বর্ষায় স্বরূপকাঠী

প্রস্তুত্তিঃ ১ টি ব্যাগ নিন। ভেজানোর জন্য কিছু জামা-কাপড়, রেইনকোট, ছাতা, তোয়ালে, গেঞ্জি, থ্রী কোয়ার্টার প্যান্ট যা ইচ্ছা নিন। লুংগি নিন (বদলানর জন্য)। সাতার না জানলে লাইফ জ্যাকেট।

বেড়িয়ে পড়াঃ

১ম দিনঃ ঢাকার যেখানেই থাকেন সোজা সদরঘাট চলে যান সন্ধ্যা ৬ টার মধ্যে। ৫ নম্বর প্লাটুন থেকে ঢাকা-হুলারহাট – ভান্ডারিয়া রুটের যেকোন লঞ্চে উঠে পড়ুন। বিলাসবহুল কিছু লঞ্চের নাম- রাজদূত ৭, অগ্রদূত প্লাস, রণদূত প্লাস। ভাড়াঃ- ডেকঃ ২৫০-৩০০ টাকা। কেবিনঃ- ৯০০ টাকা (সিঙ্গেল), ১৮০০ টাকা (ডাবল)। সিংগেল কেবিন ১ জনের জন্য হলেও ডেকের সমতূল্য ভাড়া দিয়ে যে কয়জন ইচ্ছা যেতে পারেন। ডাবল কেবিনের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। রাতের খাবার ইচ্ছা করলে লঞ্চে খেতে পারেন। খরচ হবে জন প্রতি ১২০-১৫০ টাকা। লঞ্চ ছাড়লে পড়ে লঞ্চের ছাদে চলে যান। রাতে নদীর সৌন্দর্য উপভোগ করুন। ( বেশী কিনারায় যাবেন না। )।

এবার কেবিনে ফিরে আসুন। কেবিন বয়কে বললে খাবার দিয়ে যাব। আর কেবিন বয়কে বলে রাখবেন ইন্দুরহাট নামিয়ে দিতে। এরপর রাত যেভাবে ইচ্ছা কাটিয়ে দিন। শান্তিতে ঘুম দিতে পারেন। আড্ডা দিতে পারেন।

( লঞ্চের ছবি দেখে ভয় পাবেন না। এটা ঈদের সময় বাড়ি ফেড়া মানুষের ঢল 😛 )

২য় দিনঃ ভোর ৬ টার দিকে আপনাকে ইন্দুরহাট লঞ্চ টার্মিনালে নামিয়ে দিবে। এবার একটা রিক্সা নিন। (হেটেও যেতে পারেন।) রিক্সাওয়ালাকে বলবেন বাজারে তরুনের দোকানে নিয়ে যেতে। তরুনের দোকানে নাস্তা করুন। মিষ্টি অবশ্যই

খাবেন ঐ দোকানের। না হলে অনেক কিছু মিস করবেন। ৪০-৫০ টাকা লাগবে। (আমার বাসা ওখানেই। বাড়িতে থাকলে আমাকেও জানাতে পারেন। বিল দিতে না চাইলে 😛 😛 😛 )

(কলেজ দিঘী)

খাওয়া শেষে কাউকে জিজ্ঞেস করুন মিয়ারহাট লঞ্চ টার্মিনাল কোথায়। টার্মিনালে গিয়ে সারাদিনের জন্য বোট ভাড়া করুন। টাকা বেশী চাইবে। দরাদরি করলে ৫০০-৭০০ টাকার মধ্যে সকাল থেকে দুপুরের জন্য পেয়ে যাবেন। তবে বেশী দরাদরি না করাই ভালো। তাহলে মাঝি আপনাকে সব যায়গা ঘুরিয়ে দেখাতে নাও পারে। মাঝিকে বলুন কুড়িয়ানা ঘুরিয়ে দেখাতে।

(ভাসমান গোলপাতার বাজার)

(ভাসমান কাঠের বাজার)

যাওয়ার পথে দেখতে পাবেন ছবির মত স্বরূপকাঠীর মানুষের প্রধান ব্যাবসা গোলপাতা আর ভাসমান কাঠের হাট। মাঝি আপনাকে সব যায়গায় ঘুরিয়েও দেখাবে। বাগান মালিকের অনুমতি নিয়ে বাগানে ঢুকে ঘুরতে পারেন। (ভুলেও অনুমতি না নিয়ে ঢুকবেন না। ঝামেলা করবে তাহলে অনেক) । ভাসমান পেয়ারা বাজার থেকে ইচ্ছে করলে পেয়ারা কিনতে পারেন।

(পেয়ারা বাগান)

