বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক, গাজীপুর (2015)

ট্যুর প্লান-১ঃ
শর্ট ডে ট্যুরঃ
বঙ্গবন্ধু সাফারী পার্ক, গাজীপুর !!!চান্স পেয়ে আজকেই ঘুরে আসলাম বঙ্গবন্ধু সাফারী পার্ক থেকে। পার্কের কাজ ৬০% শেষ হয়েছে, পুরোটা শেষ হবে ২০১৬ নাগাদ। নেহায়েত খারাপ লাগল না। তবে সাফারী পার্কের মূল আকর্ষণ – সাফারী কার, সেটা এখনও চালু হয়নি তবে সপ্তাহখানেকের মধ্যেই হয়ে যাবে। বাঘ সিঙ্গি মামারা তাই আপাতত খাঁচায় আটক আছেন।ঠিক এখন জায়গাটার যেই চেহারা, সেটাকে ইনফরম্যাল একটা চিড়িয়াখানা বললেই ভাল হয়। তবে খুব নিরিবিলি, এই যা শান্তি। চুপচাপ দাঁড়িয়ে প্রাণীগুলোকে দেখা যায়। তবে বাঙ্গালীর খাসলত তো আর পাল্টায় না। পার্কে ঢোকার সময় গেটের দারোয়ান বলেছিলো, পিস্তল নিয়ে ঢুকলে ঢোকেন কিন্তু কোন খাবার টাবার নিয়ে ঢোকা যাবে না। তারপরও কুমিরের পুকুরে, লিজার্ডদের খাঁচায় জুস আর পানির বোতল, বিস্কিটের প্যাকেট দেখে অবাক হতে হয়েছে, কষ্ট পেয়েছি তার চেয়েও বেশি। এভিয়ারীটা জটিল জায়গা। আমাজানের ম্যাকাও পাখিটা টিভিতেই দেখতাম, এইবার সুযোগ হলো ছুয়ে দেখার। তবে ঠোঁটের ধার দেখে ঘাড়ে নেয়া হলো না। হোয়াইট নেক ঈগল দেখে ভালোই লাগল, আর পেলিক্যান পাখি বেশিই সুন্দর। পার্কে সাফারী হবে বেসিক্যালী তিন রকমের। টাইগার-লায়ন সাফারী তো আছে, আফ্রিকান সাফারী আছে যেটা হবে মূলত জিরাফ, জেব্রা, ওয়াইল্ডবিস্ট আর জলহস্তীর সাথে। একটা এশিয়ান সাফারীও আছে, সেটা চালু হয়নি। বলা হচ্ছে এটা এশিয়ার বৃহত্তম সাফারী পার্ক। কাগজে কলমে কথাটা ঠিক, তবে আকর্ষণ কেমন সেটা ফুল সুইং এ চালু হলেই বোঝাযাবে।

যারা যেতে চানঃ পার্কের অবস্থানটি হলো বাঘের বাজার, ময়মনসিংহ রোড, শ্রীপুর, গাজীপুর।এখানে যেতে হলে দেশের যেকোন প্রান্ত থেকে গাজীপুর চৌরাস্তায় আসতে হবে। চৌরাস্তা মাওনা বা ময়মনসিংহ গামী যেকোন বাস বা টেম্পোতে করে বাঘের বাজার নামতে হবে, ভাড়া নেবে ২০ টাকা এরপর সেখান থেকে শেয়ারড অটো বা ট্যাক্সি বা রিকশা ভ্যানে ২০ টাকা নিবে, পার্কের গেটে নামিয়ে দিবে। আর নিজেদের গাড়ী থাকলে তো কথাই নেই, টান দিয়ে চলে যান সরাসরি। ঢাকার মহাখালি বাসস্ট্যান্ড এর বিপরীত দিক থেকে “ক্রাউন ডিলাক্স-ডাউন টাউন”, “প্রভাতী – বনশ্রী এর শ্রীপুর – বরমী-মাওনা” গামী বাসে উঠলে সরাসরি বাঘের বাজার নামিয়ে দিবে।।

