সোনালী রাজস্থান এর ভ্রমণ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য

জয়সাল্মের- দ্যা গোল্ডেন সিটি। কারণ এইখানের সব বাড়ির রং সোনালী রাজস্থান এর একদম শেষদিকে পাকিস্তান বর্ডারের আগে ভারতের শেষ শহর টার নাম জয়সাল্মের। মরুভুমি দিয়ে ঘেরা শহরটায় অবস্থিত ফোর্টটি ভারতের একমাত্র লিভিং ফোর্ট। শহরের ২৫ শতাংশ মানুষ এই ফোর্টের মধ্যেই থাকে। সত্যজিৎ রায়ের “সোনার কেল্লা” উপন্যাসে এই কেল্লার কথাই বলা হয়েছে। ৮০০ বছরের পুরনো এই কেল্লা এখনো যেন জীবন্ত। এই শহরটি হলুদ বেলেপাথরের তলদেশে দাঁড়িয়ে রয়েছে, এবং এটি প্রাচীন জেসলেমরের দুর্গ দ্বারা মুকুটধারী । এই দুর্গটিতে রাজকীয় প্রাসাদ এবং বিভিন্ন জিন মন্দির রয়েছে। দুর্গ এবং পাথর উভয় ঘর এবং মন্দিরের অনেকগুলি নীচের শহরটি বিনয়ী বেল্ট পাথর নির্মিত। শহর থার মরুভূমি হৃদয় (দ্য গ্রেট ইন্ডিয়ান মরুভূমি) এবং মোট জনসংখ্যা রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে দুর্গের অধিবাসীদের 78,000 জন।

যাওয়া এবং ফেরার উপায় :
জয়সালমের যাওয়ার জন্য সবার আগে আপনাকে কলকাতা যেতে হবে। কলকাতা থেকে অনেক ভাবে আপনি জয়সালমের যেতে পারবেন।
১. সরাসরি কলকাতার হাওড়া থেকে ট্রেনে করে। ট্রেন জয়সালমের যায় শুধু সোমবার সকাল ৮.১৫ তে। জয়সালমের পৌঁছাতে সময় লাগবে ৪০ ঘন্টা + .ভাড়া পড়বে স্লীপারের ক্ষেত্রে ৭৮৫ রুপি এবং এসি এর ক্ষেত্রে ২০৬৫ রুপি।
২. কলকাতা থেকে দিল্লী। কলকাতা থেকে দিল্লী এর প্রতিদিন ট্রেন আছে সারাদিন। কলকাতা থেকে দিল্লী ৭০০ রুপি থেকে ৩০০০ রুপি এর মধ্যে যাওয়া যায়। সময় লাগবে ১৮-২৭ ঘন্টা কোন ট্রেনে যাচ্ছেন তার উপর নির্ভর করবে। পুরাতন দিল্লী থেকে ২টি ট্রেন প্রতিদিন জয়সালমের যায়। একটি ভোর ৪.৩০ এ আরেকটি বিকেল ৫.৩০ এ। ভাড়া পড়বে স্লীপারের ক্ষেত্রে ৪৪০ রুপি এবং এসি এর ক্ষেত্রে ১২০০ রুপি। সময় লাগবে প্রায় ১৯-২০ ঘন্টা।
৩. কলকাতা থেকে প্লেনে করে জয়পুর। ভাড়া পড়বে ওয়ান ওয়ে ৩০০০-৪৫০০ রুপি। সেখান থেকে বাস অথবা ট্রেনে করে জয়সালমের। বাস ভাড়া পড়বে ৬০০-১২০০ রুপি এবং যেতে সময় লাগবে ১১-১২ ঘন্টা। ট্রেনে করেও যেতে পারেন ভাড়া পড়বে ৩৫০-৯২০ রুপি।
তাই সব থেকে ভালো হয় শুধু জয়সালমের ঘুরতে গেলে কলকাতা থেকে সরাসরি ট্রেনে যাওয়া। যদি জয়পুর -আজমীর -উদয়পুর -যোধপুর এইসব ও ঘুরতে যান সেক্ষেত্রে জয়পুর হয়ে যাবে ভালো। আমি সব ঘুরে গিয়েছিলাম। আমার ট্রেন ছিল গুয়াহাটি থেকে জয়পুর। কারণ আমি ডাউকি দিয়ে ঢুকে এইদিকে কয়েকদিন ঘুরে তারপর আসাম গিয়ে ঐদিকে ঘুরে তারপর জয়পুর গিয়েছিলাম।
জয়সালমের থেকে ফেরার ট্রেন বৃহস্পতিবার রাত ১ টার সময় ছেড়ে হাওড়া যায়।

