সিংগাপুর ভ্রমণের কিছু তথ্য
সিংগাপুরের ভিসা জন্য যে কেউ ইচ্ছে করলেই সিংগাপুর কনসুলেট অফ বাংলাদেশ এ আবেদন জমা দিতে পারবে না।ভিসার আবেদন জমা দেয়ার জন্য সিংগাপুর কনসুলেট অফ বাংলাদেশ থেকে ১৫ ট্রাভেল এজেন্সি কে এনলিস্ট করেছে। এদের মাধ্যমেই ভিসার জন্য আবেদন জমা দিতে হবে।এই ১৫ টি ছাড়া অন্য কোন এজেন্সির কাছে ভিসা করতে দিলেও তারা মুলত এদের কাছেই আসে।তাই ভিসার আবেদন করার জন্য আমি ১৫ টির একটি victory Travels Ltd, বেছে নিলাম।
সিংগাপুরের ভিসার জন্য আবেদন করতে চাইলে লেটার অব ইন্ট্রোডাকশন (LOI) লাগবে, এটার উপরেই ভিসা হবে কি হবে না তা অনেকটা নির্ভর করে।আমার জন্য LOI টা আমার রিলেটিভ দিয়েছিল,যার সিংগাপুরের নাগরিকত্ব আছে । তাছাড়া সিংগাপুর এয়ারলাইন্স এর কনফার্ম টিকেট থাকলে আলাদা করে আর LOI এর দরকার হয় না।
ভিসার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র :
১।বৈধ পাসপোর্ট (মেয়াদ ৬মাসের অধিক থাকতে হবে)
২।২কপি ল্যাবপ্রিন্ট ছবি ( রিসেন্ট ছবি পাসপোর্ট সাইজ ম্যাট পেপার )
৩।ব্যাংক সলভেন্সি এবং স্টেটম্যান্ট (এইগুলো না দিলেও হয় আমার এজেন্সি চাইছিল তাই দিয়ে দিছি )
৪।অফিসের NOC এবং ভিজিটিং কার্ড
৫।২৬০০টাকা নিজে LOI এনে দিলে বা সিংগাপুর এয়ারলাইন্স এর কনফার্ম টিকেট দিলে। (এজেন্ট দিয়ে LOI আনালে ৪০০০/৫০০০ টাকা)
অন লাইনে ভিসা এপ্লিকেশন স্টেটাস চেক করার এই লিংকে গিয়ে এপ্লিকেশন রেফারেন্স নাম্বার আর পাসপোর্ট নাম্বার দিয়ে দেখে নিতে পারবেন।
এছাড়া যা কিছু লাগবে সব কিছুই আমার এজেন্সি ম্যানেজ করে নিবে। তাই আমাকে আর কোন টেনশন নিতে হয় নি।২১/০১/২০১৯ তারিখে এজেন্সির কাছে জমা দিয়ে ৩০/০১/২০১৯ তারিখে ৯দিন পর ৩৫ দিনের ডাবল এন্টি ভিসা সহ পাসপোর্ট ফেরত নিয়ে আসলাম।
ইমিগ্রেশন :আমার ফ্লাইট ছিল রাতে তাই ভোর হওয়ার আগেই আমি সিংগাপুর এয়ারপোর্ট পৌছে যাই। আমার ইমিগ্রেশন শেষ করতে ২/৩ মিনিট লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছিল ইমিগ্রেশন অফিসার কে পাসপোর্ট হাতে দিতেই আমার চশমা খোলার জন্য বললেন, তারপর আমার পাসপোর্টে সিল দিতে নিল আমি তখন তাকে থামিয়ে দিয়ে বললাম এই পেজে সিল দেন। তখন তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন কেন এই পেজে নয়।আমার উত্তর ছিল একটা পেজ বাচাতে পারলে আমার একটা দেশ বেশি ট্রাভেল করতে পারব এই পাসপোর্ট দিয়ে।তারপর আর কিছু না বলেই আমার দেখানো পেজেই সিল দিলেন।
