পাহাড়ের নতুন সৌন্দর্য্য- দ্বীপগ্রাম কাট্টলি বিল

নিঃশব্দের জলাভূমি আর নীল আকাশের নিচে জেগে আছে কাট্টলি বিলের অনেকগুলো দ্বীপ । কাপ্তাই লেকের বিস্তৃত জলরাশির মাঝখানে এই দ্বীপগুলোতে গড়ে উঠেছে মানুষের বসতি । মৎস্য শিকারকে কেন্দ্র করে দ্বীপের বুকে গড়ে উঠেছে বাজার । জেলেদের নৌকা মেরামতের সরঞ্জাম আর শুটকি পল্লী গড়ে উঠেছে এই বাজারে । কাট্টলি বিলের দুরত্ব রাঙ্গামাটি সদর থেকে জলপথে প্রায় ৪ ঘন্টার – একমাত্র বাহন লঞ্চ বা দেশী বোট । আমাদের অবশ্য যাত্রাপথ ছিল লংগদু হয়ে । লংগদু থেকে কাট্টলি বিল দ্বীপের দুরত্ব প্রায় ২ ঘন্টার মত ।  সকালের কুয়াশা মোড়ানা স্নিগ্ধতাকে সঙ্গী করে মোটরবাইকে রওনা হলাম দিঘীনালা থেকে,আঁকা বাঁকা সরু পাহাড়ী পথ পেরিয়ে ১ ঘন্টায় পৌঁছে যাই লংগদু বাজারে । রাঙ্গামাটির পুরানো বাজারগুলোর মধ্যে অন্যতম লংগদু বাজার । পাশেই মায়ানী মুখ যেখানে কর্ণফুলীর উপনদী কাছালং মিশেছে । মায়ানী নদীর মুখে গড়ে উঠা মাইনী বাজার এই অঞ্চলের পুরাতন এবং প্রধান বাজার । বাজারের বেশীরভাগ ব্যবসায়ী বাঙালি । মায়ানী মুখ পেরিয়ে রাঙামাটির দিকে যেতেই সুমদ্র সদৃশ্ বিশাল জলরাশির বুকে দ্বীপের মত কাট্টলি বাজার । চারপাশে লেকের নীল জলরাশি জুড়ে শীতের আগমনী জানিয়ে দেয় মিষ্টি কুয়াশা । লেকের এই অংশজুড়ে মাছধরা নৌকার সারি । পানকৌড়ি আর নানা জাতের পাখির ঝাঁক বিলের চারপাশে। মূলত শীতের পাখি দেখতে কাট্টলি বিলে আগমন । মাছের প্রাচুর্যের কারনে কাট্টলি বিল পাখিদের কাছে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ছোট সরালি,টিকি হাঁস,বড় সরালি,মাথা মোটা টিটি,গাঙচিল,গাং কবুতর,চ্যাগা,চখাচখিসহ নানান প্রজাতির পাখির ঝাকে মুখরিত পরো বিল । দেশী বোটে করে রওনা হলাম লংগদু ঘাট থেকে- যাত্রী সংখ্যা ১২ জন । নীল জলরাশির বুক চিড়ে ,ঢেউ তুলে চলেছে ইঞ্জিনচালিত বোট । জল শুধু জল-পাড়ি যেন গেছে ভেসে,মাঝপথে শুধু ছোট ছোট দ্বীপ আর দূরে পাহাড়ের সারি । মাঝপধথর এই দ্বীপগুলোতে মাত্র ২/১ টা পরিবারের বসবাস ।বর্ষায় এসব দ্বীপ পানির নীচে থাকে তাই প্রত্যেক পরিবারের যোগাযোগের জন্য একটা করে নৌকা আছে । জলের জীবন দেখতে দেখতে চলেছি কাট্টলি বিলের দিকে । দেখি দূরের পাহাড়গুলোকে চুম বুলিয়ে নীল মেঘ অবারিত জলরাশিকে নিজের রঙে রাঙিয়ে দিয়ে ভেসে বেড়ায় । জলের বুকে মাঝে মাঝে ভেসে উঠে পরিযায়ী পাখির ঝাঁক । বেশ কয়েকবছর ধরে অতিথি পাখির সমাগম ঘটে কাট্টলি বিলে । এই বিলে পাখি শিকার কমে যাওয়ায় পরিযায়ী পাখির সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে ।পাখির ঝাঁক দেখলেই বোটের গতি কমানো হয় ,যাতে পাখি উড়ে না যায় ।  পাখি ঝাঁক দেখতে দেখতে দুপুর নাগাদ পৌছে যায় কাট্টলি বিলে । লেকের নীলাভ স্বচ্ছ ঠান্ডা জলে দীর্ঘ স্নান শেষে ৩-৪ পদের তাজা মাছ সমেত মধ্যাহ্ন ভোজ সারলাম বাজারের শাহজাহান ভাইয়ের দোকানে । পরিতৃপ্তির স্বাদ নিয়ে কাট্টলি বিল থেকে আবার যখন রওনা হলাম লংগদুর পথে ততক্ষনে সোনালী সূর্য সোনা রঙা আলোয় চরাচরকে মুড়িয়ে দিয়ে মুখ লুকিয়েছে পাহাড় ঘেষা লেকের জলে ।

যেভাবে যাবেন: কাট্টলি বিল যেতে হলে আপনাকে প্রথমে যেতে হবে রাঙ্গামাটি অথবা লংগদু উপজেলা সদরে । ঢাকা থেকে বিভিন্ন পরিবহনের বাস যায় রাঙ্গামাটিতে এবং রাঙ্গামাটি থেকে সকালে মারিশ্যা এবং লংগদুর উদ্দ্যেশে ছেড়ে যাওয়া লঞ্চগুলোতে করে কাট্টলি বিলে যাওয়া যাবে । সবচেয়ে ভাল হয়  আপনি যদি লংগদু হয়ে যান ,এক্ষেত্রে রির্জাভ দেশী বোট নিতে পারেন । ভাড়া ১২০০-১৫০০ টাকা পড়বে ।
প্রয়োজনীয় তথ্য: আপনি যদি সাঁতার না জানেন তবে পানিতে নামবেন না,লেকের পানি বেশ গভীর । লাইফ জ্যাকেট ব্যবহার করতে পারেন । কাট্টলি বিলে রাতে থাকার কোন সুযোগ নেই । বিকেলেই আপনাকে ফিরে আসতে হবে ।
খেয়াল করবেন : কাট্টলি বিলের পানি খুবই স্বচ্ছ নীলাভ । লেকের পানিতে কোন বোতল,প্যাকেট,প্ল্যাষ্টিক ইত্যাদি ফেলবেন না ।

Share:

Leave a Comment