের অস্তিত্ব ছিল না।শোনা যায়, প্রথম যখন আপেল গাছ লাগানো হয় এতো বেশী ফলন হয় যে, তার ভার বইতে না পেরে প্রায়ই গাছের ডালপালা ভেঙ্গে পড়ত।এখনো আপেল আর প্লাম চাষ এখানকার অধিকাংশ বাসিন্দাদের মুখ্য জীবিকা।
মানালি যাওয়ার পথে কুল্লু-মানিকরনে যা যা দেখবেন:-
মানিকরনে আপনি দেখতে পাবেন যে, মাটির নিচ থেকে কিভাবে প্রাকৃতিকভাবে গরম (ফুটানো) পানি নির্গত হচ্ছে আর কুল্লু হচ্ছে মানালির আরেকটা পাহাড় রাজ্য। কুল্লু যদি যান তবে সেখান থেকে অবশ্যই শাল কিনবেন।কুল্লুর শাল বিখ্যাত এবং দামও কম।মেয়েরা পশমিনা শাল কিনতে পারেন।ছেলেদের জন্যও বিভিন্ন ধরনের শাল আছে।
কুল্লুর নিজস্ব প্রাকৃতিক রূপ আছে তাই অনেকে কুল্লু হয়ে মানালিতে বেড়াতে আসেন। মানালি থেকে কুল্লু যেতে কমপক্ষে ৩-৩.৩০ ঘন্টা সময় লাগবে। কুল্লুতে দেখার মত জায়গা Hanging bridge, rafting point, Sams lake, Honuman temple, 3 idiots tunnel ইত্যাদি। 3 idiots টানেল মানে যেই টানেলে 3 idiots মুভির অল্প একটু শ্যুটিং হয়েছে। প্রায় ৫ কি.মি. লম্বা টানেল।কুল্লু থেকে ৪৪ কি.মি. দূরে মানিকরণ। প্রায় আড়াই ঘন্টায় ভুন্টারজারি-কাসোল হয়ে ৪৪ কিলোমিটার দূরের মণিকরণে পৌঁছোনো যায়। পশ্চিমে বিষ্ণুকুন্ড, উত্তরে হরেন্দ্র পর্বত, পুবে ব্রহ্মনালা, দক্ষিণে পার্বতীগঙ্গা-এই বিস্তীর্ণ ভূভাগ জুড়ে মণিকরণতীর্থ। শিব-পার্বতীর পৌরাণিক আখ্যান, ধর্মনির্বিশেষে সকল মানুষের অবাধ পুণ্যার্জন, নানকের গুরুদোয়ারা-মণিকরণের পুরো ছবিটাই ভক্তিপ্রেমে উজাড় হওয়া এক তীর্থভূমির মতো। বিশ্বের উষ্ণতম প্রস্রবণটিও এখানেই। এখানকার মন্দিরে মন্দিরে বৈষ্ণোদেবী, হনুমান, ময়নাদেবী, শ্রীকৃষ্ণ, রাম প্রমুখ দেবতার অধিষ্ঠান।
মান্ডি (mandi):
মান্ডি থেকে কিছু দূরে পান্ডোহ্ ড্যাম। নদীতে বাঁধ দিয়ে দিয়ে পানিবিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যবস্থা। বিয়াস এখানে ভয়ংকর।পানির শব্দে কান ঝালাপালা। ফেনীল নিম্নভাগের দিকে হাঁ করে চেয়ে থাকতে হয়। এখানে বিয়াসের কাছে যাওয়া কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। বাজে কিছু দূর্ঘটনার ইতিহাস আছে এখানটায়। ছবি তোলাও নিষেধ।
এসব দর্শনীয় স্থানগুলোতে যেতে হলে গাড়ি ছাড়া কোন বিকল্প ব্যবস্থা নেই কারন গাড়ি ছাড়া আর কোন যানবাহন সেসব জায়গাগুলোতে যেতে পারে না।তাই শিমলা থেকে গাড়ী নিয়ে মানালি আসলেই সবচেয়ে ভালো হবে।কুল্লু থেকে মানালি যাওয়ার রাস্তাটুকু যতটা ভয়ংকর ঠিক তারচেয়ে বেশী সুন্দর।
মানালীতে যা যা দেখবেন:-
মানালিতে ২ দিন আর ৩রাত থাকলেই হবে।মানালিতে যা যা দেখবেন:-
রোথাং পাস (Rohtang Pass):
এটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৩,৯৭৮ মিটার বা ১৩,০৫০ ফিট উচ্চতায় অবস্থিত। মানালি শহর থেকে এর দূরত্ব ৫১ কিঃমিঃ বা ৩২ মাইল। এটি কুল্লু (Kullu), লাহাল (Lahaul) এবং স্পিতি (Spiti) উপত্যকার সাথে সংযুক্ত করে রেখেছে। পাহাড়ি রাস্তার আঁকাবাঁকা পথ আর প্রাকৃতিক নয়নাভিরাম দৃশ্য উপভোগ করতে করতে রোথাং পাসে যেতে হয়। এখানে এলে দেখতে পাবেন শ্বেতশুভ্র সুবিশাল পাহাড়ের সারি আর বিশাল বিশাল প্রস্থর খন্ড। যারা আইস স্কেটিং, টবগ্যানিং (Tobogganing) ইত্যাদি ভালোবাসেন তাদের জন্য সেখানে সুন্দর ব্যবস্থা আছে। যেহেতু সেখানকার আবহাওয়া অনেক ঠান্ডা তাই সেখানে ওভারকোট, বুট ইত্যাদি ভাড়ায় পাওয়া যায়।
রোথাং পাস যাবার জন্য বাস পাওয়া যায়। সকাল ৯ টায় যাত্রা শুরু বিকাল ৫ টায় শেষ। ভাড়া ৫০০ রুপী। প্ল্যান থেকে মঙ্গলবারটা বাদ রাখবেন, কারণ এই দিন রোথাং পাস ক্লিন করার জন্য বরাদ্দ থাকে। রোথাং পাস-গুলাবা বর্ডার,সোলাং ভ্যালীর ১ দিনের ট্যুর প্যাকেজ ৩৫০০-৪০০০ রুপী পড়বে ট্যাক্সি রিজার্ভ করলে।
মানালি সরকার প্রতিদিন ৮০০ এর বেশি গাড়ি রোথাং পাস যাওয়ার অনুমতি দেয়না (পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষার্থে )। সুতরাং আগের রাতেই ক্যাব ঠিক করে রাখবেন আর অনুমতি নেয়ার বিষয়টাও নিশ্চিত হয়ে নিবেন।
যাওয়ার পথেই স্পেশাল বরফ জ্যাকেট ভাড়া করে নিতে পারেন।কিন্তু যদি আপনার কাছে শীতের কাপড় যেমন:- গ্লাভস,টুপি,স্নোতে হাঁটার জুতো আর জ্যাকেট থাকে তাহলে শুধু শুধু ভাড়া নেওয়ার দরকার নেই।রোথাং পাস ঘুরার পর, ফেরার পথে সোলাং ভ্যালিতে যাবেন।এখানে আপনি ক্যাবল কারে চড়তে পারবেন ( প্রতিজন ৮০০ রুপি ) আর প্যরাগ্লাইডিংও ( প্রতিজন ২০০০ রুপি) করতে পারবেন। রোথাং পাস যাওয়া আর আসার পথটাই সবথেকে বেশী সুন্দর।রাস্তার বিভিন্ন জায়গায় থেমে থেমে দৃশ্য উপভোগ করতে পারবেন। যাওয়ার পথেই কৃষসহ বহু বলিউড মুভির শুটিং সাইট দেখতে পাবেন।তবে আপনি সরাসরি রোথাং পাস না গিয়ে সোলাং ভ্যালী দেখে তারপর রোথাং পাস যেতে পারেন।
রোথাং পাস হেভি স্নো ফলের কারনে ডিসেম্বর থেকে জুন এর মাঝ পর্যন্ত বন্ধ থাকে।হতাশ হওয়ার কোন কারন নেই।পরবর্তীতে আপনি যখন লাদাখ যাবেন তখন মানালি-লেহ হাইওয়ে দিয়ে গেলেই হবে।কারন তখন আপনাকে রোথাং পাস হয়েই লাদাখ যেতে হবে।
সোলাং ভ্যালি (Solang Valley): –
এটি রোথাং পাস যাওয়ার পথে পড়ে এবং এর দূরত্ব মানালি শহর থেকে ১৪ কি.মি. উত্তরপশ্চিম দিকে অবস্থিত। এটি অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমীদের জন্য সুপরিচিত। এখানে প্যারাসুটিং, প্যারাগ্লাইডিং, স্কেটিং ইত্যাদির ব্যবস্থা আছে।রাস্তা থেকে সোলাং ভ্যালীর স্নো পয়েন্টে আপনাকে ঘোড়ায় চড়ে যেতে হবে।ঘোড়া ভাড়া জনপ্রতি ৩০০ রুপি।
