স্বল্প খরচে ভ্রমন পিয়াসীদের সিকিম ভ্রমনের প্রোয়োজনীয় কিছু তথ্য
স্বল্প খরচে ভ্রমন পিয়াসীদের সবারই সিকিমে ভ্রমন করার সুপ্ত বাসনা রয়েছে। আমি আজ থেকে কিছু দিন আগে থেকেই সিকিম যাওয়ার স্বপ্ন দেখে আসছিলাম, কিন্তু সিকিমে আইনগত ভাবে প্রবেশের ক্ষেত্রে নানা জটিলতা থাকায় তা সম্ভব হয়নি। বিগত ২১ শে নভেম্বর, ২০১৮ তারিখে ভারত সরকার সিকিম ভ্রমনে বাংলাদেশীদের উপর নিষেধাজ্ঞা তুলে দিলে অনেক ভ্রমন পিয়াসী মানুষই ভীড় জমায় যমুনা ফিউচার পার্কের ইন্ডিয়ান হাই কমিশনে। কিন্তু ইন্ডিয়ান হাই কমিশনের ওয়েব-সাইটে পর্যাপ্ত তথ্য ও সুস্পষ্ট নির্দেশনা না থাকায় অনেকেই ভুক্তভোগী হয়েছেন আমাদের মতো। কেউ অনুমুতি পান নি, কারো পাসপোর্ট ডেলিভারি পেতে লম্বা সময় লেগেছে। কেউ জানতেন না ভারতীয় ভিসা আবেদনের সাথেই পার্মিশনের ফরম জমা দিতে হয় নাকি পরে দিতে হয়, ইত্যাকার নানা সমস্যার পড়ে সিকিম যাওয়ার বিষয়টি জটিল হয়ে গিয়েছে। আমরাও এমন ভুক্তভোগী হয়ে বেশ কিছু বিষয়ে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি, যা আপনাদের সাথে শেয়ার করছি যেন আপনাদের কোন প্রকার ভোগান্তিতে পড়তে না হয়।
প্রথম পরামর্শঃ যদি ভিসা নিয়ে না থাকেন তবে নতুন ভিসা নেওয়ার ক্ষেত্রে চ্যাংরাবান্ধা বা ফুলবাড়িয়া যে কোন একটি অথবা দুটো পোর্টই উল্লেখ করতে পারেন। তবে বলে রাখি চ্যাংরাবান্ধা থেকে ফুলবাড়িয়া দিয়ে শিলিগুড়ি যেতে প্রায় তিন ভাগের এক ভাগ সময় লাগে এবং খরচ ও হয় কম। তাই ফুলবাড়িয়াই প্রেফারেবল।
দ্বিতীয় পরামর্শঃ যমুনা ফিউচার পার্কের ইন্ডিয়ান হাই কমিশনের থেকে সিকিম যাওয়ার পার্মিশন নেয়ার কোন প্রয়োজন নেই। কারন এতে আপনার টাকা (৩০০ টাকা) ও অনেক সময় নষ্ট হবে। আপনি চাইলে সরাসরি Silliguri ,Sikkim Nationalised Transport বা ঢুকবার পথে Rangpo চেকপোষ্টে ইনার লাইন পারমিট নিতে পারবেন। এজন্য আপনার বাড়তি কোন টাকা বা সময় নষ্ট হবে না। কেবল পার্মিশনের জন্য প্রয়োজন হবে ২ কপি ছবি, পাসপোর্ট ও ভিসার ২ টি করে ফটোকপি। ২০ মিনিটের মধ্যে আপনি ইনার লাইন পার্মিট পেয়ে যাবেন। যেটি খুব যত্ন সহকারে আপনাকে পুরো ভ্রমন সময়ে সাথে সাথে রাখতে হবে। আর ফিরে আসার সময় অবশ্যই Rangpo চেকপোষ্টে অবহিত করে আসবেন যে আপনি সিকিম ত্যাগ করছেন। না হলে তাদের রেকর্ডে আপনি ব্লাক লিষ্টেড হয়ে থাকতে পারেন, এবং আপনি অন্যান্য বাংলাদেশী ট্যুরিষ্ট দের সম্পর্কে একটি খারাপ অভিব্যাক্তি রেখে আসতে পারেন।
Rangpo ফরেনার ইনফরমেশন সেন্টারের ফোন নম্বর হলোঃ
+৯১ ৩৫৯২ ২০৯ ০৯০
এটি খোলা থাকে সকাল ৮ টা থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত। তবে সন্ধ্যা ৭ টার ভেতরে পৌঁছে যাওয়াটা রিস্ক-ফ্রি।
