সেন্টমার্টিন দ্বীপে ২ রাত ৩ দিনের ক্যাম্পিং ট্যুর

দুইদিন আগে আমরা ২৭ জন ঘুরবাজ সেন্টমার্টিন দ্বীপে ২ রাত ৩ দিনের ক্যাম্পিং ট্যুর দিয়ে আসলাম!

কিভাবে কোথায় কি করেছি, কত খরচ হয়েছে তা বিস্তারিত বর্ণনা করলাম-

শীপ চালু হওয়ার আগে গিয়েছি আমরা, ট্রলারে চড়ে, তাবুতে থাকার পাশাপাশি নিজেরা বাজার করে একজন বাবুর্চির সহায়তায় নিজেরা রান্না করেই খেয়েছি, যখন যা খুশি!

ফিরে আসার পথে মেরিন ড্রাইভেও চক্কর দিয়ে এসেছি!

সন্ধ্যা ৭ টার বাসে ঢাকার আরামবাগ কাউন্টার থেকে টেকনাফের উদ্দেশ্যে রওনা দিই, সকাল ৬:৩০ এ টেকনাফ পৌছে যাই! অইদিন শুক্রবার ছিল, সেন্টমার্টিনের উদ্দেশ্যে ট্রলার ছাড়বে জুমার নামাযের পর! সকালের নাস্তা সেরে আমরা ছোট ছোট গ্রুপে ভাগ হয়ে যে যার মত করে টেকনাফ শহরের আশেপাশে ঘুরে বেড়ালাম! কেউ মেরিন ড্রাইভে, কেউ নাফ নদী, আমরা কয়েকজন আগামী ২ দিনের জন্য বাজার করতে বের হয়ে গেলাম!

আড়াই ঘণ্টা পর পৌছে গেলাম সেন্টমার্টিন দ্বীপে, উত্তর বীচে পরিচিত একটা রিসোর্টের পাশে তাবু সেট করলাম! সবার জন্য একটা রুম নিলাম, বলতে গেলে পুরো রিসোর্টই খালি পড়ে ছিল, কম দামে আরো কয়েকজন রুম ভাড়া নিয়ে ফেললো, যদিও এটা পারসোনাল খরচে নিয়েছে!

পাতিহাঁস কিনে নিয়ে গিয়েছিলাম টেকনাফ থেকে, রাতে তা রান্না করে খেয়ে ঘুম!

পরের দিন সকালে সবাই গেল ছেড়াদ্বীপ, সারাদিন দ্বীপের এখানে ঘুরাঘুরি করেই কেটে গেল!

পরের দিন ফেরার পালা, ১০:৪৫ টার দিকে ট্রলার ছেড়ে দিল, ১ টার দিকে টেকনাফ পৌছে লাঞ্চ সেরে নিয়ে ২ টা গাড়ি রিজার্ভ করলাম, মেরিন ড্রাইভ হয়ে কক্সবাজার যাব, টাকা বেশি লাগলে লাগুক, মেরিন ড্রাইভের সৌন্দর্যটাও দেখার ইচ্ছে হল সবার!

সন্ধ্যা নাগাদ পৌছে গেলাম কক্সবাজার, রাতের বাসে ঢাকা!

খরচগুলো সংক্ষেপে বলে দিই-

ঢাকা টু টেকনাফ বাস- ৯০০
টেকনাফ টু সেন্ট ট্রলারে যাওয়া আসা- ৫০০ (আমাদের থেকে বেশি নিয়ে ফেলেছে একটু)
টেকনাফে ৩ বেলা খাবার ও সেন্টমার্টিনে ৫ বেলা খাবারের খরচ ৯০০ (বাবুর্চি ও হোটেল বিল সহ)
টেকনাফ টু কক্স ২০০
কক্স টু ঢাকা ৮০০

ঢাকা থেকে যাওয়া আসা খাওয়া জনপ্রতি টোটাল খরচ: ৯০০+৫০০+৯০০+২০০+৮০০= ৩৩০০ টাকা!

