ক্যাম্পিংয়ের চল

আজকাল আমাদের মধ্যে ক্যাম্পিংয়ের চল অনেক গুন বেড়ে গেছে। তাবু কোথায় কিনতে পাওয়া যায়, কোথায় ভাড়া পাওয়া যায় এই সংক্রান্ত প্রশ্ন প্রায় প্রতিদিনই ToB Helpline গ্রুপে চোখে পড়ে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক ভাবে ক্যাম্পিংয়ের কলা-কৌশল, রীতি-নীতি, এথিক্স না জেনেই আমরা ক্যাম্পিং করছি। যা একদিকে পরিবেশের ক্ষতি করছে। অন্যদিকে নিজেরাও ঠিকভাবে উপভোগ করতে পারছি না। আজকাল প্রায়ই দেখা যায় একঝাঁক লোক একটা স্ট্রিমের উপর নির্বিকারভাবে ক্যাম্প সেট করছে।

আজকাল আমিয়াকুম আর নাফাকুমের উপর ক্যাম্পিং করা বেশ লুক্রেটিভ ইভেন্ট। কিন্তু এই ধরনের একটিভিটি ক্যাম্পিংয়ের এথিক্সের একদম পরিপন্থি। এতে নিজেদের যেমন বিপদের সম্ভাবনা থাকে সেই সাথে এই এরকম একটি সেন্সেটিভ জায়গা ও নষ্ট হয়। আমি তো শুনেছি নাফাকুমে নাকি এখন জায়গায় জায়গায় গু পড়ে থাকে। ভুলে একটু পা দিয়ে দিলেই কেল্লাফতে।

ভাই ও বোনেরা, ক্যাম্পিং বা অন্যান্য আউটডোর এক্টিভিটি একটা লাইফ স্টাইল। এটা মৌজ ফুর্তি বা টাইম পাসের বিষয় না। এই একটিভিটি গুলো করার আগে একটু এর গভীরে উঁকি দিয়ে দেখে নিয়েন। এই বিষয় গুলো নিয়ে একটু পড়ালেখা করে নিয়েন। কি করা যাবে আর কি করা যাবে না এই বিষয়ে ভালভাবে জেনে নিয়েন।

আপাতত ক্যাম্পিং নিয়ে অতি প্রয়োজনীয় কিছু বিষয়ে জেনে রাখিঃ

[১] প্রথমেই ক্যাম্পিং এর জন্য একটু উপযুক্ত জায়গা খুঁজে বের করতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে একটি উপযুক্ত ক্যাম্পিং এর জায়গা সব সময় খুঁজে নিতে হবে। কখনোই আশেপাশের গাছপালা কেটে, পাথর সরিয়ে, মাটি কেটে সমান করে ক্যাম্প সাইট কৃত্রিমভাবে তৈরী করা যাবে না।

উপযুক্ত ক্যাম্পিং সাইট খোঁজার সময় কিছু বিষয়ের প্রতি খেয়াল রাখতে হবেঃ

[২] ক্যাম্পিং এর জায়গাটি যেন পানির কাছাকাছি হয়। খেয়াল রাখতে হবে, জলের উৎস গুলোতে বন্যপ্রাণিরা ও রাতে পানি খেতে আসতে পারে। সেদিক দিয়ে আমাদের খেয়াল রাখতে হবে। তাই নদী, নালা, হ্রদ বা ঝিড়ি থেকে প্রায় ২০০ ফিট দূরে আর নিরাপদ উচ্চতায় ক্যাম্প করার জন্য জায়গা খুঁজা উচিৎ।

[৩] বরফ ধস হতে পারে বা উপর থেকে নড়বড়ে পাথর নীচে গড়িয়ে পড়তেও পারে এমন জায়গা গুলোর কাছাকাছি ক্যাম্প করা বিপদজনক। খোলা প্রান্ত বা উপত্যকা হলে প্রথমেই দেখে নিতে হবে বাতাস কোন দিক থেকে আসছে। সম্ভব হলে সেইদিক টা আড়াল করে ক্যাম্প করা যেতে পারে।

