শিলিগুড়ি যেভাবে যাবেন ও খরচ সমূহ
শিলিগুড়ির জীপ গাড়ির চালকেরা প্যাকেজ নেবার জন্য অনেক বেশি চাপাচাপি করে, প্যাকেজ না নিলে প্রায় যাইতেই চায় না বা বেশি টাকা চায়। সেক্ষেত্রে বাসে যাওয়া খুবই ভাল অপশন। ভাড়া কম, বাস জীপের চাইতে বেশি আরামদায়ক এবং যাবার সময় চারদিকের ভিউটাও বাস থেকে বেশি উপভোগ করা যায়। এক্ষেত্রে শিলিগুড়ি এসএনটি থেকে পারমিশন ফর্ম পূরন করে নিতে হবে যেন র্যাংপোতে ১০ মিনিটেই পাসপোর্টে সীল দিয়ে নিতে পারেন। বাসের হেল্পারকে বলে রাখলেই র্যাংপোতে যথেষ্ট সময় দেয়, কোন অতিরিক্ত ভাড়া লাগে না। সরকারি বেসরকারি দুইরকম বাসই আছে, ভাড়া নন এসি ১৮০ টাকা, এসি ২৫০ টাকা। বাসে জীপের চাইতে খুব বেশি সময় লাগে না।
# এমজি মার্গে স্বাভাবিকভাবেই হোটেলের ভাড়া কিছুটা বেশি, তাই এমজি মার্গে না থেকে ফায়ার সার্ভিসের দিকে হোটেল নিতে পারেন। হেটে কয়েক মিনিটেই এমজি মার্গ আসা যায় ঐখান থেকে।
# নর্থ বা ইষ্ট কোনখানেই এখন ঠান্ডা খুব বেশি না, তাই নিজের যদি একটু ভাল জুতা আর জ্যাকেট থাকে তাহলে আর আলাদা করে জুতা বা জ্যাকেট ভাড়া নেবার দরকার নাই। জুতা যদি কাপড়ের হয়, সেক্ষেত্রে লম্বা স্নো বুট ভাড়া নিতে পারেন, তবে এগুলি শুধু প্ল্যাষ্টিকের বলে, অনেক মোটা মোজা না পড়লে ঠান্ডা লাগে, হাটাও কষ্ট।
# অনেকেই বলেন কাটাও মোটেও সুন্দর না! কিন্তু আমার মনে হয় সবারই কাটাও ঘুরে আসা উচিৎ। আমরা যেটা করেছি তা হল, প্রথমে কাটাও গিয়েছি, এরপর ইয়ামথাং ভ্যালি আর সবশেষে ছ্যাংগু লেক। এতে আমরা ক্রমান্বয়ে কম থেকে বেশি সুন্দর জায়গায় গিয়েছি, তাই কোনটা দেখেই মনে হয়নি সেখানে যাওয়াটা বৃথা ছিল।
# বরফে গড়াগড়ি করা ইচ্ছা থাকলে (না থাকলেও যাবার পরে হবেই!) অবশ্যই সাথে রেইন কোট নিয়ে যাবেন। সাধারণ কাপড় বরফে একবার স্লাইড করলেই ভিজে যাবে, তখন ভেজা কাপড়েই সারাদিন ঘুরতে হবে যেটা খুবই অস্বস্তিকর। রেইন কোটের ট্রাউজার আর কোট পড়া থাকলে আর সমস্যা হবে না।
# সানগ্লাস এবং সানস্ক্রিন অবশ্যই সাথে রাখবেন, বরফে রিফ্লেকশনের কারনে আমার ৫ মিনিটের মাঝে চোখ ব্যাথা শুরু হইছিল সানগ্লাস গাড়িতে ফেলে যাবার কারনে। আর আমার মত কাল চামড়ার মানুষেরও সান বার্ন হয় বাজে অবস্থা।
# ইয়ামথাং ভ্যালিতে গাড়ি হয়ত রাস্তা বন্ধের কথা বলে ভ্যালি শুরুর গেটেই নামিয়ে দিবে, তবে কয়েকজন একসাথে হয়ে রাস্তা দিয়ে হেটে যতটা পারেন যাবেন, এটা জীবনের অন্যতম একটা ওয়াকিং এক্সপিরিয়েন্স হবে। আমরা চারজন হেটে প্রায় ৭/৮ কিমি গিয়েছিলাম, যেখানে আসলেই রাস্তা বন্ধ ছিল এভালান্সের কারনে, ইন্ডিয়ান আর্মি ক্রেন দিয়ে রাস্তা পরিষ্কার করার কাজ করতেছিল। আমরা ভেবেছিলাম ঝাড়ি দিবে কিন্তু বাংলাদেশ থেকে গিয়েছি শুনে বেশ ভাল ওয়েলকামই করেছে!
# নর্থ সিকিমের ইকোনমি প্যাকেজে যেসব হোটেল থাকে এগুলি খুবই সাধারন মানের হোম স্টে এর মত। তাই অতিরিক্ত প্রত্যাশা করবেন না, আর পান থেকে চুন খসলেই অভিযোগ করে ওনাদের মাথা খারাপ করবেন না। বরং একটু আন্তরিক ব্যবহার করলে দেখবেন উনারা ১ দিনেই কেমন আপন হয়ে যায়। আমরা যেখানে ছিলাম সেখানে আগের দিনই অন্য কোন গ্রুপ উল্টাপাল্টা ব্যবহার করে আসছে, ওরা দুঃখ করে বলতেছিল। নিতান্তই ভাল হোটেল চাইলে ট্যুর অপারেটরকে বলে বেশি টাকার প্যাকেজ নিন, লাচুং এ অনেক ভাল হোটেল আছে, হয়ত প্রত্যাশিত সার্ভিস পেয়ে যাবেন।
# গ্যাংটকের এমজি মার্গে রসুই নামের পিওর ভেজিটেরিয়ান রেস্টুরেন্ট আছে, ঐখানের খিচুড়িটাই একমাত্র আমার দেশি খাবারের খুব কাছাকাছি মনে হইছে।
# গ্যাংটকে সব জিনিসের দাম বেশি, তাই নিতান্তই শপিং করার ইচ্ছা থাকলে শিলিগুড়িতে একদিন থেকে শপিং করতে পারেন। বিগ বাজার, বাজার কোলকাতা, এফবিবি, শ্রী লেদারস, বিধান মার্কেট, হংকং মার্কেট শপিং এর জন্য ভাল। শিলিগুড়িতে থাকলে ভজ হরি মান্নাতে অন্তত একবেলা খেয়ে দেখতে পারেন। কিছুটা এক্সপেন্সিভ কিন্তু দারুন বাংগালী রান্না।
খুবই কষ্ট হয় যখন দেখি ফ্রোজেন লেকের মাঝেও লোকে চীপস বা বিস্কিটের প্যাকেট ফেলে রাখে, ড্রিংকসের বোতল ফেলে আসে। ঘুরতে গিয়ে যেখানে সেখানে ময়লা না ফেলার ব্যাপারে নিজে সচেতন হোন আর নিজের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে এখন থেকেই সচেতন করুন। অন্যদের বদলে যাবার অপেক্ষা না করে নিজের পরিবার থেকে বদলে দেওয়া শুরু করুন।
source: Badhon Jain <Travelers of Bangladesh (ToB)