বাংলাদেশী কোম্পানিকে অযথা বেশী পয়সা না দিয়ে থাইল্যান্ড ভ্রমণ

বাংলাদেশের বেশীরভাগ ট্যুরিষ্ট যারা নিজের দেশ দেখার পর ইন্ডিয়া দিয়ে তাদের বিদেশ ভ্রমণ শুরু করেন এবং দ্বিতীয় ধাপেই থাকে থাইল্যান্ড। খরচ, যাতায়াত ও ভিসা পাওয়া কিছুটা সহজলভ্য হওয়ার কারনে এ দুটি দেশ একজন দেশীয় ট্যুরিষ্টের জন্য খুবই প্রিয়।

আমি যদিও সবসময় নিজের প্ল্যানের মাধ্যমে ট্যুর দিয়ে থাকি তবে এই দেশটিতে কোন এক ঈদের ছুটিতে হঠাৎ ডিসিশন নেওয়ার কারনে একটি স্বনামধন্য প্যাকেজ কোম্পানির মাধ্যমে ভিসা ছাড়া ৩৮০০০/- প্যাকেজে গিয়েছিলাম। আসলে প্যাকেজ কোম্পানির মাধ্যমে গেলে অনেকটা টাইট শিডিউলের মধ্যে চলতে হয় যা আমার কাছে পরাধীনতা লাগে।

যাইহোক ব্যাংকক এয়ারপোর্টে পা রেখেই বুঝতে পেরেছিলাম আসলে বাংলাদেশী প্যাকেজ কোম্পানিকে অযথা বেশী পয়সা দিয়েছি। তাদের কাজ শুধু এয়ার টিকিট আর হোটেল বুকিং করে দেওয়া। বাকী সব তারা থাইল্যান্ডের অন্য ট্রাভেল কোম্পানির মাধ্যমে সম্পন্ন করে তবে বড় গ্রুপ হলে হয়ত নিজেদের ট্যুর গাইড সাথে যায়। থাইল্যান্ড যেহেতু একটি ট্যুরিষ্ট দেশ তাই সেখানে একাধিক বড় বড় ট্রাভেল কোম্পানি আছে যাদের সকল কার্যক্রম সিস্টেম্যাটিক। তারা দলে দলে এয়ারপোর্ট থেকে ট্যুরিষ্ট রিসিভ করে এবং একজন ট্যুরিষ্টের হোটেল পর্যন্ত পৌঁছে দিয়ে প্রতিদিনের সাইডসিং শেষ করে আবার শেষের দিন এয়ারপোর্টে পৌঁছে দিয়ে যায়। এ বিষয়ে আপনাকে কোন চিন্তাই করতে হবেনা। প্রতিদিন শিডিউল অনুযায়ী তারা আপনাকে হোটেল থেকে নিয়ে সব ঘুরেঘুরে দেখাবে।

ঠিক এরকম এক ট্রাভেল কোম্পানি /যারা আমার নাম লিখে এয়ারপোর্টে দাঁড়িয়ে আছেন। দলে দলে বিভিন্ন দেশ থেকে আসা ট্যুরিষ্টদের তারা রিসিভ করতেছেন এবং শিডিউল অনুযায়ী শিফট করছেন। আমার ট্যুর প্ল্যান ছিল এয়ারপোর্ট থেকে প্রথমে সরাসরি পাতায়া। সেখানে দুইরাত থাকার পর ব্যাংকক তিনরাত। প্ল্যান অনুযায়ী এয়ারপোর্টে অপেক্ষা করছি পাতায়া যাওয়ার অথচ তারা বিকেল ঘনিয়ে দিল যাত্রা শুরু করতে যা খুবই বিরক্তিকর ছিল। এয়ারপোর্ট থেকে পাতায়া আসতে আমাদের রাত হয়ে গেল তারমানে আমি কোনকিছু না দেখেই একরাত শেষ করে ফেললাম। সারাদিন জার্নিতে ক্লান্ত থাকার কারনে রাতে আর তেমন পাতায়াতে ঘুরা হলো না। এখানে অনভিজ্ঞদের জানিয়ে রাখি যে পাতায়া হচ্ছে একটি সামদ্রিক আইল্যান্ড এখানে অনেক বিনোদনের স্থান আছে তবে নারীদের প্রাধন্য বা আনাগোনা অনেক বেশী এবং তাদের আয়ের অনেকটা অংশ এই নারী দ্বারাই যদিও পুরো থাইল্যান্ডেই তা বিরাজকৃত তাই অন্তত ফ্যামিলির বাবা-মা অথবা কোন শ্রদ্ধেয়জনদের সাথে সেখানে না যাওয়াই ভাল।