রেহালা জলপ্রপাত (Rehala Falls):
এটি রোথাং পাস থেকে ফেরার পথে পড়বে। এটি মানালির চমৎকার একটি জলপ্রপাত। এখানে গেলে দেখা যায় কিভাবে পাহাড়ের গা বেয়ে জলরাশি নেমে বিপাশা/ বিয়াস নদীতে গিয়ে মিশছে।
ডেট গুলাবা (Dett Gulaba):
এখান থেকে চমৎকার নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করা যায়। রেহালা জলপ্রপাত থেকে খানিকটা দূরে এর অবস্থান।
বিপাশা/বিয়াস নদ (Beas River):
মানালি শহরের একদম গাঁ ঘেষে আঁকাবাঁকা ভাবে বয়ে চলা বিপাশা/বিয়াস নদী আসলেই প্রকৃতির এক অপরূপ বিস্ময়। নদীটির দৈর্ঘ্য ৪৭০ কি:মি: বা ২৯০ মাইল যা পাঞ্জাবের সুটলেজ (Sutlej) নদীর সাথে মিলিত হয়েছে। এই নদীর পানি ভীষণ ঠাণ্ডা আর এর স্রোত বেশ বিপজ্জনক। যারা রিভার রাফটিং (River Rafting) করতে ভালোবাসেন তাদের জন্য এখানে রাফটিং এর ভালো ব্যবস্থা আছে।
হিড়িম্বা টেম্পল:-
ভারতীয় পৌরণিক গাঁথা “মহাভারত” এর চরিত্র ভিমের স্ত্রী ছিলেন হিড়িম্বা দেবী, তার স্মৃতি উদ্দেশ্যে এই মন্দিরের উৎপত্তি। মন্দিরের চারিদিকে বনবিহার ঘিরে আছে। দেবদারু গাছে ছেয়ে থাকা বনভূমি’র ভেতরে বিশালাকৃতির এক পাথুরে চত্বরের উপর এই মন্দির নির্মিত হয় ১৫৫৩ সালে। চারিদিকে কাঠের অবকাঠামো দিয়ে ঘেরা এই মন্দির এর উপরে একটি শিখর আকৃতি রয়েছে।
ছাদের দিকে তিনটি স্তরে চতুষ্কোণাকৃতির ছাদ ক্রমান্বয়ে আকারে ছোট হয়ে উপরে উঠে গেছে, তার উপর শিখর। মহাভারত এর বর্ণনা অনুসারে পঞ্চ পাণ্ডবেরা নির্বাসনে পাঠানো হলে তারা চলে আসে মানালিতে। সেখানকার তৎকালীন ক্ষমতাধর এবং বলশালী হাড়িম্বা দেবী’র ভাইয়ের সাথে পঞ্চপাণ্ডবের যুদ্ধ হয়ে। এই যুদ্ধে হাড়িম্বা দেবীর ভাই মারা যায় এবং পরবর্তীতে পঞ্চ পাণ্ডবের অন্যতম ভিমের সাথে হাড়িম্বা দেবী’র বিবাহ হয়। পরবর্তীতে যখন নির্বাসন শেষ করে পঞ্চ পাণ্ডবেরা ফেরত যায়, ভিমের সাথে হাদিম্বী দেবী ফিরে যান নাই। তিনি মানালিতে থেকে যান এবং আজীবন ভগবানের তপস্যা করে কাটিয়ে দেন। আর সেই তপস্বী হিড়িম্বা দেবীর মন্দিরকে ঘিরে আজকের এই তীর্থ যা মূলত হিড়িম্বা টেম্পল নামে পরিচিত।
হিড়িম্বা টেম্পল মল রোড এর পাশেই।হোটেল থেকে হেঁটেই যেতে পারবেন।
রোয়েরিক আর্ট গ্যালারি:
দুধারে পাইনের জঙ্গল পাশে রেখে পাহাড়ি ঢালু রাস্তা বেয়ে যখন রোয়েরিক আর্ট-গ্যালারির কম্পাউণ্ডে ঢুকলাম তখন আমি স্তব্ধ, বাক্যহারা। পাইন আর পাহাড়ি ফুলের বাগান ঘেরা এই ছবির মত পরিবেশ আর্ট-গ্যালারির জন্য একদম উপযুক্ত।