পার্কের টিকেটঃ

বয়স্কদের জন্যঃ ৫০ টাকা।।

বাচ্চাদের জন্যঃ ৫০ টাকা।।

এভিয়ারীতে ঢুকতে আলাদা ১০ টাকার টিকেট লাগবে।।

**সাফারী কার চালু হয়ে গেলে সেটার জন্য টিকেট পারহেড ১০০ টাকা।

বিঃ দ্রঃ পার্কে ঢুকেই মেজাজ প্রচন্ড খারাপ হয়ে যেতে পারে, বিশাল এলাকাজুড়ে বিভিন্ন পশুপাখির মূর্তি আর ছবি। মনে হবে শিশুপার্ক মার্কা জায়গা, তবে মূল আকর্ষণ ভেতরে।হ্যাপী ট্র্যাভেলিং !!!।

 ট্যুর প্লান-২ঃ
ঢাকা থেকে একদিনে ঘুরে আসতে পারেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারী পার্ক । ঢাকার অদূরে গাজীপুর জেলার শ্রীপুর থানাধীন বাঘের বাজার বাসস্ট্যান্ড থেকে অল্প দূরত্বে ৩৬৯০ একর জমির উপর এর অবস্থান । ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের বাঘের বাজার বাসস্ট্যান্ড থেকে হাতের বামের রাস্তাটি ধরে সাফারি পার্ক বিশ মিনিটের পথ । বাসস্ট্যান্ড থেকে নিয়মিত ইজিবাইক যাওয়া-আসা করে যার জনপ্রতি ভাড়া বিশ টাকা । রাজেন্দ্রপুর চৌরাস্তা ও মাওনা চৌরাস্তার মধ্যবর্তী স্থানে বাঘের বাজারের অবস্থান । গাজীপুর চৌরাস্তা থেকে বাঘের বাজারের দূরত্ব বিশ কিলোমিটারের মত । আপনি গুলিস্থান থেকে ছেড়ে আসা শ্রীপুরগামী প্রভাতী বনশ্রী’র গাড়িতে উঠলে সরাসরি বাঘের বাজার নামতে পারবেন । মহাখালীর টাঙ্গাইল বাসস্ট্যান্ড থেকে ময়মনসিংহ গামী যেকোন গাড়িতে উঠলেও বাঘের বাজার বাসস্ট্যান্ড নামতে পারবেন । অথবা যেকোন গাড়িতে গাজীপুর চৌরাস্তা (চান্দনা চৌরাস্তা) নামলে বাঘের বাজার গামী অনেক গাড়ি পাবেন । প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য প্রবেশ মূল্য ৫০ টাকা, দশ বছরের কমবয়সীদের জন্য ২০ টাকা । পিকনিক বা অন্য কোন প্রয়োজনে যোগাযোগ করতে পারেন এই নম্বরে – ০১৭৯০০৮৩৭০০ ।

