কক্সবাজার- টেকনাফ ভ্রমন-২

আপনারা যারা ককসবাজার যাবেন/যাচ্ছেনঃ
* হিমছড়ি পার হয়ে ইনানীর আগে রেজু খালের ব্রীজের গোড়ায় বিজিবির একটি চেক পোষ্ট আছে। সেই চেক পোষ্টের হাতের বাম দিকে যে চিকন রাস্তাটি দেখবেন, নির্দ্ধিধায় চলে যান। পারলে সাইকেলে যাবেন অথবা গ্রুপ করে হেঁটে অথবা মোটরসাইকেল হলে কথায় নেই! এই রোডের অল্প কিছুদূর পর একটি ভাঙ্গা ব্রীজ পাবেন, যাতে কাঠের একটি সেতু দিয়ে চলাচলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। জায়গাটির নাম গোয়ালিয়া পাড়া। চমৎকার একটি ভ্রমণ স্থান, যারা সচরাচর ককসবাজার দেখতে দেখতে বিরক্ত শুধুমাত্র তাদের জন্য এই প্লেসটি মনে রাখার মত। আশে পাশে অনেকগুলো বৌদ্ধ মন্দির পাবেন, যা রামু ট্র্যাজেডির সময় অগ্নিকান্ডে ভস্মীভূত হয়েছিল। এই এলাকার লোকগুলি একদম অরিজিন ককসবাজারের। তাদের সাথে মিশলেই বুঝবেন, কি মিশুক এবং অমায়িক ভাল মানুষ। রাস্তাটি ককসবাজার-টেকনাফ সড়কে গিয়ে মিশেছে, ওখান থেকে অন্য দিকে মুভ করা একদম ইজি।

* সচরাচর যারা ককসবাজার দেখতে দেখতে বোরড, তারা ৪/৫ জনের গ্রুপ নিয়ে নাজিরারটেকে চলে যাবেন। নাজিরারটেক ককসবাজারের সর্ব ডানের শেষ বিন্দু। এখানে সব শুঁটকি মাছের আড়ত। যে কোন একটি আড়তে গিয়ে মালিকদের সাথে মিশে যাবেন, কথা বলবেন, তারা যে আন্তরিকতা দেখাবে, ভুলবেন না জীবনে। একদম ‘র’ যাঁদের পছন্দ, সেই সাগর তীরে, শুঁটকি আড়তে রাত কাটাবেন শ্রমিকদের সাথে, জীবনের অন্যরকম মনে রাখার মত অভিজ্ঞতা পাবেন। অন্তত সমুদের তাজা মাছ খেয়ে জীবন সার্থক হবে, নিশ্চিত। আপনার কাছ থেকে খাওয়া/রাতে থাকা বাবদ একটা কানাকড়িও নেবে না, যদি আপনিও সেই পরিমাণ আন্তরিকতা, সৌজন্যতা দেখাতে পারেন।

* অন্য রকম একটি বোটানিক্যাল গার্ডেন করা হয়েছে, রামুতে। যারা আগ্রহী, রামু চৌমহনী হতে ক্যান্টনমেন্ট যাবেন। ‘স্বর্ণ ফুল’ নামক একটি বিরল প্রজাতির ফুল দেখার সৌভাগ্য জীবনে যোগ হবে, সাথে বিস্তীর্ণ পরিবেশে আদি এবং অসাধারণ সবুজের মাঝে ফটোসেশন, বোনাস।

* ইনানী পার হয়ে শাহ পরীর দ্বীপের আগে, নতুন মেরিন ড্রাইভ রোড ধরে মৌলভীর ডেইল নামক স্থানে তাঁবু খাটাতে পারেন। প্রয়োজনে বন বিভাগের রেস্ট হাউসে থাকতে পারেন, চার্জের বিনিময়ে। এই সমুদ্র এবং পরিবেশ বিরল ও আনকমন। এই স্থানের পানি প্রায় নীলের চেয়েও বেশি নীল, স্বচ্ছ।

* সূর্য্যাস্ত দেখতে নতুন দুটি স্থানে যেতে পারেন। একটি ককসবাজার থেকে দুই কিমি দূরে নব নির্মিত চৌফলদন্ডী ব্রীজ থেকে (এটি এখন স্থানীয়দের একটি পর্যটন স্পটে পরিণত হয়েছে), অন্যটি নব নির্মিত মহেশখালী-বদরখালী ব্রীজের উপর থেকে। অসাধারণ এবং অনন্য!

* যারা লবণ উৎপাদন দেখতে চান, সরাসরি মহেশখালী অথবা টেকনাফ চলে যান। সারাদিন তাদের সাথে লবণ মাঠে থাকুন। অন্তত, একটা কিছু শিখবেন।
*টেকনাফের সৌন্দর্য যারা দেখতে চান, কষ্ট করে শাহ পরীর দ্বীপে চলে যাবেন। এখানে একটি রেস্ট হাউস আছে, সুন্দর থাকার ব্যবস্থা, সাথে বিজিবির নিরাপত্তা। জেটিতে বসে রাত কাটালে, বাকি জীবন সেই রাতের কল্পনা করেই পগারপার করে দেওয়া সম্ভব।

** মনে রাখবেন, যেখানেই নিরাপত্তা বাহিনী আপনাকে চেক করতে চাইবে, উনাদের সহযোগিতা করুন। নিরাপত্তা বাহিনী আপনার শত্রু নন, যদি আপনি অপরাধী বা মাদক বহনকারী না হন। উনাদের কাজই হচ্ছে অরিজিনাল পর্যটকদের নিরাপত্তা এবং ভরসা দেওয়া। আপনার চোখ দেখলেই উনারা অনেক কিছু বুঝে নেন, কে অপরাধী আর কে ভাল মানুষ। ভাল মানুষের সুবিধা সর্বত্র।

** ভুলেও পর্দা না টেনে রুমের লাইট জ্বালাবেন না। ককসবাজারে পাশাপাশি এত পরিমাণ হোটেল, পাশের হোটেলের রুম থেকে আপনার রুম নিজের চোখের সামনের হাতের চেয়ে স্পষ্ট। সুতরাং, সাধু সাবধান!

** যারা সেন্ট মার্টিন যান, খুশির চোটে প্রবাল পাথরে খালি পায়ে ছবি তুলতে যাবেন না, বিশেষ করে মেয়েরা। প্রবাল পাথর অত্যন্ত ক্ষুরধার।

** যে কোন হোটেলের রিশিপশানে, টমটম/ট্যাক্সির পেছনে টুরিস্ট পুলিশের যোগাযোগ নাম্বার পাবেন, সংগ্রহে রাখুন, প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন।

Share:

Leave a Comment