থাকা এবং খাওয়া :
জয়সালমের তো পৌঁছে গেলাম এবার থাকার জন্য জায়গা খুঁজতে হবে। আপনারা সরাসরি চলে যাবেন জয়সালমের ফোর্ট এলাকাতে। সব হোটেল ,হোস্টেল এইখানে। আমি যে হোটেলের ডর্মে ছিলাম সেটা আমার লাইফ এ থাকা বেস্ট একটা ডর্ম বলতে পারি কম খরচে। কারণ ডর্মের সাদের ভিউ দেখলে যেকনো কারো মাথা ঘুরবে। কারণ সাদের সাথেই জয়সালমের ফোর্ট। রাতে সাদের বেড এ শুয়ে শুয়ে ফোর্ট দেখা আর বাতাস খাওয়ার মজাই আলাদা ছিল। আর ঐটা ছিল কুরবানীর ঈদ এর দিন। যাই হোক ভাড়া ছিল ৫০ রুপি। কিন্তু ঠান্ডা ফিল্টার পানিই খেয়েছি মনে হয় দিনে ২০০ রুপি এর বেশি গরমের জন্য।
আপনার চাইলে যেকনো মানের হোটেলে উঠতে পারবেন। সবগুলো হোটেলের কারুকাজ অনেক সুন্দর। দেখলেই প্রাণ জুড়িয়ে যাবে। এবং আশেপাশে এবং হোটেলে খাওয়া দাবার ব্যবস্থা আছে। ভালো হয় জয়সালমের মার্কেট এলাকা তে খাওয়াদাওয়া করা। অনেক অনেক ধরণের স্থানীয় খাবার আছে।

দর্শনীয় স্থান শহরের আশেপাশে :
জয়সালমের ফোর্ট : ১১৫৬ সালের দিকে গড়ে ওঠে এই কেল্লাটি।রাজপুত রাও জয়সাল এই ত্রিকূট পাহাড়ে গড়ে তোলোন তার সাম্রাজ্য। তখন থেকেই বংশ পরম্পরা এখানে বাস করছেন রাজপুতরা, আর আছে স্হানীয় অধিবাসী। কেল্লার অভ্যন্তরে মানুষের নিত্যদিনের গৃহস্থলি চলছে এখানে।সওদাগররা বসেছেন মনোহরি মালপত্তর নিয়ে।এই সাম্রজ্যের রাজাধীরাজরা এই সময় এখানে থাকতেন।১৩০০ শতাব্দিতে এই কেল্লা আক্রমণ করেছিলেন আলাউদ্দীন খলজী।কেল্লার তিন স্তর বিশিষ্ট প্রতিরক্ষা ভেঙে শত্রুরা ঢুকে পড়ে কেল্লায়।বীর রাজপুতদের রক্তে লাল হয়ে ওঠে এই সোনার পুরী।রাজমহল ও আক্রান্ত হয়েছিল।তখন পুরনারীরা বেছে নেন স্বেচ্ছা মৃত্যু। শত্রুদের হাতে মৃত্যু অপমানিত হওয়ার আগেই রাজনারীরা একসঙ্গে আত্নহত্যা করেন।নয় বছর পরে কেল্লা আবারও রাজপুতদের হস্তগত হয়।২০০ বছর পরে মোগল সম্রাট হুমায়ুনের দ্বারাও আরেক বার আক্রান্ত হয়েছিল এই কেল্লা।কী আশ্চর্য্য কারুকাজ করা পুরোটা।এই কেল্লা থেকে পুরো জয়শালমীর শহর দেখা যায়।