অনেকেই রিজার্ভ বোট নিয়ে ছেড়াদ্বীপ গিয়েছে, এ জন্য যারা গিয়েছে তাদের ১৫০ টাকা বেশি খরচ হয়েছে!

কিছু কথা:

আমরা যখন গেলাম তখন শিপ চালু না হওয়ার কারণে সেন্টমার্টিনে পর্যটক ছিলনা বললেই চলে, রান্নার সরঞ্জাম পরিচিত একটা রিসোর্ট থেকে নিয়েছিলাম, কোন ভাড়া দিই নাই! রিসোর্টের বাবুর্চি ফ্রি ছিল, উনাকে কাজে লাগিয়েছি! পুরো রিসোর্টে আমরা রাজত্ব করেছি, নিজেদের মত ইউজ করেছি, শিপ চালু হলে এতসব সুবিধা আপনি পাবেন না! দ্বীপে নিরিবিলি একটা পরিবেশ পেয়েছি, মাত্র ২০ টাকায় ডাব খেয়েছি, কম দামে সামুদ্রিক মাছ কিনে ফ্রাই করে খেয়েছি, তাই এরকম কম খরচে বেশি আনন্দের ট্যুর দিতে গেলে শীতকালের শুরুতে শিপ চালু হওয়ার ঠিক আগে আগে সেন্টমার্টিন যাওয়া বেটার!

খুব অল্প খরচে অসাধারণ একটা ট্যুর দিয়েছি, স্থানীয় ছেলে হিসেবে আমিই ছিলাম অর্গানাজার, সব কিছু ম্যানেজ করার দায়িত্ব আমার উপর ছিল, একারণে আমার কষ্ট একটু বেশি হলেও মজাটা কোন অংশে কম হয়নি! ২৭ জনের গ্রুপের সবাই কম বেশি হেল্প করেছে, বিভিন্ন জন বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেছে!

এবার আপনিও আপনার বন্ধুদের সাথে এরকম একটা ক্যাম্পিং ট্যুর দেওয়ার পরিকল্পনা করে ফেলুন!
নিজেরা মিলে কম খরচে ঘুরে আসুন! এখন গেলে জনপ্রতি ১৫০-২০০ টাকা খরচ বাড়তে পারে! মাছ বাদে বাকিসব বাজার অবশ্যই টেকনাফ থেকে কিনে নিয়ে যাবেন!

নিজেরা বাজার করে রান্না করার ঝামেলা করতে না চাইলে কোন হোটেলেও খেতে পারেন, প্রতি বেলা ১২০-১৫০ টাকায় খেতে পারবেন! ১০-১২ জন একসাথে ২/৩ দিনের খাবারের কথা বললে কিছুটা সাশ্রয় হয়!

সেন্টমার্টিনে তাবু ভাড়া পাওয়া যায় কিনা শিউর জানিনা, নিজের তাবু না থাকলে ঢাকা থেকে প্রতি রাত ১০০ টাকায় ভাড়ায় নিয়ে যেতে পারেন!

যারা নিয়মিত ঘুরাঘুরি করেন তারা একটা তাবু কিনে নিতে পারেন, কোয়ালিটি ভেদে দাম ৩০০০-৭০০০ পড়তে পারে!

আর হ্যা, সেন্টমার্টিন গেলে অন্তত ২ রাত থাকার চেষ্টা করবেন, এতদূর থেকে এত কষ্ট করে যাবেন, ১ রাতে পোষাবেনা! খাবারের খরচটাই বাড়বে কেবল!

আপনার যাত্রা শুভ হোক, আপনার ঘুরবাজ বন্ধুটাকে আজকেই নক করুন!

Post Copied From: Sujauddin F. Sohan > Travelers of Bangladesh (ToB)

Share:

Leave a Comment