পৃথিবীর ভয়ঙ্করতম রোড

মানালী থেকে লেহ ৪৯০ কিঃ মিঃ। এটাকে পৃথিবীর ভয়ঙ্করতম রোড গুলোর একটি ধরা হয়। পৃথিবীর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পাস সহ এই রোড টি তৈরি হয়েছে ভারতীয় সেনা বাহিণীর ভারী সরঞ্জাম বহনের জন্য। বছরের মাত্র ৪ মাস এই রোড খোলা থাকে। এই album এ আপ্নারা সাদা ন্যাড়া পাহাড়ের মাঝখানে যেই রোড দেখছেন তার গড় উচ্চতা ৪,০০০ মিটার যা মাঊন্ট এভারেস্ট এর অর্ধেক উচ্চতার কাছা কাছি। পৃথিবীর অধিকাংশ দেশে এই উচ্চতার কোন পাহাড় ই নাই। ইউরোপ এর সর্বোচ্চ রোড এর উচ্চতা ২৩৮০ মিটার যা এই রোড এর অর্ধেক উচ্চতার সমান। এই রোড এর শেষেই Tanglang La Mountain Pass নামে একটা পাস আছে যার উচ্চতা ৫,৩২৮ মিটার। এই উচ্চতায় বাতাস এত টাই থিন যে specially made helicopters ছাড়া সাধারন হেলিকপ্টার উঠতে পারে না। হাই Altitude এর কারনে এই এলাকাই কোন গাছ জন্মাই না। যার কারনে পুরো এলাকা টি আসলে একটা সুন্দর বাতাসহীন ঠান্ডা দোজখ। আর বিস্ব্যাস করুন আমরা এই দোজকেই রাতের বেলা হারিয়ে গিয়েছিলাম।

মানালী থেকে রওনা দিয়ে আমাদের প্ল্যান ছিলো প্রথম দিন সন্ধ্যা এর মধ্যে ‘কেলং’ পৌছানো এবং কেলং এই রাতে থাকা। বাট আমাদের ড্রাইভার আমাদের বলল “ পরের দিন অনেক লম্বা জার্নি। তাই আমি কেলং এ না থেমে আরো সামনে চলে যাব। সেখানে অনেক হোটেল আছে। আপ্নারা সেখানেই থাকতে পারবেন.’ আমরা ভাবলাম ভালোই তো। যাই হোক কেলং আসতে আসতে সন্ধ্যা। ড্রাইভার থামলো না। খেয়াল করলাম কেলং এর পর থেকেই গাড়ি উপরের দিকে ঊঠা শুরু করে দিয়েছে। এর পর প্রায় ২ ঘণ্টা ধরে অন্ধকারে গাড়ি চলছে। কোন হোটেল তো দূরে থাক একটা বসতিও চোখে পড়লো না। তার উপর বাতাসের স্থর তখন এত টাই পাতলা হয়ে গিয়েছে যে গাড়ির জানলা বন্ধ রাখলে নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিলো। ড্রাইভার এর আচার আচরন দেখে ও মনে হচ্ছিলো সে এই জায়গা ঠিক মত চিনে না। আরো একটা ঘন্টা পার হয়ে গেলো তার পর ও কোন বসতি এর দেখা মিললো না। এর মধ্যে ঠান্ডা এত টাই বেড়ে গিয়েছিলো যে গাড়ীর জানলাও খোলা রাখা যাচ্ছিলো না। আমার শুধু এতো টুকু মনে আছে আমরা এক এক টা সাদা পাহাড়ের উপরে ঊঠছি আর নামছি। ড্রাইভার থেকে আবার জিজ্ঞেস করলাম। হোটেল কোথায়? সে পথের পাশে সাইনবোর্ড দেখে বললো ২২ কিঃ মিঃ দূরে সার্চু (sarchu) তে। কথা টা শোনার সাথে সাথে আমার মাথায় বাজ পরলো। আমার জানা মতে সার্চু তে কিছু বাইকারদের ক্যাম্প ছাড়া আর কিছুই নাই। আমি ড্রাইভার কে এই কথা বললে সে খুব আত্নবিশ্বাস এর সাথে বললো সার্চু একটা শহর। সেখানে সব আছে। টীম এর সবাই তাকে বিশ্বাস করলাম।

