ঐতিহাসিক কার্জন হল
বাংলাদেশের ইতিহাস নিয়ে একটু ঘাটাঘাটি করলেই খুব সহজেই জানতে পারা যায় যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মানে কেবল একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই নয় বরং এটি পুরোটা মিলে যেন একটা ইতিহাস। এদেশের প্রতিটা ইতিহাসের সাথে কোথাও না কোথাও জড়িয়ে আছে এর ইতিহাসের গল্প। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা প্রথমেই আমাদের মনে আসলেই যেই ভবনের ছবি সবার চোখের সামনে ভেসে ওঠে এটি হচ্ছে কার্জন হল। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ন্যায় এই ভবনটিও আমাদের অনেক ইতিহাসের সাক্ষী।
কার্জন হল বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাতে অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক ভবন। যা পুরাকীর্তি হিসেবে বহুকাল ধরেই স্বীকৃত। যদিও এটি বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান ও জীব বিজ্ঞান অনুষদের কিছু শ্রেণীকক্ষ ও পরীক্ষার হল হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এর ইতিহাস থেকে জানা যায় ১৯০৪ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি ভারতের তৎকালীন ভাইসরয় ও গভর্নর জেনারেল জর্জ কার্জন এই ভবনটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। বঙ্গভঙ্গ ঘোষিত হওয়ার পর প্রাদেশিক রাজধানী হিসেবে ঢাকাকে গড়ে তোলার জন্য রমনা এলাকার যেসব ইমারতের গুরুত্ব বৃদ্ধি পায় কার্জন হল তাদের মধ্যে অন্যতম।
কার্জন হল নির্মাণের জন্য অর্থ প্রদান করেন
ভাওয়ালের রাজকুমার।
কার্জন হল অবশ্য প্রথম অবস্থায় নির্মিত হয়েছিল টাউন হল হিসেবে। তবে অনেকে বলে থাকে এটি প্রথম নির্মিত হয় ঢাকা কলেজের পাঠাগার হিসেবে। এই ভবনটি নির্মাণের জন্য অর্থ প্রদান করেন ভাওয়ালের রাজকুমার। ১৯১১ সালে বঙ্গভঙ্গ স্থগিত হয়ে গেলে ঢাকা কলেজের ক্লাস নেওয়া হতে থাকে কার্জন হলে। পরবর্তী সময়ে ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হলে কার্জন হল অন্তর্ভুক্ত হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগের জন্য। যা আজও ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
১৯০৪ সালে ভারতের ভাইসরয় লর্ড জর্জ নাথানিয়েল কার্জন, কার্জন হলের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন এবং তারই নামানুসারে এ ভবনের নাম হয় কার্জন হল। এ ভবনটিতে সংযোজিত হয়েছে ইউরোপ ও মুগল স্থাপত্য রীতির দৃষ্টিনন্দন সংমিশ্রণ, আংশিকভাবে মুসলিম স্থাপত্যরীতিও অনুসরণ করা হয়েছে। ভবনের বাইরের দিকে কালচে লাল রঙের ইট ব্যবহার করা হয়েছে। আধুনিক স্থাপত্য বিদ্যা এবং অসাধারণ মোগল কাঠামোর সমন্বয়ে তৈরি করা হয়েছে এর খিলান ও গম্বুজগুলো। ঐতিহাসিক স্থাপনা হিসেবে এটি চিরকালই প্রশংসা কুড়িয়ে যাবে।
ঐতিহাসিক কার্জন হল
যেভাবে যাবেন :
আপনি অন্য জেলায় বসবাস করলে প্রথমেই আপনাকে ঢাকায় আসতে হবে। তারপর ঢাকার যেকোনো প্রান্ত থেকে নিজস্ব পরিবহন অথবা যেকোনো লোকাল পরিবহনে করে হাইকোর্ট এলাকা, শাহবাগ এলাকা অথবা পুরান ঢাকা এলাকায় এসে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলের কথা বললে যে কেউ আপনাকে দেখিয়ে দেবে। অসাধারণ এই স্থাপত্য আপনাকে অবশ্যই মুগ্ধ করবে।