হাম হাম ঝর্না
গত ২৫ আক্টোবর সিদ্ধান্ত হল শ্রীমঙ্গল যাব হাম হাম ঝর্না দেখতে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্ল্যান হল নভেম্বরের ২ তারিখ বৃহস্পতিবার রাতে রওনা দেব আমি আর সাইদ সহ মোট ৭ জনের টিম। ২ তারিখ সকালে ঢাকা থেকে মৌলভীবাজার রাত ১১:৩০ মিনিটের শ্যামলী বাসের টিকেট কাটা হল।
২ তারিখ রাতে টিমের সবাইকে নিয়ে রওনা হলাম, বাস ভোর ৫ টায় আমাদের শ্রীমঙ্গল নামিয়ে দিল। বাস স্ট্যান্ডে নাস্তা করে ২ টা সিএনজি ভাড়া করা হল সারা দিনের জন্য। এক সপ্তাহ আগে শেষ বৃষ্টি হয়েছে তাই হাম হাম ঝর্নায় মোটামুটি পানি থাকবে আর জোঁকও কম থাকবে। সিএনজি নিয়ে সকাল ৮টায় আমরা পৌছে গেলাম কলাবন পাড়ায় এখানে একটা দোকানে দুপুরের খাবারের অর্ডার দিয়ে দিলাম। একজন গাইড কে নেয়া হল আমাদের সাথে আর বাচ্চাদের কাছ থেকে লাঠিনিয়ে আমরা হাটা শুরু করলাম হাম হাম ঝর্নার উদ্দেশ্যে। প্রায় ৩০ মিনিট গ্রামের চা বাগানের রাস্তা দিয়ে হাটতে হাটতে চলে আসলাম নাম এন্ট্রির স্থানে এখানে গ্রুপের নাম আর গাইড এন্ট্রি করে পাহাড়ি রাস্তায় হাটা ধরলাম। হাম হাম যাবার পথে মোট ৭ টি সাকো পার হতে হয় ট্রেইল মোটামুটি নির্দিষ্ট তবে জোঁকের আক্রমণ ছিল সারা রাস্তাতেই, শুকনাতেই এই অবস্থা বৃষ্টি হলে কি হত তা বলার অপেক্ষা রাখে না। হাম হাম ঝর্নার যাওয়ার জন্য কয়েকটি পাহাড় পারি দিতে হয় যা ট্রেকিং এ অনভিজ্ঞ হলে কিছুটা ভোগাবে তবে আহামরি কঠিন কিছু নয়। শেষ পাহাড় থেকে নামার রাস্তাটা খুবই খাড়া আর পিচ্ছিল যদিও পা ফেলার জন্য স্টেপ করা ছিল আমাদের কয়েক জন পরতে পরতে বেচে যায়। এর পর শুরু হয় ঝিরি পথ এর সৌন্দর্য অবর্ননিয়, তাই আমি সৌন্দর্য ক্যামেরা বন্দি করতে গিয়েছিলাম ফলাফল আছাড় খাওয়া। ঝিরি পথের রাস্তা পাহাড়ের মতই কিছুটা কঠিন। সকাল ১০:৩০ নাগাদ আমরা পৌছে গেলাম ঝর্নায় সে এক অপরূপ ঝর্না, আমাদের একদল চলে গেল ঝর্নার উপরে আর আমি থেকে গেলাম নিচে ঝর্নার সৌন্দর্য ক্যামেরা বন্দি করতে। আগের সপ্তাহে বৃষ্টি হওয়ার কারনে ঝর্নাতে পানি ভাল ছিল। আমাদের টিম ঝর্নার উপর থেকে ফেরত আসলে দেখা গেল সবাইকেই কোন না কোন ভাবে জোঁকে কামড়েছে। ঝর্নার পানিতে ইচ্ছে মত দাপিয়ে আমরা দুপর ১১:৩০ নাগাদ ফিরতি পথে হাটা ধরলাম। ঝিরি পথটা ভাল ভাবে আসতে পারলেও পাহাড় বাইতে সবারই