সার্চু আসার কিচুক্ষন আগে গাড়ী হঠাত করে একটা waterfall এ আটকা পরলো। ড্রাইভার আমাদের কে গাড়ি ধাক্কা দেয়ার জন্যা বল্লো। গাড়ীর দরজা খুলে বাইরে নামার পর এই আমরা বুঝতে পারল্লাম হিমালয়ের মঝখানে -৫ ডিগ্রী তাপমাত্রা আসলে কেমন হয়। এক বাতাসের ধাক্কাতেই আমরা সবাই এটা বুঝতে পেরেছিলাম যে আজকে রাতে যদি hotel না পাই। তাহলে আমরা কাল সকাল পর্যন্ত নাও বাচতে পারি।
যাই হোক ড্রাইভার সার্চু পউছালো। এবং সার্চু গিয়ে আমরা দেখলাম সেখানে আসলে কিছুই নেই বাইকারদের ক্যাম্প ছাড়া!!!!… মেরুদন্ডের উপরের দিয়ে শীতল একটা স্রোত বয়ে যায়। ড্রাইভার almost কাদো কাদো অবস্থা। তার সাতে কথা বলে জানতে পারি এই রাস্তাই এইটাই তার প্রথম বার।হিমালয় পর্বতের মাঝখানে মরুভুমির মধ্যে একজন আনাড়ী ড্রাইভার নিয়ে মাইনাস ৫ ডিগ্রী তাপমাত্রায় হারিয়ে যাওয়ার অনুভুতি কখনো বলে বুঝানো সম্ভব নয়।

পরবর্তিতে আমরা সামনে একটা আর্মি ক্যাম্প পায়। সেখান থেকে জিজ্ঞেস করলে তারা আমাদের বলে সামনে ট্রাক ড্রাইভার দের থাকার জন্য কিছু বাড়ি আছে। আপ্নারা সেখানে থাকতে পারেন। সেখানে গেলাম। ততক্ষনে আমাদের টীম এর দুই জনের মুখ ফুলে প্রায় 1.5 গুন হয়ে গেছে। একজন মারাত্তক অসুস্ত, আর বাকিরা ঠান্ডাই নড়া চরাও করতে পারছি না। ঠান্ডা এতোটাই তীব্র ছিলো যে আমাদের একজন টয়লেট গিয়ে দেখে পানি বরফ হয়ে গিয়েছে। হিটার চালিয়েও গাড়ি গরম করা যাচ্ছিলো না। যাই হোক সেই রাতে আমরা শান্তি হোটেল নামে এক্টা টিন এর ঘরে থেকেছিলেম মোট ৭ টি কম্বল নিয়ে। হোটেল টির মালিক একজন মহিলা। এই album এর শেষে ঊনার সাথে আমদের ছবি আছে।

পরের দিন সকালেই আমরা লেহ এর উদ্দেশ্যে রওনা দেই। পথেই প্রায় সবাই অসুস্থ হয়ে যাই। প্রায় সবাই বমি করে, মুখ ফুলে যাই, আর নিস্বাস এ সমস্যায় ভুগে। আর শরীর এতই দূর্বল হয়ে যাই যে টাংলাং পাস এ নেমে ছবি তোলার ইচ্ছা কারো থাকে না। কেউ কেউ লাদাখ থেকে by air back করার কথা ভাবতে থাকে।
পথে একটা জায়গাই আমরা ছবি তুলতে নামি। তখন আমাদের ড্রাইভার হঠাত বলে ঊঠে “ মুঝে কাভি পাতা নেহি হেয় ইন্ডিয়া মে ইস্তারা কি এক আচ্ছি জাগা ভি হ্যায়” ।এর পরেই সে বমি দেই। একজন ইন্ডিয়ান Driver এর মুখ থেকে এই কথা বের করতে পারা এই ট্রিপ এর অনেক বড় পাওনা।

Post Copied From:Mizan Rana>Travelers of Bangladesh (ToB)

Share:

Leave a Comment