তৃতীয় পরামর্শঃ ভ্রমন কারীর কিছু ডকুমেন্ট কমপক্ষে ১০ কপি করে রাখুনঃ এগুলো হলো পাসপোর্ট সাইজের ছবি ১০ কপি, পাসপোর্ট ও ভিসার ১০ টি করে ফটোকপি। এগূলো বাংলাদেশ থেকে নিয়ে যাবেন, নতুবা সিকিমে প্রতি কপির জন্য আপনাকে প্রায় তিন গুন পয়সা গুনতে হবে। কেবল মাত্র ইনার লাইন পার্মিট গ্যাংটকে গিয়ে ১০ কপি করিয়ে নিবেন।
একটি জরুরী বিষয় বলে রাখি, সেটি হলোঃ ইনার লাইন পার্মিট শুধুমাত্র গ্যাংটকে প্রবেশের পার্মিশন, কিন্তু আপনি যদি গ্যাংটকের বাইরের অন্যান্য ট্যুরিষ্ট স্পট গুলো তে যেতে চান তাহলে আপনাকে প্রতিটি জায়গায় যাওয়ার জন্য প্রতিটি ডকূমেন্ট এর কমপক্ষে ২ টি সেট ট্যুরিষ্ট অফিসে জমা দিতে হবে। এবং এ কাজটি আপনি একা করতে পারবেন না। এজন্য আপনাকে অবশ্যই সিকিম সরকার অনুমোদিত কোন ট্যুর অপারেটর এর সাহায্য নিতে হবে এবং অবশ্যই একজন গাইড নিতে হবে। আর প্রতিটি স্পটে পার্মিশনের জন্য আপনাকে আগের দিন ট্যুরিষ্ট অফিসে ডকুমেন্ট গুলো ট্যুর অপারেটরের মাধ্যমে জমা দিতে হবে। আগের দিন জমা দিলে আপনি পরের দিন পার্মিশন পাবেন। আর পার্মিশন পাওয়ার জন্য আপনি যে গাড়িতে করে যাচ্ছেন সেই গাড়ির নম্বর ও ড্রাইভারের বৃত্যান্ত থাকতে হবে, যে কাজটি আপনার ট্যুর অপারেটর করে দেবে।
চতুর্থ পরামর্শঃ সিকিম ট্যুরের ক্ষেত্রে একটি গ্রুপে যাওয়াটা ভালো, এতে করে আপনার গাড়ি ভাড়া ও অন্যান্য খরচ কম পড়বে। গ্রুপের সাইজ ৪ থেকে সর্বোচ্চ ৮ জন হলে ভালো হয়। ৪ জন হলে টাটা ইনোভা টাইপ ছোট গাড়িতে ভ্রমন করতে পারবেন আর ৮ জন হলে টাটা সুমো বা বলেরো এসইউভি তে ভ্রমন করতে পারবেন। এতে করে খরচ কম হবে। তবে যেহেতু পাহাড়ি পথ, তাই ছোট গাড়ি অপেক্ষা টাটা সুমো বা বলেরো এসইউভি তে ভ্রমন করা অনেক নিরাপদ।
পঞ্চম পরামর্শঃ আমরা হোটেল বুকিং এর ক্ষেত্রে আজকাল বিভিন্ন অনলাইন সাইটে গিয়ে বুকিং দিয়ে থাকি। যেগুলোতে আসলে অনেক বেশি খরচ পড়ে যায়। এই সাইট গুলো কৃত্রিম সংকট তৈরী করে হোটেল প্রাইস বাড়িয়ে আপনাকে পানিকড করে তুলবে। তাঁর থেকে জায়গায় পৌঁছে একটু সময় নিয়ে নিজে দামাদামি করে হোটেল নিজ চোখে দেখে নিয়ে নেয়াটাই ভালো। আমরা প্রথমে অনলাইনে বুকিং দিয়ে সেটি ক্যানসেল করে গ্যাংটকে পৌঁছে হোটেল ঠিক করি। এতে করে আমাদের হোটেন ভাড়া প্রায় অর্ধেক এ হয়ে গিয়েছিলো।
ট্যুর অপারেটরঃ আপনারা যে হোটেল এ থাকবেন সে হোটেল থেকেই আপনাদের কাছে ট্যুর প্যাকেজ এর অফার করবে। অথবা আপনি চাইলে বাইরের ট্যুর অপারেটরের থেকেও ট্যুর এরেঞ্জ করিয়ে নিতে পারেন। আমরা প্রথমে আমাদের হোটেল থেকে একটি ট্যুর প্লান নিয়েছিলাম যেটি বেশ ব্যায়বহুল ছিল। আমরা যে কোন একটি কারনে সেটি আর নেইনি।
source: Shuvo Islam <TOB helpline