সীতাকুন্ডের বোটানিক্যাল গার্ডেন এর ইকোপার্ক

আমাদের যাত্রা শুরু হয় ঈদের পর দিন সকাল ৭ টায় । আমরা বাসে করে যাবো তাই ঢাকা থেকে ফেনীর টিকিট কেটে বাসের অপেক্ষায় থাকি । ৭ টা ৪০ মিনিটে আমাদের বাস ঢাকার মানিকনগর থেকে রওনা হয় । আমার ভাবনা ছিল যে আমরা ১০ টার ভিতরে ফেনী থাকবো । কিন্তু ওই দিন নারায়ণগঞ্জ এর লাঙ্গলবন্দ ব্রীজের সংস্কার কাজের জন্য আমরা অনেক সময় জ্যামে আটকে থাকি । যার জন্য আমরা দুপুর ২ টায় ফেনীতে গিয়ে নামি । ফেনী থেকে আমরা লোকাল বাসে করে চলে যাই ঠাকুরদিঘী বাস স্ট্যান্ড । সেখান থেকে সিএনজি তে করে চলে যাই মহামায়া লেকের মেইন গেইটে । আমরা টিকিট সংগ্রহ করে ভিতরে গিয়ে লেকের পাহাড় গুলো দেখে প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে যাই । সত্যি অনেক সুন্দর একটা লেক মহামায়া লেক । মনে হচ্ছিল যে লেকের পানির উপরে ছোট্ট পাহাড় গুলো ভেসে আছে । আমরা পাশের পাহাড়ে উঠে পুরো লেকটা দেখে আরও মুগ্ধ হয়ে গেছি । তখনকার অনুভতি ভাষায় প্রকাশ করা যায় না । তারপর আমরা সাড়ে ৫ টার দিকে লেক থেকে বের হয়ে আসি । কারন আমাদের রাতে থাকার জন্য সীতাকুন্ডুতে আসতে হবে । আমরা সিএনজিতে করে ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কে চলে আসি । সেখান থেকে বাসে করে আমরা চলে আসি সীতাকুন্ডুতে । বাস থেকে নেমে আমরা প্রথমে চলে যাই সীতাকুন্ডু বাজারের ভিতরে । সেখানে কয়েকটি হোটেল আছে কিন্তু সব থেকে ভালো মানের হোটেল টা হলো নিউ সাউদিয়া । তাদের রুম গুলো খুব ভালো । তাই আমরা ৩ জনে থাকার জন্য একটা রুম ভাড়া করি । রুমে ডুকে আমরা ফ্রেশ হয়ে রাতের খাবারের জন্য যাই আপন রেষ্টুরেন্টে । রাতের খাবার শেষে আমরা রুমে এসে ঘুমিয়ে যাই । পরের দিন আমরা সারা বেলা ইকোপার্কের ভিতরে ঘুরবো । পরের দিন সকাল ৫ টায় ঘুম থেকে উঠে হোটেল থেকে চন্দ্রনাথ পাহাড়ের ভিউ নিতে ভুল করি নি । আমরা সকালের দিকে রুম চেক আউট করে হোটেলের মামার কাছে ভাড়ি ব্যাগ জমা রেখে আমরা চলে যাই নাস্তা করতে । নাস্তা শেষ করে আমরা রিক্সাতে করে চলে যাই ইকোপার্কের সামনে । ইকোপার্কের ভিতরে আমরা ঢুকে সিএনজি তে করে আমরা একদম উপরে চলে যাই । প্রথমে আমরা সহস্রধারা ঝর্ণা দেখতে যাই । সহস্রধারা বেজ ক্যাম্পিং থেকে ৪৮৩ টি সিঁড়ি বেয়ে নিচে গেলেই সেখানে যে ঝিরি পথ দেখা যাবে সেটা ধরে ২ মিনিট হাটলেই দেখা যাই সহস্রধারা ঝর্ণা । অনেক উচু থেকে পানি নিচে পড়ে । ঝর্ণার দিকে তাকিয়ে থাকলে ঠিক ডান পাশের রাস্তা দিয়ে চলে যাওয়া যাবে এই ঝর্ণার উপরে ।

এই ঝর্ণার উপরের দিকে যাওয়ার সময় পাহাড় থেকে ঝর্ণার কিছু সুন্দর ভিউ পাওয়া যায়। আর পাহাড়ের উপরে উঠে যখন আশেপাশে তাকাবেন তখন আপনার চোখ এমনিতেই জুড়িয়ে যাবে। তারপর আমরা সেখান থেকে নিচে নেমে আমরা চলে আসি সহস্রধারার বেজ ক্যাম্পিং এর কাছে। সেখান থেকে আমরা হেটে নিচের দিকে নামতে থাকি। একটু হাটার পর আমরা ওয়াচ টাওয়ার দেখতে পাই। আমরা ওয়াচ টাওয়ার এর উপরে কিছু টাইম স্পেন্ড করি। ওয়াচ টাওয়ার থেকে সমুদ্র সৈকত খুব ভালো মতই দেখা যায়। আমরা সেখান থেকে হেটে হেটে চলে আসি সুপ্তধারা ঝর্ণার বেজ ক্যাম্পিং এর কাছে। সেখান থেকে আমরা সিড়ি বেয়ে নিচে চলে যাই। এই ঝর্ণা টা সহস্রধারা থেকে একটু কষ্টের। প্রায় ২২০০ ফুট নিচের দিকে নামতে হয়। আমরা সিড়ি বেয়ে নিচে নামার পড় আমরা ঝিরি পথ পাই। ঝিরি পথের গতি যে দিকে আছে ঠিক তার উল্টো দিকে সুপ্তধারা ঝর্ণা অবস্থিত। সিড়ি থেকে ১০ থেকে ১৫ মিনিট হাটলেই পাওয়া যাবে এই ঝর্ণা টা। এই ঝর্ণাতে আমরা গোসল করি অনেক মজা করি। তারপর আমরা সেখান থেকে ফেরার পথে গোল ঘরে বসে দুপুরের জন্য হালকা শুকনো খাবার নিয়ে এসে ছিলাম সেগুলো খেয়ে সেখানে একটু রেষ্ট নিলাম। তারপর আমরা ১ টার পর আমরা আবার হাটা শুরু করি। আমরা হেটে হেটে ইকোপার্ক এর গেইটের কাছে চলে আসি তখন ঠিক আড়াইটার মত বাজে। আমরা আশেপাশে আর একটু ঘুরে বের হয়ে কিছু কেনা কাটা করে হেটে চলে আসি ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কে। মহাসড়কে আসার আগে রেল লাইনে বসে কয়েকটি ছবি ও তুলেছিলাম। মহাসড়ক থেকে সীতাকুন্ডু বাজারে এসে হোটেল মামার কাছ থেলে ব্যাগ নিয়ে আমরা ভাত থেকে আপন হোটেলে চলে যাই। সেখানে খাওয়া শেষে আমরা বিকাল ৬ টার বাসে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হই। বাস আমাদের ৯ টা ১৫ তে ঢাকার বাড্ডায় নামিয়ে দেয়। সেই থাকে আমাদের ভ্রমণ এর সমাপ্ত ঘটে।

আমাদের ৩ জনের মোট খরচ হয়েছে ৬,০০০ টাকা। তাহলে আমাদের জনপ্রতি খরচ হয়েছে ২,০০০ টাকা করে।

Source: Pranto Kumar Halder‎ <Travelers of Bangladesh (ToB)

Share:

Leave a Comment