হারিয়ে গিয়েছে গঙ্গার উৎস

এমনই এক মে মাসে প্রথম বার গিয়েছিলাম গঙ্গার উৎস দেখতে। ২০০৬ সাল। দেখেছিলাম, মুগ্ধ হয়েছিলাম, বিস্মিত হয়েছিলাম। তবে কখনও ভাবিনি, তা দেখে কষ্ট পাব। কিন্তু পেলাম।

২০১৮ সাল। আবারও একবার পৌঁছে গেলাম সেই একই জায়গায়। কিন্ত, বড় অচেনা লাগল চারপাশ। মনের আয়নায় ঝলক দিচ্ছিল বারো বছর আগেকার অনেক দৃশ্য, যার সঙ্গে প্রবল অমিল বর্তমানের চারপাশের।

এখন শুধুই ছবি:  বারো বছর আগে দেখা গঙ্গোত্রী গ্লেসিয়ার।

প্রকৃতি কি নিজেই নিজেকে অপরিচিত করে ফেলেছে? নাকি, তার জন্য দায়ী আমরা? খুব জটিল প্রশ্ন। যদিও উত্তর জানি আমরা সকলেই।

গঙ্গোত্রী থেকে গোমুখ— ১৪ কিলোমিটার পাহাড়ি পথের রূপ এক এক জায়গায় এক এক রকম। ঘন সবুজ পথের শেষ হয় ভোজবাসায় গিয়ে। যেখানে রয়েছে লালবাবার আশ্রম ও গাঢ়ওয়াল নিগমের থাকার জায়গাও। গোমুখ বা তপোবন যাঁরা ট্রেক করেন, তাঁদের বেশিরভাগই এ জায়গায় রাতে থেকে যান। পরের দিন সকাল সকাল বেরিয়ে পড়েন গোমুখ দর্শনে।

ভোজবাসায় লাল বাবার আশ্রম। একটু দূরেই রয়েছে জিএনভিএম।

আমরাও তার ব্যতিক্রম ছিলাম না। বারো বছর আগেও না, এবারেও নয়। বন দফতর থেকে দু’টি ইগলু তৈরি করা হচ্ছে বর্তমানে। ফাইবার গ্লাসের সেই ইগলু প্রায় শেষের দিকে। মনে হল পরের বার গেলে নিশ্চয়ই অ্যান্টার্কটিকার স্বাদ উপভোগ করতে পারব উত্তরাখণ্ডের এই পবিত্র স্থানে।

কিন্তু, নাহ্! আর যাব না। প্রকৃতির যে আশ্চর্যের কথা ছোটবেলা থেকে ভূগোল বইয়ের পাতায় দেখে বড় হয়ে, শেষে তা চাক্ষুষ করেছিলাম ১২ বছর আগে, সেটাই তো নেই! ভারত ভূমের সব থেকে পবিত্র নদী গঙ্গার উৎসস্থল গৌ-মুখ অনেক আগেই নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু হিমবাহ ও তার গহ্বরটি ছিল, যা দেখেই নিজেদের পাপমুক্ত করেছে ভারতবাসী।

বন দফতরের ‘ইগলু’।

২০১৩ সালের বন্যায় উত্তরাখণ্ডের অনেকাংশের প্রভূত ক্ষতি হয়েছিল। সে সময়েই ভেঙে পড়ে গঙ্গোত্রী গ্লেসিয়ারটিও। তার পাশাপাশি রয়েছে উষ্ণায়নের ধকল। সেই বরফের দেওয়াল আর নেই। রয়ে গিয়েছে খানিক নিদর্শন। যে গঙ্গোত্রী হিমবাহের উপর দিয়ে এক সময়ে অভিযাত্রীর দল ট্রেক করে পৌঁছে যেত তপোবনে, তা এখন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পারমিট, প্রশিক্ষিত গাইড ও উপযুক্ত সরঞ্জাম সঙ্গে থাকলে তবেই তপোবন যাওয়ার পারমিশন পাওয়া যায়।

ভাগীরথী পিকস…

গঙ্গোত্রী থেকেই যে শিবলিঙ্গ পিক ও চিরবাসার পর থেকেই যে ভাগীরথী পিক উঁকি দিত এক সময়ে, তা এখন সম্পূর্ণ ভাবে দৃশ্যমান। রুক্ষ পাহাড়ের রূপ যেন বড় নিষ্ঠুর ভাবে দাঁত-নখ বের করে রয়েছে চারপাশে।

নাহ্! আর যাব না। প্রকৃতি, তুমি ভাল থাকো। আমাদের ভাল রাখো।

Share:

Leave a Comment