ইমিগ্রেশন শেষ করে দেখি সিংগাপুরের লোকাল টাইম রাত ৩:২২ মিনিট তাই কোন কিছু চিন্তা না করে মোবাইল চার্জ দিয়ে সোফাতে শুয়ে রইলাম কিছু ক্ষনিকের জন্য।এরপর ফ্রেস হয়ে চলে গেলাম সরাসরি MRT স্টেশন।
টুরিস্ট পাশ: MRT স্টেশনে গিয়ে টুরিস্ট পাশ প্যাকেজ দেখলাম ১, ২,৩ দিনের পাশ দেয় যেহেতু আমি ৩দিন থাকব তাই ৩দিনের প্যাকেজ নিব ২০ ডলার দিয়ে কিন্তু ১০ ডলার ডিপজিট দিতে হবে,তা ফেরার সময় পাশ জমা দিয়ে দিলে ১০ ডলার ফিরত দিয়ে দেয়।পাশ নিতে পারবেন সকাল ৮টা থেকে রাত ১০টা প্রর্যন্ত ক্যাশ টাকা দিয়ে,তাছাড়া ডুয়েল কারেন্সি কার্ড দিয়ে যে কোন সময়ই নেয়া যায়।আমার কার্ড থাকায় ভোর ৫টায় ৩ দিনের পাশ নিয়ে চলে গেলাম Changi Airport MRT station থেকে Expo MRT station সেখান থেকে MRT চেঞ্জ করে চলে গেলাম মেরিনা বে।
মেরিনা বে এর সম্পূর্ন এলাকাটি ঘুরে দেখে এখানেই 7Eleven থেকে ৪ ডলার দিয়ে চিকেন ফ্রাইড রাইস খেয়ে নিলাম।এর পর আবার কিছু সময় ঘুরে দেখলাম তারপর MRT করে চলে গেলাম লিটল ইন্ডিয়া। এর পর ১২ ডলার দিয়ে একটা সিম নিয়ে নেই ৭দিনের জন্য ১০০ জিবি ডাটা সহ।
কোথায় থাকবেন আর কি খাবেন: বাংলাদেশীদের জন্য থাকা ও খাবারের সবচেয়ে ভাল স্থান হচ্ছে লিটল ইন্ডিয়া। মোস্তফা সেন্টারের আশেপাশে অনেক গুলি বাংলাদেশি রেস্টুরেন্ট রয়েছে। এর যে কোন টিতেই ইচ্ছে করলে ই খেতে পারেন, এখানে থাকলে আপনি সিংগাপুর আছেন, নাকি বাংলাদেশে আছেন।খাবাবের জন্য প্রতি বেলায় ৪/৫ সিং ডলার যথেষ্ট। হোটেল ভাড়া অন্যান্য দেশ অনুযায়ী সিংগাপুর একটু বেশি হোটেলে থাকতে গেলে ৮০/১৫০ ডলার গুনতে হতে পারে।আমি হোটেল থেকে হোস্টেলেই বেশি কমর্ফোটেবল তাই আমি প্রতিবারের মত এবারো হোস্টেল নেই লিটল ইন্ডিয়ার Cambeel line এ।
ঘুরে দেখার স্থান : সিংগাপুর খুবই ছোটো এবং গুছানো একটা দেশ তাই খুব সহজেই পুরো সিংগাপুর ঘুরে দেখা যায়।তবে এর মধ্যে যে সকল স্থানে গুলি না দেখলেই নয়
Changi Airport-Marina Bay Helix Bridge-Merlion Park-Singapore River-Gardens By the Bay-Little India-Casino-Little India- Sentosa (Vivo city,Harbour pont)- Sentosa Beaches-singapore Botanic Garden -Pulau Ubin-Chaina Town-Kampong Glam.