চৌরাস্তা থেকে বাস বা টেম্পো যাই হোক ভাড়া নেবে ২০ টাকা।

ট্যুর প্লান-৩ঃ

বর্ণনা,খরচ ও যাতায়াতঃ।

মহাখালী থেকে ময়মনসিংহ যায় এমন যে কোন লোকাল বাসে করে যাবেন বলবেন গাজীপুর বাঘের বাজার নামবো।ভাড়াটা দামদর করে উঠবেন। আমি ৮০ টাকা দিছি সৌখিন এক্সপ্রেসে। বাঘের বাজার নেমে অটো করে পার্কের সামনে। প্রতিজন ২০ টাকা।ঢুকতে ৫০ টাকা। ঢুকেই ডানদিকে যাবেন।কিছুদুর গেলেই দেখবেন বাস।এসি বাসে উঠতে ১০০ টাকা নিবে। বাসে উঠে ১০ কি ১৫ মিনিটে দৌড়ের উপর আপনাকে জেব্রা,জিরাফ,হরিন,গরু,বাঘ আর সবশেষে সিংহ দেখাবে।অনেক তাড়াতাড়ি বাস চালায় তাই ভালো মত দেখা যায়না আর ছবি তোলা তো আরও কঠিন। বাস থেকে নেমে আরেকটু সামনের ডানের গেট দিয়ে ঢুকবেন। Parot Aviary থেকে ১০০ টাকা দিয়ে টিকেট নিবেন। এই টিকেট দিয়ে আপনি Parot Aviary, Marine aquarium, Carp Garden, Crown Pheasant, Hornbill Aviary n Boat Riding (15 min) এ যেতে পারবেন। প্রথমে Parot Aviary তে যেয়ে দেখবেন তারপর বের হয়ে Macaw Garden এ যেয়ে ৪০ টাকা দিয়ে টিকেট কাটবেন আর এটা দিয়ে আপনি Macaw Garden, Butterfly Garden n Nature Histry Museam এ যেতে পারবেন। প্রথমে Parot Aviary (ছবি অবশ্যই তুলবেন তবে ওদের ধরবেননা আর যে লোকটা থাকে তাকে নাম জিজ্ঞেস করতে পারেন তবে সে নাম জানেনা কিন্তু ছোট একটা পিচচি থাকে ও সব জানে) তারপর Macaw Garden (এখানে যেয়ে Macaw হাতে নিয়ে ছবি তুলবেন অবশ্যই আর ছবি তুলতে ওইখানের লোকের সাহায্য নিবেন। আর হ্যাঁ Macaw এর নখের আঁচর আর ঠোকর থেকে সাবধান) তারপর Marine aquarium (এখানে সাধারন সব মাছ তবে aquarium এর বাইরে ছবি তুলতে পারেন) তারপর Butterfly Garden (এইখানে কিছুই নাই শুধু দুইটা প্রজাপতি দেখেছি) তারপর বের হয়ে ডিমের ঘর (এখানে যেয়ে মুরগী হাঁস সহ অনেক ডিম দেখবেন) । ডিম ঘর থেকে বের হয়ে হাতের বামে হাতি আর ডান পাশে রাস্তা দেখবেন। হাতির দিকে অবশ্যই যাবেন না। ডানের রাস্তা ধরে যাবেন আর এর পথেই পাবেন কুমিরের বাচচা সহ অনেক প্রকারের সাপ পাখি। এখানে Carp Garden পাবেন (ভিতরে ঢুকে খাবার খাওয়াবেন) তারপর হেটে হেটে সামনে যাবেন কিছুটা গেলে সামনে খাবারের দোকান পাবেন। দোকানের বাম পাশ দিয়ে গেলে অনেক পাখি সাপ বানর আর ঝুলন্ত ব্রিজ পাবেন (ব্রিজ দেখে আমি হাসতে হাসতে শেষ) তারপর শকুন দেখে সামনে যেয়ে অন্য সব দেখবেন সাথে ক্যাঙ্গারুর বাচ্চা ফ্রি দেখতে পাবেন।সবার শেষে নৌকায় উঠবেন (নৌকায় উঠে নির্ঘাত গালি দিবেন)। নৌকা থেকে নেমে জলহস্তি দেখে ডান দিকে হেটে আসবেন।আসলেই হাতি পাবেন। চাইলে হাতিতে উঠতে পারেন। ৩০ টাকা নিবে। তারপর বের হয়ে Nature Histry Museum এ যাবেন। যেখানে আপনি ভুল নাম আর ভুল তথ্যের ভাণ্ডার দেখবেন। এখান থেকে বের হয়ে বাঘ ও সিংহ পর্যবেক্ষণ রেস্তোরাতে যেতে পারেন। তারপর বের হয়ে ঢাকার পথে আসবেন। আসার রাস্তাও যাওয়ার রাস্তার মতই।।

বিঃঃ দ্রঃঃ.

অবশ্যই মনে রাখবেন।

১। বাঘ সিংহ দেখতে চাইলে অবশ্যই সকাল ১০ টার মাঝে যাবেন। কারন দুপুর ১২ টার পর যারাই গেছে কেউ বাঘ বা সিংহ দেখতে পারেনি।

২। সাথে পর্যাপ্ত পানি রাখবেন।

৩। প্রচুর হাঁটা লাগবে আর এটা মাথায় রাখবেন।

৪। খাবারের দাম গলা কাটা (তাই আমি কিছুই খাইনি)।

৫। ডিম ঘর থেকে বের হয়ে হাতির দিকে গেলে আপনি বিপদে পরবেন কারন অনেক হাঁটা লাগবে আর পথ উল্টা তাই ডানের রাস্তা দিয়েই যাবেন দয়া করে।

6.সাপ্তাহিক বন্ধ মঙ্গলবার।

আর হ্যাঁ সব মিলায় আমার খরচ গেছে ৬০০+

Share:

Leave a Comment