হাওয়া মহল ভ্রমণ সম্পর্কে কিছু ধারণা
হাওয়া মহল (ইংরেজী অনুবাদ: “প্যালেস অফ উইন্ডস” বা “প্রাসাদ অফ বাতি”) ভারতের জয়পুর শহরের একটি প্রাসাদ। এটি লাল এবং গোলাপী বেলেপাথর দ্বারা নির্মিত হয়েছে। প্রাসাদটি সিটি প্যালেস প্রান্তে অবস্থিত, এবং জিনানা, বা মহিলাদের কক্ষ পর্যন্ত প্রসারিত।
ভবনটি ১৭৯৯ সালে মহারাজা সাওয়াই প্রতাপ সিং দ্বারা নির্মিত হয়েছিল। তিনি খেত্রীয় মহলের অনন্য কাঠামোর দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন এবং তিনি এই ঐতিহাসিক প্রাসাদটি নির্মাণ করেছিলেন। এটি লাল চাঁদ উস্তাদ দ্বারা নকশা করা হয়েছিল। এর অনন্য পাঁচটি বহির্ভাগের ৯৫৩ টি ছোটো দরজার একটি মৌচাকের সমতুল্য, যা জোরোখাস নামে পরিচিত। হাওয়া মহলের মূল উদ্দেশ্য ছিল রাজকীয় মহিলারা দৈনন্দিন জীবন এবং উত্সব উদযাপন করার জন্য, যা তারা রাস্তায় নিখুঁতভাবে পালন করতে পারত না, কারণ তারা “পর্দা” প্রথার কঠোর নিয়মানুবর্তিতা পালন করতো, যা তাদেরকে প্রাসাদ ছাড়া জনসাধারণের মধ্যে উপস্থিত হতে নিষেধ করেছিল। [১] এই স্থাপত্য বৈশিষ্ট্যটির কারণে ভেনটুয়ারি প্রভাব (ডাক্তার বায়ু) থেকে শীতল বাতাসের প্রবেশ ঘটে প্রাসাদে, যাতে গ্রীষ্মকালে উচ্চ তাপমাত্রায় পুরো এলাকাটি আরও সুন্দর করে তোলে। [১][২][৩] অনেক মানুষ রাস্তার দৃশ্য থেকে হাওয়া মহলকে দেখে এবং মনে করেন যে এটি প্রাসাদের সামনে, কিন্তু বাস্তবিকই এটিই কাঠামোর পিছনের অংশ। [৪]
২০০৬ সালে, মহালের সংস্কার কাজ করা হয় প্রায় ৫০ বছর পর, আনুমানিক ৪৫৬৫ মিলিয়ন টাকা খরচে স্মৃতিস্তম্ভটি উজ্জ্বল করার জন্য। [৫] কর্পোরেট সেক্টর জয়পুরের ঐতিহাসিক স্মৃতিস্তম্ভ সংরক্ষণের জন্য এবং ভারতের একক ট্রাস্টকে রক্ষা করার জন্য হওয়া মাহালকে স্বীকৃতি দেয়। [৬] প্রাসাদ একটি বিশাল জটিল একটি বর্ধিত অংশ। পাথর-খোদিত পর্দা, ছোট ক্যাসেজ এবং খিলানযুক্ত ছাদের এই জনপ্রিয় পর্যটক স্থানটির প্রধান বৈশিষ্ট্য।
স্থাপত্য :
হাওয়া মহল হল পাঁচতলা র একটি প্রাসাদ, যেটি তার প্রধান ভিত্তি থেকে উঁচু ৫০ ফুট (১৫ মি) উচু। মহলের সবচেয়ে উপড়ের তিনটি তলা একক ভাবে একটি করে কক্ষ দ্বারা গঠিত, নীচে প্রথম ও দ্বিতীয় তলার সামনে উন্মুক্ত স্থান আছে, যা প্রাসাদের পূর্ব অংশে তৈরি হয়েছে। প্রাসাদের সম্মুখভাগের অংশ, যা প্রাসাদের সামনে প্রধান রাস্তা থেকে মৌচাকের মত দেখায়। সম্মুখভাগের প্রতিটি অংশে ছোট দড়জা এবং সুন্দর বেলে পাথরের জানালা, ফিনিয়াল ও গম্বুজ তৈরি করা হয়েছে। এই অসাধারণ প্রাসাদটি