শ্রীমঙ্গলের নাম করন নিয়ে সঠিক কোন তথ্য নেই। তবে, কথিত আছে শ্রী দাশ ও মঙ্গল দাশ নামে দু’জন লোক হাইল হাওর এর তীরে প্রথমে বসতি স্থাপন করেন। এ দু’ভাইয়ের নামানুসারে শ্রীমঙ্গল নামকরণ করা হয়।
আরো কথিত আছে শ্রীমঙ্গল শহরের অদুরে মঙ্গল চন্ডী দেবতার একটি থলি ছিল। তাঁর নামানুসারে শ্রীমঙ্গল নামকরণ করা হয়।
ভ্রমণের প্রস্তুতি
২০১০ সালে আমি প্রথম শ্রীমঙ্গল ভ্রমণে গিয়েছিলাম। তখন হোসেন ভাই (আমার মেঝো ভাই) শ্রীমঙ্গল নিয়ে গিয়েছিল। এরপর আর শ্রীমঙ্গল যাওয়া হয় নি।
সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর প্ল্যান ছিল গ্রামের বাড়ি যাব। কিন্তু ইন্টারনেটে হঠাৎ একটি লেখা পেলাম ১ দিনে শ্রীমঙ্গল ভ্রমণ।
লেখাটা বিস্তারিত পড়লাম। সেই ২০১০ সালে গিয়েছি। এখন ২০১৯, অনেক কিছু ভুলে গিয়েছি। যাইহোক, মনে মনে ভ্রমণের প্রতি একটা আগ্রহ জেগে উঠল।
প্রথমে আমার চিরাচরিত নিয়ম অনুসারে একা ভ্রমণের প্ল্যান করলাম। পরক্ষনে ফ্রেন্ড জাবেদ এর সাথে কথা বলায় ও যেতে রাজি হল। কিন্তু কিছুক্ষন পর ফোন করে জানালো ওর অফিস ছুটি নেই যেতে পারবে না।
ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটি তে অধ্যয়নরত আমার এক ছোট ভাই মোহাইমিনুল ইসলাম, যার সাথে কুমিল্লাতে পরিচয়। ও অনেকদিন ধরেই আমার সাথে ভ্রমণে যাওয়ার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করছিল।
আমি যখন শ্রীমঙ্গল ভ্রমণে যাওয়ার প্ল্যান করছিলাম ঠিক তখনি কাকতালীয় ভাবে ও আমাকে ফেসবুকে নক করে ভ্রমণের কথা বলল। আমি শ্রীমঙ্গল যাওয়ার কথা বলাতে ও সাথে সাথে রাজি হয়ে গেলো আমার সাথে ভ্রমণে যাওয়ার জন্য।
প্ল্যান হল ৩১ ডিসেম্বর দুপুর ১২টার দিকে। আমরা রাতে রওনা দিব। ট্রেনের টিকিট কাটা জামেলার তাই বাসে যাওয়ার প্ল্যান হল।
ভ্রমনের দিন
ভ্রমণের দিন বা ভ্রমণের সময় বলতে পারেন কারন, ভ্রমণের প্ল্যান হয়েছে দুপুরে আর, যাত্রা শুরু করেছি সন্ধ্যায়।
ঘড়িতে সময় প্রায় দুপুর ৩টা। আমি তখনও লাঞ্চ করিনি গোসল ও করা হয়নি। সহজ.কম থেকে এনা পরিবহণ এর ২টা টিকিট নিলাম। টিকিট এর দাম ৪০০ করে হলেও সহজ আমাদের কাছ থেক প্রতি টিকিট ৪৪৩ টাকা করে নিল। F1, F2 ২টা সিট পেলাম। সামনের গুলো সব ইতিমধ্যে বুকিং হয়ে গিয়েছে।
মোহাইমিনুল বাড্ডায় থাকে। ও ভ্রমণের জন্য প্রস্তুতি নিয়ে বিকেলের ভিতর আমার বাসায় চলে আসল। আমি ইতিমধ্যে ব্যাকপ্যাক গুছিয়ে নিয়েছি। এখন গোসল আর খাওয়াদাওয়ার পালা।
আমাদের বাস মহাখালী থেকে রাত ১১ঃ৩৫ এ ছাড়বে। শ্রীমঙ্গল পৌছবে ভোর প্রায় ৫টার দিকে।
আমরা রাতের খাবার বাহিরে হোটেলে খাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। যেহেতু আমরা বাহিরে খাব এবং মিরপুর থেকে মহাখলি যেতে হবে বাসে উঠার জন্য তাই জ্যাম এর কথা চিন্তা করে রাত ৯টার দিকে বের হওয়ার প্ল্যান করলাম।
আমরা বাসা থেকে বের হওয়ার কিছুক্ষন আগে জাবেদ ফোন করে জানাল যে ও অফিস ম্যানেজ করেছে এখন আমাদের সাথে যেতে চায়।
আমি সাথে সাথে কম্পিউটার ওপেন করে সহজ.কম থেকে আরেকটি টিকিট সংগ্রহ করলাম। তবে চিন্তার বিষয় ছিল আমাদের বাসে সিট ফাকা আছে তো বা যদি সিট থাকেই তবে সেটা কোন দিকে। যাক, ভাগ্যক্রমে জাবেদ G1 সিট পেয়েছে।
শ্রীমঙ্গল ভ্রমণ
এখানে বলতে ভুলে গিয়েছি যে, মোহাইমিনুল আমার বাসায় আসার পর আমাদের প্ল্যান হয়েছি শ্রীমঙ্গল থেকে আমরা হযরত শাহজালাল এবং শাহপরান (রাঃ) এর মাজার হয়ে জাফলং যাব।
জাবেদ নয়াপল্টন অফিস থেকে আমাদের আগেই মহাখালী বাস স্ট্যান্ড চলে এসেছে। আমাদের আসতে একটু দেরি হয়েছে। তবে, আমারা সবাই ঠিক সময়েই পৌছেছি।
রাত ১০ঃ৫৫ মিনিট। আমরা বাসের জন্য ওয়েটিং রুমে বসে আছি। সহজ আসলেই টিকিট এর সিস্টেম টা সহজ করেছে। আমরা বাস কাউন্টারে সহজ থেকে টিকিট সংগ্রহের কথা বলাতে কাউন্টার থেকে আমাদের বললেন, কোন টিকিট লাগবে না আপনারা শুধু মোবাইলের ম্যাসেজ টি দেখালেই হবে।
সহজ না?
এই প্রথম জাবেদ এবং মোহাইমিনুল শ্রীমঙ্গল ভ্রমণ করতে যাচ্ছে। আর আমার ২য় বার।