কষ্ট হচ্ছিল এতে আমাদের কিছুক্ষন পর পর থেমে বিশ্রাম নিতে হচ্ছিল শেষ পর্যন্ত ১:৩০ নাগাদ আমরা সমতলে চলে আসলাম। চা বাগানের ভিতর দিয়ে যাওয়ার সময় দেখলাম চা পাতা সংগ্রহের দৃশ্য যা উপরি পাওনা। দপুর ২ টা নাগাদ আমারা যে দোকানে খাবারের অর্ডার করেছিলাম সেখানে পৌছে গেলাম, আমাদের সঙ্গে ৩ জন আপু ছিল তাই সেখানেই একটা বাসাতে ফ্রেশ হওয়ার ব্যবস্থা করা হল। এর পর দুপুরে খওয়ার পালা ম্যানু ছিল ভাত, আলু ভর্তা, মুরগী, ডাল। প্রচন্ড ক্ষুধায় খাবার গুলোকে অমৃত মনে হচ্ছিল। খাবার শেষ করে সিএনজি করে রওনা হলাম লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের উদ্দেশ্যে।
লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের সামনে যখন নামলাম তখন ৪:৩০ বাজে বেশিক্ষন সময় পাওয়া যাবে না তাই টিকিট কেটে ঢুকে পরলাম জাতীয় উদ্যানের ভিতরে। বিকেল হয়ে যাওয়ায় কিছু বানর আর হনুমানের দেখা পেলাম। তার পর হেটে চলে গেলাম রেল লাইনের কাছে শুনতে পেলাম দূর থেকে ট্রেন আসছে, বনের ভিতর দিয়ে ট্রেন যাওয়া দেখতে ভালই লাগল। সন্ধ্যা হয়ে যাওয়ায় আমরা উদ্যানের ভিতর থেকে বের হয়ে আসলাম, বনের ভিতর হাটার জন্য আর একটু সময় পেলে ভাল হত। এবার ফিরতি পথে সিএনজি তে করে চলে আসলাম শ্রীমঙ্গল শহরে। এখানে ঢাকায় ফেরার বাসের টিকেট করলাম, টিকেট ছিল রাত ১২:৩০ মিনিটের হাতে প্রায় ৫ ঘন্টা সময়।
সময়কে কাজে লাগানোর জন্য চলে গেলাম বধ্যভূমি রেস্টুরেন্টে, সবাই মিলে আড্ডা আর চা খাওয়া হল। ৯:৩০ নাগাদ বের হয়ে চলে আসলাম পানসী রেস্টুরেন্টে সবাই মিলে ভাত ভর্তা অর্ডার করলাম, খাবার খুবই মজা আর ঝাল ছিল তাই সবাই ঝাল কাটাতে দই খেলাম।
এর পর ফেরার পালা, কাউন্টারে বাস আসতে লেট করল কিছুখন তবুও রাত ১ টায় বাস ছাড়ে আসে ভোর ৪:৩০ টা নাগাদ ঢাকা চলে আসি।
হামহাম ঝর্না এবং লাউয়াছড়া ঝর্না একসাথে দেখতে হলে কিছুটা সকাল সকাল শুরু করতে হবে, আর সকালে লাউয়াছরা জাতীয় উদ্যান দেখে তার পর হাম হাম ঝর্না দেখতে গেলে সব থেকে ভাল হয়।
ঢাকা থেকে স্নেকস জাতীয় যে খাবার আমরা নিয়েছিলাম তার প্যাকেট আমরা ঢাকা ফেরত নিয়ে এসেছি।
বিঃ দ্রঃ ঝর্নায় ঘুরতে গিয়ে কোন ময়লা, কাপড় বা প্লাস্টিক ফেলে ঝর্না এবং ঝিরির পরিবেশ নষ্ট করবেন না।
Post Copied From:Sifat Ahmed>Travelers of Bangladesh (ToB)