আংশিক অষ্টভুজাকৃতির কাঠামো গঠন করে, যা সারা বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন প্রাসাদে ব্যবহার করা হয়। নির্মাণের পিছনের দিকের অভ্যন্তরের অংশ পৃথক পৃথক প্রয়োজনীয়তা অনুযায়ী ঘর তৈরি করা হয়েছে যার নির্মাণ খুব কম অলঙ্করণ যুক্ত এবং গলিগুলির রয়েছে। এই বাড়ির শীর্ষ পর্যন্ত পর্যন্ত একই রকম হয়।
হাওয়া মহল যাবার উপায় :
হাওয়া মহল যাওয়ার জন্য আপনাকে অবশ্যই জয়পুর যেতে হবে। জয়পুর যেতে হলে আগে আপনাকে যেতে হবে কলকাতা। অবশ্য অন্য জায়গা থেকেও ট্রেন অথবা প্লেনে করে যাওয়া যায়।
কলকাতার হাওড়া স্টেশন থেকে ১১.৩৫ এ একটা ট্রেন জয়পুর যায়। যেতে সময় লাগে প্রায় ২৫ ঘন্টা। স্লীপার শ্রেণীতে ভাড়া পড়বে ৬২৫ রুপি আর এসি ৩ তে ১৬৫৫ রুপি।
এছাড়া শিয়ালদাহ স্টেশন থেকেও একটা ট্রেন জয়পুর যে ১০.৫৫ এর সময়। ভাড়া একই রকম।
কলকাতা থেকে প্লেনে ভাড়া পড়বে ওয়ান ওয়ে ৩০০০-৪৫০০ রুপি পর্যন্ত।
এছাড়া কলকাতা থেকে দিল্লী হয়ে দিল্লী থেকে ট্রেন অথবা বাসে করেও জয়পুর যাওয়া যায়।
জয়পুর পৌঁছানোর পর আপনার হোটেল থেকে হাটা দুরুত্বেই হাওয়া মহল। হাওয়া মহল দিনে এবং রাতে অনেক সুন্দর। তাই দিনে এবং রাতে দুই সময়েই দেখা সম্ভব। হাওয়া মহলে ঢুকার টিকেট ফরেনার দের জন্য আগে ছিল ৫০ রুপি , এখন সেটা মনে হয় ২০০ রুপি।
জয়পুরে ঘুরে দেখার মতো অনেক কিছু আছে। হাওয়া মহলের পাশেই আছে সিটি প্লেস , জান্তার মানতার।
জল মহলে সন্ধ্যার পর যেতে পারেন। অনেক ভালো লাগবে। অনেক শান্তির একটি জায়গা। সন্ধ্যার পর অনেক বাতাস থাকে। স্ট্রিট ফুড খেতে খেতে অনেকটা সময় আড্ডা দিয়ে কাটিয়ে দেয়া যায়।
শহর থেকে একটু দূরে রয়েছে অনেকগুলো ফোর্ট। যা জয়পুর এর প্রধান আকর্ষণ। যেমন আম্বার ফোর্ট ,নাহারগাহ ফোর্ট ,জায়গাহ ফোর্ট ,শিস মহল , জল মহল। ফোর্ট গুলো ভালোভাবে ঘুরতে ১ দিন লাগবে। যত সময় নিয়ে ফোর্ট গুলো ঘুরবেন ততো বেশি উপভোগ করবেন এবং অনেক ইতিহাস জানতে পারবেন।
খুব কম খরচেই বাংলাদেশ থেকে জয়পুর এবং রাজস্থান প্রদেশের অন্য শহর গুলো ঘুরে আসা যায়।
ফোর্ট গুলো নিয়ে অন্য একদিন লিখবো।
থাকা এবং খাওয়া :
বাজেট যত কম হোক ওর বেশি হোক সব ব্যবস্থাই আছে জয়পুরে। ১০০ রুপিতে ডর্ম থেকে শুরু করে ৫ তারকা হোটেল সব আছে।
খাওয়া দাওয়ার বেপারেও একই।
জয়পুর অনেক পরিষ্কার একটি শহর। তাই পরিবেশ সম্পর্কে সচেতন থাকবেন এবং যেখানে সেখানে ময়লা ফেলা থেকে বিরত থাকবেন।
Source: Imran Khan Ozil <Travelers of Bangladesh (ToB)