গোল্ডেন গেট ব্রিজ, সানফ্রানসিসকো

পুরো বিশ্ব জুড়েই বর্তমান সময়ে অসাধারণ সব সাসপেনশন ব্রিজ বা ঝুলন্ত সেতু দেখা যায়। আকাশী-কাকিয়ো বিশ্বের দীর্ঘতম ঝুলন্ত ব্রিজ বলে পরিচিত হওয়া সত্ত্বেও ভ্রমণ প্রেমীরা বারবার ফিরে চায় গোল্ডেন গেট ব্রিজের দিকে। যার কারণ হিসেবে রয়েছে এর সমৃদ্ধ ইতিহাস, শৈল্পিক সৌন্দর্য এবং একে সব সময় ঘিরে থাকা বিভিন্ন আলোচনা।

গোল্ডেন ব্রিজ এবং আমেরিকার সানফ্রানসিসকো শহর একে অপরকে জড়িয়ে আছে। উনিশ শতকের গোড়ার দিকে সানফ্রানসিসকোতে সোনার বিপ্লব ঘটে এবং টাকার আশায় মানুষ ভীর জমাতে থাকে এই শহরটিতে। ঠিক এর পর পরই আসে অটো মোবাইলের যুগ এবং শহরটি হয়ে উঠে ধনী, চাকুরীজীবী, কর্মীদের জন্য সুবিধা জনক এক শহর। মারিন কাউন্টি থেকে সানফ্রানসিসকো যেতে তাদের সানফ্রানসিসকো বে পাড়ি দিতে হতো। তাই সেই সময় এখানে আবির্ভাব হলো ফেরী সার্ভিসের। তবে তাদের পক্ষে এতো চাপ সামাল দেওয়া সম্ভব ছিলোনা। যার ফলে এখানে সব সময় তৈরি হত জ্যাম। ফলে কাজের এবং রুজির উভয়ের ক্ষতির মুখে পরে যায় সাধারণ মানুষেরা। প্রয়োজনীয়তা হয়ে আসে একটা ব্রিজের কিন্তু সেই সময়ে সেটা পাগলের প্রলাপের মত ছিলো। কিন্তু তাই বলে থেমে থাকেনি চিন্তা। ভাবনা আসলো ৩০০০ ফিটের একটি ঝুলন্ত ব্রিজ করার যার খরচ বলা হলো তৎকালীন ১০০ মিলিয়ন ডলার। তবে এত খরচ কমিয়ে এটি তৈরি করার মত কাউকে খোজা হচ্ছিলো। ঠিক এই সময়ে এগিয়ে আসলেন জোসেফ স্ট্রস। তিনি বাজেট দিলেন মাত্র ২৫-৩০ মিলিয়ন ডলারের। বিংশ শতাব্দীর সেই আমেরিকার পক্ষে তাও ছিলো ব্যয়বহুল কিন্তু স্থানীয় মানুষ এ সময় এক হয়ে এসে এর পক্ষে দাঁড়ায়। সব বাধা পেরিয়ে অবশেষে ব্যাংক অব আমেরিকা এই প্রজেক্টে আগ্রহী হয়।

সামগ্রিক উন্নয়ন এবং জনসাধারণের কথা ভেবে ২৩০০ ফুটের এই ব্রিজের কাজে হাত দেয়। শুরু হয় আমেরিকার মানুষের স্বপ্নের ব্রিজের কাজ। যা ২৭ বছর ধরে দুনিয়ার সবচেয়ে দীর্ঘ সাসপেনশন ব্রিজের রেকর্ড ধরে রেখেছিলো এবং আজও দাঁড়িয়ে আছে মাথা উঁচু করে। এই ব্রিজের নির্মাণ করতে ব্যয় হয়েছিল ৩৫ মিলিয়ন ডলারের মত।ব্রিজটি সানফ্রানসিসকো বে এর উপর দিয়ে সানফ্রানসিসকো এবং মারিন কাউন্টিকে যুক্ত করেছে। ব্রিজটির সম্পূর্ণ দৈর্ঘ্য প্রায় ১.৭ মাইল। এবং এটি পাশে মোট ৯০ফিট চওড়া । সমুদ্র থেকে ২৩০ মিটার উঁচুতে দাঁড়িয়ে আছে এই ব্রিজটি। দু পাড়ের দুটি টাওয়ার যার একটি পানিতে অপরটি শুকনোতে এবং এদের উপর দুটি কেবলের সাহায্যেই দাঁড়িয়ে আছে এই ব্রিজ। ১৯৩০ এর দিকে এরকম স্থাপনার কথা যখন মানুষ কল্পনা করত তখন ক্ষ্যাপাটে ইঞ্জিনিয়ার এবং হাজার হাজার কর্মী অসম্ভব কে সম্ভব করার প্রত্যয় নিয়ে তৈরি করে ফেলেছিল এই ব্রিজ। ১৯৩৭ সালে কাজ শেষে যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হয় ব্রিজটি। যা ৮০ বছর ধরে বিশ্রামহীন ভাবে প্রতিদিন বহন করে যাচ্ছে হাজারও গাড়ি। আর স্থাপন করে দিয়েছে দু পাড়ের মানুষের মেল বন্ধন।

source: https://travelbd.xyz/article/

Share:

Leave a Comment