দাম নিবে প্রতি কেজি ৮- ১০ টাকা। দুপুরের মধ্যে ফিরে আসেন।

স্বরুপকাঠী/ইন্দুরহাট বাজারে দুপুরের খাবার খান। খরচ হবে ১০০ টাকার মত। এবার খেয়ে কাউকে জিজ্ঞেস করলে কলেজ দিঘী দেখিয়ে দিবে। সেখানে কিছুক্ষন বিশ্রাম নিয়ে চলে যান সন্ধ্যা নদীর পাড়ে (যদি অই দিন ফেরার ইচ্ছা না থাকে)। নদীর পাড়ে সূর্যাস্ত উপভোগ করুন। রাতেও থাকতে পারেন কিছু সময়। নদী পার হয়ে ওপারে গিয়ে ঘুরে আসতে পারেন ছারছীনা দরবার শরীফ।

তবে বেশী রাত বাইরে না থাকতেই পরামর্শ দেব। রাতের খাবার দুপুরের হোটেলে খেয়ে আবার মিয়ারহাট বাজারে চলে আসুন। হোটেল ইফতি তে উঠে পড়ুন। থাকার অভিজ্ঞতা নাই তাই ভাড়া বলতে পারছি না। তবে ৩০০ টাকার মধ্যে পেয়ে যাবেন।

আর ঐ দিন ফিরে আসার প্লান থাকলে বিকাল সাড়ে চারটার ( ৪.৩০) মধ্যে ইন্দুরহাট লঞ্চঘাট চলে যান। ৫-৫.৩০ এর মধ্যে লঞ্চ ছেড়ে যায়।

৩য় দিনঃ সকাল সকাল উঠে পড়ুন। হোটেল ছেড়ে দিয়ে চলে যান খেয়াঘাট। ( কাউকে বললেই দেখিয়ে দেবে )। নদী পার হয়ে রিক্সা নিয়ে/ হেটে যেতে পারেন স্বরুপকাঠী বাস স্টান্ড। বাসে উঠে পড়ুন। কামারকাঠী জমিদার বাড়ি ঘুরে আসুন। সময় লাগবে ২ ঘন্টা।

২ ঘন্টার মধ্যে ফিরে এসে গুঠিয়ার টিকিট কেটে বরিশালগামী বাসে উঠে পড়ুন। (অবশ্যই ১১-১২ টার মধ্যে) ভাড়াঃ ৩০ টাকা। কন্ট্রাকটাররে বললে গুঠিয়া মসজিদ নামিয়ে দেবে। সেখানে নেমে মসজিদ কমপ্লেক্স ঘুরে দেখেন।

(গুঠিয়া মসজিদ কমপ্লেক্স)

সন্দেশ না খেলে পস্তাবেন। বাসার জন্য কিনেও নিতে পারেন। ২-১ ঘন্টা সেখানে ঘুরে ১০ টাকা অটো ভাড়া দিয়ে চলে যান দূর্গা সাগর। ১০ টাকা টিকিট কেটে ভিতরে ঢুকে পড়ুন। বিকাল ৫ -৬ টা পর্যন্ত ঘুরে দেখুন। এরপর ওখান থেকে বাসে করে চলে যান বরিশাল। বরিশাল বাসস্টান্ড থেকে রিক্সা/অটোতে করে চলে যান মুক্তিযোদ্ধা পার্ক। কিছুক্ষণ ঘুরে চলে আসুন বরিশাল লঞ্চ টার্মিনাল। কীর্তনখোলা, সুন্দরবন – ৭ টাইপ বড় কোন লঞ্চে উঠে পড়ুন। ভাড়াঃ ডেক- ২০০ কেবিন- ৮০০(সিংগেল), ১৬০০(ডাবল)। পরদিন সকালে ঢাকা।

না পড়লেও চলবেঃ

আমার ঘোরাঘুরির ইচ্ছা খুব বেশী। স্বরূপকাঠী আমার গ্রাম। এখানে অনেক কিছু দেখার মত আছে। কিন্তু কখনো এটাকে এত সুন্দর করে দেখিনি। কিছুদিন ধরে বিভিন্ন ট্রাভেল গ্রুপে স্বরূপকাঠীকে নিয়ে যেভাবে পোষ্ট দেখছি সেটা আসলেই গর্ব করার মত। আজ আমার সত্যিই গর্ব হচ্ছে। অনেকে দেখলাম আসতেও চাচ্ছে। অনেকে এসে বিভিন্ন সমস্যায়ও পড়েছে। যারা আমার গ্রামটাকে এততা ভালবেসে আসতে চাচ্ছে তাদের সমস্যার কথা না দেখলে আল্লাহও হয়ত আমাকে ক্ষমা করবেন না। তাই ভবিষ্যতে যারা আসতে চাচ্ছে তাদের সুবিধার কথা ভেবে লিখলাম। আমার জানা মতে কোন ভুল তথ্য আমি দেই নাই। লেখালেখির অভ্যাস আমার অতটা নাই। তাই গুছিয়েও লিখতে পারি নাই অতটা। গিয়ে কোন সমস্যায় পড়লে আমাকে জানাতে পারেন। যেকোন ভুল ত্রুটি ছোট ভাইয়ের মত ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

Share:

Leave a Comment