গাদি সাগর হ্রদ : একটি মনুষ্যসৃষ্ট জলাধার জেসলমার, রাজস্থানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আকর্ষণগুলির মধ্যে একটি।নগর প্রাচীরগুলির দক্ষিণ-পূর্বতম এই সুন্দর ট্যাংকটি 1965 সাল পর্যন্ত জেসলমারের অত্যাবশ্যকীয় পানি সরবরাহ ছিল এবং এর গুরুত্বের কারণে এটি অনেক ছোট মন্দির এবং মন্দিরগুলির দ্বারা ঘিরে ছিল। এই ট্যাংকটি 1367 সালে মহারাওয়াল গাদসি সিং কর্তৃক নির্মিত হয়েছিল, এটি প্রাকৃতিক অবতরণের সুবিধা গ্রহণ করে যা ইতোমধ্যে কিছু পানি ধরে রেখেছে। শীতকালে এটি একটি জলপ্রপাত প্রিয়, কিন্তু বর্ষার আগে প্রায় শুকিয়ে যেতে পারে।

পটওয়ান কি হাভেলি : পটওয়ান জি কি হাভেলি স্থাপত্যের একটি আকর্ষণীয় অংশ এবং জেসলমারের হাভেলীদের মধ্যে এটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এটি ঠিক দুটি কারণে, প্রথমত এটি হলেন প্রথম জেলার জৈলেমারে এবং দ্বিতীয়ত, এটি একক হাভেলি নয়, তবে 5 ছোট হাভেলিগুলির একটি ক্লাস্টার। এই হাভেলিদের মধ্যে প্রথমটি গুয়ানানচাঁদ পাটোয়ার দ্বারা 1805 সালে কমিশন এবং নির্মিত হয়েছিল এবং এটি বৃহত্তম এবং সবচেয়ে দর্শনীয়। বিশ্বাস করা হয় যে, পাটওয়া একজন ধনী ব্যক্তি ছিলেন এবং তাঁর সময়ের বিখ্যাত ব্যবসায়ী ছিলেন। তিনি সামর্থ্য দিতে পারতেন এবং এইভাবে তাঁর 5 সন্তানের প্রত্যেকের জন্য পৃথক গল্প নির্মাণ করার আদেশ দেন। এই 50 বছর মেয়াদে সম্পন্ন হয়। সমস্ত পাঁচটি বাড়ি 19 শতকের প্রথম 60 বছরে নির্মিত হয়েছিল।

সলিম সিং কি হাভেলি : 1815 সালে রাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর সলিম সিং দ্বারা নির্মিত হয়েছিল, যখন জেসলমার রাজধানী ছিল। এই প্রাসাদটি সিমেন্ট এবং মর্টারের সাহায্যে তৈরি করা হয়নি- পাথরগুলি শক্তিশালী লোহার রডগুলির সাথে সংযুক্ত।
এই প্রাসাদটি তার স্বতন্ত্র স্থাপত্যের জন্য বিখ্যাত, কারণ এটি 38 টি সুন্দরভাবে নকশাকৃত বালকনি। এই প্রাসাদ স্থাপত্য স্থাপত্য ময়ূর দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়। তার সময়ের সবচেয়ে উচ্চাভিলাষী নির্মাণ এক, হাভেলি এত মহৎ, যে তার যুগে শাসক এর ঈর্ষা এমনকি আমন্ত্রিত।

বাদা বাগ : জয়সালমের শহর থেকে 6 কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এর বাগ একটি সুন্দর জায়গা যে 16 থেকে রাজকীয় পরিবারের বিভিন্ন cenotaphs ঘর হয় তম থেকে 20 শতকের তম শতাব্দী। এটি একটি বাগান, একটি ট্যাংক, একটি বাঁধ এবং গোভার্ডন স্তম্ভ (স্তম্ভ) মত আরো অন্যান্য আকর্ষণও বজায় রাখে। বাদা বাগ একটি বিশাল বাঁধ, একটি ট্যাংক এবং এটির আশেপাশের কক্ষপথের একটি গোষ্ঠী। মহারাজা জয় সিং জুনিয়র এই রাজ্যে মহাজাগতিক বাঁধ নির্মাণ করেছিলেন 16 ই মেশতাব্দীর। এই স্থানটিতে প্রধান আকর্ষণগুলি রাজকীয়তার জন্য নির্মিত সানোটফগুলি, যা থেকে শুরু করে মহারাজা জয় সিংয়ের জন্য। শেষ কণ্ঠ মহারাজা জাওয়াহার সিংয়ের জন্য নির্মিত হয়েছিল এবং অসম্পূর্ণ রয়ে গেছে। স্থানীয় স্থাপত্যশৈলী যা স্থানীয়ভাবে ছত্রিস নামে পরিচিত, তা সুন্দর স্থাপত্য ও জটিল কভারিংয়ের জন্য সমগ্র দেশের পর্যটকদের জন্য প্রধান আকর্ষণ।