এই আর্ট-গ্যালারি একসময় বিখ্যাত রাশিয়ান চিত্রকর নিকোলাস রোয়েরিক (জন্ম- ৯ ই অক্টোবর ১৮৭৪ খ্রীষ্টাব্দ, রাশিয়ার সেণ্ট-পিটার্সবার্গ, মৃত্যু- ১৩ই ডিসেম্বর ১৯৪৭ সাল, নাগার, হিমাচল-প্রদেশ, ভারতবর্ষ) সাহেবের বাসভবন ছিল। রোয়েরিক সাহেব ১৯১৭-র রুশ বিপ্লবের পর ভারতবর্ষে চলে আসেন। হিমাচলের সৌন্দর্যে মুগ্ধ রোয়েরিক এখানেই তাঁর বাসস্থান নির্মাণ করেন এবং এখানেই আমৃত্যু বসবাস করেন। তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র স্যাভিটোস্ল্যাভ এই বাসস্থানকে রোয়েরিক আর্ট-গ্যালারিতে রূপান্তরিত করেন। আর্ট-গ্যালারি ছাড়াও রয়েছে স্যাভিটোস্ল্যাভের একটা ফটো-স্টুডিও।
নাগার ক্যাসেল:
রোয়েরিক আর্ট-গ্যালারি থেকে মিনিট-পাঁচেক (গাড়ীতে) দূরত্বে রয়েছে এই ক্যাসেল। বিয়াস নদীর ধারে, ১৮৫১ মিটার উঁচু নাগার গ্রামটি ছিল কুল্লু রাজাদের রাজধানী। আনুমানিক ১৪৬০ খ্রীষ্টাব্দে কুল্লু রাজা সিধ সিং এই ক্যাসেলটি নির্মাণ করেন। তাঁরই বংশের আরেক অনুজ রাজা জ্ঞান সিং সামান্য একটা বন্দুকের বিনিময় এই ক্যাসেলটি বিক্রি করে দেন ভারতবর্ষের প্রথম ব্রিটিশ কমিশনার মেজর-হে-র কাছে। এই ক্যাসেলের দেওয়াল পাথরের, কড়িবরগায় কাঠের বীম আর কাঠের সিলিং। পাথর আর কাঠের সংমিশ্রণে তৈরী এই ক্যাসেল স্থপত্য-কলার এক অনন্য নির্দশন। মেজর-হে-র কল্যাণে এখানে ফায়ার-প্লেস, চিমনি, কাঠের সিঁড়ি, সোফাসেট প্রভৃতি পাশ্চাত্য উপকরণের সমন্বয়ে এক অপরূপ ইন্দো-ইউরোপীয়ান আমেজের সৃষ্টি হয়েছে।
স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে ১৯৭৮ খ্রীষ্টাব্দে নাগার ক্যাসেল হস্তান্তরিত করা হয় HPTDC –কে। বর্তমানে এই ক্যাসেল হিমাচল-প্রদেশ-ট্যুরিজম-ডেভলপমেন্ট-করপোরেশন(HPTDC)-র একটি হোটেল। মধুচন্দ্রিমা যাপনের জন্য এই ক্যাসেল হোটেল এক আদর্শ স্থান। ক্যাসেল হোটেলের আরেক বৈশিষ্ট্য হল এখানে পরিবেশিত খাবার। অসাধরণ সুস্বাদু ট্রাউট কারি ( অর্থাৎ ট্রাঊট মাছের ঝোল)…
জানা জলপ্রপাত:
আঁকা-বাঁকা সর্পিল পাহাড়ি পথ। সরু রাস্তার একদিকে পাহাড়। সেই পাহাড়ে ধাপে ধাপে আপেলের বাগান আর পাইনের জঙ্গল। রাস্তার আর একদিকে কোথাও গভীর, কোথাও বা অগভীর খাদ।
ভাল করে ঝুঁকে দেখলে বিয়াস নদী দেখা যায়। কোথাও আবার ছবির মত সুন্দর পাহাড়ি গ্রাম পিছনে ফেলে যেতে হয় জানা জলপ্রপাতের দিকে। রাস্তা এতই সরু যে বিপরীত দিক থেকে একটা গাড়ী এলে অন্যদিকের গাড়ীকে দাঁড়িয়ে যেতে হয়। নাগার ক্যাস্টেল থেকে জানা জলপ্রপাত যেতে গাড়ীতে সময় লাগে প্রায় ৪৫ মিনিট। এইটুকু সময় গাড়ী থেকে পথের যে নৈসর্গিক শোভা দেখা যায় তা অবর্ণনীয়। এক অসাধারণ শ্বাসরোধকারী সৌন্দর্য্যের মধ্যে দিয়ে এগিয়ে যেতে হবে জানা জলপ্রপাতের দিকে।