রাত পাড় হতেই সকালে শিডিউল ছিল কোরাল আইল্যান্ড ট্যুর। এই আইল্যান্ডে ট্যুর দিতে অবশ্যই শর্ট প্যান্ট এবং টি-শার্ট পড়ে যাবেন এবং সাথে প্ল্যাস্টিকের স্যান্ডেল। অনেকেই শার্ট প্যান্ট সু পরিধান করে যেয়ে বোকা সাজেন। আর যদি পারেন পিঠের একটা ব্যাগে এক সেট এক্সট্রা কাপড় ও কেডস নিতে। কক্সবাজারের মেরিন ড্রাইভের মত এখানে সমুদ্রের পাড়ে রাস্তা এবং সেখান থেকে স্পীডবোটে আপনাকে নিয়ে যাবে সমুদ্রের মাঝে অবস্থিত একটি ভাসমান জেটিতে। এই জেটিতে আপনি ৫০০ বাথের বিনিময়ে প্যারাসাইলিং করতে পারবেন যেটি খুবই মজার ছিল। তাছাড়া পর্যাক্রমে সেখান থেকে আরো কিছু আকর্ষনীয় স্থান দেখিয়ে একটি বীচে নিবে। স্বচ্ছ পানির সেই বীচে খুবই আনন্দ পাবেন। ওয়াটার বাইক সহ বিভিন্ন রাইড সেখানে চলতে পারবেন তবে বাথের বিনিময়ে। দুপুর হতেই সেখান থেকে আবার সেই মেরিন ড্রাইভ নিয়ে এসে এক ইন্ডিয়ান রেস্টুরেন্টে খেতে দিল। ভিজা শরীর হোটেলে বাথরুমে ঢুকে কাপড় চেঞ্জ করে নিলাম তারপর খাওয়া শেষে গন্তব্য Jems Gallery, Nongnooch Tropical Garden with Elephant show এবং সবার শেষে সন্ধ্যায় Alcazar Show. এই Alcazar Show খুবই মজার একটি ষ্টেজ প্রোগ্রাম যা কোনমতে না দেখতে ভুল করবেন না। সারাদিন এত ঘুরাঘুরির পরে হোটেলের কাছেই একটা ম্যাসাজ পার্লার পেলাম মাত্র ২০০ বাথে একটি ছেলে একঘন্টা খুবই উপকারী ফুল থাই ম্যাসাজ করে দিল ( বিপরীত লিঙ্গ দ্বারা ম্যাসাজ না করাই মঙ্গল ) । এভাবেই রাত পাড় হতেই পাতায়া ভ্রমণ শেষ হলো এবং সকালে যাত্রা শুরু করলাম ব্যাংককের উদ্দেশ্যে।

পাতায়া থেকে ব্যাংককের দীর্ঘ পথ জুড়ে ফ্লাইওভার যা আমি এখন পর্যন্ত কোন দেশে দেখি নাই। যানজট ছাড়া খুবই সুন্দরভাবে ব্যাংকক এসে পৌঁছাইলাম। হোটেলে পৌঁছিয়ে লাঞ্চের পরে নিয়ে গেল সিটি ট্যুরে। বিকাল পর্যন্ত সিটি ট্যুর শেষে বউয়ের টার্গেট কখন মার্কেটে যাবে 😛ড্রাইভারকে বলাতে তিনি মার্কেটে নামিয়ে দিল। প্রতিদিন এভাবে Indra Market, MBK Market, Pratunam Market, Bobae Market, Siam Centre, Paragon ইত্যাদিতে গেলাম। তার মধ্যে Indra Market ও তার আশেপাশের স্ট্রীটমার্কেট গুলো ভাল লেগেছে।

পরেরদিন আমাদের ট্যুর ছিল সাফারী অয়ার্ল্ড ও সাফারী পার্ক দেখা সারাদিন। সাফারী ওয়ার্ল্ড এটি শিশুদের জন্য খুবই আনন্দদায়ক একটি বিনোদনের স্থান। দুপুর পর্যন্ত এই ওয়ার্ল্ডে একটার পর একটা ইভেন্ট দেখতে দেখতে আপনার সময় চলে যাবে। তার মধ্যে ডলফিন সো সহ অনেক সো আছে যা আপনাকে খুবই আনন্দ দিবে। এছাড়া বিনোদন শেষে পাশেই অবস্থিত গাড়িতে করে আপনাকে ওপেন জু সাফারী পার্কে ঢুকাবে। যেখানে আপনি গাড়ির ভিতর বসে ঘুরেঘুরে জীবজন্তু দেখতে পাবেন। ট্যুর শেষে আবার সেই টার্গেট শপিং। রাত ভরে শপিং করে ক্লান্ত শরীরে হোটেলে আবার পরেরদিন রেখেছি শুধু শপিং। ব্যাংককে আর কোন ট্যুর না দিয়ে আরও একরাত থেকে ঢাকায় চলে আসি। তবে ব্যাংককে আরও দুই একটা ভাল ট্যুর স্পট ছিল যা প্যাকেজে যাওয়ার কারনে আমাদের যাওয়া হয়নি। আমার এই গাইড নিয়ে আপনিও খুব সহজে পাতায়া ও ব্যাংকক ঘুরে আসতে পারবেন। শুধু যাওয়ার আগে একটি প্ল্যান করুন এবং সেই অনুযায়ী এয়ার টিকিট, দুই স্থানের হোটেল বুকিং ও নিজে না বুঝলে সেখানকার ট্রাভেল কোম্পানির সাথে যোগাযোগ করে যেতে পারেন যেটির উপরে লিংক দিয়েছি। আর যদি আপনি বিদেশের ব্যাপারে একটু এক্সপার্ট হয়ে থাকেন তাহলে এয়ারপোর্ট থেকে বাসে পাতায়া এবং সেখানে যেয়ে বিভিন্ন ট্যুরের প্যাকেজ নিতে পারেন এবং পুনরায় বাসে ব্যাংকক এসে ট্যুর প্যাকেজ। এই সমস্ত সকল প্যাকেজ আপনি হোটেলের লবিতেই পাবেন অতএব নো চিন্তা ডু ফুর্তি 🙂

Post Copied from:Miah Mizanur Rahman Kazol‎>Travelers of Bangladesh (ToB)

Share:

Leave a Comment