অমর সাগর লেক :
অমর সাগর একটি ছোট এবং সুন্দর হ্রদ এবং এটি একটি 17 তম শতকের প্রাসাদের পাশে অবস্থিত। মহারাওয়াল আখাইয়া সিং তাঁর পূর্বসূরি অমর সিংয়ের সম্মানে এই প্রাসাদটি নির্মাণ করেছিলেন। প্রাসাদের পাশে রয়েছে অমর সাগর লেকের দিকে অগ্রসর একটি বড় সিঁড়ির প্যাভিলিয়ন। এই হাভেলি অ্যাপার্টমেন্টের প্যাটার্নে নির্মিত হয়েছে। অমর সাগর একটি পাঁচটি গল্প উচ্চ হাভেলি এবং এটির মুরালগুলির জন্য বিখ্যাত।
বাদা বাগ থেকে ফেরার অথবা যাওয়ার পথে দেখে আসতে পারেন লেকটি। এই লেকটার সাথে অনেক স্মৃতি জড়িত আমার। আমার খুব মূল্যবান ২ টা জিনিস নষ্ট হয়ে গিয়েছিলো।

আমি মোটরবাইক ভাড়া নিয়ে ঘুরেছিলাম শহরের আশেপাশে। ১ দিন এর জন্য ভাড়া ৫০০-১০০০ রুপি কোন বাইক নিবেন তার উপর নির্ভর করে। স্কুটি ৩০০-৪০০ রুপি। তেল আপনার নিজের নিতে হবে আলাদা। আপনারা চাইলে গাড়ি অথবা অটো ভাড়া করে ঘুরতে পারেন অথবা হোটেল থেকে প্যাকেজ নিতে পারেন।

রেগিস্তান / থার :
জয়সালমীরের মূল আকর্ষণ রেগিস্তান অথবা থার মরুভুমি। শহর জেসলমারের কাছ থেকে 42 কিলোমিটার দূরে অবস্থিত স্যাম স্যান্ড ডুনস .নিশ্চিতভাবেই জেসলমারের সবচেয়ে ভাল প্রস্তাবিত স্থান। সূর্যাস্তের সুদূরপ্রসারী ধোঁয়া, উষ্ণ কাঁটাঝোপের সাথে উট সওয়ারি এবং সূর্যাস্তের ক্ষুদ্রতম দিগন্তগুলি একসঙ্গে একটি আনন্দদায়ক হেন্টারস্ক্যাপে ফেলে দেয়। রাজস্থানী লোকের গ্রামীণ সংস্কৃতিকে চিত্রিত করে গ্রাফিক্সের দেহাতি এবং মাটির সংগীত এবং লোক নাচ মিস করবেন না।
রাতে ক্যাম্পিং করে মরুভূমির মধ্যে থাকতে পারবেন এইখানে। অনেক রিসোর্ট আছে এইখানে। পাশাপাশি জীপ্ সাফারি এবং উঠ সাফারি ও করতে পারবেন। এবং অবসসই সূর্যাস্ত এবং সূর্যোদয় দেখবেন মরুভুমি তে। এইটা আপনার জীবনের সব থেকে সুন্দর একটা মুহূর্ত হবে।
হোটেল থেকেই অথবা বাহির থেকেই আপনারা প্যাকেজ নিয়ে চলে আসতে পারবেন। ১৫০০-৫০০০ পর্যন্ত হতে পারে আপনি কি কি করবেন তার উপর নির্ভর করে।

Source: Imran Khan Ozil <Travelers of Bangladesh (ToB)

Share:

Leave a Comment