Marina Bay: মেরিনা বে তে গেলেই আপনি মেরিনা বে, হেলিক্স ব্রিজ,মারলায়ন পার্ক,।সিংগাপুর রিভার, গার্ডেন বাই দা বে,মেরিনা কেসিনো দেখতে পাবেন।তবে কেসিনোতে ঢুক্তে চাইলে পাসপোর্ট সাথে নিয়ে যেতে হবে।কেসিনোতে ঢুকলেই পাবেন কমপ্লিমেন্টরি ড্রিংন্স। এখানে বিকেল বেলা গিয়ে দিনের এবং রাতে অসাধারণ লাইটিং দেখতে পাবেন।প্রতিদিন রাত ৮:১৫ তে লেজার লাইটিং শো দেখায় যা সত্যি অসাধারণ।
Sentosa: সিংগাপুরের সবচেয়ে আর্কশনীয় স্থান হচ্ছে Sentosa. এখানে ঘুরাঘুরি করার জন্য কমপক্ষে একদিন লাগে তবে সত্যি কথা বলতে ভালভাবে সেন্তসা কে দেখতে চাইলে একদিনে সম্ভব নয়।সেন্তসা যেতে হলে লিটল ইন্ডিয়ার MRT স্টেশন থেকে Vivo City MRT স্টেশন যেতে হবে এর পর vivo city থেকে LRT তে ৪ ডলার আর ক্যাবল কারে করে ১৯ ডলার খরচ করে যেতে পারেন। এর জন্য আপনাকে Vivo city এর টপ ফ্লোরে যেতে হবে।তবে vivo city MRT স্টেশন থেকে বের হয়েই পায়ে হেটে সম্পুর্ন ফ্রিতে sentosa যেতে পারেন এবং আশার সময় LRT তে ফ্রিতে vivo city তে চলে আসতে পারবেন।সেন্তসা ঘুরে দেখতে কোন টিকেট নেই কিন্ত সেন্তসার ভিতরে বিভিন্ন রকমের রাইডস, বিভিন্ন রকমের এক্সাইটিং সব প্লেস ঘুরে দেখতে টিকেট কেটে দেখতে হবে।Vivo city টিকেট কাউন্টার থেকে Fun pass প্যাকেজ করে টিকেট কেটে নিতে পারেন।তাছাড়া সেন্তসার প্রতিটি fun pass এর সামনের টিকেট কাউন্টার থেকে টিকেট কেটে নিতে পারবেন।
সেন্তসার ঠিক পিছনেই রয়েছে তিনটি অসাধারণ সিবিচ Siloso, Palawan, Tanjong Beach সেখানে যাওয়ার জন্যে আপনাকে Sentosa Marlaion এর ঠিক পিছনের রাস্তা দিয়ে Beach Station যেতে হবে, সেখান থেকে আপনি হেটেই বিচ তিনটি দেখতে পারবেন।তাছাড়া আপনি Beach station থেকে ফ্রি ট্রেনে করে বিচ তিনটি ঘুরে দেখতে পারবেন।ছোট ছোট সিবিচ হলেও একেকটি বিচ একেক রকমের সুন্দর। যেখানে আপনি ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকলেও ফিরে আসতে মন চাইবে না।
শপিং এবং GST ক্লেইম : শপিং এর জন্য মোটামুটি মোস্তফা সেন্টার ভাল। মোস্তফা সেন্টারে সব কছুই পাওয়া যায়। তবে গোল্ড কেনার জন্য মোস্তফা সেন্টার কে চোখবুঝে বিশ্বাস করা যায়।শপিং করার সময় অবশ্বই পাসপোর্ট সাথে করে নিয়ে যাবেন। মোস্তফা সেন্টারে গ্লোসরি আইটেম বাদে সকল কেনা কাটার জন্য GST পাসপোর্ট দেখায়ে ক্লেম করে নিতে পারবেন। তবে সেই জন্য একই ডেট এ সর্বনিন্ম ১০০ ডলারের শপিং করতে হবে।একজন ট্রুরিস্ট সিংগাপুর থেকে আশার সময় ১০০ গ্রাম গোল্ড,৩টা স্মার্ট ফোন নিয়ে আসতে পারবেন। শপিংমল থেকে ক্লেইম করা GST স্লিপ দেখিয়ে এয়ারপোর্ট থেকে GST অর্থ ফিরিয়ে নিয়ে আসবেন।
জরুরী এলার্ন: সিংগাপুর এয়ারপোর্ট কিছু বাংলাদেশি আছে যারা আপনাকে ১০০ গ্রাম গোল্ড দিতে চাইবে আর বলবে আমার লোক এয়ারপোর্ট থেকে নিয়ে নিবে এর জন্য আপনাকে ৬/৭ হাজার টাকা অফার করবে, তাছাড়া বুকিং কম থাকলে ২৫/৩০ কেজি বুকিং দিতে চাইবে তার বিনিময়ে প্রতি কেজি ৫/৬ ডলার দিতে চাইবে।আমাকেও অফার করেছিলো। আমি নিজেকে তাদের কাছ থেকে দূরে রেখেছি।