মানালিতে থাকা:-
বড় বড় পাহাড়ের মাঝখানে গড়ে উঠেছে ছোট শহর মানালি। এখানের মল রোড (Mall Road) সুবিখ্যাত। মল রোডের আশেপাশে অনেক হোটেল-মোটেল গড়ে উঠেছে। প্রকারভেদে হোটেলের ভাড়া ১৫০০-১৮০০ রুপী।হোটেলগুলোতে হিটার সিস্টেমের (Heater System) সুব্যবস্থা আছে। কেনাকাটার জন্য মল রোডে অনেক শপিং মল আছে যেগুলো হোটেল থেকে একদম কাছে।হেঁটেই যাওয়া যায়।
মানালিতে খাওয়াঃ
মানালিতে অনেক ভালো মানের খাবারের হোটেল আছে। যেমন: গুজরাটি, মাদ্রাজি, পাঞ্জাবি, বাঙালি ইত্যাদি। বাঙালি খাবার হোটেলের মধ্য আছে Hotel Adarsh, New Ashapuri Bhojonaloy, Ashapuri Bengali Restaurant ইত্যাদি যেগুলো মল রোডে অবস্থিত।বাঙালি হোটেলের মধ্যে শান্তিনিকেতন এর খাবার বেশ ভালো।
সকালের নাস্তা:
চেস্টা করবেন যে হোটেলে থাকবেন সেই হোটেলের সাথে নাস্তার চুক্তি করতে। যদি তাতে কিছুটা বেশিও লাগে, রাজি হয়ে যাবেন। কারন সাত সকালে ঠান্ডায় বের হতে ইচ্ছা করবে না।আলু পরোটা,তাওয়া রুটি,ম্যাগী নুডলস আর চা দিয়েই নাস্তা সারতে হবে।চা খুব একটা ভালো লাগবে না। কারন ওরা চায়ে আদা আর এলাচ ব্যবহার করে।
দুপুর/রাতের খাবার:-
ভাত খেতে চাইলে থালি সিস্টেমে খাবেন।Veg/Non-Veg দুটোই পাবেন। Veg থালি খেলেই ভালো হবে।কারন মাছ এবং মাংশ রান্না একদমই ভালো না।খেতে পারবেন না শুধু শুধু নষ্ট হবে।
এছাড়া আর যা যা খেতে পারেন:
– চিকেন মমো- স্থানীয় খাবার।
– ট্রাউট মাছ।
– পেস্ট্রি, কাপকেক।
– পাপড়ি চাট।
– ভেলপুরি।
– গোলগাপ্পা বা পানিপুরি।
– ইডলি, দোসা।
– চানাচাট।
– আপেল, নাশপাতি- ফল খেতে ভুলবেন না। একদম ফ্রেশ, নো ফরমালিন।
– ভেড়ার মাংশ।
– আলু গবি।
মানালি যে বিষয়গুলো গুরুত্ব দিতে হবে:-
১। রাস্তায় সিগারেট খাওয়া নিষেধ।ধরা পড়লে জরিমানা দিতে হবে।
২। মানালিতে পুরো বছর ঠাণ্ডা থাকে। যারা মানালি যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন তারা অবশ্যই গরম কাপড় যেমন:- জ্যাকেট, ওভারকোট, কানটুপী, কেডস, হাতমোজা ইত্যাদি সঙ্গে রাখবেন।
২। হোটেল ঠিক করার সময় গিজার আর রুম হিটার ঠিক আছে কিনা চেক করে নিন।
২।মানালি যাওয়ার সবচেয়ে ভালো সময় হচ্ছে মে থেকে অক্টোবর পর্যন্ত। অনেকে তুষারপাত দেখার জন্য নভেম্বর-ডিসেম্বরে যায়।আমি ডিসেম্বরে গিয়েছি।এসময় প্রবল তুষারপাতের ফলে মাঝে মাঝে রাস্তা বন্ধ থাকে।
৪। মানালিতে ডলার ভাঙানোর ভালো কোন ব্যবস্থা নেই। সবচেয়ে ভালো হয় মানালিতে যাওয়ার পূর্বে কোলকাতা থেকে ডলার ভাঙানো।
Post Copied From:Dip Biswas>Travelers of Bangladesh (ToB)