[৪] কোন জলপ্রপাত এর পাশে, শুকনো মরা ঝিরি বা গিরিখাদে ক্যাম্প স্থাপন করা উচিত না। তাতে যখন তখন হড়কাবানের আশঙ্কা থাকে। ঝিরি থেকে সবসময় একটু উপরে আর নিরাপদ উচ্চতায় ক্যাম্প করা উচিত।

[৫] যতদূর সম্ভব সমান জায়গায় ক্যাম্প করা উচিত। প্রয়োজন হলে নুড়ি পাথর আর পড়ে থাকা ডাল পালা হালকা ঝাড়ু দিয়ে সরিয়ে তারপর তাবু বা শেলটার তৈরী করা উচিত। অসমান জমিতে শুলে পিঠে ব্যথা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সেই সাথে তাবু নষ্ট হবার সম্ভাবনা থাকে।

[৬] আশেপাশে কোন পাড়া, গ্রাম বা লোকালয় থাকলে সবসময় তার থেকে একটু দূরে ক্যাম্প করা উচিত। খেয়াল রাখতে হবে ক্যাম্প করার জন্য গ্রামের লোকদের যেন কোন ধরনের সমস্যা না হয়। ক্যাম্প করার আগে গ্রামের মুরুব্বিদের অনুমতি নিয়ে নেয়া উচিত।

[৭] খেয়াল রাখতে হবে ক্যাম্প সাইট যেন গ্রামের ঠিক নীচে না হয়। কারন ঐ গ্রাম থেকে যে ঝিরি নীচে নেমে আসছে তার সঙ্গে গ্রামের লোকেদের ব্যবহৃত বর্জ্য ও নেমে আসতে পারে। তাতে আশেপাশের জল দূষিত হয়। যদি সম্ভব হয় গ্রাম থেকে কিছুটা উপরে উঠে ক্যাম্প স্থাপন করা উচিত। পাশাপাশি খেয়াল রাখতে হবে, ঝিড়ি, খালের পাশের গ্রাম বা পাড়ার লোকেরা খাবার পানি সংগ্রহ কিংবা গোসল করতে আসে, সেসব জায়গা থেকে ক্যাম্প দূরে করতে হবে।

[৮] নদী, হৃদ, ঝিরি বা অন্য কোন পানীর উৎসের কাছাকাছি মল-মূত্র ত্যাগ করা যাবে না। মলমূত্র ত্যাগ করার জায়গা আগেই নির্দির্ষ্ট করে দিতে হবে। এবং সেটা অবশ্যই ক্যাম্প সাইট থেকে কিছুটা নীচের দিকে হবে। মলত্যাগ করার পর বালি, মাটি, পাথর দিয়ে জায়গা টা এমনভাবে ঢেকে দিতে হবে যেন ব্যবহৃত গোলাপি টয়লেট পেপার ও উঁকি না দেয়।

[৯] ক্যাম্পের জায়গা এবং শেলটার সবসময় পরিষ্কার এবং শুকনো রাখতে হবে। যেখানে সেখানে ময়লা আবর্জনা ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখা যাবে না। ক্যাম্প স্থাপন করার সময় ই কিছু টা দূরে আবর্জনা ফেলার একটা জায়গা নির্দিষ্ট করে দিতে হবে। ক্যাম্প গুটিয়ে নেয়ার সময় সমস্ত আবর্জনা, প্লাস্টিক, চকলেট ও বিস্কিটের খোসা আর বাদবাকি সব ধরনের অপচনশীল আবর্জনা পুড়িয়ে ফেলতে হবে। এরপর জায়গাটা এমনভাবে সাফ করে মাটি দিয়ে ঢেকে দিতে হবে, যাতে পরে অন্য কোন দল গিয়ে বুঝতে না পারে সেখানে আগেও কেউ ক্যাম্প করেছিল।

Post Copied From:Salehin ArshadyTravelers of Bangladesh (ToB)

Share:

Leave a Comment