শীতের আগমনে অতিথি পাখির আগমন, প্রাণোচ্ছল শেখ রাসেল জাতীয় উদ্যান

সরকার ও স্থানীয় প্রশাসন বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়ায় শীত আসার আগেই অতিথি পাখির কলাকাকলিতে মুখরিত হয়ে উঠেছে জাতীয় এই উদ্যানটি

উত্তরের জেলা দিনাজপুরে খানিকটা আগে থেকেই শুরু হয়েছে শীতের আমেজ। এই কারণে দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলার দৃষ্টিনন্দন আশুড়ার বিলে ইতোমধ্যেই আসতে শুরু করেছে অতিথি পাখি। বিলে ফুটতে শুরু করেছে লাল পদ্ম ফুল ও সাদা শাপলা। ফুলগুলো সদ্যনির্মিটি দৃষ্টিনন্দন শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব কাঠের সেতুর সৌন্দর্য আরো বাড়িয়ে তুলেছে।

প্রাকৃতিক অপরূপ সৌন্দর্যের লীলা ভুমি দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলার শেখ রাসেল জাতীয় উদ্যান। উদ্যানটি প্রায় দেড় হাজার একর এলাকা জুড়ে বিস্তৃত, মাঝখানে রয়েছে প্রায় ৬শ’ একরের ঐতিহাসিক আশুরার বিল, যা দেশীয় মৎস্যের অভয়াশ্রম হিসেবে পর্যটকদের কাছে পরিচিত। এর পাশেই রয়েছে ঐতিহাসিক সীতার কোট বৌদ্ধবিহার। প্রাকৃতিক অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি এই বন ও বিলকে ২০১০ সালে সরকার জাতীয় উদ্যান হিসেবে ঘোষণা করে।

উদ্যানের বিলে ফুটতে শুরু করেছে লাল পদ্ম ফুল ও সাদা শাপলা। ঢাকা ট্রিবিউন

সম্প্রতি উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে উদ্যানটির সৌন্দর্যবর্ধনে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। শীতে অতিথি পাখিদের আগমনকে নির্বিঘ্ন করতে ইতোমধ্যেই বিভিন্ন গাছে মাটির পাতিল লাগানো, বনের পাশ দিয়ে বিভিন্ন প্রজাতির সৌন্দর্য বর্ধনকারী ফুলের গাছ রোপন এবং বিলের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে জলাশয় থেকে কচুরিপানা পরিস্কার করা হয়েছে। এতে শীত ভালোভাবে জাকিয়ে বসার আগেই অতিথি পাখিদের কলাকাকলিতে মূখর হয়ে উঠেছে জাতীয় উদ্যানটি।

নবাবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মশিউর রহমান জানান, “বিলে সবসময় পানি ধরে রাখতে বিলের পাশেই একটি রাবার ক্রস ড্যাম নির্মাণ করা হয়েছে। এই কারণে দেশের অন্যান্য স্থানে শীতের আমেজ এখনো না পড়লেও দেশের সবচেয়ে উত্তরের জেলা দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলায় কিছুটা আগে থেকেই আগাম শীতের আমেজ তৈরি হয়েছে। এজন্য নবাবগঞ্জের দৃষ্টিনন্দন আশুড়ার বিলে আসতে শুরু করেছে অতিথি পাখি যা আগে তেমনটা আসত না। এরই মধ্যে বিলে কয়েক হাজার পাখি এসেছে।”

শীত আসার আগেই অতিথি পাখির আগমনে প্রাণোচ্ছল হয়ে উঠেছে শেখ রাসেল জাতীয় উদ্যান। ঢাকা ট্রিবিউন

সম্প্রতি বন ও বিলের মধ্যে সংযোগ স্থাপনের জন্য দীর্ঘ ৯শ মিটার শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব কাঠের সেতু নির্মান করা হয়। কাঠের এই সেতুটি বিলের দুইপাশে থাকা বনের মধ্যে সংযোগ তৈরি করেছে। এতে করে বিলের অপরূপ সৌন্দর্য আরও বেড়ে গেছে। এর পাশাপাশি রাবার ড্যামের মাধ্যমে বিলে সার্বক্ষনিক পানির ব্যবস্থা করে গড়ে তোলা হয়েছে মাছের অভয়াশ্রম। মোটকথা সরকার ও স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে দিন দিন আরও প্রাণোচ্ছল হয়ে উঠছে শেখ রাসেল জাতীয় উদ্যান। ফলে প্রতিনিয়ত পর্যটকদের সমাগম বাড়ছে সেখানে।

আশুরার বিল ও বন দেখতে আসা সাগর হোসেন বলেন, “নবাবগঞ্জের জাতীয় উদ্যান ও আশুরার বিলের কথা আগে থেকেই জানতাম, সম্প্রতি সেই বন ও বিলের সৌন্দর্য বাড়াতে সেখানে দীর্ঘতম দৃষ্টিনন্দন কাঠের সেতু নির্মান করা হয়েছে যা দেখার জন্য বন্ধু বান্ধব ও পরিবার পরিজনদের নিয়ে এসেছি। তো এখানে এসে আমরা কি পরিমান মুগ্ধ হয়েছি তা বলে বোঝানো সম্ভব না। আমার অনেক জায়গায় যাওয়ার সুযোগ হয়েছে কিন্তু এখানকার মতো শুনসান, মুক্ত বাতাস ও নিরিবিলি পরিবেশ আর কোথাও নেই।”

সম্প্রতি নির্মিত শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব কাঠের সেতুটি বিলের দুই পাশের বনকে সংযুক্ত করেছে। ঢাকা ট্রিবিউন
তবে এখানে পর্যটকদের থাকার জন্য তেমন কোনো সুযোগ সুবিধা নেই বলে জানালেন সাগর হোসেন। তার মতে আবাসিক ব্যবস্থা নিয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হলে এটি উত্তরবঙ্গের অন্যতম প্রধান একটি পর্যটনকেন্দ্র হয়ে উঠবে।

নবাবগঞ্জের শেখ রাসেল জাতীয় উদ্যান রক্ষা ও উন্নয়ন কমিটির সভাপতি মাহাবুর আলম জানান, “আমরা স্বেচ্ছাসেবীর মাধ্যমে বিল ও বনের পরিবেশ রক্ষায় দায়িত্ব পালন করে আসছি। কেউ যেন বিল ও বনের সৌন্দর্য বিনষ্ট করতে না পারে সে বিষয়ে নজরদারি রাখা হয়েছে। এছাড়াও শীতকে ঘিরে যেসব অতিথি পাখিদের বিলে আগমন শুরু হয়েছে সেসব পাখি যেন নিরাপদে থাকতে পারে সে ব্যাপারে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। বন ও বিলে ভ্রমণপ্রেমীদের নির্বিঘ্নে চলাচলের জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। রাতে আশুরার বিলের ওপর দৃষ্টিনন্দন শেখ ফজিলাতুন্নেছা কাঠের সেতুতে আলোকসজ্জার ব্যবস্থা করা হয়েছে।”

Source: https://bangla.dhakatribune.com/

Share:

Leave a Comment